ওকালতি পেশা ইসলামে কি হালাল ?

ওকালতি কি ?

 

ওকালতিকে আরবি ভাষায় বলা হয় “আল-ওকালাহ” এবং ইংরেজিতে বলা হয় Advocacy. আক্ষরিক অর্থে ওকালতি বলতে বুঝায় অন্যের প্রতিনিধিত্ব করা।

 

আইন পেশা বা ওকালতি পেশা পবিত্র কুর-আনের সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত ও আল্লাহর রাসুল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী সম্পূর্ণ জায়েজ এবং হালাল একটি পেশা।

 

আল্লাহর সৃস্টি সকল মানুষ যেমন প্রাকৃতিকভাবেই সকল কাজ সমানভাবে করতে পারে না। তেমনি ভাবে পেশাগত ভাবেও প্রত্যেকের পেশাও রয়েছে ভিন্ন। যেমন- চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ডাক্তারদের কাছে যেতে হয়, বহুতল ভবন তৈরী করতে গেলে আবার ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে যেতে হয়। এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজের অধিকারের কথা ব্যক্তি করতে পারে না। আবার এমন অনেক মানুষ আছে যারা আছে, যারা একেবারেই কথা বলতে পারে না, অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবেই বোবা অথবা দুর্বল ব্যক্তি। নিজের অধিকারের কথা তুলে ধরার যোগ্যতা নেই। এই সকল ব্যক্তিদের অধিকারের কথা তুলে ধরার জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবী বা উকিল প্রয়োজন হয়।

 

আইনজীবী বা উকিল সম্পর্কে পবিত্র কুর-আন ও হাদিসের স্পষ্ট বর্ণনা-

 

আল কুর-আন, সুরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮২-

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুর-আনের সুরা আল-বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেছেন, “হে বিশ্বাসীগণ, যখন তোমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরস্পর ঋণের লেন-দেন করবে, তখন তা লিখে রাখবে। আর তোমাদের মধ্যে একজন লেখক যেন ইনসাফের সাথে লিখে রাখে এবং কোন লেখক আল্লাহ তাকে যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন, তা লিখতে অস্বীকার করবে না। সুতরাং সে যেন লিখে রাখে এবং যার উপর পাওনা সে (ঋণ গ্রহীতা) যেন তা লিখিয়ে রাখে।”

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক বুঝিয়েছেন, যারা ঋণের লেন-দেন করবে তারা যেন চুক্তিপত্র লিখে নেয় আর ইহা যদি তারা নিজেরা লিখতে না পারে তাহলে যিনি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিতে বলেছেন। অর্থাৎ তাদের জন্য ওকালতের নির্দেশ দিয়েছেন।

সুতরাং ইসলাম ধর্মে ওকালতি জায়েজ।

 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পক্ষে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বারাকি (রা.) কে উকিল হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। সুতরাং উকিল নিয়োগে রাসুল (সা.) এর পূর্ণ অনুমোদন রয়েছে।

সুতরাং ইসলামী শরিয়তে ওকালতি পরিপূর্ণভাবে জায়েজ।

 

আইনের পরিভাষায় উকিল-

বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে প্রদত্ত সঙ্গা ও ব্যাখ্যা।

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ধারা ২(১৫) -এ বলা হয়েছে-

যিনি অন্যের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকিতে ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করিতে অধিকারী তাহাকেই বলা হয় উকিল (Pleader)।

 

ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪(১)(ক) -এ বলা হয়েছে-

আইন অনুসারে যেকোনো আদালতে আইন ব্যবসা করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অ্যাডভোকেট (Advocate) বলে।

 

The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Orders, 1972 এর অনুচ্ছেদ ২(ক) -এ বলা হয়েছে-

এই আদেশ অনুযায়ী প্রণীত তালিকাভূক্ত ব্যক্তিই অ্যাডভোকেট (Advocate)।

 

The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Orders, 1972 এর অনুচ্ছেদ ১৯ -এ বলা হয়েছে-

একজন Advocate বাংলাদেশের সর্বত্র যেকোনো আদালত, ট্রাইবুনাল বা রাজস্ব বিভাগে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন।

 

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩ -এ বলা হয়েছে-

গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ।

(১) গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।

 

ওকালতির ফি-

পেশাজীবিদের ফি গ্রহণের মাধ্যমে সেবা প্রদানের বিষয়টি আইন দ্বারা স্বীকৃত। সুতরাং অন্যান্য পেশাজীবি যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক ইত্যাদির ন্যায় আইনিজীবিও ফি গ্রহণের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে পারেন। ইহা সম্পূর্ণ বৈধ এবং হালাল পেশা।

 

কোরআনে আল্লাহতায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। কিন্তু সেখানে যদি মিথ্যা বলেন, তাহলে এটি জায়েজ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। একই অবস্থা এই ওকালত পেশার মধ্যেও। তাই উকিলকে অবশ্যই ইসলামী শরিয়তের যে বিধানগুলো রয়েছে, সেগুলোকে মেনে চলতে হবে।

 

তবে প্রকৃত পক্ষে প্রত্যেক পেশাকে হালাল বা হারামভাবে পরিচালনা করা স্ব-স্ব পেশাজীবিদের উপর নির্ভর করে। ব্যাংকার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সব পেশায় সততা ও ন্যায় নিষ্ঠা বজায় রাখলে তা হালাল অন্যথায় তা হারাম।

 

কিন্তু উকিলকে যেই কাজের অনুমোদন বা দায়িত্ব দেওয়া হবে, তিনি শুধু সেই কাজটিই করবেন। সে ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোনো হারাম কাজের সঙ্গে যদি তিনি জড়িত না হন, তাহলে তার এই ব্যবসা বা পদ্ধতি বা পেশা হারাম হওয়ার কিছুই নেই। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে যদি তিনি মিথ্যা বলেন, তাহলে ওকালতি ছাড়াও যে ক্ষেত্রেই মিথ্যা বলেন না কেন, আপনি গুনাহগার হবেন। মিথ্যা সব ক্ষেত্রেই নাজায়েজ।

 

সবার প্রতি ন্যায়বিচার প্রদানই হচ্ছে আদালতের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য। আর মামলা-মোকদ্দমায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনবিদগণ বিচারককে সাহায্য করে থাকেন। সত্য প্রতিষ্ঠায় আদালতকে সাহায্য করা, ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বিরাট অবদান রাখার সমতুল্য। আদালতকে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া, মক্কেলের স্বার্থে অসত্যের আশ্রয় গ্রহণ করা, মক্কেলকে অন্যায় করতে পরামর্শ দেওয়া কখনও একজন ভালো অ্যাডভোকেটের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় প্রতিটি জেলায় সরকারি উকিল নিয়োগ করা হয়। তাদের বলা হতো উকিল-ই শরয়ি। তাদের প্রধান কাজী নিয়োগ দিতেন এবং কখনো প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতেন। সে সময় লিগ্যাল এইডেরও প্রচলন দেখা যায়। যেমন- গরীব ও অসহায় মামলাকারীদের আইনগত সহায়তার জন্য আইনবিদ(উকিল) নিয়োগ করা হতো। এতে বুঝা যায়, আইন পেশা ইসলামের অন্তরায় নয় বরং সত্যিকার আইনপেশা ইসলামের ইতিহাসের একটি স্বীকৃত পেশা।

 

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে ইসলাম ধর্ম ও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওকালতি পেশা নিঃসন্দেহে একটি হালাল ও বৈধ পেশা।

 

লেখকঃ

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

01540-105088 / 01711-068609

www.ainbid.com

 

দালাল চক্র থেকে দূরে থাকুন। সচেতন হউন। অতীব প্রয়োজনে সরকারি সনদপ্রাপ্ত আইনি সহায়তা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।

 

যোগাযোগ-

মহীউদ্দীন এন্ড এসোসিয়েটস

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

ঢাকা জজ কোর্ট অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

01711-068609 / 01540-105088

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *