রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক কার্যকর হবে কিনা-
অনেকে মনেই এই প্রশ্নটি আছে যে, রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক হয় না। তাদের কাছে প্রশ্ন, আসলে ঠান্ডা মাথায় কয়জন তালাক দেয়? আসলে তালাক সাধারণত মানুষ রাগের মাথায়ই দেয়। রাগ কিংবা খুশি হওয়ার সাথে তালাকের কোন সম্পর্ক নেই। মানুষের মনের অবস্থা যেরকমই থাকুক না কেন তালাক দিলেই তালাক হয়ে যাবে। এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে। যেহেতু তালাক একটি স্পর্ষকাতর বিষয় সুতরাং এই বিষয়ে সকলকেই সচেতন থাকা উচিত।
রাগের মাথায় তালাক দিলে করণীয় কী–
রাগের মাথায় স্ত্রীকে এক তালাক কিংবা দুই তালাক দিলে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই স্বামী উক্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তিন তালাক দেওয়া হয়ে গেলে উক্ত স্ত্রীর সাথে সংসার করার আর কোন সুযোগ থাকে না। এইক্ষেত্রে যদি উক্ত স্ত্রীর তালাকপ্রাপ্তা হবার পর ইদ্দত পালন শেষে অন্য কোন পুরুষের সাথে বিয়ে হয়, তার সাথে স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে থাকে, তারপর দ্বিতীয় স্বামী কোন কারণে মারা যায় বা তালাক প্রদান করে। তাহলে ইদ্দত পালন শেষে প্রথম স্বামী আবার বিয়ে করতে পারবে। এছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় শরিয়তে নাই। ইহাই পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট বাণী।
তালাক সম্পর্কে হাদিসের বাণী-
তালাকের বিষয়ে রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ
তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা রাগ হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত। (আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিজি ১১৮৪)
রজয়াত: এক তালাক বা দুই তালাক দেয়ার পর স্ত্রীর ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনাকে রাজআত করা বলে।
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রা. এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন, যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ (তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা) করতে পার। কারণ,রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। (বুখারি-২/৭৯২, ২/৮০৩)
তালাক সম্পর্কে কুরআনের বাণী-
তিন তালাক সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সুরা বাকারা-২৩০)
তালাক সম্পর্কে প্রচলিত আইন-
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দিলে অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ না দিয়াই উক্ত স্বামী তার স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করিয়া গ্রহণ করতে পারবেন।
তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহর নিকট একাগ্রচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :
“নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।” [সূরা বাকারা : ২২২]
লেখক-
এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন
01711-068609 / 01540-105088