বাংলাদেশের সংবিধান

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত অনুচ্ছেদসমূহ অত্যন্ত সহজ ভাষায় এখানে তুলে ধরা হলো:

সংবিধানের প্রাথমিক তথ্য:

প্রণয়ন/ প্রকাশ

৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২

কার্যকর

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২

প্রস্তাবনা (Preamble)

১ টি

ভাগ (Part)

১১ টি

অনুচ্ছেদ (Article)

১৫৩ টি

তফসিল (Schedule)  

৭ টি (বর্তমানে কার্যকর আছে ৬ টি)

বাংলাদেশের নাম

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (People’s Republic of Bangladesh)

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

The Constitution of the People’s Republic of Bangladesh

প্রথম ভাগ (Part I)

প্রজাতন্ত্র (Republic) (অনুচ্ছেদ ১–৭)

 

অনুচ্ছেদ ১: প্রজাতন্ত্র

বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” (People’s Republic of Bangladesh) নামে পরিচিতি হইবে।

 

ব্যাখ্যা:

বাংলাদেশের নাম হলো “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” (People’s Republic of Bangladesh) এবং বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র।

 

অনুচ্ছেদ ২: প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা 

২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখের পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের সীমানাভূক্ত সকল স্থান এবং পরবর্তীতে সীমানাভূক্ত হইতে পারে সেই সকল স্থান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানার অন্তর্ভূক্ত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ২ক: রাষ্ট্রধর্ম ।

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।

 

অনুচ্ছেদ : রাষ্ট্রভাষা। 

প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। 

 

অনুচ্ছেদ ৪: জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা প্রতীক

(১) প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা” এর প্রথম দশ চরণ।

(২) প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা হইতেছে সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত।

(৩) প্রজাতন্ত্রের জাতীয় প্রতীক হইতেছে উভয় পার্শ্বে ধান্যশীর্ষবেষ্টিত, পানিতে ভাসমান জাতীয় পুষ্প শাপলা, তাহার শীর্ষদেশে পাটগাছের তিনটি পরস্পর-সংযুক্ত পত্র, তাহার উভয় পার্শ্বে দুইটি করিয়া তারকা।

(৪) উপরোক্ত জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক এর বিধানাবলী আইন দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৪ক: জাতির পিতার প্রতিকৃতি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নিম্নলিখিত স্থানসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে-

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয়

সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান

সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়

সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহ

 

অনুচ্ছেদ ৫: প্রজাতন্ত্রের রাজধানী

(১) প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঢাকা।

(২) রাজধানীর সীমানা আইন দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৬: নাগরিকত্ব।

(১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

(২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।

 

অনুচ্ছেদ ৭: সংবিধানের প্রাধান্য।

(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷

(২) এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷

 

অনুচ্ছেদ ৭ক: সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ।

(১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগ বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধান বাতিল, স্থগিত করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তাহা রাষ্ট্রদ্রহিতার অপরাধ হইবে।

(২) এই অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৭খ: সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য।

সংবিধানের নিম্নলিখিত অংশ সংশোধন করা যাইবে না-

প্রস্তাবনা, ১ম ভাগ, ২য় ভাগ, ৩য় ভাগ, ১৫০ অনুচ্ছেদ।

 

দ্বিতীয় ভাগ (Part II)

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি (Fundamental Principles of the State Policy) (অনুচ্ছেদ ৮–২৫)

 

অনুচ্ছেদ ৮(১): জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা (Nationalism, socialism, democracy and secularism)- এই নীতিসমূহ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৯: জাতীয়তাবাদ।

বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি

 

অনুচ্ছেদ ১০: সমাজতন্ত্র।

শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ

 

অনুচ্ছেদ ১১: গণতন্ত্র।

মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

অনুচ্ছেদ ১২: ধর্মনিরপেক্ষতা

অনুচ্ছেদ ১৪: কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র।

অনুচ্ছেদ ১৫: মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ ১৬: গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ ১৭: অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ ১৮: জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ ১৮ক: পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ ১৯: সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ ২২: নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।

অনুচ্ছেদ ২৩: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

অনুচ্ছেদ ২৫: আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন।

 

তৃতীয় ভাগ (Part III)

মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) (অনুচ্ছেদ ২৬–৪৭ক)

অনুচ্ছেদ ২৭: সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হবে।

অনুচ্ছেদ ২৮(২): রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে।

 

অনুচ্ছেদ ২৯: (১) সরকারী নিয়োগ ও পদ লাভে সুযোগ সমতা।

(২) ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষ বা জন্মস্থানের জন্য নিয়োগে বৈষম্য হবে না।

(৩) নিয়োগে অনগ্রসর জাতির বিশেষ বিধান।

 

অনুচ্ছেদ ৩৩: গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ (Safeguards as to arrest & detention).

(১) গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে। আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

(২) গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে।

(৩) বিদেশী শত্রু বা নিবর্তনমূলক আইনের অধীন গ্রেফতার করলে ৬ মাসের মধ্যে উপদেষ্টা পর্ষদের সামনে হাজির করতে হবে।

 

অনুচ্ছেদ ৩৫: বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষা কবচ।

১। অপরাধ-সংঘটনকালে বলবত আইনবলে কোনো ব্যক্তিকে যে দন্ড দেওয়া যেত, তাহাকে তাহার অধিক বা তাহা হতে ভিন্ন দন্ড দেওয়া যাবে না।

[Ex post facto laws]

 

অনুচ্ছেদ ৩৬: চলাফেরার স্বাধীনতা।  

জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ- সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ৩৭: সমাবেশের স্বাধীনতা। 

জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ৩৮: সংগঠনের স্বাধীনতা। 

জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ৩৯: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা। 

(১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।

(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং

(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।

 

অনুচ্ছেদ ৪০: পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা। 

আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা থাকিলে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ৪১: ধর্মীয় স্বাধীনতা। 

আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে;

(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।

(২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।

 

অনুচ্ছেদ ৪২: সম্পত্তির অধিকার। 

(১) আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বা দখল করা যাইবে না।(২) এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় ও প্রদানের নীতি ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে; তবে অনুরূপ কোন আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।

 

অনুচ্ছেদ ৪৪: মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ। 

(১) মৌলিক অধিকার বলবৎ করিবার জন্য অনুচ্ছেদ ১০২(১) অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল।

(২) ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোন আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ঐ সকল বা উহার যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ৪৫: শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন।

শৃঙ্খলা-বাহিনীর সদস্য সম্পর্কিত কোন বিধান উক্ত সদস্যদের যথাযথ কর্তব্যপালন বা উক্ত বাহিনীতে শৃঙ্খলারক্ষা নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধানের ক্ষেত্রে এই ভাগের কোন কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।

 

অনুচ্ছেদ ৪৬: দায়মুক্তি-বিধানের ক্ষমতা। 

প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তি জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রয়োজনে কিংবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে যে কোন অঞ্চলে শৃঙ্খলা রক্ষা বা পুনর্বহালের প্রয়োজনে কোন কার্য করিয়া থাকিলে সংসদ আইনের দ্বারা সেই ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করিতে পারিবেন কিংবা ঐ অঞ্চলে প্রদত্ত কোন দণ্ডাদেশ, দণ্ড বা বাজেয়াপ্তির আদেশকে কিংবা অন্য কোন কার্যকে বৈধ করিয়া লইতে পারিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ৪৭: কতিপয় আইনের হেফাজত।

 

অনুচ্ছেদ ৪৭ক: সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা

(১) অনুচ্ছেদ ৪৭(৩) অনুচায়ী গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধীদের ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১, ৩৫(১) ও ৩৫(৩) এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধিকার সমূহ প্রযোজ্য হইবে না।

(২) অনুচ্ছেদ ৪৭(৩) অনুচায়ী গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধীগণ কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিতে পারিবে না।

 

[যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা জন্য ১৫ জুলাই, ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ১ম সংশোধনীতে এই অনুচ্ছেদ সংযোজন করেন।]

 

চতুর্থ ভাগ (Part IV)

নির্বাহী বিভাগ (The Executive) (অনুচ্ছেদ ৪৮ – ৬৪)

 

অনুচ্ছেদ ৪৮: রাষ্ট্রপতি

(১) বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।

(২) রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন।

(৩) রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন। ২ টি ক্ষেত্র ছাড়া –

  • প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত, অনুচ্ছেদ ৫৬(৩)
  • প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত, অনুচ্ছেদ ৯৫(১)

এই বিষয়ে আদালত তদন্ত করিতে পারিবেন না।

(৪) কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি-

(ক) পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা

(খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন; অথবা

(গ) কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হইয়া থাকেন।

 

অনুচ্ছেদ ৪৯: ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার। 

কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ৫০: রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ। 

(১) রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ পাঁচ বৎসর।

(২) দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।

(৩) স্পীকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।

(৪) রাষ্ট্রপতি তাঁহার কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, এবং কোন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাঁহার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৫১: রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি।

(১) রাষ্ট্রপতিকে কোন আদালতে জবাবদিহি করিতে হইবে না,

(২) রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আদালতে কোন ফৌজদারী কার্যধারা গ্রহন এবং পরোয়ানা জারী করা যাইবে না।

 

অনুচ্ছেদ ৫২: রাষ্ট্রপতির অভিশংসন।

(১) এই সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাইতে পারিবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পীকারের নিকট প্রদান করিতে হইবে; স্পীকারের নিকট অনুরূপ নোটিশ প্রদানের দিন হইতে চৌদ্দ দিনের পূর্বে বা ত্রিশ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হইতে পারিবে না এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকিলে স্পীকার অবিলম্বে সংসদ আহবান করিবেন।

(২) এই অনুচ্ছেদের অধীন কোন অভিযোগ তদন্তের জন্য সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত বা আখ্যায়িত কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট সংসদ রাষ্ট্রপতির আচরণ গোচর করিতে পারিবেন।

(৩) অভিযোগ বিবেচনাকালে রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকিবার এবং প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকার থাকিবে।

(৪) অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলিয়া ঘোষণা করিয়া সংসদ কোন প্রস্তাব গ্রহণ করিলে প্রস্তাব গৃহীত হইবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৫৪: রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতির-কালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন স্পীকার।

রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ৫৫: মন্ত্রীসভা।

(১) প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রীসভা থাকিবে।

(২) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৫৬: মন্ত্রীগণ।

(১) একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন।

(২) প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।

অনুচ্ছেদ ৬১: বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়ক হইবেন রাষ্ট্রপতি।

 

অনুচ্ছেদ ৬৪: অ্যাটর্ণি-জেনারেল।

(১) সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হইবার যোগ্য কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অ্যাটর্ণি-জেনারেল পদে নিয়োগদান করিবেন।

(২) অ্যাটর্ণি-জেনারেল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত সকল দায়িত্ব পালন করিবেন।

(৩) অ্যাটর্ণি-জেনারেলের দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের সকল আদালতে তাঁহার বক্তব্য পেশ করিবার অধিকার থাকিবে।

(৪) রাষ্ট্রপতির সন্তোষানুযায়ী সময়সীমা পর্যন্ত অ্যাটর্ণি-জেনারেল স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।

 

পঞ্চম ভাগ (Part V)

আইনসভা (The Legislature) (অনুচ্ছেদ ৬৫ – ৯৩)

 

অনুচ্ছেদ ৬৫: সংসদ-প্রতিষ্ঠা।

(১) জাতীয় সংসদ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকবে এবং সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত থাকবে।

(২) আঞ্চলিক নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে।

(৩) ৫০ টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্য দ্বারা নির্বাচিত হবেন।

[২০১৮ সালে ১৭তম সংশোধনী দ্বারা সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ ২৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে]

(৪) রাজধানীতে সংসদের আসন থাকবে।

 

অনুচ্ছেদ ৬৬: সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা।

(১) সংসদে নির্বাচিত হবার যোগ্যতা –

  • বাংলাদেশের নাগরিক
  • ২৫ বছর বয়স।

(২) সংসদে নির্বাচিত হবার অযোগ্যতা –

  • পাগল
  • দেওলিয়া
  • বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ
  • অন্যূন ২ বছর কারাদন্ড ভোগ এবং মুক্তিলাভের পর ৫ বছর অতিবাহিত হয় নাই।

 

অনুচ্ছেদ ৬৭: সনংসদের আসন শূন্য হওয়া।

(১) কোনো সংসদের আসন শূন্য হইবে, যদি

(ক) ৯০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ করিলে।

(খ) ৯০ দিন অনুমতি ব্যতীত অনুপস্থিত থাকিলে।

(গ) সংসদ ভেঙ্গে গেলে।

(ঘ) অনুচ্ছেদ ৬৬(২) অনুযায়ী অযোগ্য হলে।

(ঙ) পদত্যাগ করলে। (অনুচ্ছেদ ৭০)

 

অনুচ্ছেদ ৬৯: অযোগ্য হওয়া স্বত্ত্বেও সংসদের আসন গ্রহণ ও ভোটদান করলে তিনি প্রতিদিনের জন্য ১০০০ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

 

অনুচ্ছেদ ৭০: রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-

(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা

(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,

তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

 

অনুচ্ছেদ ৭১: দ্বৈত-সদস্যতায় বাধা।

(১) কোন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক নির্বাচনী এলাকার সংসদ-সদস্য হইবেন না।

(২) একাধিক নির্বাচনী এলাকা হইতে নির্বাচিত হইলে-

(ক) সর্বশেষ নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে তিনি কোন্ নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করিতে ইচ্ছুক, তাহা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করিবেন অতঃপর অন্যান্য এলাকার আসনসমূহ শূন্য হইবে;

(খ) এই দফার (ক) উপ-দফা মান্য করিতে অসমর্থ হইলে তিনি যে সকল আসনে নির্বাচিত হইয়াছিলেন, সেই সকল আসন শূন্য হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৭৪: স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার।

(১)সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সংসদ-সদস্যদের মধ্য হইতে সংসদ একজন স্পীকার ও একজন ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত করিবেন।

(২) স্পীকার বা ডেপুটি স্পীকারের পদ শূন্য হইবে, যদি

(ক) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন;

(খ) তিনি মন্ত্রী-পদ গ্রহণ করেন;

(গ) সংসদ-সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাঁহার অপসারণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হলে;

(ঘ) পদ ত্যাগ করলে;

(ঙ)অন্য কোন সদস্য তাঁহার কার্যভার গ্রহণ করেন; অথবা

(চ) ডেপুটি স্পীকারের ক্ষেত্রে, তিনি স্পীকারের পদে যোগদান করেন।

 

অনুচ্ছেদ ৭৬: সংসদের স্থায়ী কমিটিসমূহ। 

 

অনুচ্ছেদ ৭৭: ন্যায়পাল (Ombudsman)

(১) সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ-প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করিতে পারিবেন।

(২) সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালকে কোন মন্ত্রণালয়, সরকারী কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের যে কোন কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ যেরূপ ক্ষমতা কিংবা যেরূপ দায়িত্ব প্রদান করিবেন, ন্যায়পাল সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবেন।

(৩) ন্যায়পাল তাঁহার দায়িত্বপালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপোর্ট প্রণয়ন করিবেন এবং অনুরূপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৮০: আইন প্রণয়ন পদ্ধতি। 

(১) আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে আনীত প্রত্যেকটি প্রস্তাব বিল আকারে উত্থাপিত হবে।

(২) সংসদ কর্তৃক কোনো বিল গৃহিত হলে তা সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে।

(৩) পেশ করার ১৫ দিনের মধ্যে তিনি সম্মতি দান করবেন। বিলটি পুর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রেরণ করতে পারবেন। তাহা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদ শেষে তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলে গণ্য হবে।

(৪) পুর্বিবেচনার পর বিলটি সংসদ কর্তৃক গৃহিত হলে তা সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে। পেশ করার পর ৭ দিনের মধ্যে তিনি সম্মতি দান করবেন। তাহা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদ শেষে তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলে গণ্য হবে।

(৫) রাষ্ট্রপতি সম্মতি দান করলে কিংবা সম্মতি দিয়েছেন বলে গণ্য হলে বিলটি আইনে পরিণত হবে।

 

অনুচ্ছেদ ৮১: অর্থবিল। 

(১) অর্থবিল বলতে নিম্নলিখিত সকল বা যেকোনো একটি কে বুঝাবে –

(ক) কর সংক্রান্ত বিল

(খ) ঋণ সংক্রান্ত বিল

(গ) সংযুক্ত তহবিল সংক্রান্ত বিল

(ঘ) সংযুক্ত তহবিলের দায় সংক্রান্ত বিল

(ঙ) সরকারের হিসাব নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিল

 

অনুচ্ছেদ ৮৩: সংসদের আইন ব্যতীত করারোপে বাধা।

সংসদের কোন আইনের দ্বারা বা কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন কর আরোপ বা সংগ্রহ করা যাইবে না।

 

অনুচ্ছেদ ৮৪: সংযুক্ত তহবিল ও প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিসাব।

(১) সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত সকল রাজস্ব, সরকার কর্তৃক সংগৃহীত সকল ঋণ এবং কোন ঋণ পরিশোধ হইতে সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত সকল অর্থ একটি মাত্র তহবিলের অংশে পরিণত হইবে এবং তাহা “সংযুক্ত তহবিল” নামে অভিহিত হইবে।

(২) সরকার কর্তৃক বা সরকারের পক্ষে প্রাপ্ত অন্য সকল সরকারী অর্থ প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিসাবে জমা হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ৯৩: অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতা।

(১) সংসদ ভেঙ্গে গেলে বা অধিবেশনকাল ব্যতীত কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যাবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন মনে হলে তিনি অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করতে পারবেন।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত –

(ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না;

(খ) যাহাতে এই সংবিধানের কোন বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়; অথবা

(খ) যাহার দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোন অধ্যাদেশের যে কোন বিধানকে অব্যাহতভাবে বলবৎ করা যায়।

(২) অধ্যাদেশ জারী হবার পর অনুষ্ঠিত সংসদের প্রথম বৈঠকে তাহা উপস্থাপন করতে হবে এবং তাহা ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে গৃহিত না হলে কার্যকারিতা লোপ পাবে।

(৩) অধ্যাদেশ জারী হবার পর তাহা সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।

(৪) জারীকৃত অধ্যাদেশ যথাশীঘ্র সম্ভব সংসদে উপস্থাপন করতে হবে।

 

ষষ্ঠ ভাগ (Part VI)

বিচার বিভাগ (The Judiciary) (অনুচ্ছেদ ৯৪ – ১১৭)

 

অনুচ্ছেদ ৯৪: সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠা  

(১) “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট” নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকবে এবং তাহা আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত হবে।

(২) প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রয়োজনীয় সংখক বিচারক নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হবে।

(৩) প্রধান বিচারপতি এবং আপীল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ আসন গ্রহণ করবেন আপীল বিভাগে অন্যান্য বিচারকগণ আসন গ্রহণ করবেন হাইকোর্ট বিভাগে।

(৪) সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন।

 

অনুচ্ছেদ ৯৫: বিচারক-নিয়োগ। 

(১) প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।

(২) বিচারক হবার যোগ্য হতে হলে একজন বাংলাদেশের নাগরিকের নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে

(ক) সুপ্রীম কোর্টে অন্যূন ১০ বছর এডভোকেট থাকতে হবে, অথবা

(খ) বাংলাদেশের বিচার বিভাগে কমপক্ষে ১০ বছর বিচারক পদে থাকতে হবে, অথবা

(গ) সুপ্রীম কোর্টে বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য যোগ্যতা থাকতে হবে।

 

অনুচ্ছেদ ৯৬: বিচারকদের পদের মেয়াদ।

(১) কোনো বিচারক ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।

(২) নিম্নলিখিত বিধান ব্যতীত কোনো বিচারককে তাহার পদ হতে অপসারণ করা যাবে না।

(৩) “কাউন্সিল” নামে একটি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকবে। যাহা প্রধান বিচারপতি এবং তার পরবর্তী কর্মে প্রবীণ ২ জন বিচারক নিয়ে গঠিত হবে।

(৪) কাউন্সিলের দায়িত্ব –

(ক) বিচারকগণের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করা।

(খ) কোনো বিচারকের আচরণ তদন্ত করা।

(৫) রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে কোনো বিচারকের বিষয়ে তদন্ত করে ও রিপোর্ট দানের নির্দেশ দিবেন –

(ক) শারিরীক ও মানসিকভাবে অক্ষম হলে।

(খ) গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হলে।

(৬) তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী কোনো বিচারক শারিরীকভাবে বা মানসিকভাবে অক্ষম কিংবা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী বলে প্রমাণিত হলে রাষ্ট্রপতি বিচারককে অপসারণ করবেন।

 

অনুচ্ছেদ ১০০ – সুপ্রীম কোর্টের আসন।

রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে।

 

অনুচ্ছেদ ১০১ – হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার।

এই সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা হাইকোর্ট বিভাগের উপর যেরুপ আদি, আপীল ও অন্য প্রকার এখতিয়ার ও ক্ষমতা অর্পিত হইয়াছে, উক্ত বিভাগের সেইরুপ এখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ১০২: কতিপয় আদেশ দানে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা/রিট (Writ)

(১) মৌলিক অধিকার বলবৎ করিবার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ উপযুক্ত আদেশা দান করিতে পারিবেন।

(২) হাইকোর্ট বিভাগ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনে সরকার বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারেন-

(ক) কোন দায়িত্ব পালন করা বা করা হইতে বিরত রাখিবার জন্য।

(খ) কৃত কোন কার্যধারার কোন কার্যকরতা নাই বলিয়া ঘোষণা।

(গ) প্রহরায় আটক উক্ত ব্যক্তিকে উক্ত বিভাগের সম্মুখে আনয়নের নির্দেশ প্রদান।

(ঘ) কোন সরকারি পদে আসীন ব্যক্তি কোন্ কর্তৃত্ববলে উক্ত পদের অধিকারী তাহা প্রদর্শনের নির্দেশ।

(ঙ) অর্ন্তবর্তী আদেশ

 

[৫ ধরনের রিটের বর্ণনা আছে –

  • Habeas Corpus  (Have the body / বন্দী প্রদর্শন / স্বশরীরে হাজির করা)
  • Mandamus (পরমাদেশ)
  • Prohobition (নিষেধাজ্ঞা)
  • Certiorari (ঊতপ্রেষণ)
  • Quo-warranto (কারণ দর্শাও)]

 

অনুচ্ছেদ ১০৩: আপীল বিভাগের এখতিয়ার।

(১) হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রী, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানী ও নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

(২) আপীল বিভাগে ৩ টি ক্ষেত্রে অধিকার বলে আপীল করা যাবে –

(ক) হাইকোর্ট বিভাগ আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত মর্মে কোনো সার্টিফিকেট দিলে।

(খ) মৃত্যুদন্ডে বা যবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হলে।

(গ) হাইকোর্ট বিভাগকে অবমাননার জন্য দন্ডিত হলে বা সংসদে আইন দ্বারা কোনো বিধান করা হলে।

(৩) অনুচ্ছেদ ২ এ উল্লেখিত ক্ষেত্র ব্যতীত আপীল বিভাগে আপীল করতে হলে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি (Leave to appeal) নিতে হবে।

 

অনুচ্ছেদ ১০৪: আপীল বিভাগের পরোয়ানা জারী ও নির্বাহ।

আপীল বিভাগ কোনো ব্যক্তিকে হাজির করা বা দলিলপত্র দাখিল করার জন্য নির্দেশ, আদেশ, ডিক্রী বা রীট জারী করতে পারেন।

 

অনুচ্ছেদ ১০৮: “কোর্ট অব রেকর্ড” রূপে সুপ্রীম কোর্ট। 

সুপ্রীম কোর্ট একটি “কোর্ট অব্ রেকর্ড” হইবেন এবং ইহার অবমাননার জন্য তদন্তের আদেশদান বা দণ্ডাদেশদানের ক্ষমতাসহ আইন-সাপেক্ষে অনুরূপ আদালতের সকল ক্ষমতার অধিকারী থাকিবেন।।

 

অনুচ্ছেদ ১১৭: প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালসমূহ।

(১) নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমুহের উপর এখতিয়ার প্রয়োগের জন্য সংসদ আইনের দ্বারা এক বা একাধিক প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিবেন-

(ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিদের কর্মের শর্তাবলী;

(খ) সরকারী কর্তৃপক্ষের কর্মসমূহ বা সরকার পরিচালিত সম্পত্তির অর্জন, প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও বিলি-ব্যবস্থা;

(গ) যে আইনের উপর এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (৩) দফা প্রযোজ্য হয়, সেইরূপ কোন আইন।

(২) কোন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হইলে উক্ত ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারের অন্তর্গত কোন বিষয়ে অন্য কোন আদালত কোনরূপ কার্যধারা গ্রহণ করিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, সংসদ আইনের দ্বারা কোন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা বা অনুরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীলের বিধান করিতে পারিবেন।

 

সপ্তম ভাগ (Part VII)

নির্বাচন (Elections) (অনুচ্ছেদ ১১৮ – ১২৬)

 

অনুচ্ছেদ ১১৮: নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা।

(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে যাদেরকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগদান করিবেন।

(২) প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভাপতিরূপে কার্য করিবেন।

(৩) নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে।

(ক) প্রধান নির্বাচন কমিশনার-পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এমন ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন না;

(খ) অন্য কোন নির্বাচন কমিশনার অনুরূপ পদে কর্মাবসানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনাররূপে নিয়োগলাভের যোগ্য হইবেন,

(৪) নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।

(৫) সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।

(৬) কোন নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ১১৯: নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। 

(১) রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী

(ক) রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করিবেন;

(খ) সংসদ-সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করিবেন;

(গ) সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করিবেন; এবং

(ঘ) রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুত করিবেন।

(২) উপরি উক্ত দফাসমূহে নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যেরূপ দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে, নির্বাচন কমিশন সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ১২২: ভোটার-তালিকায় নামভুক্তির যোগ্যতা।

(১) প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার-ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

(২) ভোটার-তালিকাভু্ক্ত হইবার যোগ্যতা-

(ক) তিনি বাংলাদেশের নাগরিক;

(খ) বয়স আঠার বৎসরের কম নয়;

(গ) কোন যোগ্য আদালত কর্তৃক তাঁহার সম্পর্কে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা বহাল না থাকিয়া থাকে;

ঘ) নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী বিবেচিত হন; এবং

(ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত না হইয়া থাকেন।

 

অনুচ্ছেদ ১২৪: নির্বাচন সম্পর্কে সংসদের বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা। 

এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণ, ভোটার-তালিকা প্রস্তুতকরণ, নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সংসদের যথাযথ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়সহ সংসদের নির্বাচন সংক্রান্ত বা নির্বাচনের সহিত সম্পর্কিত সকল বিষয়ে বিধান প্রণয়ন করিতে পারিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ১২৬: নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তাদান। 

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।

 

অষ্টম ভাগ (Part VIII)

মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (The Comptroller and Auditor General) (অনুচ্ছেদ ১২৭-১৩২)

অনুচ্ছেদ ১২৭: মহা হিসাব-নিরীক্ষক পদের প্রতিষ্ঠা

(১) বাংলাদেশের একজন “মহা হিসাব-নিরীক্ষক” থাকিবেন এবং তাঁহাকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগদান করিবেন।

(২) এই সংবিধান ও সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে মহা হিসাব-নিরীক্ষকের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে।

 

নবম ভাগ (Part IX)

বাংলাদেশের কর্মবিভাগ (The Services of Bangladesh) (অনুচ্ছেদ ১৩৩-১৪১)

 

অনুচ্ছেদ ১৩৭: কমিশন-প্রতিষ্ঠা

আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারী কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান করা যাইবে এবং একজন সভাপতিকে ও অন্যান্য সদস্যকে লইয়া প্রত্যেক কমিশন গঠিত হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ১৪০: কমিশনের দায়িত্ব

(১) কোন সরকারী কর্ম কমিশনের দায়িত্ব হইবে

(ক) নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা-পরিচালনা করা।

(খ) রাষ্ট্রপতি কোন পরামর্শ চাইলে সেই সম্বন্ধে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দান করা।

(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।

(২) রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে কোন কমিশনের সহিত পরামর্শ করিবেন:

(ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মের জন্য যোগ্যতা ও তাহাতে নিয়োগের পদ্ধতি;

(খ) নিয়োগদান, পদোন্নতিদান ও বদলিকরণ নীতিসমূহ;

(গ) অবসর ভাতা এবং

(ঘ) কর্মের শৃঙ্খলামূলক বিষয়াদি।

 

অনুচ্ছেদ ১৪১: বার্ষিক রিপোর্ট

(১) প্রত্যেক কমিশন প্রতি বৎসর মার্চ মাসের প্রথম দিবসে বা তাহার পূর্বে পূর্ববর্তী একত্রিশে ডিসেম্বরে সমাপ্ত এক বৎসরে স্বীয় কার্যাবলী সম্বন্ধে রিপোর্ট প্রস্তুত করিবেন এবং তাহা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবেন।

(২) রিপোর্টের সহিত একটি স্মারকলিপি থাকিবে, যাহাতে

(৩) যে বৎসর রিপোর্ট পেশ করা হইয়াছে, সেই বৎসর একত্রিশে মার্চের পর অনুষ্ঠিত সংসদের প্রথম বৈঠকে রাষ্ট্রপতি উক্ত রিপোর্ট ও স্মারকলিপি সংসদে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করিবেন।

 

নবম-ক ভাগ (Part IX-A)

জরুরী বিধানাবলী (Emergency Provisions) (অনুচ্ছেদ ১৪১ক – ১৪১গ)

 

অনুচ্ছেদ ১৪১ক: জরুরী-অবস্থা ঘোষণা।

(১) যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের বিপদ আসন্ন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি অনধিক ১২০ দিনের জন্য জরুরী-অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হইবে।

(২) জরুরী-অবস্থার ঘোষণা

(ক) পরবর্তী কোন ঘোষণার দ্বারা প্রত্যাহার করা যাইবে;

(খ) সংসদে উপস্থাপিত হইবে;

(গ) ১২০ দিন অতিবাহিত হইবার পূর্বে সংসদের প্রস্তাব-দ্বারা অনুমোদিত হইতে হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ১৪১খ: জরুরী-অবস্থার সময় সংবিধানের কতিপয় অনুচ্ছেদের বিধান স্থগিতকরণ। 

জরুরী-অবস্থার সময় সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ অনুচ্ছেদসমূহ স্থগিত থাকিবে।

 

অনুচ্ছেদ ১৪১গ: জরুরী-অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারসমূহ স্থগিতকরণ

(১) জরুরী-অবস্থার সময় উক্ত আদেশ নির্ধারিত স্বল্প সময়ের জন্য মৌলিক অধিকারসমূহ স্থগিত থাকিবে।

(২) সমগ্র বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশে এই অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত আদেশ প্রযোজ্য হইতে পারিবে।

(৩) এই অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত প্রত্যেক আদেশ যথাসম্ভব শীঘ্র সংসদে উপস্থাপিত হইবে।

 

দশম ভাগ (Part X)

সংবিধান সংশোধন (Amendment of the Constitutions) (অনুচ্ছেদ ১৪২)

 

অনুচ্ছেদ ১৪২: সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা।

(ক) সংসদের আইন-দ্বারা এই সংবিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণ করা যাইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে,

(অ) সংশোধনীর জন্য আনীত কোন বিলের শিরনামায় কোন বিধান সংশোধন করা হইবে তাহা স্পষ্টরুপে উল্লেখ থাকিতে হইবে;

(আ) সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হইতে হইবে;

(খ) উপরি উক্ত উপায়ে কোন বিল গৃহীত হইবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তাহা উপস্থাপিত হইলে উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন, এবং তিনি তাহা করিতে অসমর্থ হইলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।

 

একাদশ ভাগ (Part XI)

বিবিধ (Miscellaneous) (অনুচ্ছেদ ১৪৩-১৫৩)

 

অনুচ্ছেদ ১৪৩: প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি। 

(১) নিম্নলিখিত সস্পত্তি প্রজাতন্ত্রের উপর ন্যস্ত হইবে:

(ক) ভূমির অন্তঃস্থ সকল খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী;

(খ) রাষ্ট্রীয় জলসীমার অন্তর্বর্তী মহাসাগরের অন্তঃস্থ সকল ভূমি, খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী; এবং

(গ) বাংলাদেশে অবস্থিত প্রকৃত মালিকবিহীন যে কোন সম্পত্তি।

(২) সংসদ আইনের দ্বারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার এবং রাষ্ট্রীয় জলসীমা ও মহীসোপানের সীমা নির্ধারণের বিধান করিতে পারিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ১৪৫: আন্তর্জাতিক চুক্তি।

বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে, এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেনঃ

তবে শর্ত থাকে যে, জাতীয় নিরাপত্তার সহিত সংশ্লিষ্ট অনুরুপ কোন চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ১৪৬: বাংলাদেশের নামে মামলা।

“বাংলাদেশ”-এই নামে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাইতে পারিবে।

 

অনুচ্ছেদ ১৪৭: কতিপয় পদাধিকারীর পারিশ্রমিক প্রভৃতি।

(১) নিম্নে উল্লেখিত পদে অধিষ্ঠিত বা কর্মরত ব্যক্তির পারিশ্রমিক, বিশেষ-অধিকার ও কর্মের অন্যান্য শর্ত সংসদের আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে, তবে অনুরূপভাবে নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত

(ক) পূর্বে যেরূপ প্রযোজ্য ছিল, সেইরূপ হইবে; অথবা

(খ) পূর্বে নির্ধারিত না থাকিলে রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ণয় করিবেন, সেইরূপ হইবে।

(২) এইরূপ ব্যক্তির পারিশ্রমিক, বিশেষ অধিকার ও কর্মের অন্যান্য শর্তের এমন তারতম্য করা যাইবে না, যাহা তাঁহার পক্ষে অসুবিধাজনক হইতে পারে।

(৩) এইরূপ ব্যক্তি কোন কোম্পানী, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না:

(৪) এই অনুচ্ছেদ নিম্নলিখিত পদসমূহে প্রযোজ্য হইবে:

(ক) রাষ্ট্রপতি,

(খ) প্রধানমন্ত্রী ;

(গ) স্পীকার বা ডেপুটি স্পীকার,

(ঘ) মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপ-মন্ত্রী;

(ঙ) সুপ্রীম কোর্টের বিচারক,

(চ) মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক,

(ছ) নির্বাচন কমিশনার,

(জ) সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্য।

 

অনুচ্ছেদ ১৪৮: পদের শপথ।

(১) তৃতীয় তফসিলে উল্লিখিত যে কোন পদে নিযুক্ত ব্যক্তি কার্যভার গ্রহণের পূর্বে উক্ত তফসিল-অনুযায়ী শপথগ্রহণ বা ঘোষণা করিবেন এবং অনুরূপ শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করিবেন।

 

অনুচ্ছেদ ১৫০: ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী।

(১) এই সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে বর্ণিত বিধানাবলী ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী হিসাবে কার্যকর থাকিবে।

(২) সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ষষ্ঠ তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং সপ্তম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হইল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ ও দলিল, যাহা উক্ত সময়কালের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী বলিয়া গণ্য হইবে।

 

অনুচ্ছেদ ১৫৩: প্রবর্তন, উল্লেখ ও নির্ভরযোগ্য পাঠ।

(১) এই সংবিধানকে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান” বলিয়া উল্লেখ করা হইবে এবং ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে ইহা বলবৎ হইবে, যাহাকে এই সংবিধানে “সংবিধান-প্রবর্তন” বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে।

(২) বাংলায় এই সংবিধানের একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ ও ইংরাজীতে অনুদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ থাকিবে.

এবং উভয় পাঠ নির্ভরযোগ্য বলিয়া গণপরিষদের স্পীকার সার্টিফিকেট প্রদান করিবেন।

(৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফা-অনুযায়ী সার্টিফিকেটযুক্ত কোন পাঠ এই সংবিধানের বিধানাবলীর চূড়ান্ত প্রমাণ বলিয়া গণ্য হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলা ও ইংরাজী পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

 

তফসিলসমূহ:

তফসীলসমূহ

বিবরণ

১ম

অন্যান্য বিধান সত্ত্বেও কার্যকর আইন।

২য়

রাষ্টপতি নির্বাচন।

৩য় 

শপথ ও ঘোষণা। 

৪র্থ

ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী।

৫ম

১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ।

৬ষ্ঠ

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা। (The Proclamation of Independence)

৭ম

১০এপ্রিল ১৯৭১ এর মুজিব নগর সরকারের জারিকৃ্ত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *