কপিরাইট কি

কপিরাইট কি এবং কপিরাইট নিবন্ধনের পদ্ধতি

 

কপিরাইট (Copyright):

কপিরাইট (Copyright) একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে গ্রন্থস্বত্ব। তবে কপিরাইট শব্দটি আমাদের দেশে বাংলার মতই বহুল প্রচলিত এবং এটি বাংলা শব্দ হিসাবেই ব্যবহার করা হয়। কপিরাইট এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কপি করার অধিকার বা পুনরুৎপাদন করার অধিকার। অর্থাৎ মৌলিক কোন সৃষ্টিকর্ম কপি করার অধিকারই হলো কপিরাইট।

 

এই কপিরাইট আরো ভালভাবে বুঝতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে “বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি” বা Intellectual property

 

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (Intellectual property):

মেধা প্রয়োগ করে যে সম্পদ সৃষ্টি করা হয় তাই হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি। অন্য ভাবে বলা যায় মৌলিক কোন সৃষ্টি কর্মই হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির উপাদান হলো মানুষের মন, মনোবৃত্তি তথা বুদ্ধিবৃত্তিক কোন সৃষ্টি কর্ম বা উদ্ভাবনী কর্ম।

 

যেকোনো লেখা, সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকর্ম, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য, লেকচার, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, নকশা এই সকল কিছুই মেধা বা বুদ্ধির প্রয়োগে নতুনভাবে তৈরি করাই হলো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি।

 

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। তবে ইহাকে স্পর্ষনীয় বস্তুতে রূপান্তর করে অসংখ্য কপিতে রূপান্তর করা যায়। যেমন- বই, গানের রেকর্ড, সিনেমা ইত্যাদি। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি স্পর্ষনীয় বস্তুতে রূপান্তর করার পর সেটি কপি করার অধিকারই হলো কপিরাইট।

 

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি আইনসমূহ-

(১) কপিরাইট আইন, ২০০০

(২) প্যাটেন্ট এন্ড ডিজাইন এক্ট, ১৯১১

(৩) ট্রেডমার্ক এক্ট, ২০০৮ ইত্যাদি

 

কপিরাইট আইন, ২০০০ এর ১৪ ও ১৫ ধারায় কপিরাইটের বিস্তারিত সঙ্গা প্রদান করা হয়েছে।

 

কপিরাইট কিভাবে অর্জিত হয়-

একটি গ্রন্থের লেখক তার প্রতিটি লেখা বাংলাদেশে প্রচলিত কপিরাইট আইনে নিবন্ধন করে কপিরাইট অধিকার অর্জন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি লেখকেরই উচিৎ তার লেখা বইটি কপিরাইট নিবন্ধন করে নেওয়া। প্রকাশিত বই এবং অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কপিরাইট নিবন্ধন করার বিধান রয়েছে। কপিরাইট নিবন্ধন করার পর লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কেহ ইহার কপি করলে আইনত দন্ডনীয় হবে।

 

কপিরাইটের মেয়াদ-

কপিরাইট আইন, ২০০০ এর ২৪ ধারা মোতাবেক একজন লেখক যতদিন বেঁচে থাকবেন তিনি ততদিন তার কপিরাইট অধিকার ভোগ করতে পারবেন। উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত লেখকের উত্তরাধিকারীগণ কপিরাইট অধিকার ভোগ করতে পারবেন। ৬০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর কপিরাইটের অধিকার সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারবে।

 

কপিরাইট নিবন্ধন করার পদ্ধতি

কপিরাইট নিবন্ধনের সরকারী অফিস ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। কপিরাইট নিবন্ধন করার পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

(১) কপিরাইট নিবন্ধনের জন্য কপিরাইট অফিস থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

(২) যে বিষয়টি কপিরাইট করা দরকার তার বিবরণ, স্বত্বাধিকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে দিয়ে আবেদনপত্রটি পুরন করতে হবে।

(৩) উল্লেখিত পূরণকৃত আবেদনপত্রটির তিন কপি কপিরাইট অফিসে জমা দিতে হবে।

(৪) প্রকাশিত বই বা অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি এর দুই কপি জমা দিতে হবে।

(৫) ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।

(৬) মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হস্তান্তর দলিল দাখিল করতে হবে।

(৭) প্রকাশিত বই বা অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি নিয়ে কোন মামলা-মোকদ্দমা বিচারাধীন নাই এবং সরবরাহিত এই তথ্য নির্ভুল এই মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার পত্র জমা দিতে হবে।

(৮) আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনপত্র দাখিল করতে চাইলে, সে ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সাথে ওকালতনামা দাখিল করতে হবে।

(৯) কপিরাইট আইন, ২০০০ মোতাবেক উক্ত বই এর এক কপি জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা দিতে হবে। বই প্রকাশের তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা জমা দিতে হবে। অন্যথায় প্রত্যেকটি বইয়ের জন্য ১০০০/- টাকা জরিমানা দিতে হবে।

 

অনুমতি ছাড়া বই নকল করলে করণীয়-

লেখকের অনুমতি ব্যতীত বই কপি করে বাজারে প্রকাশ করা দন্ডনীয় অপরাধ। কেহ এরূপ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে দেওয়ানি আদালতে সরাসরি মামলা করা যাবে। এক্ষেত্রে কপিরাইট আইন, ২০০০ এর ৮১ ধারা মোতাবেক আদি এখতিয়ার হচ্ছে সরাসরি জেলা জজ আদালতের। কপিরাইট আইন, ২০০০ এর ৭৬ ধারা মোতাবেক দেওয়ানী প্রতিকারের জন্য জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে হবে। এছাড়া দায়রা আদালতেও ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।

 

কপিরাইট লঙ্ঘনের শাস্তি

কপিরাইট আইন, ২০০০ এর ৮২ ধারা মোতাবেক ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে কপিরাইট ভঙ্গকারীর সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৪ বছরের কারাদন্ড এবং সর্বনিম্ন ৫০,০০০/- টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এ ছাড়াও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (Arrest warrant) ছাড়াই নকল বই জব্দ করার ক্ষমতা পুলিশের রয়েছে।

 

 

লেখক

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

ainbid.com

 

 

যোগাযোগ

মহীউদ্দীন ল’ ফার্ম

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা।

অথবা রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

01711068609 / 01540105088

ainbid.com

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *