নামজারি ও ই-নামজারি করার পদ্ধতি

নামজারি ও ই-নামজারি করার পদ্ধতি

 

নামজারি কি-

সাধারণত জমি বা ভূমি বিভিন্ন ভাবে হস্তান্তরিত হয়ে থাকে। যথা-

১। উত্তরাধিকারসূত্রে,

২। বিক্রয় সূত্রে,

৩। দান সূত্রে,

৪। খাসজমি বন্দোবস্ত সূত্রে ও

৫। অন্যান্য সূত্রে।

 

যেভাবেই হোক হস্তান্তরিত হলে জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। জমির মালিকানার পরিবর্তন হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করাতে হয়। খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করাকেই বলা হয় নামজারি বা মিউটেশন (Mutation)। জমি হস্তান্তরের পর নামজারি করা মোটামুটি বাধ্যতামূলকই বলা যায়। কারণ জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন, জমি ক্রয়-বিক্রয়, খাজনা প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে নামজারি প্রয়োজন হয়। এছাড়াও জমির মালিকানার অন্যতম একটি প্রমাণ হচ্ছে খতিয়ান (Records of Right)। তাই খতিয়ানে নাম থাকাটা খুবই জরুরী।

 

ই-নামজারি-

বর্তমানে অনলাইনে নামজারি করা হয় বিধায় ইহাকে ই-নামজারি (Electronic Mutation) বলা হয়।

 

নামজারি করার দদ্ধতি-

নামজারি হলো জমি বা সম্পত্তির মালিকানার সরকারি স্বীকৃতি এবং সেই মালিকানার স্বত্ব সরকারি নথিতে নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া। সহজভাবে বলতে গেলে, যখন কোনো জমি বা সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন হয়, তখন নতুন মালিকের নাম সরকারি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াকেই নামজারি (Mutation) বলা হয়। এটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে জমির নতুন মালিক সরকারীভাবে স্বীকৃত হয় এবং তার নাম উক্ত জমির সরকারি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।

নামজারি করার জন্য সাধারণত যেসব ধাপ অনুসরণ করতে হয়, তা হলো:

  1. আবেদন: নতুন মালিকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে নামজারি করার জন্য একটি আবেদন জমা দিতে হয়।
  2. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: সম্পত্তি হস্তান্তর দলিল (ডিড), পূর্ববর্তী নামজারি খতিয়ান, কর পরিশোধের রসিদ ইত্যাদি নথিপত্র প্রদান করতে হয়।
  3. সরেজমিন তদন্ত: ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে ক্ষেত্রসমীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় যে, জমির মালিকানা বৈধ এবং কোন বিরোধ নেই।
  4. নোটিশ প্রদান: নামজারি আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নোটিশ পাঠানো হয় যাতে কেউ আপত্তি জানাতে চাইলে জানাতে পারেন।
  5. রেজিস্ট্রেশন ফি: নামজারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়।
  6. নামজারি সম্পন্ন: সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এবং কোন আপত্তি না থাকলে, নতুন মালিকের নাম খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নামজারি করা হলে জমির নতুন মালিক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় এবং ভবিষ্যতে জমি সংক্রান্ত যে কোনো কার্যক্রম সহজে করতে পারে।

 

ই-নামজারি-

বর্তমানে নামজারির সকল কার্যক্রম অনলাইনে করা হয়। এই জন্য land.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সিস্টেম অনুসরণ করে ই-নামজারি (Electronic Mutation) করা যায়।

 

নামজারি কোথায় করতে হয়

নামজারির সাধারণ পদ্ধতি হলো- রাজস্ব কর্মকর্তা অর্থাৎ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা AC (Land) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়।

আবেদন প্রাপ্তির পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন সহকারী পদের একজন দায়িত্বে থাকেন তিনি আবেদন জমা নেন। নাজির পদে থাকা ব্যক্তি নামজারির জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি জমা নেন। আবেদন দেওয়ার পর তহশিলদার বা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা নামজারির তদন্তের দায়িত্ব পালন করেন।

 

তবে বর্তমানে নামজারির সকল কার্যক্রম অনলাইনে করা হয়। এই জন্য land.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সিস্টেম অনুসরণ করে ই-নামজারি (Electronic Mutation) করা যায়।

 

নামজারির আবেদন করার পদ্ধতি-

১। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করে আবেদন করতে হবে।

২। আবেদনকারী নিজেও আবেদন করতে পারেন অথবা আবেদনকারী কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করেও আবেদন করতে পারেন।

৩। আবেদন পত্রের সাথে আবেদনকারী অথবা আবেদনকারীর প্রতিনিধির পাসপোর্ট সাইজের ছবি আবেদন পত্রের নির্ধারিত স্থানে সংযুক্ত করে দিতে হবে।

৪। আবেদন পত্রের সাথে সংলগ্নি হিসাবে মূল দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিল, পর্চা বা খতিয়ানের অনুলিপি, ভূমি- উন্নয়ন কর পরিশোধের দলিল, ওয়ারিশান সনদপত্র (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা), বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ইত্যাদি জমা দিতে হবে।

৫। আদালতের কোনো রায় বা ডিক্রির কারণে নামজারি করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি জমা দিতে হবে।

 

নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-

নামজারির জন্য অনলাইনের আবেদন ফরম পূরণ করে নিম্নলিখিত কাগজপত্র অনলাইনে সাবমিট করতে হবে-

ক্রয়সূত্রে মালিক হলে-

  1. মূল দলিল বা সার্তিফাইড কপি
  2. বায়া দলিলের কপি
  3. সর্বশেষ রেকর্ডীয় খতিয়ান (CS/SA/RS/BRS/City)
  4. পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  5. NID কার্ডের কপি
  6. সাক্ষর

 

উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হলে-

  1. মূল দলিল বা সার্তিফাইড কপি
  2. বায়া দলিলের কপি
  3. সর্বশেষ রেকর্ডীয় খতিয়ান (CS/SA/RS/BRS/City)
  4. পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  5. NID কার্ডের কপি
  6. সাক্ষর
  7. ওয়ারিশান সনদ

 

নামজারির জন্য কত সময় লাগে-

বর্তমান আইন অনুযায়ী মহানগরে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি- প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে।

 

নামজারি আবেদন না-মনজুর হলে করণীয় বা আপীল-

যেকোনো ত্রুটির জন্যই নামজারির আবেদন না-মনজুর হতে পারে। দলিল পত্রে ভুল অথবা অন্য কোনো কারণেও না-মনজুর হতে পারে। যেকারণেই হোক নামজারির আবেদন না-মনজুর হলে আইনে ইহার প্রতিকারের বিধান রয়েছে। নামজারি না-মনজুর হলে প্রতিকার নিম্নরূপ-

১। নামজারি না-মনজুর হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর বরাবরে উক্ত আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।

২। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এর নিকট আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে।

৩। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এর আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডে আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়।

৪। এছাড়া রিভিশনও করা যায়। ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন।

৫। এছাড়া রিভিউও করা যায়। রিভিউ মানে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা করা। দলিলপত্রে কোনো ভুল পর্যবেক্ষণ হয়েছে বলে মনে করলে কিংবা আবেদন বাতিল করলে রিভিউর আবেদন করতে হয়। আদেশ দানকারী কর্মকর্তার বরাবরই রিভিউ আবেদন করতে হয়। রিভিউ করার তামাদি সময় ৩০ দিন। তবে রিভিউ আবেদন করলে আর আপিল করার সুযোগ থাকে না।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711-068609

 

বিঃ দ্রঃ নামজারি করার জন্য কোন দালাল চক্রের সাথে যোগাযোগ করে প্রতারিত হবেন না। সহায়তার প্রয়োজন হলে অবশ্যই সরকার অনুমোদিত ও নিবন্ধিত আইনজীবির পরামর্শ নিন।

 

নামজারি সহ যেকোন আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

 

যোগাযোগ:

জাস্টিস ফোরাম

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

১৬, কৈলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা। অথবা

রোদ-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।

মোবাইল- 01711-068609 / 01540-105088

ইমেইল- info@ainbid.com

ওয়েবসাইট- ainbid.com

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *