Penal Code, 1860
দন্ডবিধি, ১৮৬০
অধ্যায়– ৫
অপরাধে সহায়তা সম্পর্কিত
ধারা ১০৭ – ১২০
ধারা ১০৭: দুষ্কর্মে সহায়তা (Abetment) প্রদান।
সাধারণত দুষ্কর্মে সহায়তা ৩ ভাবে হয় –
(ক) প্ররোচনা
(খ) ষড়যন্ত্র বা
(গ) সহায়তার মাধ্যমে।
ধারা ১০৮: দুষ্কর্মে সহায়তাকারী/ প্ররোচনারকারী (Abettor).
ধারা ১০৯: দুষ্কর্মে সহায়তা/ প্ররোচনার শাস্তি।
দন্ডবিধিতে শাস্তির বিধান উল্লেখ থাকলে সেভাবে প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ না থাকলে প্ররোচনারকারী নিজে অপরাধটি করলে যে শাস্তি পেত সেই শাস্তি পাবে।
[এটি দন্ডবিধিতে উল্লেখিত শাস্তির ১ম ধারা/ ২য় তফসিলে উল্লেখিত শাস্তির ১ম ধারা।]
ধারা ১১৫: মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধে সহায়তা/প্ররোচনার শাস্তি।
অপরাধটি অনুষ্ঠিত না হলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
অপরাধটি অনুষ্ঠিত হলে – ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ১১৭: জনসাধারণ বা ১০ জনের অধিক ব্যক্তি অপরাধে সহায়তা করলে শাস্তি।
৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড।
ধারা ১১৮: মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ষড়যন্ত্র গোপন করলে শাস্তি।
অপরাধটি অনুষ্ঠিত না হলে – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
অপরাধটি অনুষ্ঠিত হলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
অধ্যায়– ৫ক
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র
ধারা ১২০ক – ১২০খ
ধারা ১২০ক: অপরাধজনক ষড়যন্ত্রের (Criminal Conspiracy) সংজ্ঞা।
২ বা ততোধিক ব্যক্তি যদি একটি বে-আইনী কাজ করার জন্য বা আইনী কাজ বে-আইনীভাবে করার জন্য একমত হয় তাহলে ঐ ঐক্যমতকে অপরাধজনক ষড়যন্ত্র বলে।
উপাদান সমূহ:
- সর্বনিম্ন সদস্য ২ জন
- একমত পোষণ
- অবৈধভাবে করা জন্য
- কাজটি সংঘটিত হতে পারে নাও হতে পারে।
ধারা ১২০খ: অপরাধজনক ষড়যন্ত্রের শাস্তি।
দন্ডবিধিতে শাস্তির বিধান উল্লেখ থাকলে সেভাবে প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখ না থাকলে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন বা ২ বছরের অধিক কারাদন্ডযোগ্য হলে – নিজে অপরাধটি করলে যে শাস্তি পেত সেই শাস্তি পাবে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে – অনধিক ৬ মাস কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড।
অধ্যায়– ৬
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত
ধারা ১২১ – ১৩০
ধারা ১২১: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ বা সহায়তার শাস্তি।
মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১২১ক: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্রের শাস্তি।
যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১২২: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য অস্ত্র সংগ্রহের শাস্তি।
১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১২৩: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্রের গোপন করার শাস্তি।
১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১২৪: রাষ্ট্রপতি সরকার প্রমুখ ব্যক্তিকে আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করা বা বাধা দেওয়ার শাস্তি।
৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১২৪ক: রাষ্ট্রদ্রোহের (Sedition) শাস্তি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ১২৮: রাজবন্দি বা যুদ্ধবন্দিকে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে পলায়ন করতে দিলে
যাবজ্জীবন/১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১২৯: রাজবন্দি বা যুদ্ধবন্দিকে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক অবহেলাপূর্বক পলায়ন করতে দিলে
৩ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
ধারা ১৩০: রাজবন্দি বা যুদ্ধবন্দিকে পলায়ন সহায়তা, উদ্ধার বা আশ্রয় দিলে শাস্তি।
যাবজ্জীবন/১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
অধ্যায়– ৭ – স্থল, নৌ ও বিবান বাহিনী সংক্রান্ত অপরাধ – ধারা ১৩১ – ১৪০
অধ্যায়–৮
গণশান্তির পরিপন্থী অপরাধ সম্পর্কিত
ধারা ১৪১ -১৬০
ধারা ১৪১: বে-আইনী সমাবেশের সংজ্ঞা (Unlawful Assembly)
[সমাবেশ: ৫ বা ততোধিক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সমবেত হলে তাকে বলা হয় সমাবেশ।]
বে-আইনী সমাবেশ: উক্ত সমাবেশ কোনো বে-আইনী উদ্দেশ্যে করা হলে তাকে বলা হয় বে-আইনী সমাবেশ।
নিম্নলিখিত ৫ টি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হলে উহা বে-আইনী সমাবেশ হিসাবে গণ্য হবে –
- পার্লামেন্টের কাজে বাঁধা।
- আইনগত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাজে বাঁধা।
- অনধিকার প্রবেশ।
- জনগণের চলার পথে অবৈধ বাঁধা।
- যে কাজ করতে বাধ্য তাকে সেই কাজে বাঁধা দেওয়া, যে কাজ করতে বাধ্য নয় তাকে সেই কাজ করতে বাধ্য করা।
উপাদান:
- সর্বনিম্ন সদস্য ৫ জন।
- উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
- অপরাধটি সংঘটিত হতে হবে।
- স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে অংশগ্রহণ করতে হবে।
ধারা ১৪২: বে-আইনী সমাবেশের সদস্য হওয়া।
৫ বা ততোধিক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণ করলে উহা বে-আইনী সমাবেশের সদস্য বলে গণ্য হবে।
ধারা ১৪৩: বে-আইনী সমাবেশের শাস্তি।
বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যের শাস্তি হবে –
৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়।
ধারা ১৪৪: অস্ত্রসহ বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণের শাস্তি।
২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়।
ধারা ১৪৫: নিষেধ থাকা সত্বেও বে-আইনী সমাবেশের শাস্তি।
২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়।
ধারা ১৪৬: দাঙ্গা হাঙ্গামার (Rioting) সংজ্ঞা।
৫ বা ততোধিক ব্যক্তি বে-আইনী সমাবেশে অংশগ্রহণ করে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য উগ্রতা প্রদর্শন করেলে তাহা দাঙ্গা বলে গণ্য হবে।
ধারা ১৪৭: দাঙ্গা হাঙ্গামার শাস্তি।
২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ জরিমানা/ উভয়
[জামিনযোগ্য অপরাধ]
ধারা ১৪৮: মারাত্মক অস্ত্রসহ দাঙ্গার শাস্তি।
৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ জরিমানা/ উভয়
[জামিনযোগ্য অপরাধ]
ধারা ১৪৯: সাধারণ উদ্দেশ্য (Common Object).
১৪১ ধারায় উল্লেখিত বে-আইনী সমাবেশের যেকোনো একটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারী ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির উদ্দেশ্য যদি অভিন্ন হয় তাহলে তাকে সাধারন উদ্দেশ্য বলা হবে।
এরূপ সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারীর একজন অপরাধ করলে প্রত্যেক সদস্যের শাস্তি হবে সমান।
ধারা ১৫৯: মারামারি/ কলহ/ ঝগড়াঝাটি (Affray).
২ বা ততোধিক ব্যক্তি প্রকাশ্য স্থানে মখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে জনশান্তি বিনষ্ট করলে তাহা মারামারি বলে গণ্য হবে।
ধারা ১৬০: মারামারির শাস্তি।
১ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/ ১০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৬১: ঘুষ গ্রহণের শাস্তি।
৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৬২: সরকারি কর্মচারীকে প্রভাবিত করার জন্য বকশিশ গ্রহনের শাস্তি।
৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭০: সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ করার শাস্তি।
২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭১: সরকারি কর্মচারীর পোষাক বা প্রতিক প্রতারণামূলকভাবে ধারণ করার শাস্তি।
৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড/ ২০০ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭২: সরকারি কর্মচারীর জারিকৃত সমন/বিজ্ঞপ্তি/আদেশ এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করার শাস্তি।
১ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ৫০০ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৭৪: সরকারি কর্মচারীর জারিকৃত সমন/বিজ্ঞপ্তি/আদেশ মোতাবেক –
নির্দিষ্ট স্থানে হাজির না হলে শাস্তি – ১ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ৫০০ অর্থদন্ড/ উভয়
আদালতে হাজির না হলে শাস্তি – ৬ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ১০০০ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৮৮: সরকারি কর্মচারীর জারিকৃত আদেশ অমান্য করার শাস্তি [CrPC 144 ধারা জারি]
৬ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড/ ২০০ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ১৯১: মিথ্যা সাক্ষ্যদানের সংজ্ঞা।
কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে জেনে বুঝে শুনে মিথ্যা বক্তব্য, বিবৃতি বা মিথ্যা দলিল পত্র উপস্থাপন করে যাহা তাহার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য নয় তাহাকে কিন্তু সে সত্য বলে বিশ্বাস করাতে চায় তাহলে তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য বলে।
ধারা ১৯২: মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন/ তৈরী করা (Fabricating False Evidence)
ধারা ১৯৩: মিথ্যা সাক্ষ্যের শাস্তি।
বিচারিক আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
অন্যান্য ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
জামিনযোগ্য অপরাধ
ধারা ১৯৪: মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
উহার ফলে নিরাপরাধীর দণ্ড বা ফাসি হলে শাস্তি – মৃত্যুদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
জামিন অযোগ্য অপরাধ
ধারা ১৯৫: যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি – অপরাধটির অনুরূপ
জামিন অযোগ্য অপরাধ
ধারা ১৯৭: মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রদান ও উহাতে স্বাক্ষর করলে শাস্তি।
মিথ্যা সাক্ষ্য দানের অনুরূপ শাস্তি
জামিনযোগ্য অপরাধ
ধারা ২০৫: দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলার উদ্দেশ্যে মিথ্যা পরিচয় দেওয়ার শাস্তি
৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়।
ধারা ২১১: ক্ষতির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলার শাস্তি
২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/উভয়
মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন/৭ বছর বা তদূর্ধ মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের মিথ্যা মামলার শাস্তি
৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
ধারা ২১২: দোষী ব্যাক্তিকে আশ্রয় দানের শাস্তি
(১) মৃত্যুদন্ডে দণ্ডনীয় ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিলে
– ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
(২) যাবজ্জীবন/১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিলে
– ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড
(৩) ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিলে
– উক্ত অপরাধের দীর্ঘতম মেয়াদের শাস্তির এক চতুর্থাংশ পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ব্যতিক্রম: দোষী ব্যক্তির স্বামী/ স্ত্রী আশ্রয়দান করলে অত্র বিধান প্রযোজ্য হবে না।
ধারা ২২৮: বিচার বিভাগীয় মামলায় বিচারকার্যে রত সরকারী কর্মচারীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা বা বাঁধা প্রদানের শাস্তি
৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৩০: মুদ্রা ও বাংলাদেশী মুদ্রার সংজ্ঞা।
মুদ্রা (Coin): বর্তমানে অর্থ রূপে ব্যবহৃত কোনো রাষ্ট্রের স্ট্যাম্পযুক্ত ও ইস্যুকৃত ধাতব দ্রব্যকে বলা হয় মুদ্রা।
বাংলাদেশী মুদ্রা: বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতাধীন অর্থ রূপে ব্যবহৃত, স্ট্যাম্পযুক্ত ও ইস্যুকৃত ধাতব দ্রব্যকে বলা হয় মুদ্রা।
ধারা ২৩১: মুদ্রা জালকরণের শাস্তি
৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ২৩২: বাংলাদেশী মুদ্রা জালকরণের শাস্তি
যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ২৫৫: সরকারী স্ট্যাম্প জালকরণের শাস্তি
যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ২৬৪: ওজনের জন্য প্রতিরণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র ব্যবহারের শাস্তি
১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৬৭: মিথ্যা বাটখারা বা মাপকাঠি প্রস্তুত বা বিক্রয়ের শাস্তি
১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৬৮: গণ উপদ্রব (Public nuisance)
কোনো কার্য বা কার্যবিরতি দ্বারা জনসাধারণের বা নিকটবর্তী সম্পত্তির মালিক বা অধিবাসীর ক্ষতি, ভীতি বা বিরক্তির সৃষ্টি হলে তাকে গণ উপদ্রব বলে।
ধারা ২৭২: বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোনো খাদ্য বা পানীয় দ্রব্যে ভেজাল মিশ্রণের শাস্তি
৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৭৯: রাজপথে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা অশ্বারোহণ করার শাস্তি
৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ৫০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯২: অশ্লীল পুস্তক বিক্রয়ের শাস্তি
৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৩: ২০ বছরের কম বয়স্ক যুবক যুবতীদের নিকট অশ্লীল বস্তু বিক্রয়ের শাস্তি
৬ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৪: প্রকাশ্য স্থানে অশ্লীল কাজ, গান, কবিতা বা উচ্চারণ করার শাস্তি
৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৫ক: ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার শাস্তি
২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ২৯৯: অপরাধজনক নরহত্যা (Culpable Homicide):
নরহত্যা: এক নর অপর নরকে হত্যা করলে তাকে বলা হবে নরহত্যা। সকল ধরণের হত্যাই নরহত্যা বলে গণ্য হবে।
অপরাধজনক নরহত্যা: এক নর অপর নরকে Guilty Mind (Mensrea) সহকারে হত্যা করলে তাকে বলা হবে অপরাধজনক নরহত্যা। এক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা থাকবে না। মেজাজ গরম হয়ে কৃত কাজের ফলে সাধারণত অপরাধজনক নরহত্যা হতে পারে।
ধারা ৩০০: খুন (Murder).
খুন: পরিকল্পিত ও অপরাধমূলক অভিপ্রায়সহ কৃত অপরাধজনক নরহত্যাই খুন বলে গণ্য হবে।
৪ টি ক্ষেত্রে খুন বলে গণ্য হবে:
- অভিপ্রায় থাকলে
- জ্ঞান থাকলে
- গুরুতর আঘাত
- বিপজ্জনক কাজ
৫ টি ক্ষেত্রে অপরাধজনক নরহত্যা বলে গণ্য হবে/ ব্যতিক্রমসমূহ:
- আকস্মিক উত্তেজনার ফলে
- আকস্মিক কলহের ফলে
- আত্মরক্ষার জন্য
- আত্মহত্যা ও
- সরকারী কর্মচারীর কাজ
ধারা ৩০১: ভুলক্রমে অন্য ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো একই অপরাধ
ধারা ৩০২: খুনের শাস্তি
মৃত্যুদন্ড/ যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৩: যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী কর্তৃক খুনের শাস্তি
একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড [এটা দন্ডবিধির সর্বোচ্চ শাস্তি]
ধারা ৩০৪: অপরাধজনক নরহত্যার শাস্তি
যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
অনিচ্ছাকৃতভাবে অপরাধজনক নরহত্যা সংঘটিত হলে শাস্তি – ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৪ক: অবহেলাবশত: প্রাণহানির শাস্তি
৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
[ যেমন ডাক্তার ভুল ঔষধ দিলে]
ধারা ৩০৪খ: বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি
৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড/ অর্থদণ্ড/ উভয়
ধারা ৩০৫: শিশু, উম্মাদ ও নির্বোধকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার শাস্তি
মৃত্যুদন্ড/ যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৬: আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার শাস্তি
১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩০৭: খুনের চেষ্টার শাস্তি
খুনের চেষ্টার ফলে –
Victim এর শরীর স্পর্ষ না করলে – ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম/বিনাশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
Victim আহত হলে শাস্তি – যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কর্তৃক খুনের চেষ্টার ফলে আহত হলে শাস্তি – মৃত্যুদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
ধারা ৩০৮: অপরাধজনক নরহত্যার চেষ্টার শাস্তি
অপরাধজনক নরহত্যার চেষ্টার ফলে –
Victim এর শরীর স্পর্ষ না করলে – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
Victim আহত হলে শাস্তি – যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ উপরোক্ত দণ্ড
ধারা ৩০৯: আত্মহত্যার নরহত্যার চেষ্টার শাস্তি
১ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩১০: ঠগ (Thug).
কোনো ব্যক্তি খুন, খুনসহ দস্যুতা বা শিশু অপহরণের জন্য অন্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে তাকে ঠগ বলে।
ধারা ৩১১: ঠগের শাস্তি
যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অর্থদন্ড।
ধারা ৩১২: গর্ভপাতকরণ (Causing miscarriage).
কোনো নারীর জীবন বাচানোর জন্য গর্ভপাত ঘটানো হলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তি – ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
আসন্ন প্রসবা হলে – ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩১৩: নারীর অনুমতি ব্যতীত গর্ভপাতকরণের শাস্তি
যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩১৪: গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যে কৃত কার্যে মৃত্যু হলে শাস্তি
১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া করলে শাস্তি
যাবজ্জীবন/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩১৯: দৈহিক আঘাতের সংজ্ঞা।
আঘাতের উপাদান ৩ টি। যথা: ব্যাথা, বিমার, বৈকল্য। এই উপাদানগুলোর কোনোটি ঘটলে সেটা আঘাত বলে গণ্য হবে।
ধারা ৩২০: গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা (Grievous Hurt).
গুরুতর আঘাতের উপাদান ৩ টি। যথা:
- পুরুষত্বহীন করণ (Emasculation)
- চোখের দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্টকরণ
- কানের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্টকরণ
- অঙ্গ বা গ্রন্থির অনিষ্ট সাধন
- অঙ্গ বা গ্রন্থির কর্মশক্তি হরণ
- মাথা বা মুখমন্ডল স্থায়ীভাবে বিকৃতকরণ
- দন্ত বা অস্থি ভঙ্গ বা স্থানচ্যুত করণ
- ২০ দিন পর্যন্ত প্রচন্ড দৈহিক যন্ত্রনা ভোগ।
ধারা ৩২১: স্বেচ্ছাকৃত আঘাতের সংজ্ঞা
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অসাধুভেবে জেনে বুঝে আঘাত দান করলে তাকে বলা হয় স্বেচ্ছাকৃত আঘাত।
ধারা ৩২২: স্বেচ্ছাকৃত গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অসাধুভেবে জেনে বুঝে আঘাত দান করার ফলে যদি ৩২০ ধারার কোনো উপাদানের সৃষ্টি হয় তাহলে তাকে বলা হবে স্বেচ্ছাকৃত গুরুতর আঘাত।
ধারা ৩২৩: স্বেচ্ছাকৃত আঘাতের শাস্তি
১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
জামিনযোগ্য অপরাধ ও আমলের আযোগ্য অপরাধ
ধারা ৩২৪: মারাত্বক অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছাকৃত আঘাতের শাস্তি
৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
জামিনযোগ্য অপরাধ
ধারা ৩২৫: স্বেচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাতের শাস্তি
৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩২৬: মারাত্বক অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছাকৃত গুরুতর আঘাতের শাস্তি
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড/ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩২৬ক: ইচ্ছাপূর্বক দুই চোখ, মাথা বা মুখমন্ডল বিকৃতকরণে গুরুতর আঘাতের শাস্তি
মৃত্যুদণ্ড/যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩২৭: বে-আইনি কার্য করতে বা সহায়তার জন্য বল প্রয়োগ করতে গিয়ে ইচ্ছাপূর্বক আঘাতের শাস্তি
১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩০: স্বীকারোক্তি বা সম্পত্তি প্রত্যর্পণে বাধ্য করতে স্বেচ্ছায় আঘাতের শাস্তি
৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩২: সরকারী কর্মচারিকে দায়িত্ব পালনে বাঁধা দানের উদ্দেশ্যে আঘাত দানের শাস্তি
৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩৩: সরকারী কর্মচারিকে দায়িত্ব পালনে বাঁধা দানের উদ্দেশ্যে গুরুতর আঘাত দানের শাস্তি
১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ড
ধারা ৩৩৪: আকস্মিক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে আঘাত দানের শাস্তি
১ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ ৫০০ টাকা অর্হদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৩৫: আকস্মিক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে গুরুতর আঘাত দানের শাস্তি
৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ২০০০ টাকা অর্হদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৩৯: অবৈধ বাঁধার সংজ্ঞা (Wrongful Restraint).
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে তাহার যে পথে চলার অধিকার আছে সেই পথ রুদ্ধ করলে তাহাকে বলা হয় অবৈধ বাঁধা। [যেমন কাহারো চলার পথে কাটা দিলে]
ধারা ৩৪০: অবৈধ অবরোধের সংজ্ঞা (Wrongful Confinement).
কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে তাহার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করলে তাহাকে বলা হয় অবৈধ আটক। [যেমন কাউকে একটি কক্ষের ভিতর আটকে রাখলে]
ধারা ৩৪১: অবৈধ বাঁধার শাস্তি
১ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড/ ৫০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৪২: অবৈধ অবরোধের শাস্তি
১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ ১০০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৪৫: রিটে মুক্তির পর অন্যায়ভাবে আটক রাখার শাস্তি
অত্র অধ্যায়ের অপর কোনো ধারা অনুসারে দন্ডের অতিরিক্ত আরো ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডপ্রাপ্ত হবে।
ধারা ৩৪৯: বল প্রয়োগ (Force).
কোনো ব্যক্তি কোনো কাজের মধ্যমে অপর কোনো ব্যক্তির গতি সঞ্চার, গতি পরিবর্তন বা গতি রুদ্ধ করলে তাকে বলা হয় বল প্রয়োগ।
বল প্রয়োগ ৩ টি উপায়ে হতে পারে –
- নিজ দেহের শক্তি প্রয়োগ করে
- কোনো বস্তু ব্যবহার করে
- কোনো পশু ব্যভার করে
ধারা ৩৫০: অপরাধমূলক বল প্রয়োগ (Criminal Force).
বল প্রয়োগের ফলে অপর কোনো ব্যক্তির ক্ষতি, ভীতি বা বিরক্তির সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় অপরাধমূলক বল প্রয়োগ।
[যেমন – নৌকার রশি ছেড়ে দিয়ে গতি সঞ্চার]
ধারা ৩৫১: আক্রমণ (Assault).
অঙ্গভঙ্গির (Gesture) মাধ্যেমে অপরাধমূলক বল প্রয়োগে উদ্যত হওয়াকে আক্রমণ বলা হয়।
শুধুমাত্র মুখের কথায় হবে না।
ধারা ৩৫২: অপরাধমূলক বল প্রয়োগের শাস্তি
৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড/ ৫০০ টাকা অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৫৩: সরকারী কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধাদানের উদ্দেশ্যে বল প্রয়োগের শাস্তি
২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৫৪: শ্লীলতাহানীর উদ্দেশ্যে কোনো নারীর উপর আক্রমণ বা অপরাধমূলক বল প্রয়োগের শাস্তি
২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড/ অর্থদন্ড/ উভয়
ধারা ৩৫৯: মনুষ্যহরণ (Kidnapping)
মনুষ্যহরণ ২ প্রকার
(১) বাংলাদেশ হতে মনুষ্যহরণ
(২) আইনগত অভিভাবক হতে মনুষ্যহরণ
ধারা ৩৬০: বাংলাদেশ হইতে মনুষ্যহরণ।
কোনো ব্যক্তিকে তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা যার কাছে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন তাহার অনুমতি ব্যতীত বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করলে ইহা বাংলাদেশ হইতে মনুষ্যহরণ বলে গণ্য হবে।