বায়নানামা দলিলের নমুনা
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৪ ধারা অনুযায়ী বায়নানামা বা বিক্রয় চুক্তি হচ্ছে এমন একটি চুক্তি যা পক্ষগণের মধ্যে নির্ধারিত শর্তে সম্পত্তিটি হস্তান্তর করা বুঝায়। উক্ত বায়নানামা চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর গ্রহীতার অনুকূলে কোন মালিকানা বদল হয় না বা কোন স্বার্থ কিংবা কোন দায় সৃষ্টি হয় না। এর মাধ্যমে হস্তান্তর গ্রহীতা চুক্তিতে বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে দাতার অনুকূলে সম্পত্তির মূল্য আদায় দিলে দাতা ঐ সম্পত্তি গ্রহীতার অনুকূলে রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য। ২০০৪ সালে সংশোধিত রেজিস্ট্রেশন আইনের ৫৪এ ধারা অনুযায়ী বায়নাপত্র রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। ঐ ধারার বিধান অনুসারে স্থাবর সম্পত্তির বায়নাপত্রে বায়নাপত্র দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশনের সময় উল্লেখ থাকতে হয়। যদি কোন সময় উল্লেখ না থাকে তাহলে বায়নাপত্রের মেয়াদ ৬ মাস বলে ধরে নিতে হবে।
বায়নানামা, বায়নাপত্র বা বিক্রয় চুক্তি (Bainanama, Bainapotro or Contract for Sale) এর দলিলের নমুনা বা মুসাবিদা।
বায়নাপত্র দলিল
জিলা- ঢাকা, থানা-মোহাম্মদপুর অধীন, মৌজা-কাটাসুর স্থিত জমির পরিমাণ-৬৭০০ (ছয় হাজার সাতশত) অযুতাংশ, ভূমির মূল্য মং-১,৬০,০০,০০০/- (এক কোটি ষাট লক্ষ) টাকা। তন্মধ্যে বায়না অগ্রিম মং-৭০,০০,০০০/- (সত্তর লক্ষ) টাকা মাত্র। বায়নার মেয়াদ ০৩ (তিন) মাস। বেঁড়ী বাধের বাহিরে অবস্থিত।
মঞ্জুরুল হাসান খান, জন্ম তারিখ: ০১/০৭/১৯৮০ ইং, পিতা-মোশারফ হোসেন খান, মাতা-লুৎফুন নাহার খান, সাং-১৮/২ কবরখানা রোড, সরুই, বাগেরহাট, হাল সাং- ১নং কাটাসুর, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-ব্যবসা, জাতীয়তা-বাংলাদেশী, জাতীয় পরিচয় পত্র নং-২৬৯৫০৪৬৯৪১২৬৪
————————-দলিল গ্রহিতা।
মজিবুর রহমান, জন্ম তারিখ-২৫/০৬/১৯৬৪ ইং, পিতা- মরহুম মোহর আলী, মাতা- আমেনা খাতুন, সাং-২/৪ নর্থ সাউথ রোড, আরাম মডেল টাউন, বছিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা- ১২০৭, জাতীয়তা-বাংলাদেশী, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-ব্যবসা, জাতীয় পরিচয় পত্র নং- ২৬৯৬৪০৩৫৯৮৭৪২
—————————দলিল দাতা।
পরম করুণাময় মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করিয়া অত্র বায়না নামা দলিলের বর্ণনা করিতেছি। যেহেতু নিম্ন তফসিল বর্ণিত দাগের আরও কতক সম্পত্তি মৃত ডুমুর আলীর পুত্র শেখ সেলাত ও শেখ ফেরু রায়তি জোতস্বত্বে মালিক হইয়া বিগত সি,এস রেকর্ডে তাহাদের নাম রেকর্ডভূক্ত করাইয়া ভোগদখল করিতে থাকাবস্থায় উক্ত ফেরু এক স্ত্রী হাওয়া বিবি ও ভ্রাতা সেলাতকে ওয়ারিশ বিদ্যমান