মানবাধিকার-Human Rights কি

Spread the love

মানবাধিকার বর্তমান বিশ্বে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানবাধিকার কর্মী, সংগঠকসহ সকল সচেতন ব্যক্তির মানবাধিকার সম্মন্ধে জানা দরকার।

মানবাধিকার (Human Rights)-

 

পৃথিবীর সকল মানুষের যে অধিকারগূলো সার্বজনীন  (Universal), সহজাত (Inherent), অহস্তান্তরযোগ্য (Non-transferable)  এবং অলঙ্ঘনীয় (Inviolable) সেই অধিকারই হলো মানবাধিকার। প্রত্যেক মানুষ জন্মগতভাবেই এই অধিকার অর্জন করে থাকে। মানুষ এই অধিকার স্বাধীনভাবে ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে মানবাধিকারের চর্চা করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতিসাধন কিংবা শান্তি বিনষ্ট করা যাবে না। মানবাধিকার পৃথিবীর সকল জায়গায় সকল মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এই অধিকার একই সাথে সহজাত (Inherent) এবং আইনগত (Legal) অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এই অধিকার রক্ষা করা। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে মানবাধিকার ব্যাপকভাবে লংঘিত হচ্ছে। তাই শুধুমাত্র পরিবার ও সমাজের কর্তাগণ তাদের অধিনস্ত সদস্যদের অধিকার রক্ষা করলেই চলবে না। রাষ্ট্রীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

মানবাধিকারের সংজ্ঞা-

মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশের আইন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারের ঘোষণা বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, মানবাধিকার হলো মানুষের সহজাত অধিকার যা মানুষ পৃথিবীর সকল জায়গায় কোন প্রকার বাঁধা বিঘ্ন ছাড়া সমানভাবে ভোগ করতে পারে।

 

মানবাধিকার বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ-

(১) মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে চলমান বিতর্কের অবসান এখনও হয় নাই।

(২) ক্ষমতাধর শাসকগণ জনগণের মানবাধিকারগুলো হরণ ও দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে।

(৩) সবল জাতিগুলো দুর্বল জাতিগুলোর মানবাধিকারকে স্বীকার করতে চায় না বরং এটি নিয়ে উপহাস করছে।

 

মানবাধিকারের ক্রমবিকাশ-

 

(১) প্রাচীন ভারতীয় নীতিশাস্ত্র-

প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহের আলোচনার মূল বিষয় ছিল ন্যায়-নীতি ও মানব ধর্ম। সুতরাং প্রাচীন ভারতীয় নীতিশাস্ত্র মূলত মানবাধিকারকেই নির্দেশ করছে।

 

(২) সাইরাস সিলিন্ডার (Cyrus Cylinder)

৫৩৯ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পারস্যের রাজা দ্বিতীয় সাইরাস ব্যাবিলন আক্রমণ করেন। ব্যাবিলন আক্রমণের পর তিনি ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা নির্যাতিত দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে দেন এবং তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তারপর তিনি একটি সিলিন্ডার তৈরি করেন, যা সাইরাস সিলিন্ডার নামে পরচিত। উক্ত সিলিন্ডারে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা এবং মানবাধিকার বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটাই বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ।

 

(৩) মদীনা সনদ-

৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদীনা সনদ ঘোষণা করেন। উক্ত মদীনা সনদকে পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সনদে সর্বমোট ৪৭টি অনুচ্ছেদ আছে। এই সনদে মানবাধিকারের বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। উক্ত সনদে উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদসমূহ হলো-

(ক) সনদে স্বাক্ষরকারী সব সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে এবং সব সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।

(খ) সকল নাগরিক পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

(গ) নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

(ঘ) সকল প্রকার রক্তপাত, হত্যা এবং ধর্ষণ নিষিদ্ধ।

(ঙ) দুর্বল ও অসহায়দের সর্বোতভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

 

(৪) ম্যাগনা কার্টা (১২১৫ )-

ম্যাগনা কার্টা মানবাধিকারের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সনদ। এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের যাত্রা শুরু হয়। ইংল্যান্ডের রাজা জন এবং বিত্তশালী ব্যারনদের মধ্যে ১২১৫ সালে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় যা ম্যাগনা কার্টা নামে অভিহিত। এই সনদের উল্লেখযোগ্য বিধান হচ্ছে-

(ক) জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলের পূর্ব অনুমতি ব্যতীত জনগণের উপর কর আরোপ করা যাবে না।

(খ) রাজকর্মকর্তারা ইচ্ছামত জনগণের ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে না।

(গ) ব্যাবসায়ীগণ স্বাধীনভাবে রাজ্যের এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারবে।

(গ) কোন মানুষকে আদালতের রায় কিংবা আইন ব্যতীত গ্রেপ্তার, আটক, সম্পত্তিচ্যুত, দীপান্তরিত, নির্বাসিত বা হয়রানি করা যাবে না।

(ঘ) কোনো দেশের রাজাসহ উক্ত দেশের সকল মানুষ রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।

 

(৫) পিটিশন অব রাইটস (১৬২৮)-

ব্রিটিশ জনগণের আন্দোলনের ফলে ১৬ শতকে প্রথম পিটিশন অব রাইটস নামে একটি দলিল সৃষ্টি করা হয়। পিটিশন অব রাইটস সংসদ গৃহীত হয় ১৬২৮ সালে। এটি মানবাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই সনদের উল্লেখযোগ্য বিধান হচ্ছে-

(ক) সংসদের সম্মতি ছাড়া করারোপ ওবিনা অপরাধে আটক করা যাবে না।

(খ) ব্যক্তিগত বাসস্থানে অবৈধ অনুপ্রবেশ করা যাবে না।

(গ) সামরিক আইনের প্রয়োগ থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান।

 

(৬) বিল অব রাইটস (১৬৮৯)-

বিল অব রাইটস ১৬৮৯ সালে ব্রিটিশ পার্লমেন্টে গৃহীত হয় অতঃপর বিধিবদ্ধ আইনে পরিণত হয়। এই সনদের উল্লেখযোগ্য বিধান হচ্ছে-

(ক) জীবন ও সম্পত্তির পূর্ণ স্বাধীনতা,

(খ) লেখনী দ্বারা জাতির নিকট কথা বলার অধিকার,

(গ) স্বাধীন লোকদের দ্বারা গঠিত জুরি ছাড়া আর কারো দ্বারা ফৌজদারী অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন না হওয়ার স্বাধীনতা,

(ঘ) শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো ধর্ম পালনের স্বাধীনতা।

 

ধর্মে মানবাধিকারের গুরুত্ব-

 

আল-কুরআন-

ইসলাম ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কুরআনে মানবাধিকার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। একেশ্বরবাদী সর্বশেষ ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্মের প্রচারক সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। আল-কুরআনে মানবাধিকার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। যথা-

(ক) ইসলাম মানবজাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবময় অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে।

(খ) মানুষের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বংশীয় মর্যাদা, শ্রেণীবৈষম্য ও বর্ণপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে।

(গ) অধীনদের প্রতি সদাচারী ও ন্যায়পরায়ণ হতে শিক্ষা দিয়েছে।

(ঘ) আরব-অনারব, সাদা-কালো সবাই একই পিতা-মাতা হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর সন্তান।

(ঙ) অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক অধিকার।

(চ) ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার।

(ছ) জীবনরক্ষা ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার,

(জ) ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, একতা, সংঘবদ্ধ ও সাম্যের অধিকার,

(ঝ) হালাল উপার্জনের অধিকার, এতিম, মিসকিন, অসহায় নারী ও শিশুর অধিকার, প্রতিবেশির অধিকার, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রভৃতি।

 

মহানবী সা: বিদায় হজ্জের ভাষণে মানবাধিকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

যেকোন আইনগত মতামত ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন-

 

যোগাযোগ

 

আইনবিদ ল’ অফিস

ল্যান্ড প্রপার্টি সলিউশন সার্ভিস

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

ল্যান্ড এন্ড ট্যাক্স কনসালট্যান্ট

১৬, কৈলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা।

অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

ফোন- 01711068609 / 01540105088

ওয়েবসাইট- www.ainbid.com

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *