বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধসমূহ ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী উহার শাস্তিসমূহ রেফারেন্সসহ আলোচনা করা হলো-
১। প্ররোচনা ও সহায়তা।
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১০৭ – ১২০
(ক) প্ররোচনা, (খ) ষড়যন্ত্র বা (গ) সহায়তার মাধ্যমে দুষ্কর্মে সহায়তা (Abetment) প্রদান। [দন্ডবিধি, ধারা ১০৭]
দুষ্কর্মে সহায়তা/ প্ররোচনার শাস্তি- [দন্ডবিধি, ধারা ১০৯]
দন্ডবিধিতে শাস্তির বিধান উল্লেখ থাকলে সেভাবে প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ না থাকলে প্ররোচনারকারী নিজে অপরাধটি করলে যে শাস্তি পেত সেই শাস্তি পাবে।
মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে সহায়তা/প্ররোচনার শাস্তি- [দন্ডবিধি, ধারা ১১১৫]
অপরাধটি অনুষ্ঠিত না হলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
অপরাধটি অনুষ্ঠিত হলে – ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
২। অপরাধজনক ষড়যন্ত্র (Criminal Conspiracy)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১২১খ
২ বা ততোধিক ব্যক্তি যদি একটি বে-আইনী কাজ করার জন্য বা আইনী কাজ বে-আইনীভাবে করার জন্য একমত হয় তাহলে ঐ ঐক্যমতকে অপরাধজনক ষড়যন্ত্র (Criminal Conspiracy) বলে। [দন্ডবিধি, ধারা ১২০ক]
অপরাধজনক ষড়যন্ত্রের শাস্তি। [দন্ডবিধি, ধারা ১২০খ]
দন্ডবিধিতে শাস্তির বিধান উল্লেখ থাকলে সেভাবে প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ না থাকলে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন বা ২ বছরের অধিক কারাদন্ডযোগ্য হলে – নিজে অপরাধটি করলে যে শাস্তি পেত সেই শাস্তি পাবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে অনধিক ৬ মাস কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড।
৩। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাধ/ রাষ্ট্রদ্রোহ (Sedition)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১২১ – ১৩০
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ বা সহায়তার শাস্তি- মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। [দন্ডবিধি ধারা ১২১]
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্রের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। [দন্ডবিধি ধারা ১২১ক]
৪। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্পর্কিত অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৩১ – ১৪০
৫। সর্বসাধারণের শাস্তির বিরুদ্ধে অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৪৩ – ১৬০
ধারা ১৪১: বে-আইনী সমাবেশের সংজ্ঞা (Unlawful Assembly)
[সমাবেশ: ৫ বা ততোধিক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সমবেত হলে তাকে বলা হয় সমাবেশ।]
বে-আইনী সমাবেশ: উক্ত সমাবেশ কোনো বে-আইনী উদ্দেশ্যে করা হলে তাকে বলা হয় বে-আইনী সমাবেশ।
ধারা ১৪৩: বে-আইনী সমাবেশের শাস্তি।
বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যের শাস্তি হবে –
৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়।
ধারা ১৪৪: অস্ত্রসহ বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণের শাস্তি। ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়।
ধারা ১৪৫: নিষেধ থাকা সত্বেও বে-আইনী সমাবেশের শাস্তি। ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়।
ধারা ১৪৬: দাঙ্গা হাঙ্গামার (Rioting) সংজ্ঞা। ৫ বা ততোধিক ব্যক্তি বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণ করে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য উগ্রতা প্রদর্শন করেলে তাহা দাঙ্গা বলে গণ্য হবে।
ধারা ১৪৭: দাঙ্গা হাঙ্গামার শাস্তি। ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ জরিমানা/ উভয় [জামিনযোগ্য অপরাধ]
ধারা ১৪৮: মারাত্মক অস্ত্রসহ দাঙ্গার শাস্তি। ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ জরিমানা/ উভয় [জামিনযোগ্য অপরাধ]
ধারা ১৪৯: সাধারণ উদ্দেশ্য (Common Object).
১৪১ ধারায় উল্লেখিত বে-আইনী সমাবেশের যেকোনো একটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারী ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির উদ্দেশ্য যদি অভিন্ন হয় তাহলে তাকে সাধারন উদ্দেশ্য বলা হবে।
এরূপ সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারীর একজন অপরাধ করলে প্রত্যেক সদস্যের শাস্তি হবে সমান।
ধারা ১৬০: মারামারির শাস্তি। ১ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/ ১০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
৬। সরকারি কর্মচারী কর্তৃক অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৬১ – ১৭১ঝ
ধারা ১৬১: ঘুষ গ্রহণের শাস্তি। ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৬২: সরকারি কর্মচারীকে প্রভাবিত করার জন্য বকশিশ গ্রহনের শাস্তি। ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭০: সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ করার শাস্তি। ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭১: সরকারি কর্মচারীর পোষাক বা প্রতিক প্রতারণামূলকভাবে ধারণ করার শাস্তি। ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/ ২০০ অর্থদন্ড/ উভয়
৭। সরকারি কর্তৃত্বের অবমাননা-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৭১ – ১৯০
ধারা ১৭২: সরকারি কর্মচারীর জারিকৃত সমন/বিজ্ঞপ্তি/আদেশ এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করার শাস্তি।
১ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ৫০০ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭৪: সরকারি কর্মচারীর জারিকৃত সমন/বিজ্ঞপ্তি/আদেশ মোতাবেক –
নির্দিষ্ট স্থানে হাজির না হলে শাস্তি – ১ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ৫০০ অর্থদন্ড/ উভয়
আদালতে হাজির না হলে শাস্তি – ৬ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ১০০০ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৮৮: সরকারি কর্মচারীর জারিকৃত আদেশ অমান্য করার শাস্তি [CrPC 144 ধারা জারি]
৬ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ২০০ অর্থদন্ড/ উভয়
৮। মিথ্যা সাক্ষ্যদান ও ন্যায়বিচার বিরোধী অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৯১ – ২২৯
ধারা ১৯৩: মিথ্যা সাক্ষ্যের শাস্তি।
বিচারিক আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
অন্যান্য ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
জামিনযোগ্য অপরাধ
ধারা ১৯৪: মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
উহার ফলে নিরাপরাধীর দণ্ড বা ফাসি হলে শাস্তি – মৃত্যুদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
জামিন অযোগ্য অপরাধ
ধারা ১৯৫: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি – অপরাধটির অনুরূপ
জামিন অযোগ্য অপরাধ
ধারা ১৯৭: মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রদান ও উহাতে স্বাক্ষর করলে শাস্তি। মিথ্যা সাক্ষ্য দানের অনুরূপ শাস্তি
জামিনযোগ্য অপরাধ
ধারা ২০৫: দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলার উদ্দেশ্যে মিথ্যা পরিচয় দেওয়ার শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়।
ধারা ২১১: ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলার শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/উভয়
মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন/৭ বছর বা তদূর্ধ মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের মিথ্যা মামলার শাস্তি
৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ২১২: দোষী ব্যাক্তিকে আশ্রয় দানের শাস্তি
(১) মৃত্যুদন্ডে দণ্ডনীয় ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিলে
– ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
(২) যাবজ্জীবন/১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিলে
– ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
(৩) ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিলে
– উক্ত অপরাধের দীর্ঘতম মেয়াদের শাস্তির এক চতুর্থাংশ পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ব্যতিক্রম: দোষী ব্যক্তির স্বামী/ স্ত্রী আশ্রয়দান করলে অত্র বিধান প্রযোজ্য হবে না।
ধারা ২২৮: বিচার বিভাগীয় মামলায় বিচারকার্যে রত সরকারী কর্মচারীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা বা বাঁধা প্রদানের শাস্তি- ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
৯। মুদ্রা ও সরকারি স্ট্যাম্প সম্পর্কিত অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৩০- ২৬৩ক
ধারা ২৩১: মুদ্রা জালকরণের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ২৩২: বাংলাদেশী মুদ্রা জালকরণের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ২৫৫: সরকারী স্ট্যাম্প জালকরণের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
১০। ওজন ও পরিমাপ সম্পর্কিত অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৬৪- ২৬৭
ধারা ২৬৪: ওজনের জন্য প্রতিরণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র ব্যবহারের শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৬৭: মিথ্যা বাটখারা বা মাপকাঠি প্রস্তুত বা বিক্রয়ের শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
১১। জনসাধারণের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুবিধা, শালিনতা ও নৈতিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৬৮- ২৯৪খ
ধারা ২৭২: বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোনো খাদ্য বা পানীয় দ্রব্যে ভেজাল মিশ্রণের শাস্তি- ৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৭৯: রাজপথে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা অশ্বারোহণ করার শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ৫০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯২: অশ্লীল পুস্তক বিক্রয়ের শাস্তি- ৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৩: ২০ বছরের কম বয়স্ক যুবক যুবতীদের নিকট অশ্লীল বস্তু বিক্রয়ের শাস্তি
৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৪: প্রকাশ্য স্থানে অশ্লীল কাজ, গান, কবিতা বা উচ্চারণ করার শাস্তি- ৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৫ক: ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
১২। ধর্ম সম্পর্কিত অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৯৫- ২৯৮
ধারা ৯৫- ধর্মীয় উপাসনার স্থান অবমাননার উদ্দেশ্যে ধ্বংস, নষ্ট বা অপবিত্র করার শাস্তি- ২ বছর কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয় দন্ড।
মানব দেহ সম্পর্কিত অপরাধ-
১৩। হত্যা বা খুন-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৯৯- ৩১১
ধারা ৩০২: খুনের শাস্তি- মৃত্যুদন্ড/ যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৩: যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী কর্তৃক খুনের শাস্তি- একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড [এটা দন্ডবিধির সর্বোচ্চ শাস্তি]
ধারা ৩০৪: অপরাধজনক নরহত্যার শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
অনিচ্ছাকৃতভাবে অপরাধজনক নরহত্যা সংঘটিত হলে শাস্তি – ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৪ক: অবহেলাবশত: প্রাণহানির শাস্তি- ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
[ যেমন ডাক্তার ভুল ঔষধ দিলে]
ধারা ৩০৪খ: বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৩০৫: শিশু, উম্মাদ ও নির্বোধকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার শাস্তি- মৃত্যুদন্ড/ যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৬: আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৭: খুনের চেষ্টার শাস্তি- খুনের চেষ্টার ফলে –
Victim এর শরীর স্পর্ষ না করলে – ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম/বিনাশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
Victim আহত হলে শাস্তি – যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কর্তৃক খুনের চেষ্টার ফলে আহত হলে শাস্তি – মৃত্যুদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
ধারা ৩০৮: অপরাধজনক নরহত্যার চেষ্টার শাস্তি- অপরাধজনক নরহত্যার চেষ্টার ফলে –
Victim এর শরীর স্পর্ষ না করলে – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
Victim আহত হলে শাস্তি – যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
ধারা ৩০৯: আত্মহত্যার নরহত্যার চেষ্টার শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩১১: ঠগের শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
কোনো ব্যক্তি খুন, খুনসহ দস্যুতা বা শিশু অপহরণের জন্য অন্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে তাকে ঠগ বলে।
১৪। গর্ভপাত ঘটানো-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩১২- ৩১৮
ধারা ৩১২: গর্ভপাতকরণ (Causing miscarriage).
কোনো নারীর জীবন বাচানোর জন্য গর্ভপাত ঘটানো হলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তি – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
আসন্ন প্রসবা হলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩১৩: নারীর অনুমতি ব্যতীত গর্ভপাতকরণের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩১৪: গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে কৃত কার্যে মৃত্যু হলে শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া করলে শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
১৫। আঘাত-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩১৯- ৩৩৮ক
ধারা ৩১৯: দৈহিক আঘাতের সংজ্ঞা।
আঘাতের উপাদান ৩ টি। যথা: ব্যাথা, বিমার, বৈকল্য। এই উপাদানগুলোর কোনোটি ঘটলে সেটা আঘাত বলে গণ্য হবে।
ধারা ৩২০: গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা (Grievous Hurt).
গুরুতর আঘাতের উপাদান ৩ টি। যথা:
- পুরুষত্বহীন করণ (Emasculation)
- চোখের দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্টকরণ
- কানের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্টকরণ
- অঙ্গ বা গ্রন্থির অনিষ্ট সাধন
- অঙ্গ বা গ্রন্থির কর্মশক্তি হরণ
- মাথা বা মুখমন্ডল স্থায়ীভাবে বিকৃতকরণ
- দন্ত বা অস্থি ভঙ্গ বা স্থানচ্যুত করণ
- ২০ দিন পর্যন্ত প্রচন্ড দৈহিক যন্ত্রনা ভোগ।
ধারা ৩২৩: স্বেচ্ছাকৃত আঘাতের শাস্তি– ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
জামিনযোগ্য অপরাধ ও আমলের আযোগ্য অপরাধ
ধারা ৩২৪: মারাত্বক অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছাকৃত আঘাতের শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
জামিনযোগ্য অপরাধ
ধারা ৩২৫: স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাতের শাস্তি – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩২৬: মারাত্বক অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছাকৃত গুরুতর আঘাতের শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩২৬ক: ইচ্ছাপূর্বক দুই চোখ, মাথা বা মুখমন্ডল বিকৃতকরণে গুরুতর আঘাতের শাস্তি- মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩২৭: বে-আইনি কার্য করতে বা সহায়তার জন্য বল প্রয়োগ করতে গিয়ে ইচ্ছাপূর্বক আঘাতের শাস্তি
১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩০: স্বীকারোক্তি বা সম্পত্তি প্রত্যর্পণে বাধ্য করতে স্বেচ্ছায় আঘাতের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩২: সরকারী কর্মচারিকে দায়িত্ব পালনে বাঁধা দানের উদ্দেশ্যে আঘাত দানের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩৩: সরকারী কর্মচারিকে দায়িত্ব পালনে বাঁধা দানের উদ্দেশ্যে গুরুতর আঘাত দানের শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩৪: আকস্মিক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে আঘাত দানের শাস্তি- ১ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ ৫০০ টাকা অর্হদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৩৫: আকস্মিক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে গুরুতর আঘাত দানের শাস্তি- ৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ২০০০ টাকা অর্হদন্ড/ উভয়
১৬। অবৈধ বাঁধা বা আটক-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৩৯- ৩৪৮
ধারা ৩৪১: অবৈধ বাঁধার শাস্তি- ১ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড/ ৫০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৪২: অবৈধ অবরোধের শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৪৫: রিটে মুক্তির পর অন্যায়ভা আটক রাখার শাস্তি- অত্র অধ্যায়ের অপর কোনো ধারা অনুসারে দন্ডের অতিরিক্ত আরো ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডপ্রাপ্ত হবে।
১৭। অবৈধ বল প্রয়োগ ও আক্রমণ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৪৯- ৩৫৮
ধারা ৩৪৯: বল প্রয়োগ (Force).
কোনো ব্যক্তি কোনো কাজের মধ্যমে অপর কোনো ব্যক্তির গতি সঞ্চার, গতি পরিবর্তন বা গতি রুদ্ধ করলে তাকে বলা হয় বল প্রয়োগ।
বল প্রয়োগ ৩ টি উপায়ে হতে পারে –
- নিজ দেহের শক্তি প্রয়োগ করে
- কোনো বস্তু ব্যবহার করে
- কোনো পশু ব্যভার করে
ধারা ৩৫০: অপরাধমূলক বল প্রয়োগ (Criminal Force).
বল প্রয়োগের ফলে অপর কোনো ব্যক্তির ক্ষতি, ভীতি বা বিরক্তির সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় অপরাধমূলক বল প্রয়োগ।
[যেমন – নৌকার রশি ছেড়ে দিয়ে গতি সঞ্চার]
ধারা ৩৫১: আক্রমণ (Assault).
অঙ্গভঙ্গির (Gesture) মাধ্যেমে অপরাধমূলক বল প্রয়োগে উদ্যত হওয়াকে আক্রমণ বলা হয়।
শুধুমাত্র মুখের কথায় হবে না।
ধারা ৩৫২: অপরাধমূলক বল প্রয়োগের শাস্তি
৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ ৫০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৫৩: সরকারী কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধাদানের উদ্দেশ্যে বল প্রয়োগের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৫৪: শ্লীলতাহানীর উদ্দেশ্যে কোনো নারীর উপর আক্রমণ বা অপরাধমূলক বল প্রয়োগের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
১৮। অপহরণ দাসত্ব ও বাধ্যতামূলক শ্রম-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৫৯- ৩৭৪
ধারা ৩৫৯: মনুষ্যহরণ (Kidnapping)- মনুষ্যহরণ ২ প্রকার
(১) বাংলাদেশ হতে মনুষ্যহরণ, (২) আইনগত অভিভাবক হতে মনুষ্যহরণ
ধারা ৩৬০: বাংলাদেশ হইতে মনুষ্যহরণ।
কোনো ব্যক্তিকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা যার কাছে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন তাহার অনুমতি ব্যতীত বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করলে ইহা বাংলাদেশ হইতে মনুষ্যহরণ বলে গণ্য হবে।
ধারা ৩৬১: আইনগত অভিভাবক হতে মনুষ্যহরণ।
১৪ বছরের কম বয়স্ক বালক, ১৬ বছরের কম বয়স্ক বালিকা বা বিকৃত মস্তিস্কের কোনো ব্যক্তিকে তাহার আইনগত অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বা যাহার হেফাজতে থাকার কথা তাহার অনুমতি ব্যতীত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করলে তাকে বলা হয় আইনগত অভিভাবক হতে মনুষ্যহরণ।
ধারা ৩৬২: অপহরণ/ অপবাহন (Abduction)
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বা প্রলুব্ধ করে বা প্রতারণা করে বা ক্ষতির ভয় দেখিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করলে তাকে বলা হয় অপহরণ।
ধারা ৩৬৩: মনুষ্যহরণ/ অপহরণের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৪: খুনের উদ্দেশ্যে মনুষ্যহরণ/ অপহরণের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৪ক: ১০ বছরের কম বয়স্ক শিশু খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের শাস্তি- মৃত্যুদণ্ড/ যাবজ্জীবন/ ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড তবে ৭ বছরের কম নয় ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৫: গোপনে আটক রাখার জন্য অপহরণের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম/বিনাশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৬: কোনো নারীকে বিবাহের বা ধর্ষণের জন্য অপহরণের শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৬ক: অপ্রাপ্ত বালিকা সংগ্রহের শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৬খ: বিদেশ হতে বালিকা আমদানির শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৬৯: শিশুর দেহ থেকে সম্পত্তি চুরির উদ্দেশ্যে অপহরণের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
১৯। ধর্ষণ (Rape)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৭৫- ৩৭৭
ধারা ৩৭৫: ধর্ষণের (Rape) সংজ্ঞা
কোনো পুরুষ কোনো স্ত্রীলোকের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করলে নিম্নলিখিত ৫ টি ক্ষেত্রে ধর্ষণ বলে গণ্য হবে –
- ইচ্ছার বিরুদ্ধে
- সম্মতি ব্যতীত
- সম্মতিক্রমে মৃত্যু বা জখমের ভয় দেখিয়ে
- সম্মতিক্রমে কিন্তু পুরুষটি জানে সে তার স্বামী নয় এবং স্ত্রীলোকটি স্বামী মনে করে ভুল করছে
- সম্মতিক্রমে বা ব্যতীত নারীর বয়স ১৪ বছরের কম হলে
ব্যাখ্যা: ধর্ষণের অপরাধের ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গমের জন্য যৌনাঙ্গ প্রবিষ্ট করাই যথেষ্ট।
ব্যতিক্রম: কোনো পুরুষ কর্তৃক নিজ স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম ধর্ষণ বলে গণ্য হবে যদি স্ত্রীর বয়স ১৩ বছরের কম হয়।
ধারা ৩৭৬: ধর্ষণের শাস্তি- নিজ স্ত্রী ১২ বছরের কম হলে – ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
অন্যান্য ক্ষেত্রে – যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৭৭: অসাভাবিক অপরাধসমূহ (Unnatural Offences)
প্রকৃতির নিয়মের বাহিরে কোনো পুরুষ, স্ত্রীলোক বা পশুর সাথে যৌন সঙ্গম করলে তাহার শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
বর্তমানে ধর্ষণের বিচার ও শাস্তি নারী ও শিশু নির্যাতন আইন মোতাবেক হয়ে থাকে।
২০। চুরি-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৭৮- ৩৮২
ধারা ৩৭৮: অপর ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তি তাহার অসম্মতিতে অসাধুভাবে অপসারণ করাকে চুরি বলে।
ধারা ৩৭৯: চুরির শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৮০: বাসগৃহে চুরির শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৮১: চাকর কর্তৃক মনিবের সম্পত্তি চুরির শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৮২: চুরির উদ্দেশ্যে খুন, গুরুতর আঘাত বা অবৈধ আটক ইত্যাদির প্রস্তুতিসহ চুরির শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
২১। ছিনতাই বা বলপূর্বক সম্পত্তি আদায়-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৮৩- ৩৮৯
ধারা ৩৮৩: জোরপূর্বক আদায়/ ছিনতাই (Extortion) এর সংজ্ঞা
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে শরীর, সম্পত্তি, খ্যাতি ইত্যাদির ভয় দেখিয়ে সম্পত্তি আদায় করলে তাকে জোরপূর্বক আদায় বা ছিনতাই বলে।
ধারা ৩৮৪: ছিনতাই এর শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৮৫: ভয় দেখিয়ে ছিনতাই/ চাঁদাবাজি এর শাস্তি- ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড কিন্তু পাঁচ বছরের কম নয়
২২। দস্যুতা বা ডাকাতি-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৯০- ৪০২
ধারা ৩৯০: দস্যুতার (Robbery) সংজ্ঞা
চুরি বা বলপূর্বক সম্পত্তি আদায় (ছিনতাই) এর সময় উগ্রতা প্রদর্শন করলে তাহা দস্যুতা বলে গণ্য হবে।
[দস্যুতাকারীর সংখ্যা হবে ৪ জন বা তার কম। ৪ জনের বেশি হলে তখন সেটা ডাকাতি বলে গণ্য হবে।]
ধারা ৩৯১: ডাকাতির (Dacoity) সংজ্ঞা
৫ বা ততোধিক ব্যক্তি দস্যুতা সংঘটন করলে বা সংঘটনের চেষ্টা করলে তাহা ডাকাতি বলে গণ্য হবে।
[ডাকাতির সদস্য সংখ্যা হবে কমপক্ষে ৫ জন]
ধারা ৩৯২: দস্যুতার শাস্তি-
দিনে দস্যুতার শাস্তি – ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড
রাতে রাজপথে দস্যুতার শাস্তি – ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৯৩: দস্যুতার উদ্যোগ/ চেষ্টার শাস্তি- দস্যুতার উদ্যোগের শাস্তি – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৯৪: দস্যুতার সময় স্বেচ্ছায় আঘাত দানের শাস্তি- দস্যুতার সময় স্বেচ্ছায় আঘাত দানকারী এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তি হবে- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৯৫: ডাকাতির শাস্তি- যাবজ্জীবন/১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৯৬: খুনসহ ডাকাতির শাস্তি- মৃত্যুদণ্ড/ যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৯৭: মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের চেষ্টাসহ দস্যুতা বা ডাকাতির শাস্তি- কমপক্ষে ৭ সশ্রম কারাদন্ড
ধারা ৩৯৮: মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দস্যুতা বা ডাকাতির শাস্তি- কমপক্ষে ৭ সশ্রম কারাদন্ড
ধারা ৩৯৯: ডাকাতির প্রস্তুতির শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৪০০: ডাকাত দলে থাকার শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৪০১: চোরের দলে থাকার শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
২৩। সম্পত্তি আত্মসাত-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪০৩- ৪০৪
ধারা ৪০৩: অসাধুভাবে অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাতের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪০৪: মৃত্যুকালে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি অসাধুভাবে আত্মসাতের শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
মৃত্যুকালে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার চাকর কর্তৃক অসাধুভাবে আত্মসাতের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
২৪। বিশ্বাসভংগ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪০৫- ৪০৯
ধারা ৪০৫: অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের (Criminal Breach of Trust) সংজ্ঞা
কোনো সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত সম্পত্তি অসাধুভাবে আত্মসাত করলে বা নিজের ব্যবহারে প্রয়োগ করলে তাকে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ বলা হয়।
ধারা ৪০৬: অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪০৭: বাহক কর্তৃক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪০৮: চাকর/ কেরানী/ কর্মচারী/ ভৃত্য কর্তৃক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪০৯: সরকারী কর্মচারী/ব্যাংকার/ব্যবসায়ী/প্রতিনিধি কর্তৃক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
২৫। চোরাইমাল গ্রহণ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪১০- ৪১৪
ধারা ৪১০: নিম্নলিখিত ৫ ভাবে অর্জিত সম্পত্তি চোরাইমাল বলে গণ্য হবে –
- চুরি (Theft)
- ছিনতাই/ বল পূর্বক গ্রহণ (Extortion)
- দস্যুতা (Robbery)
- অপরাধমূলক আত্মসাৎ (Criminal Misappropriation)
- অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ (Criminal Breach of Trust)
ধারা ৪১১: চোরাইমাল জেনেশুনে গ্রহণের শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪১২: ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত চোরাইমাল জেনেশুনে গ্রহণের শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪১৩: চোরাইমাল অভ্যাসগতভাবে ক্রয়/বিক্রয় করার শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪১৪: চোরাইমাল লুকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করার শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
২৬। প্রতারণা-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪১৫- ৪২৪
ধারা ৪১৫: প্রতারণার (Cheating) সংজ্ঞা
প্রতারণা: কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে অসাধুভাবে সম্পত্তি প্রদানে বা কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করলে তাকে প্রতারণা বলে।
ব্যাখ্যা: ছলনা: অসাধুভাবে তথ্য গোপন করাকে ছলনা বলে।
ধারা ৪১৬: অপরের রূপ ধারণ করে/ ছদ্মবেশে প্রতারণার (Cheating by personation) সংজ্ঞা
কোনো ব্যক্তি নিজেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে বা অপর কোনো ব্যক্তিকে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করলে সেটি অপরের রূপ ধারণপূর্বক প্রতারণা বলে গণ্য হবে।
ধারা ৪১৭: প্রতারণার শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪১৯: অপরের রূপ ধারণপূর্বক প্রতারণার শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪২০: প্রতারণা করে সম্পত্তি অর্জন বা দলিল প্রণয়নের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
২৭। ক্ষতিসাধন (Mischief)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪২৫- ৪৪০
ধারা ৪২৫: ক্ষতি বা অনিষ্টসাধন (Mischief)
জনসাধারণের বা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করাকে ক্ষতি বা অনিষ্ট বলে।
ধারা ৪২৬: ক্ষতি বা অনিষ্টসাধনের শাস্তি- ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪২৭: ৫০ টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ অর্থের ক্ষতি বা অনিষ্টসাধনের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪২৯: ৫০ টাকা বা তদূর্ধ্ব মূল্যের পশু হত্যা বা বিকলাঙ্গ করে ক্ষতির শাস্তি- ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
২৮। অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ (Criminal Trespass)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৪১- ৪৬২খ
ধারা ৪৪১: অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ (Criminal Trespass)
কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধ, অপমান, ভীতি প্রদর্শন বা বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির দখলভুক্ত সম্পত্তির ভিতরে বা উপরে প্রবেশ করে তাহলে সেটি অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ বলে গণ্য হবে।
ধারা ৪৪২: গৃহে অনধিকার প্রবেশ (House Trespass)
মানুষের আবাসস্থল হিসাবে ব্যবহৃত গৃহ, তাবু, জলযান বা উপাসনালয় অথবা সম্পত্তির হেফাজত স্থানে প্রবেশ করে বা অবস্থান করে অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ সংঘটন করে তাহলে তাকে অনধিকার গৃহে প্রবেশ বলা হবে।
[যেমন সিঁদ কেটে গৃহে প্রবেশ]
ধারা ৪৪৩: সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ (Lurking House Trespass)
বিষয়টি গোপন রাখার ব্যবস্থা করে গৃহে প্রবেশ করলে তাকে সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ বলে।
ধারা ৪৪৪: রাত্রিকালে সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ (Lurking House Trespass at night)
সূর্যাস্তের পরে ও সূর্যদয়ের পূর্বে সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ করলে তাহা রাত্রিকালে সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ বলে গণ্য হবে।
ধারা ৪৪৫: অপথে গৃহে প্রবেশ (House Breaking)
নিম্ন বর্ণিত ৬ উপায়ে গৃহে প্রবেশ করলে অপথে গৃহে প্রবেশ বলে গণ্য হবে
(১) নিজের তৈরী পথে
(২) দেওয়াল বা গৃহ টপকিয়ে
(৩) গৃহের মালিকের উদ্দেশ্য ছাড়া তৈরী পথে
(৪) তালা খুলে
(৫) অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ, আঘাত বা হুমকি দিয়ে
(৬) বন্ধ রাখা পথে
ধারা ৪৪৬: রাত্রিকালে অপথে গৃহে প্রবেশ। সূর্যাস্তের পরে ও সূর্যোদয়ের পূর্বে সিধ কেটে বা দরজা জানালা ভেঙে গৃহে প্রবেশ করলে তাহা রাত্রিকালে অপথে গৃহে প্রবেশ বলে গণ্য হবে।
ধারা ৪৪৭: অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশের শাস্তি- ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/ ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪৪৮: গৃহে অনধিকার প্রবেশের শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪৪৯: মৃত্যুদণ্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে গৃহে অনধিকার প্রবেশের শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪৫০: যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ ঘটানোর উদ্দেশ্যে গৃহে অনধিকার প্রবেশের শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৫১: কারাদন্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ ঘটানোর উদ্দেশ্যে গৃহে অনধিকার প্রবেশের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
চুরির উদ্দেশ্যে গৃহে অনধিকার প্রবেশের শাস্তি – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৫৩: সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ বা অপথে গৃহে প্রবেশের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৫৬: রাত্রে সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ বা অপথে গৃহে প্রবেশের শাস্তি- ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৬০: রাত্রে সংগোপনে গৃহে অনধিকার প্রবেশ বা অপথে গৃহে প্রবেশের সাথে সম্মিলিতভাবে জড়িত ব্যক্তিদের ভিতর যেকোনো একজন মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত প্রদান করলে প্রত্যেকের শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
২৯। জালিয়াতির (Forgery)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৬৩- ৪৮৯
ধারা ৪৬৩: জালিয়াতির (Forgery) সংজ্ঞা
নিম্নলিখিত কারণে মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশ বিশেষ প্রণয়ন করলে তাহা জালিয়াতি বলে গণ্য হবে –
- কাহারো ক্ষতির জন্য
- স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য
- সম্পত্তি ত্যাগে বাধ্য করার জন্য
- চুক্তি সম্পাদনের জন্য
- প্রতারণা করার জন্য
ধারা ৪৬৪: মিথ্যা অথবা জাল দলিল প্রনয়ণ (Making a false document)
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন বলে গণ্য হবে –
- অন্যের স্বাক্ষর ও সীল নকল করলে
- দলিলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করলে
- অন্যের দ্বারা দলিল স্বাক্ষর, সীলমোহর বা পরিবর্তিত করলে
ধারা ৪৬৫: জালিয়াতির শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৪৬৬: আদালতের নথি বা সরকারী রেজিস্টার ইত্যাদি জালকরণের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪৬৭: মূল্যবান জামানত বা উইল জালিয়াতির শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪৬৮: প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৭০: জাল দলিলের (Forged document) সংজ্ঞা। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে জালকৃত কোনো মিথ্যা দলিলকে বলা হয় জাল দলিল।
ধারা ৪৭৭এ: হিসাবপত্র সমূহে মিথ্যা বর্ণনার শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয় দন্ড।
ধারা ৪৭৮: পণ্য প্রতীক (Trade Mark) সংজ্ঞা। কোনো পণ্যদ্রব্য, কোনো বিশেষ ব্যক্তির উৎপাদিত পণ্য বা ব্যবসায়ের পণ্য বলে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন বা মার্কাকে পণ্য প্রতীক বলে।
ধারা ৪৭৯: সম্পত্তি চিহ্ন (Property Mark) সংজ্ঞা। কোনো অস্থাবর সম্পত্তি কোনো বিশেষ ব্যক্তির মালিকানাধীন বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত চিহ্নকে সম্পত্তি চিহ্ন বলে।
ধারা ৪৮২: মিথ্যা পণ্য প্রতীক বা ট্রেড মার্ক ব্যবহারের শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয় দন্ড।
৩০। পত্রমুদ্রা বা ব্যাংক নোট জাল করার (Counterfeiting currency-notes or bank-notes)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৮৯এ- ৪৮৯সি
ধারা ৪৮৯এ: পত্রমুদ্রা বা ব্যাংক নোট জাল করার (Counterfeiting currency-notes or bank-notes) শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ৪৮৯বি: নকল বা মেকী পত্রমুদ্রা বা ব্যাংক নোট খাটি বলে ব্যবহার/ক্রয়-বিক্রয়/লেনদেন করার শাস্তি- যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ৪৮৯সি: নকল বা মেকী পত্রমুদ্রা বা ব্যাংক নোট জেনে শুনে দখলে রাখার শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
৩১। অপরাধমূলক চাকুরি চুক্তি ভংগ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৯০- ৪৯১
ধারা ৪৯১- অসহায় ব্যক্তির দেখাশুনা করতে বাধ্য হওয়া সত্ত্বেও দেখাশুনা না করার শাস্তি- তিন মাস কারাদন্ড/২০০ টাকা/ উভয় দন্ড।
৩২। বিবাহ সম্পর্কিত অপরাধ-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৯২- ৪৯৮
ধারা ৪৯৩: কোনো নারীকে আইনানুগ বিবাহের বিশ্বাসে প্ররোচিত করে স্বামী স্ত্রী রূপে সহবাস করার (Deceitful cohabitation including belief of lawful marriage) শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ৪৯৪: স্বামী স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহ/ দ্বিবিবাহ/ দ্বিগামিতার (Bigamy) শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড।
ব্যতিক্রম: নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অপরাধ হবে না –
(১) স্বামী স্ত্রীর বিবাহ আদালত কর্তৃক নাকচ ঘোষিত হলে
(২) স্বামী বা স্ত্রী ৭ বছর নিখোঁজ থাকলে
ধারা ৪৯৫: পূর্বের বিবাহ গোপন করে পুনরায় বিবাহের শাস্তি- ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৯৬: প্রতারণামূলক বিবাহের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ৪৯৭: ব্যাভিচারের (Adultery) শাস্তি- কোনো ব্যক্তি জেনেশুনে অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে উক্ত অপর ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া যৌন সঙ্গম করে যা নারী ধর্ষণের সামিল নহে তাকে ব্যভিচার বলে।
ব্যাভিচারের শাস্তি – ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
এক্ষেত্রে প্ররোচনার জন্য নারীর কোনো শাস্তি হবে না। এই ধারায় মামলা করতে পারবে ঐ নারীর স্বামী।
৩৩। মানহানি (Defamation)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৪৯৯- ৫০২
ধারা ৪৯৯: মানহানি বা দুর্নাম করা (Defamation)
যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে জেনেশুনে কোনো কথা, চিহ্ন বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করে তাকে মানহানি বলে।
এই ধারায় ৪ টি ব্যাখ্যা ও ১০ টি ব্যতিক্রম আছে। [মৃত ব্যক্তি বা কৃত্রিম ব্যক্তির (কোম্পানি) ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে।]
ধারা ৫০০: মানহানির শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৫০১: মানহানিকর বস্তু মুদ্রণের শাস্তি- ২ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
৩৪। অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন (Criminal Intimidation)-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৫০৩- ৫১০
ধারা ৫০৩: অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন (Criminal Intimidation)
যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির দেহ, খ্যাতি বা সম্পত্তির ক্ষতি করার ভীতি প্রদর্শন করে সে যা করতে বাধ্য নয় তাহা করতে বাধ্য করে অথবা সে যা করতে বাধ্য তাহা করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে তাহলে তাকে অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন বলে।
[দেওয়ানী মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখার জন্য কাহারো বাড়ি পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেওয়া]
ধারা ৫০৬: অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শনের শাস্তি- ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয় দন্ড।
মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ইত্যাদির ভীতি প্রদর্শনের শাস্তি – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
স্ত্রীলোকের সতীত্ব নষ্ট হয়েছে বলে দুর্নাম আরোপের হুমকি দিলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৫০৯: নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কাজ (Eve-teasing) করার শাস্তি- ১ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয় দন্ড।
ধারা ৫১০: মাতাল বা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি প্রকাশ্যে অসদাচরণ করার ফলে কাহারো বিরক্ত ঘটলে শাস্তি- ২৪ ঘন্টা বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ১০ টাকা অর্থদণ্ড/ উভয় দন্ড।
৩৫। অপরাধ সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণে-
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৫১১
ধারা ৫১১: যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণের শাস্তি- যে অপরাধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার জন্য বিহিত সর্বোচ্চ শাস্তির অর্ধেক পর্যন্ত কারাদণ্ড/ বিহিত অর্থদণ্ড/ উভয়দন্ড।
[যেমন পকেট মারার উদ্দেশ্যে পকেটে হাত দিয়ে কিছু পেল না]
Written by
Advocate Muhammad Mohiuddin (Shishir)
LLB, LLM, MBA
01711-068609 / 01540-105088