ভূমি আইনের ইতিহাস বা ভূমি ব্যবস্থার বিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে কয়েকটি শাসন আমল সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। উক্ত শাসন আমলগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল-
বাংলাদেশে ভূমি আইনের ইতিহাস ও প্রচলিত আইনসমূহ
সময়ের বিবর্তনে ক্রমান্বয়ে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সাথে সাথে ভূমি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হয়েছে।
(১) প্রাচীন যুগ (মৌর্য, গুপ্ত ও পাল সাম্রাজ্য)-
২. মুসলিম শাসনামল (১২০৬–১৭৫৭)
৩. ব্রিটিশ শাসনামল (১৭৫৭–১৯৪৭)
৪. পাকিস্তান আমল (১৯৪৭–১৯৭১)
৫. স্বাধীন বাংলাদেশের ভূমি আইন (১৯৭১–বর্তমান)
(১) প্রাচীন যুগ (মৌর্য, গুপ্ত ও পাল সাম্রাজ্য)-
প্রাচীন যুগে দেশের সকল ভূমি রাজ্যের মালিকানাধীন ছিল, কিন্তু জমি রাজ্যের মালিকানাধীন হলেও জনগণ ভূমি চাষাবাদ করত। তার বিনিময়ে চাষিরা রাজাকে কর দিত।
ভূমির উত্তরাধিকার এবং হস্তান্তর সংক্রান্ত নিয়ম ছিল সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির উপর নির্ভরশীল।
২. মুসলিম শাসনামল। (১২০৬–১৭৫৭)
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মুসলিম শাসনামল ১২০৬ থেকে শুরু হয়ে ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজুদ্দৌলার ঐতিহাসিক পরাজয় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তখনও দেশের সকল ভূমি রাজ্যের মালিকানাধীন ছিল। প্রজারা ছিলেন করদাতা। অর্থাৎ রাজ্যকে কর প্রদানের মাধ্যমে প্রজারা ভূমি চাষাবাদ করত। ভূমি কর সংগ্রহের জন্য বহু প্রথা প্রচলিত ছিল। শের শাহ সূরী পাট্টা ও কবুলিয়ত প্রথা চালু করে এবং ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণের ভিত্তি স্থাপন করেন।
৩. ব্রিটিশ শাসনামল (১৭৫৭–১৯৪৭)
ব্রিটিশ শাসনামল ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজুদ্দৌলার ঐতিহাসিক পরাজয়ের মাধ্যমে শুরু হয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সময়ে ভূমি আইনের আধুনিক রূপায়ণ শুরু হয়। ১৭৯৩ সালে তৎকালীন গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement) প্রবর্তন করেন। এর মাধ্যমে জমিদারদেরকে ভূমির মালিক করে দেওয়া হলো। এই সময় প্রজারা জমি চাষ করত কিন্তু ভূমির মালিক ছিল জমিদারগণ।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত প্রধান ভূমি আইন সমূহ:
১৮৮২ সালে সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য Transfer of Property Act, 1882 আইন প্রণয়ন করা হয়।
১৮৮৫ সালে প্রজাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য Bengal Tenancy Act, 1885 আইন প্রণয়ন করা হয়।
৪. পাকিস্তান আমল (১৯৪৭–১৯৭১)
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান একত্রে স্বাধীন হয়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অতঃপর পাকিস্তান সরকার ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। যার ফলে ভূমি পুনর্বন্টন ও ভূমিহীনদের মধ্যে ভূমি বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়।
পাকিস্তান আমলের গুরুত্বপূর্ণ আইন:
East Bengal State Acquisition and Tenancy Act, 1950
(পূর্ব বাংলা রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০
৫. স্বাধীন বাংলাদেশের ভূমি আইন (১৯৭১–বর্তমান)
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন পর সংবিধানের আলোকে ভূমি আইনে সাধারণ মানুষের অধিকার জোরদার করার চেষ্টা করা হয়। ফলে ভূমি সংস্কার বোর্ড গঠন, ভূমি রেকর্ড ডিজিটালাইজেশন ও ই-নামজারি চালু হয়েছে। এছাড়াও ভূমি মালিকানা, ইজারা, খাজনা, রেজিস্ট্রি, নামজারি, খাস জমি বণ্টন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ভূমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনসমূহ-
(১) রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ (State Acquisition and Tenancy Act, 1950)-
এই আইন কার্যকর হয় ১৯৫৬ সালে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিম্নলিখিত কার্যসমূহ সম্পাদিত হয়-
(১) এই আইনের ৯৫ক ধারা মোতাবেক পাট্টা ও কবুলিয়ত দলিল পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।
(২) এই আইনের ৩ ধারা মোতাবেক ৪৮২৬ এল.আর, ৪৮৩৬ এল.আর তারিখ ০২/০৪/১৯৫৬ নোটিশ মূলে সকল জমিদারদের দখল থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করে ১৭ ধারা মোতাবেক নতুন জরিপের মাধ্যমে এস.এ খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। এই আইনের ৪৬ ধারা মোতাবেক এস.এ খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়।
(২) Land Reform Ordinance, 1984
(৩) Registration Act, 1908.
(৪) স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭
(৫) ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩
(৬) ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩
(৭) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন
(৮) হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩
(৯) Survey and Settlement Manual.
(১০) Digital Land Management System
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গৃহিত ব্যবস্থাসমূহ-
১। ভূমি অফিসে ব্যাপক দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য অনলাইন নামজারি ও রেকর্ড ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে।
২। জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য ডিজিটাল খতিয়ান ব্যবহার করা হচ্ছে।
৩। ভূমি আইন আরও সহজ ও জনবান্ধব করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ভূমি ও ফ্ল্যাটের সমস্যা সমাধানসহ যেকোন আইনগত উপদেশ ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন-
আমাদের সেবা সমূহ-
(১) দলিল লেখা ও রেজিস্ট্রি,
(২) নামজারি ও মিস কেইস পরিচালনা,
(৩) ট্যাক্স রিটার্ণ প্রস্তুত ও সাবমিট,
(৪) জমি-জমা বা দেওয়ানী মামলা পরিচালনা,
(৫) অপরাধ বা ফৌজদারী মামলা পরিচালনা,
(৬) ট্রেড লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্স, সিভিল এভিয়েশন লাইসেন্স, পরিবেশ, ফায়ার ও রাজউক অনুমোদন সহ যেকোন ব্যবসায়িক নতুন লাইসেন্স করা ও নবায়নে সহায়তা,
(৭) জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় ও ডেভেলপমেন্ট করা।
যোগাযোগ-
আইনবিদ লিগ্যাল সলিউশন
ল্যান্ড প্রপার্টি সলিউশন সার্ভিস
সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)
১৬, কোইলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা
অথবা
রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইল- 01711068609 / 01540105088
ওয়েবসাইট- www.ainbid.com