রাখিয়া পরলোক গমন করিলে পর তাহার ত্যাজ্যবত্তি সম্পত্তিতে উক্ত সেলাত রায়তি জোত স্বত্বে এবং বেরাদারীয়া ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হইয়া ভোগদখল করিতে থাকাবস্থায় উক্ত সেলাত ৩ কন্যা আরজান বিবি ওরফে রমজান নেছা, নিগম ওরফেনেছা, ফাতেমা ও সেলাতের চাচাতো ভাই এর পুত্র মোহর আলী ওরফে শেখ টেনুকে ওয়ারিশ বিদ্যমান রাখিয়া পরলোক গমন করেন। সেলাতের কন্যা ফাতেমা পিতার ওয়ারিশ সূত্রে মালিক ভোগ দখলকার নিয়ম থাকাবস্থায় আহলাক বানু ওরফে আলহাদ বানুকে ওয়ারিশ বিদ্যমান রাখিয়া পরলোক গমন করেন।
অতঃপর উপরোক্ত ব্যাক্তিগণ মালিক ও ভোগ দখলকার হিসাবে নিয়ত থাকাবস্থায় এস,এ রেকর্ড কার্যক্রম আগত হইলে নিজ নিজ নাম রেকর্ডভুক্ত করাইয়া সকলের জ্ঞাতসারে ভোগ দখলে রত থাকেন।
অতঃপর এস,এ রেকর্ডিয় মালিক নিগম ওরফেনেছা বিবি তাহার সম্পত্তি ভোগ দখল করা অবস্থায় একমাত্র পুত্র দুলু দেওয়ান ওরফে দুল্যা মিয়া কে একমাত্র ওয়ারিশ বিদ্যমান রাখিয়া মৃত্যুবরন করেন। দুলু দেওয়ান ওরফে দুল্যা মিয়া মায়ের ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হইয়া বিগত ২৮/০৮/৫৪ ইং তারিখে ৬০৭০ নং সাফ কবলা দলিলে কান্দু বেপারীর পুত্র আলী হোসেন মিয়া এর নিকট বিক্রয় করিয়া চিরতরে নিঃস্বত্ববান হন। আলী হোসেন মিয়া ক্রয় সূত্রে উক্ত সম্পত্তির মালিক দখলকার থাকাবস্থায় বিগত ২৬/৫/৬৫ ইং তারিখে ৪০৭৫ নং সাফ কবলা দলিলে আব্দুর রহিমের পুত্র আশ্রাব উদ্দিন এর নিকট বিক্রয় করিয়া চিরতরে নিঃস্বত্ববান হন।
অপর দিকে আরজান বিবি ওরফে রমজান নেছা এস,এ রেকর্ডের মালিক হইয়া বিগত ৩০/০৭/৬৯ ইং ১০৯৩৩ নং সাফ কবলা দলিলে উপরোক্ত আব্দুর রহিমের পুত্র আশ্রাব উদ্দিন এর নিকট বিক্রয় করিয়া চিরতরে নিঃস্বত্ববান হন। আবার, আহলাক বানু ওরফে আলহাদ বানু এস,এ রেকর্ডিয় মালিক হইয়া বিগত ১৬/১১/৬২ ইং ১১৯৬৩ নং দলিলে মোহর আলীর স্ত্রী কান্দন নেছা বিবি বরাবরে এবং একই তারিখে ১১৯৬৫ নং দলিলে মোহর আলীর ৩ পুত্র আনসার, মজিবর রহমান ও কালু মিয়ার নিকট বিক্রয় করিয়া চিরতরে নিঃস্বত্ববান হন।
সেমতে আমি অত্র দলিল দাতা মজিবর রহমান নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি উপরে উল্লেখিত সাফ কবলা দলিল মূলে খরিদ করিয়া খরিদা সূত্রে মালিক নিয়ত হইয়া বর্তমান ঢাকা সিটি জরিপ মোতাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি), ধানমন্ডি সার্কেল, ঢাকা, নামজারী করিয়া ১০৯/০৯ নং জোতে সরকারের ধার্য্যকৃত বার্ষিক খাজনাদি পরিশোধ করিয়া ভোগদখলে মালিক বিদ্যমান আছি।
বর্তমানে আমি অত্র দলিল দাতার নগদ টাকার একান্ত দরকার হওয়ায় নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সাফ বিক্রয় করার জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করিলে পর, আপনি অত্র দলিল গ্রহিতা তাহা খরিদ করিতে সম্মত হইলে উহার বর্তমান বাজার মূল্যের সর্বোচ্চ উচিৎ মূল্য মং- ১,৬০,০০,০০০/- (এক কোটি ষাট লক্ষ) টাকা মূল্য ধার্য্য করিয়া নগদ ৭০,০০,০০০/- (সত্তর লক্ষ) টাকা এককালীন বুঝিয়া পাইয়া স্বীকার এবং অঙ্গীকার করিতেছি যে, অদ্য হইতে আগামী ০৩ (তিন) মাস মেয়াদ মধ্যে বায়না বাদে অবশিষ্ট-৯০,০০,০০০/- (নব্বই লক্ষ) টাকা আমি অত্র দলিল দাতা আপনি দলিল গ্রহিতার নামে একটি সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করিয়া দিতে বাধ্য থাকিব ও রহিলাম।
আর যদি আপনি অত্র দলিল গ্রহিতা নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি উক্ত মেয়াদের মধ্যে বায়নাকৃত টাকা বাদে অবশিষ্ট টাকা আমি দলিল দাতাকে দেয়া সত্বেও উক্ত টাকা গ্রহণ না করি বা বায়নাকৃত সম্পত্তি আপনার বরাবরে সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করিয়া দিতে অস্বীকার করি বা কোন প্রকার তাল বাহানা করি তাহা হইলে আপনি অত্র দলিল গ্রহিতা বায়নার টাকা বাদে অবশিষ্ট টাকা আদালতে দাখিল দিয়া আদালতের মাধ্যমে আপনি গ্রহিতা সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করাইয়া নিতে পারিবেন। ইহাতে আমি অত্র দলিল দাতার ওয়ারিশগণক্রমে কাহারো কোন প্রকার ওজর আপত্তি বা দাবী দাওয়া চলিবে না করিলেও তাহা সর্ব আইন আদালতে অগ্রাহ্য ও বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি আমি অত্র দলিল দাতা ইতোপূর্বে অন্যত্র কাহারো নিকট কোন প্রকার দান, বিক্রয়, হস্তান্তর করি নাই বা কোন সরকারী, আধা-সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ রাখিয়া কোন ঋণ গ্রহণ করি নাই। নিম্ন তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সম্পূর্ণ নির্দায়ী, নিষ্কণ্টক ও নির্ভেজাল আছে প্রকাশে আপনার সহিত বায়না চুক্তিতে আবদ্ধ হইলাম।
এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ্য শরীরে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র বায়নানামা দলিল পাঠ করিয়া এবং অন্যের দ্বারা পাঠ করাইয়া ইহার মর্ম ও ফলাফল অবগত হইয়া নিম্ন লিখিত সাক্ষীগণের মোকাবেলায় আমি অত্র বায়নানামা দলিল আপনি অত্র দলিল গ্রহিতার বরাবরে সহি সম্পাদন করিয়া দিলাম। ইতি তারিখ: বাংলা-১৪২২ সনের ২২শে শ্রাবণ মোতাবেক ইংরেজি ০৬/০৮/২০১৫ সন।
তফসিল
জিলা-ঢাকা, থানা ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস মোহাম্মদপুর অধীন ঢাকা কালেক্টরীর ৪৯নং তৌজিভুক্ত। জে, এল নং- ৪২ সি, এস ২৪২নং, এস,এ ৬০ নং, আর,এস ৫নং, ঢাকা সিটি জরিপে ৬নং, মৌজা “কাটাসুর” স্থিত। সি,এস ৪৬০নং, এস,এ ৪২০নং, আর,এস ৮৮ ও ৬২৩নং, সিটি জরীপ ২৮২৪নং নামজারী-৬২৭৭ নং খতিয়ানে নং জোতভুক্ত। সি,এস ও এস,এ ১৩৯ (একশত উনচল্লিশ) নং, আর,এস ২০৭ (দুইশত সাত) নং, সিটি জরীপ-৯৪৯ (নয়শত উনপঞ্চাশ) নং দাগের ৬৭০০ (ছয় হাজার সাতশত) অযুতাংশ নাল জমি ষোল আনা অত্র দলিল দ্বারা বায়নাকৃত বটে।
চৌহদ্দি
উত্তরে- ২০১২ নং দাগের জমি, দক্ষিণে- অত্র দাগের জমি, পূর্বে-২০১৫ দাগের জমি, পশ্চিমে-৯৫৩ নং দাগ ও অত্র দাগের জমি।
হলফনামা
বরাবর,
সাব-রেজিস্ট্রার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
আরাম প্রপার্টি লিঃ এর পক্ষে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মজিবুর রহমান, জন্ম তারিখ- ২৫/০৬/১৯৬৪ ইং, পিতা-মরহুম মো: ফজলুর রহমান, মাতা-আমেনা খাতুন, সাং-২/৪ নর্থ সাউথ রোড, আরাম মডেল টাউন, বছিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭, জাতীয়তা-বাংলাদেশী, ধর্ম-ইসলাম, পেশা-ব্যবসা, জাতীয় পরিচয় পত্র নং-২৬৯৬৪০৩৫৯৮৭৪২ এই মর্মে ঘোষণাপূর্বক হলফনামা প্রদান করিতেছি যে, আমি বাংলাদেশী নাগরিক। আমি ঘোষণা করিতেছি যে,
(ক) হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ, ১৯৭২ (১৯৭২ সনের পি.ও নং ৯৮) এর অধীন ক্রোকের আওতাধীন নহে;
(খ) হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশ পরিত্যাক্ত সম্পত্তি (নিয়ন্ত্রন, ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি) আদেশ, ১৯৭২ (১৯৭২ ডি.ও নং ১৬) এর অর্থানুযায়ী পরিত্যক্ত সম্পত্তি নহে;
(গ) হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তি আপাতত: বলবৎ কোন আইনের অধীন সরকারে বর্তায় নাই, বা সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয় নাই;
(ঘ) প্রস্তাবিত হস্তান্তর আপাতত: বলবৎ অন্য কোন আইনের কোন বিধানের সহিত সাংঘর্ষিক নহে;
(ঙ) প্রস্তাবিত হস্তান্তর বাংলাদেশ ল্যান্ড হোল্ডিং (লিমিটেশন) আদেশ, ১৯৭২ (১৯৭২ সনের পি.ও নং ৯৮) এর অনুচ্ছেদ ৫এ অনুযায়ী বাতিলযোগ্য নহে; এবং
(চ) হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাবিত স্থাবর সম্পত্তির বিবরণ সঠিকভাবে বর্ণিত হইয়াছে এবং উহা অবমূল্য করা হয় নাই এবং উল্লেখিত সম্পত্তি হস্তান্তরকরণে আবেদনকারীর বৈধ অধিকার রহিয়াছে।
আমি আরও ঘোষণা করিতেছি যে,
আমি দলিলে বর্ণিত সম্পত্তির নিরঙ্কুশ মালিক। অন্য পক্ষের সহিত এই সম্পত্তির বায়না চুক্তি স্বাক্ষর হয় নাই বা অন্য কোথাও হস্তান্তর হয় নাই বা অন্য কোন পক্ষের নিকট বন্ধক রাখা হয় নাই। দলিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে আমার বৈধ স্বত্ব ও অধিকার বহাল আছে এবং প্রদত্ত বিবরণ আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য। তারিখ-০৬/০৮/২০১৫ইং
———————
হলফকারী স্বাক্ষর
সনাক্তকারীর ঘোষণা
এই মর্মে ঘোষণা করিতেছি যে, হলফকারী আমার পরিচিত এবং আমার সম্মুখে তিনি দলিলে স্বাক্ষর প্রদান করিয়াছেন (বা আমি তাহার বা তাহাদের বা .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. .. নং ক্রমিকধারী হলফকারীর নাম ব-কলমে লিখিয়া দিয়াছি।
———————
সনাক্তকারীর স্বাক্ষর