নিষেধাজ্ঞা (Injunction)-
কোন পক্ষকে কোন কাজ করা কিংবা করা থেকে বিরত থাকার জন্য আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আজ্ঞা বা আদেশকেই বলা হয় নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য –
(১) মামলার কোনো পক্ষকে কোন কাজ করার জন্য,
(২) মামলার কোনো পক্ষকে কোন কাজ করা হতে বিরত রাখার জন্য অথবা
(৩) কোনো সম্পত্তিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য।
নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রয়োজনীয় আইন-
অস্থায়ী ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য নিম্নলিখিত আইনসমূহ অনুসরণ করা হয়-
(১) দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৩৯ আদেশ
(২) সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৫৩, ৫৪ ও ৫৫ ধারা
নিষেধাজ্ঞার প্রকার-
নিষেধাজ্ঞা কার্যের বা প্রকৃতির দিক থেকে ২ প্রকার –
(১) আদেশমূলক/ আদেশাত্মক/ বাধ্যতামূলক/ প্রতিরোধমূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory)
(২) নিষেধমূলক/ নিষেধাত্মক/ নিরোধক নিষেধাজ্ঞা।
সময়ের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকার-
(১) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction)
(২) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)
(৩) অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৩ ধরণের নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ আছে –
(১) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) – [ধারা ৫৩]
(২) স্থায়ী/ চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction) – [ধারা ৫৪]
(৩) আদেশমূলক/ বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা – [ধারা ৫৫]
দেওয়ানী কার্যবিধিতে ২ ধরণের নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ আছে-
(ক) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)
(খ) অন্তরবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad interim Injunction)
বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সকল ধরণের নিষেধাজ্ঞা হলো নিরোধক প্রতিকার।
আইনের বিধান, উপরোক্ত আলোচনা এবং আদালতে বাস্তব প্রচলিত পদ্ধতি পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, মূলত নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকার। যথা-
(১) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) [সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৫৩ ধারা]
(২) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction) [সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৫৪ ধারা]
(৩) অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction) [দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৩৯ ধারা]
(১) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction):
[সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭, ধারা ৫৩]
নালিশি বিষয়বস্তু স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য সম্পত্তিটি হস্তান্তর, রুপান্তর বা ধ্বংসসাধন থেকে রক্ষা করার জন্য অপর পক্ষকে নোটিশ প্রদান করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আদালত যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন তাকে বলা হয় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
কখন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা যায়-
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মোকদ্দমা চলাকালীন যেকোনো সময় মঞ্জুর করা যায়। অর্থাৎ একটি মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে রায় না হওয়া পর্যন্ত মামলার যেকোনো পর্যায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা যায়। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন পেলে আদালত উক্ত আবেদন সম্পর্কে অপর পক্ষকে নোটিশ দিবার আদেশ দিবেন। নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবার আশংকা থাকলে আদালত নোটিশ ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন। [আদেশ ৩৯(৩)]
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা সম্পত্তি স্থিতিশিল রাখার আদেশ প্রদানের কারণ- [আদেশ ৩৯(১)]
আদালত ২ টি কারণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা সম্পত্তি স্থিতিশিল রাখার আদেশ দিতে পারেন। যথা-
(ক) অপচয়, ক্ষতি, হস্তান্তর বা বিক্রয় করার আশংকা থাকলে।
(খ) অপসারণ কিংবা হস্তান্তরের হুমকি দিলে।
আপীল/রিভিশন-
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপীল-
[আদেশ ৪৩(১)]
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দে: কা: ৩৯ আদেশ মোতাবেক হলে উক্ত আদেশে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দে: কা: এর ১০৪ ধারা মোতাবেক বিবিধ আপীল করতে পারবেন।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার রিভিশন-
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দে: কা: এর ৩৯ আদেশ মোতাবেক না হয়ে দে: কা: ১৫১ ধারা মোতাবেক হলে রিভিশন করতে পারবেন।
[অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর বা না-মঞ্জুরের বিরুদ্ধে প্রতিকার রিভিশন। ]
যে অবস্থায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে থাকেন-
সাধারণত পাঁচটি অবস্থা বিবেচনায় রেখে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে থাকেন –
(১) দাবির যথার্থতা থাকলে,
(২) অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে,
(৩) কাজের অগ্রগতি
(৪) অন্যায় সংগঠন
(৫) প্রাইমা ফেসি কেইস (Prima Facie)
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে-
[আদেশ ৩৯(২/৩)]
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির Violation Miscellaneous Suit দায়ের করতে পারেন। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীকে আদালত অনধিক ৬ (ছয়) মাস দেওয়ানী কয়েদে আটকের আদেশ দিবেন এবং সমস্ত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিবেন। ক্রোক ১ (এক) বছর পূর্ণ হলে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারী ভঙ্গ অব্যাহত রাখলে আদালত ক্রোককৃত সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় করতে পারবেন।
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction):
[সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭, ধারা ৫৪]
শুনানীর পর মোকদ্দমার গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণ করে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।
কখন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা যায়-
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় মোকদ্দমার শেষে বা রায় বা ডিক্রির মাধ্যমে। সুতরাং স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করতে হবে আরজির মাধ্যমে মোকদ্দমা দায়ের করে। অর্থাৎ ইহা একটি দেওয়ানী মামলা এবং রায়ের মাধ্যমে আদালত স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেন।
নিম্নলিখিত ৫টি ক্ষেত্রে আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন।
ক) চুক্তিটি জিম্মার অন্তর্ভূক্ত হলে।
খ) ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের মাপকাঠি না থাকলে।
গ) আর্থিক ক্ষতিপূরণ অপর্যাপ্ত হলে।
ঘ) আর্থিক ক্ষতিপূরণ অনিশ্চিত হলে।
ঙ) মামলার বহুতা রোধের উদ্দ্যেশ্যে।
স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার তামদি মেয়াদ-
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে ৬ বছরের মধ্যে।
অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction)/ স্থিতাবস্থার আদেশ (Status quo)-
[দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৩৯ ধারা]
এক পক্ষের কথা শুনে অপর পক্ষের কথা না শুনে মোকদ্দমার গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণ না করে মোকদ্দমার শুরুতে যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা।
কখন অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা যায়-
অন্তরবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় মোকদ্দমার শুরুতে। অত্যন্ত জরুরী মূহুর্তে অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করবেন। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রচলিত নাই। ২০০৭ সাল হতে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে নালিশি বিষয়বস্তু স্থিতি অবস্থার (Status quo) আদেশ দিয়ে থাকেন।
যেসকল ক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান/নামঞ্জুর করবেন-
[সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭, ধারা ৫৬]
নিম্নলিখিত ১১ টি ক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান/নামঞ্জুর করবেন-
১) বিচারবিভাগীয় কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য যদি না মামলার বহুতা রোধে এরূপ আদেশ প্রয়োজন হয়।
২) অধস্তন আদালত নয় এরূপ কোনো আদালতের কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য।
৩) আইনগত সহায়তা নিতে বিরত রাখার জন্য বা আইন প্রনয়ণকারী সংস্থার নিকট আবেদন করা থেকে বিরত রাখার জন্য।
৪) সরকারের কোনো বিভাগের কাজ বা বিদেশী সরকারের কোনো সার্বভৌম কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য।
৫) ফৌজদারী কোনো কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য।
৬। যে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।
৭। উৎপাতের অযুহাতে উৎপাত নয় এমন কাজ বন্ধ করার জন্য।
৮। যে চুক্তি ক্রমাগত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বাদীর মৌন সম্মতি আছে।
৯। যে চুক্তির প্রতিকার অন্যভাবে প্রদান করা সম্ভব।
১০। আবেদনকারীর আচরণ সন্তোষজনক না হলে।
১১। যেক্ষেত্রে দরখাস্তকারীর বা বাদীর কোনো স্বার্থ নাই।
নেতিবাচক চুক্তি পালনে নিষেধাজ্ঞা-
[সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭, ধারা ৫৭]
কোনো নেতিবাচক চুক্তি পালনে বাধা প্রদানের জন্য আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন।
যেমন, ২১ ধারা মোতাবেক চুক্তি করার পরও কোনো কন্ঠ শিল্পীকে গান গাইতে বাধ্য করা যায় না। কিন্তু একজন কন্ঠ শিল্পী যদি একই সাথে দুই যায়গায় গান গাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় তাহলে দ্বিতীয় চুক্তিটি পালনে আদালত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন ৫৭ ধারা মোতাবেক। কারণ এটি একটি নেতিবাচক চুক্তি।
যেকোন আইনগত উপদেশ ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন-
যোগাযোগ-
আইনবিদ লিগ্যাল সলিউশন
ল্যান্ড প্রপার্টি সলিউশন সার্ভিস
সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)
১৬, কোইলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা
অথবা
রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইল- 01711068609 / 01540105088
ওয়েবসাইট- www.ainbid.com