অপরাধ করেও শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

Spread the love

দন্ডবিধিতে কিছু সাধারণ ব্যতিক্রমের বিধান রয়েছে। উল্লেখিত ঐ ব্যতিক্রমসমূহ প্রমাণ করতে পারলে অপরাধ করেও শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

 

যেক্ষেত্রে অপরাধ করেও শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়-

কতিপয় ক্ষেত্রে অপরাধ করলেও সেটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে না। এগুলোকে বলা হয় সাধারণ ব্যতিক্রম। দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৭৬ ধারা থেকে ১০৬ ধারায় এই সাধারণ ব্যতিক্রম সমূহের বিধান রয়েছে। যেসকল কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না তাহা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

 

(১) আইন বলে বাধ্য মনে করে কৃত কাজ-       [দন্ডবিধি, ধারা ৭৬]

ভুল ধারণা বশত কোন ব্যক্তি নিজেকে আইন বলে বাধ্য মনে করে কোন কাজ কিংবা অপরাধ করে ফেললে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন- পুলিশ ভুলে কাউকে গ্রেফতার করলে।

 

(২) বিচার কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কাজ।         [দন্ডবিধি, ধারা ৭৭]

বিচার কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কোনো কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ৪টি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। যথা-

(ক) কাজটি বিচারক হিসাবে করেছে কিনা।

(খ) এখতিয়ারের মধ্যে কিনা।

(গ) সরল বিশ্বাসে করেছে কিনা।

(ঘ) অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছিল কিনা।

(৩) আদালতের রায় বা আদেশ অনুসারে সম্পাদিত কাজ।           [দন্ডবিধি, ধারা ৭৮]

 

(৪) আইন সমর্থিত মনে সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ।                      [দন্ডবিধি, ধারা ৭৯]

ভুল ধারণাবশত নিজেকে আইন সমর্থিত মনে সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন- খুন করেছে মনে করে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশে দিলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(৫) আইনানুগ কার্য সম্পাদনকালে দুর্ঘটনা।                              [দন্ডবিধি, ধারা ৮০]

আইনানুগভাবে কোন কাজ যথাযথ সতর্কতা ও যত্নসহকারে করার সময় কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ও অবগতি ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন- কুঠার (Hatchet) দিয়ে গাছ কাটার সময় তা ছুটে গিয়ে কেউ আঘাত প্রাপ্ত হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(৬) মারাত্মক ক্ষতি রোধ কল্পে অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছাড়া কৃত সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কাজ।     [দন্ডবিধি, ধারা ৮১]

মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অপরাধমূলক ইচ্ছা বা অভিপ্রায় ছাড়া সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কোন কাজ সরল বিশ্বাসে করা হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(৭) ৯ বছরের কম বয়সের শিশুর দ্বারা কৃত কাজ।                     [দন্ডবিধি, ধারা ৮২]

৯ বছরের কম বয়সের শিশুর দ্বারা কৃত কোনো কাজই অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(৮) ৯ বছরের বেশি কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সের শিশুটি অপরিণত বোধ শক্তি সম্পন্ন হলে তার কাজ।[দন্ডবিধি, ধারা ৮৩]

৯ বছরের বেশি কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সের শিশুটি অপরিণত বোধ শক্তি সম্পন্ন বা হাবা বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন বা প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে অক্ষম হলে তার দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(৯) পাগল/উম্মাদ/ অপ্রকৃতিস্থ (Unsound) ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজ।       [দন্ডবিধি, ধারা ৮৪]

কোনো কাজ অন্যায় বা আইনবিরুদ্ধ তা বুঝতে অসমর্থ কোনো পাগল বা উম্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ (Unsound) ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(১০) অনিচ্ছাকৃতভাবে নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির দ্বারা কৃত কাজ।              [দন্ডবিধি, ধারা ৮৫]

অনিচ্ছাকৃতভাবে নেশাগ্রস্থ হবার ফলে বিচার বিবেচনা লোপ পেলে তার দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(১১) মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটাতে পারে বলে না জেনে সম্মতিক্রমে সম্পাদিত কাজ।           [দন্ডবিধি, ধারা ৮৭]

মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটাতে পারে সেটি না জেনে সম্মতিক্রমে সম্পাদিত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন- আনন্দ উপভোগের উদ্দেশ্যে পরস্পর সম্মত হয়ে অসি বা তরবারি চালনা শুরু করার ফলে কোনো ক্ষতি হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(১২) উপকার করার উদ্দেশ্যে সম্মতিক্রমে কৃত কাজ।                             [দন্ডবিধি, ধারা ৮৮]

মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্য ব্যতীত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপকার করার উদ্দেশ্যে তার সম্মতিক্রমে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন: চিকিৎসকের কাজ।

 

(১৩) শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির মঙ্গলার্থে তার অভিভাবকের অনুমতিক্রমে কৃত কাজ।          [দন্ডবিধি, ধারা ৮৯]

১২ বছরের নিচের বয়সের কোনো শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির মঙ্গলার্থে তাহার অভিভাবক কর্তৃক বা অভিভাবকের অনুমতিক্রমে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যেমন: বাবার অনুমতি নিয়ে চিকিৎসকের কাজ।

 

(১৪) কতিপয় ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদত্ত হলেও সম্মতি বলে গন্য হবে না।           [দন্ডবিধি, ধারা ৯০]

নিম্নলিখিতভাবে সম্মতি প্রদত্ত হলে সম্মতি বলে গন্য হবে না।

(ক) ভীতি বা ভ্রান্ত ধারণায় প্রদত্ত সম্মতি।

(খ) পাগলের সম্মতি।

(গ) ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশুর সম্মতি।

 

(১৫) কতিপয় ক্ষেত্রে সম্মতি দিলেও তা বর্জন করতে হবে।                      [দন্ডবিধি, ধারা ৯১]

যেসব কাজ স্বতন্ত্রভাবে অপরাধ, সম্মতি দিলেও তা বর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে ৮৭, ৮৮, ৮৯ ধারার ব্যতিক্রমগুলো প্রযোজ্য হবে না। যেমন: গর্ভপাত ঘটানোর কাজ সম্মতি দিলেও তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।

 

 

(১৬) সরল বিশ্বাসে কৃত যোগাযোগ।                                      [দন্ডবিধি, ধারা ৯৩]

সরল বিশ্বাসে কৃত যোগাযোগ অপরাধ হবে না। যেমন:  সরল বিশ্বাসে কোনো ডাক্তার যদি কোনো রোগীকে বলে যে সে আর বাচবেনা তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(১৭) ভীতি প্রদর্শনের ফলে বাধ্য হয়ে কৃত কাজ।                       [দন্ডবিধি, ধারা ৯৪]

ভীতি প্রদর্শনের ফলে বাধ্য হয়ে খুন এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

(১৮) সামান্য ক্ষতিকারক কাজ।                               [দন্ডবিধি, ধারা ৯৫]

সামান্য ক্ষতিকারক কাজ অপরাধ হবে না। যেমন: ২ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। কারণ তা খুবই মামলি ব্যাপার।

 

(১৯) আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগজনিত কাজ।                         [দন্ডবিধি, ধারা ৯৬]

আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগজনিত কাজ অপরাধ নয়। আত্মরক্ষার্থে ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কৃত কাজ অপরাধ নয়।

 

(২০) শরীর ও সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ।                      [দন্ডবিধি, ধারা ৯৭]

শরীর ও সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অপরাধ নয়। নিজের দেহ, অন্যের দেহ, নিজের সম্পত্তি, অন্যের সম্পত্তি রক্ষায় ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অপরাধ না।

 

(২১) পাগলের কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার আছে।                       [দন্ডবিধি, ধারা ৯৮]

সুস্থ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেমন আত্মরক্ষার অধিকার আছে তেমনি পাগলের কাজের বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।

 

(২২) কতিপয় ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার নাই।                           [দন্ডবিধি, ধারা ৯৬ ও ৯৭]

দন্ডবিধির ৯৬ ও ৯৭ ধারা মোতাবেক নিজের ও অন্যের শরীর ও সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নিলিখিত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উক্ত ধারা মোতাবেক ৫টি ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার অধিকার প্রয়োগ করা যায় না-

(I) সরকারী কর্মচারির আইন বহির্ভুত কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা না থাকলে।

(II) সরকারী কর্মচারির নির্দেশে আইন বহির্ভুত কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা না থাকলে।

(III) সরকারী কর্মচারির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ থাকলে।

(iV) সরকারী কর্মচারির পরিচয় পাওয়া গেলে।

(V) আঘাত যতটুকু প্রতিঘাতও ততটুকু। অর্থাৎ কেউ ঘুষি মারতে আসলে তাকে গুলি করা যাবে না।

 

(২৩) দেহ রক্ষার জন্য মৃত্যু ঘটানোর অধিকার।                                                [দন্ডবিধি, ধারা ১০০]

নিম্নলিখিত ৬ টি ক্ষেত্রে দেহের আত্মরক্ষায় আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যায়-

(১) নিহত হবার আশঙ্কা দেখা দিলে।

(২) গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা দেখা দিলে।

(৩) ধর্ষণের আশঙ্কা দেখা দিলে।

(৪) কাম লালসার আশঙ্কা দেখা দিলে।

(৫) অপহরণের উদ্দেশ্যে আঘাত করলে।

(৬) অবৈধ আটকের সম্ভাবনা দেখা দিলে।

 

(২৪) কতিপয় ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।     [দন্ডবিধি, ধারা ১০১]

দন্ডবিধির ১০০ ধারায় বর্ণিত উপরোল্লিখিত ৬ টি ক্ষেত্র ছাড়া আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না।

 

(২৫) আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের সময়কাল বা আরম্ভ এবং স্থিতিকাল।              [দন্ডবিধি, ধারা ১০২]

আক্রমণকারী কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা, আতংক বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃস্টি হবার সাথে সাথে আত্মরক্ষার অধিকার আরম্ভ হবে আর আতংক কেটে গেলেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের স্থিতিকাল শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে গেলে আতংক যতক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ।

 

(২৬) সম্পত্তি রক্ষার জন্য মৃত্যু ঘটানোর অধিকার।                    [দন্ডবিধি, ধারা ১০৩]

নিম্নলিখিত ৪ টি ক্ষেত্রে অপরাধকারীকে সম্পত্তি রক্ষার জন্য আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যায়। যথা-

(১) দস্যুতাকারী

(২) রাতে ঘর ভেঙ্গে প্রবেশকারী

(৩) অগ্নি সংযোগকারী

(৪) চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতে আশংকা থাকলে।

 

(২৭) যে সকল ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষায় মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না। [দন্ডবিধি, ধারা ১০৪]

দন্ডোবিধির ১০৩ ধারায় বর্ণিত উপরোল্লিখিত ৪ টি ক্ষেত্র ছাড়া সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না।

 

(২৮) সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের আরম্ভ এবং স্থিতিকাল।

সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের আরম্ভ এবং স্থিতিকাল। [দন্ডবিধি, ধারা ১০৫]

আক্রমণকারী কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা, আতংক বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃস্টি হবার সাথে সাথে আত্মরক্ষার অধিকার আরম্ভ হবে আর আতংক কেটে গেলেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের স্থিতিকাল শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ সংক্ষেপে বলতে গেলে আতংক যতক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ।

 

(২৯) নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার।     [দন্ডবিধি, ধারা ১০৬]

কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্রে নিরপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকলেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।

 

সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ প্রমাণের দায়িত্ব-

সাক্ষ্য আইনের ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এই সাধারণ ব্যতিক্রম দাবি করবে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তার অপরাধ উক্ত ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে। সেটি প্রমাণ করতে পারলে সে উক্ত অপরাধের শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। [সাক্ষ্য আইন ধারা ১০৫]

 

যেকোন আইনি জটিলতায় আইনগত মতামত ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন-

 

যোগাযোগ

আইনবিদ লিগ্যাল সলিউশন

অন স্টপ লিগ্যাল সলিউশন সার্ভিস

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন উপদেষ্টা

১৬, কৈলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা।

অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

ফোন- 01711068609 / 01540105088

ওয়েবসাইট- www.ainbid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *