মানবাধিকার সংস্থা গঠন প্রক্রিয়া

Spread the love

এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে একাই একটি মানবাধিকার সংস্থা গঠন করা সম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটি মানবাধিকার সংস্থা গঠন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।

 

মানবাধিকার সংস্থা গঠন প্রক্রিয়া

মানবাধিকার সংস্থা গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগ। এই সংস্থার মাধ্যমে মানুষের অধিকার রক্ষা করা এবং মানবাধিকার লংঘিত হলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। দেশের মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মানবাধিকার সংস্থা গঠন করে সামাজিক কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখা যায়। মানবাধিকার সংস্থা গঠনের জন্য আইন রয়েছে। আইনের বিধান মেনেই একটি মানবাধিকার সংস্থা গঠন করতে হবে। মানবাধিকার সংস্থা গঠন প্রক্রিয়া নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

 

(১) উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ-

একটি মানবাধিকার সংস্থা গঠন করতে হলে সর্বপ্রথম উক্ত সংস্থার মিশন, ভিশন এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে হবে। যথা-

(১) মানবাধিকার রক্ষা,

(২) নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি,

(৩) আইনি সহায়তা প্রদান,

(৪) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।

 

(২) প্রাথমিক কমিটি গঠন কয়া-

মানবাধিকার সংস্থাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন ও আগ্রহী এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কার্যকর পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। যথা-

(১) সভাপতি,

(২) সাধারণ সম্পাদক,

(৩) কোষাধ্যক্ষ,

(৪) সদস্যগণ,

 

(৩) মানবাধিকার সংস্থার নাম নির্ধারণ-

একটি আকর্ষণীয় ও সফল মানবাধিকার সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অর্থবহ, আনকমন ও আকর্ষণীয় নাম নির্বাচন করতে হবে।

 

(৪) গঠনতন্ত্র বা সংবিধান প্রণয়ন-

সংস্থাটির পরিচালনা পদ্ধতি সম্বলিত একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে যার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিসহ বিস্তারিত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে-

(১) সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য,

(২) সদস্য হওয়ার যোগ্যতা,

(৩) কমিটির গঠনপদ্ধতি,

(৪) সভা আয়োজন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া,

(৫) অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি,

(৬) বার্ষিক সাধারণ সভা বা AGM সংক্রান্ত বিষয়াবলী।

 

(৫) রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ –

বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানবাধিকার সংস্থা হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিম্নে উল্লেখিত যেকোনো একটি কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে-

(১) যৌথ কোম্পানী নিবন্ধকের কার্যালয় (RJSC)- (The Societies Registration Act, 1860 অনুযায়ী)

(২) সমাজসেবা অধিদপ্তর (Social Welfare Department),

(২) এনজিও ব্যুরো (NGO Affairs Bureau)- বিদেশি অনুদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

 

(৬) যে সকল আইনের অধীন রেজিস্ট্রেশন প্রদান কর-

The Societies Registration Act, 1860- এই আইন মোতাবেক Registrar of Joint-stock Companies and Firms (RJSC) নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসাবে রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে।

 

“স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১” ও “স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ১৯৬২”- এই আইন মোতাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সমাজসেবা অধিদফতর, নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে।

 

(৭) কার্যক্রমের পরিধি-

RJSC কর্তৃপক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সারা দেশ ব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে প্রথমে একটি জেলার মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে স্থানীয় সীমানা বৃদ্ধির জন্য অনুমোদন নিতে হয়।

 

(৮) প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ-

(১) গঠনতন্ত্র।

(২) প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের তথ্য।

(৩) প্রতিষ্ঠানের অফিসের ঠিকানা।

(৪) প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।

(৫) প্রত্যেকের পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

 

(৯) আবেদন পদ্ধতি-

গঠনতন্ত্র সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসমূহ প্রস্তুত করে সরকার নির্ধারিত ফিসহ RJSC কিংবা সমাজসেবা অধিদফতরে আবেদন করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে নিজে কনফিউজড হলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে রেজিস্ট্রেশনটি সুন্দরভাবে সহজে করা যেতে পারে।

 

(১০) অফিস স্থাপন-

সংস্থার কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি মানসম্মত অফিস নিতে হবে।

 

(১১) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-

অনুমোদিত সংস্থার নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্রসমূহ প্রয়োজন হবে-

(১) রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট,

(২) গঠনতন্ত্র এর কপি,

(৩) কমিটির সিদ্ধান্তপত্র।

 

(১২) কার্যক্রম শুরু ও প্রচার-

এরপর সংস্থার প্রচার ও প্রসারের জন্য নিম্নলিখিত কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে হবে-

(১) মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনার,

(২) বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন,

(৩) মামলা অনুসন্ধান ও আইনি সহায়তা প্রদান,

(৪) অনলাইনে (ফেসবুক, ইউটিউব, ওয়েবসাইট ইত্যাদি মাধ্যমে) প্রচার করতে হবে।

 

(১৩) প্রয়োজনীয় আইনসমূহ-

মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক আইন রয়েছে। একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই নিম্নলিখিত আইনগূলো ভালভাবে জানা জরূরী-

 

(১) বাংলাদেশের সংবিধান- মানবাধিকার লংঘিত হলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট পিটিশন (Writ Jurisdiction) দায়ের করে প্রতিকার পাওয়ার ব্যাবস্থা রয়েছে।

(২) মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯

(৩) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০০৭

(৪) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধন ২০০৩, ২০২০)- নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, পাচার ইত্যাদি অপরাধের জন্য এই আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই নারী ও শিশুর নির্যাতন রোধে ও অধিকার রক্ষায় এই আইন গুরুত্বপূর্ণ।

(৫) শিশু আইন, ২০১৩- শিশুদের অধিকার রক্ষায় ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য এই আইন গুরুত্বপূর্ণ।

(৬) যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮

(৭) দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (Penal Code, 1860)- চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বহু অপরাধের দণ্ডের ব্যবস্থা এই আইনে রয়েছে।

(৮) ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮

(৯) তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯- রাষ্ট্রের তথ্য জানা জনগণের একটি অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এই আইন জানা প্রয়োজন।

(১০) বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন,

(১১) পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৫৮ নং আইন )

(১২) বাল্য বিবাহ ও প্রতিরোধ আইন,

(১৩) অভিভাবকত্ব আইন,

(১৪) মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু আইন, খ্রিস্টান বিবাহ আইন- ধর্মভিত্তিক আইন ও পরিবারিক এই আইনসমূহ মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

(১৫) সালিশ আইন, ২০১০

(১৬) স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯

(১৭) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯- এই আইনের মাধ্যমে সরকারের মানবাধিকার সংস্থা “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC)” গঠন করা হয়েছে। তাই তাই একজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হিসাবে এইগুলো জানা জরুরী। এই কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করতে পারে এবং সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করতে পারে।

(১৮) জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদসমূহ- জাতিসংঘের নিচের আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো বাংলাদেশ অনুসমর্থন করে বিধায় মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হিসাবে এইগুলো জানা জরুরী।

Universal Declaration of Human Rights (UDHR), 1948 (জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা, ১৯৪৮)

International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR)

Convention on the Rights of the Child (CRC)

Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women (CEDAW)

 

(১৪) মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার এর পার্থক্য-

(১) মৌলিক অধিকারগুলো সবই মানবাধিকার কিন্তু সকল মানবাধিকারসমূহ মৌলিক অধিকার নয়।

(২) মৌলিক অধিকার আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায় কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে ১৮টি মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। অপর দিকে মানবাধিকারগুলো আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায় না।

(৩) সংবিধানে মৌলিক অধিকার নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে কিন্তু মানবাধিকারগুলো কোন আইনে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নাই।

(৪) বাংলাদেশের কোনো আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হলে উক্ত আইন বাতিল হয়ে যাবে (সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ)। তাই মৌলিক অধিকার অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু মানবাধিকারগুলো আইনগতভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ নয়।

(৫) মৌলিক অধিকার আইনগত অধিকার কিন্তু মানবাধিকার আইনগত অধিকার নয় বরং ইহা ন্যায়পরতা ও বিবেক প্রসূত অধিকার।

 

তবে মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারের পার্থক্য খুবই সূক্ষ্ম। কারণ সকল মৌলিক অধিকারই মানবাধিকার। মৌলিক অধিকার নয় এমন অনেক মানবাধিকার আছে। তাই মানবিক বিবেচনায় দুইটা অধিকারই একটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

(১৫) মানবাধিকার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-

সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক।
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে
মানবাধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বর
মানবাধিকার দিবস পালইত হচ্ছে ১৯৫০ সাল থেকে
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে অনুচ্ছেদ ৩০টি অনুচ্ছেদ
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রটি আইনি বাধ্যবাধকতাসমৃদ্ধ চুক্তি নয়, তবে এটি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশের সরকারি মানবাধিকার সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, অফিস- গুলফেসা টাওয়ার, মগবাজার, ঢাকা।

 

উপদেশ-

সংস্থাটি ভালভাবে পরিচালনার জন্য নিম্নলিখিত উপদেশসমূহ অনুসরণ করা যেতে পারে-

(১) সংস্থার সকল কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা বজায় রাখা,

(২) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগূলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা,

(৩) প্রতিবছর কার্যবিবরণী ও আর্থিক হিসাব প্রস্তুত করা।

(৪) উপরোল্লিখিত প্রয়োজনীয় আইনসমুহ সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখা উচিৎ।

 

 

মানবাধিকার সংস্থা, লিমিটেড কোম্পানী ও যেকোন ব্যবয়ায়িক লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনসহ যেকোন আইনগত মতামত ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন-

 

যোগাযোগ

আইনবিদ লিগ্যাল সলিউশন

অন স্টপ লিগ্যাল সলিউশন সার্ভিস

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

ল্যান্ড এন্ড ট্যাক্স কনসালট্যান্ট

১৬, কৈলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা।

অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

ফোন- 01711068609 / 01540105088

ওয়েবসাইট- www.ainbid.com

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *