সাক্ষ্য আইনের সহজ নোট

The Evidence Act, 1872 (সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২)

 

সাক্ষ্য আইনের প্রেক্ষাপট:

সাক্ষ্য আইন প্রথম প্রণীত হয় ১৮৩৫ সালে

স্যার হেনরী সামনার খসড়া প্রস্তুত করেন ১৮৬৮ সালে যা গৃহিত হয়নি।

স্যার জেমস স্টিফেন কর্তৃক সর্বশেষ প্রণীত হয় ১৮৭২ সালে

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনটি বর্তমানে পৃথিবীর ৫ টি দেশে প্রচলিত আছে। যথা: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শৃলঙ্কা ও মায়ানমার।

 

প্রাথমিক তথ্য:

প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ১৮৭২
কার্যকর : ১ লা সেপ্টেম্বর ১৮৭২
আইন নং : ১৮৭২ সালের ১ নং আইন
খন্ড : ৩টি
অধ্যায় : ১১ টি
ধারা : ১৬৭ টি

 

 

১ম খন্ডে : ১ – ৫৫ ধারা – ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা

২য় খন্ডে : ৫৬ – ১০০ ধারা – ঘটনার প্রমাণ

৩য় খন্ডে : ১০১ – ১৬৭ ধারা – সাক্ষ্য উপস্থাপন ও ইহার ফলাফল

 

ধারাহাহিক বর্ণনা:

১ম খন্ড : ১ – ৫৫ ধারা   – ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা

 

ধারা ১: সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, শুরু, সীমা।

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম: সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (The Evidence Act, 1872)

শুরু: ১ সেপ্টেম্বর ১৮৭২

সীমা: সমগ্র বাংলাদেশ

 

ধারা ৩: সংজ্ঞা/ব্যাখ্যা সমূহ।

 

(I) আদালত (Court): “আদালত” বলিতে সকল জজ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং সালিস ব্যতীত সাক্ষ্য গ্রহণে আইনতঃ ক্ষমতাপ্রাপ্ত সকল ব্যক্তিকে বুঝাইবে।

 

(II) ঘটনা বা বিষয় (Fact): ইন্দ্রীয় গ্রায্য সকল কিছুই হইলো ঘটনা।  আমাদের পঞ্চ ইন্দিয় তথা চোখ, কান, নাসিকা, জিহ্ববা,ত্বক ইত্যাদি দ্বারা যাহা কিছুই গ্রাহ্য করা হয় তাহাই ঘটনা। এছাড়াও মানসিক কোন অবস্থা, যে সম্পর্কে কোন ব্যক্তি সচেতন থাকে তাহাও ঘটনা।

 

(III) প্রাসঙ্গিক বিষয় (Relevant Facts): বিচার্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয়কেই বলা হয় প্রাসঙ্গিক বিষয়।

 

(IV) বিচার্য বিষয় (Facts in Issue): বাদীর আরজিতে যা দাবী করে সে গুলির মধ্যে বিবাদী তাহার লিখিত জবাবে যেই গুলি অস্বীকার করে তাহাই বিচার্য বিষয়।

 

(V) দলিল (Document): কোনো পদার্থের উপর অক্ষর, অঙ্ক বা চিহ্ন কিংবা অন্য কোনো পন্থায় প্রকাশিত বা বর্ণিত কোনো বিষয়কে দলিল বলে।

 

(VI) সাক্ষ্য (Evidence): মামলার বিরোধীয় বিষয় প্রমাণের জন্য যেসকল মৌখিক বা দালিলিক উপকরণ আদালতের পর্যবেক্ষনের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয় তাহাকে সাক্ষ্য বলে।

 

(VII) প্রমাণিত (Proved): মামলার বিরোধীয় বিষয় প্রমাণের জন্য উপস্থাপিত সাক্ষ্যসমূহ বিবেচনা করে আদালত যদি মনে করেন ঘটনার অস্তিত্ব আছে তখন তাকে বলা হয় প্রমাণীত। এই ক্ষেত্রে একটি রায় (Judgment) হবে।

 

(VIII) মিথ্যা প্রমাণিত (Disproved): মামলার বিরোধীয় বিষয় প্রমাণের জন্য উপস্থাপিত সাক্ষ্যসমূহ বিবেচনা করে আদালত যদি মনে করেন ঘটনার কোনো অস্তিত্ব নাই তখন তাকে বলা হয় মিথ্যা প্রমাণীত। এই ক্ষেত্রেও একটি রায় (Judgment) হবে।

 

(IX) অপ্রমাণিত (Not proved): যখন ঘটনা প্রমাণীত হয় না আবার মিথ্যা প্রমাণীত হয় না তখন তাকে বলা হয় অপ্রমাণিত। এই ক্ষেত্রে কোনো রায় (Judgment) হবে না।

 

ধারা ৪: অনুমান করিতে পারেন, অবশ্যই অনুমান করিবেন, চুড়ান্ত অনুমান (May presume, shall presume, Conclusive prove).

(I) অনুমান করিতে পারেন (May presume): সাক্ষ্য আইনের যে সকল ধারায় May presume লেখা আছে সেই সকল ক্ষেত্রে আদালত বিষয়টিকে প্রমাণিত বলিয়া অনুমান করিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না মিথ্যা প্রমাণিত হয় অথবা তিনি প্রমাণ করার জন্য আহ্বান জানাবেন। যেমন: ধারা ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৯০, ১১৪ ।

 

(II) অবশ্যই অনুমান করিবেন (Shall presume): সাক্ষ্য আইনের যে সকল ধারায় Shall presume লেখা আছে সেই সকল ক্ষেত্রে আদালত বিষয়টিকে অবশ্যই প্রমাণিত বলিয়া অনুমান করিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না মিথ্যা প্রমাণিত হয় অথবা তিনি প্রমাণ করার জন্য আহ্বান জানাইবেন। যেমন: ধারা ৭৯ থেকে ৮৯ এবং ১০৫।

 

(III) চুড়ান্ত অনুমান (Conclusive prove): কোনো একটি ঘটনা অন্য একটি ঘটনার উপর নির্ভরশীল হইলে, অন্য ঘটনাটি প্রমাণিত হইলে ১ম ঘটনাটি অবশ্যই প্রমাণিত বলিয়া অনুমান করিবেন এবং ১ম ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য কোনো সাক্ষ্য দিতে আদালত অনুমতি দিবেন না। যেমন: ধারা ৪১ ও ১১২ ।

 

  1. Classification of evidence – সাক্ষের প্রকারভেধ (ধারা ৩)

 

সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩ ধারা অনুযায়ী সাক্ষ্য সাধারণত ২ প্রকার। যথাঃ

১. মৌখিক সাক্ষ্য (Oral Evidence)

২. দালিলিক সাক্ষ্য (Documentary Evidence)

 

সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ধারা ৬২ ও ৬৩ অনুযায়ী সাক্ষ্য (Evidence) আবার ২ প্রকার। যথাঃ

(ক) প্রাথমিক সাক্ষ্য (Primary Evidence) – মূল দলিলটি প্রাথমিক সাক্ষ্য হিসাবে গন্য হইবে।

(খ) মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য (Secondary evidence) – ৫ ধরণের দলিল গৌণ সাক্ষ্য হিসাবে গন্য হইবে। যথঃ

  • জাবেদা নকল (Certified Copy)
  • ফটোকপি (Photocopy Copy)
  • মিলাইয়া কপি (Compared with the original Copy)
  • কাউন্টার পার্ট(Counter Part)
  • মৌখিক সাক্ষ্য (Oral Evidence)

 

এইগুলি ছাড়াও Digital Evidence বর্তমানে সকল আদালাতে গ্রাহ্য।

 

ডিজিটাল সাক্ষ্য (Digital Evidence/ Audio/ Video Evidence):

সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ -এ ডিজিটাল সাক্ষ্য -এর সুনির্দিষ্ট কোন বিধান নাই। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে পরবর্তীতে প্রবর্তিত কতিপয় আইনে ডিজিটাল সাক্ষ্য অন্তর্ভূক্ত করা হইয়াছে। নিম্নলিখিত আইন সাপেক্ষে ডিজিটাল সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণযোগ্যঃ

১৯৯৬ সালে খালেদা আক্তার বনাম রাষ্ট্র মামলায় নজির অন্তর্ভুক্ত।

২০০০ সালে জননিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত ছিল (বর্তমানে বাতিল)।

২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইনের (The Speedy Trial Tribunal Act 2002) ১৪ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (ICT Act 2006) এর ৫৭ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে।

ভূমি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২১ (খসড়া)

Section-14 of Ain Sringkhola Bighnokari Aporadh Ain 2002,

Section 6 of Pornography Control Act 2012

Pornography Control Act 2012

 

ধারা ৫: বিচার্য বিষয় ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যাবে।

সাক্ষী শুধুমাত্র দুইটি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারবে-

(ক) বিচার্য বিষয় (Facts in issue) এবং (খ) প্রাসঙ্গিক বিষয় (Relevant facts)

 

ধারা ৬: যে সকল ঘটনা একই কাজের অংশ সেইগুলির প্রাসঙ্গিগতা/সংঘটিত ব্যাপার (Res Gestae)

যে ঘটনা বিচার্য নয়, সেই ঘটনাটি যদি বিচার্য ঘটনার সাথে এমন ভাবে সংশ্লিষ্ট থাকে যে, উহারা একই কাজের অংশ বলে বিবেচিত হয় তাহলে প্রথম ঘটনাটি প্রাসঙ্গিক।

যেমন: ক- বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছে। সে একটি সশস্ত্র গণঅভ্যূথানে অংশগ্রহণ করে। উক্ত গণঅভ্যূথানে সম্পত্তি ধংশ হয়, সৈন্য বাহিনী আক্রান্ত হয় এবং জেলখানা ভাঙ্গা হয়। ক উক্ত ঘটনাগুলির সবগুলিতে উপস্থিত না থাকলেও একটি সাধারণ কাজের অংশ হিসাবে সকল ঘটনাই প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৭: যে সকল ঘটনা বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক ঘটনার উপলক্ষ্য, কারণ বা পরিণাম তাহা প্রাসঙ্গিগতা।

 

ধারা ১০: অভিন্ন অভিপ্রায় প্রসঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীর কথা বা কাজ।

 

ধারা ১৭: স্বীকৃতির সংজ্ঞা।

[বিবৃতি(Statement): যেকোনো বিষয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির অভিমতকে বলা হয় বিবৃতি]

 

স্বীকৃতি (Admission): বিবৃতি যখন মামলার বিরোধীয় বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ঈঙ্গিত বহন করে তখন তাকে বলা হয় স্বীকৃতিস্বীকৃতি দেওয়ানী মোকদ্দমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

 

[স্বীকারোক্তি/দোষস্বীকার ( Confession): স্বীকৃতির মধ্যে দোষস্বীকার থাকলে তাকে স্বীকারোক্তি বলে। স্বীকারোক্তি ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।]

 

ধারা ২১: যে ব্যক্তি স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে স্বীকৃতির প্রমাণ।

কোনো ব্যক্তি আদালতে যাহা বলবে সেটি তাহার বিপক্ষে যাবে। কখনো পক্ষে যাবে না। ব্যতিক্রম: (I) মৃত্যুকালীন ঘোষণা (Dying declaration)

(II) অপ্রকৃতিস্থতা

(III) অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক

 

ধারা ২২: দলিলে উল্লেখিত বিষয়ে মৌখিক সীকৃতি যখন প্রাসঙ্গিক।

নিম্নের দুইটি ক্ষেত্র ছাড়া দলিলে লিখিত বিষয় সম্পর্কে মৌখিক/ মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না

  • এই আইনের কোনো বিধানে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেওয়ার অধিকার থাকলে।
  • দলিলের খাটিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে।

 

ধারা ২৪: প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন ও প্রতিশ্রুতি দ্বারা আদায়কৃত স্বীকারোক্তি/দোষ স্বীকার (Confession) ফৌজদারী মামলায় অপ্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ২৫: পুলিশ অফিসারের নিকট প্রদত্ত স্বীকারোক্তি/দোষ স্বীকার অপ্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ২৬: পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন প্রদত্ত স্বীকারোক্তি/দোষ স্বীকার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে না হলে অপ্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ২৭: পুলিশ অফিসারের নিকট প্রদত্ত স্বীকারোক্তি/দোষ স্বীকার অনুযায়ী আলামত পাওয়া গেলে উক্ত স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ২৮: প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন ও প্রতিশ্রুতিজনিত ধারণা অপসারণের পর আদায়কৃত স্বীকারোক্তি/দোষ স্বীকার প্রাসঙ্গিক।  [ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা]

[২৪ ধারার ব্যতিক্রম]

 

ধারা ২৯: স্বীকারোক্তি অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক হলে কেবল গোপনীয় প্রতিশ্রুতি ইত্যাদির দরুণ তাহা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।       [২১ ধারার ব্যতিক্রম]

 

ধারা ৩০: সহ-আসামীর দোষ স্বীকার প্রাসঙ্গিক/ একজন অপরাধীর স্বীকারোক্তি যখন অপর অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করার জন্য ব্যবহার করা যায়।

কতিপয় ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংগঠনের পর অপরাধীদের সকলের একত্রে বিচার চলাকালীন যদি কোনো একজন নিজের দোষ স্বীকার করে এবং অন্যদেরকেও জড়ায় তাহলে উক্ত স্বীকারোক্তি, স্বীকারোক্তিকারীর ক্ষেত্রে যেভাবে প্রাসঙ্গিক যাহাদেরকে জড়াবে তাহাদের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৩১: স্বীকৃতি চূড়ান্ত প্রমান নয়, তবে প্রমাণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

 

ধারা ৩২: যে ব্যক্তি মৃত বা নিখোজ ইত্যাদি হয়েছে প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে তার দেওয়া বিবৃতি প্রাসঙ্গিক।

নিম্নলিখিত ৪ ব্যক্তির পূর্বে দেওয়া বিবৃতি ৮ টি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।

৪ ব্যক্তি:

  1. মৃত ব্যক্তি
  2. II) নিখোজ ব্যক্তি
  • III) অক্ষম ব্যক্তি
  1. IV) যাকে হাজির করা সময় সাপেক্ষ বা ব্যয় সাপেক্ষ।

 

৮ টি ক্ষেত্র:

১) মৃত্যুকালীন ঘোষণা (Dying declaration).

২) স্বাভাবিক কাজকর্মের রীতি অনুযায়ী লিপিবদ্ধ রেজিস্টার।

৩) স্বার্থের পরিপন্থি বিবৃতি।

৪) সর্বসাধারনের অধিকার বা প্রচলিত প্রথা সম্পর্কে বিবৃতি।

৫) রক্তের, বৈবাহিক বা দত্তক সম্পর্কের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিবৃতি।

৬) রক্তের, বৈবাহিক বা দত্তক সম্পর্কের অস্তিত্ব সম্পর্কে উইল বা পারিবারিক বহি।

৭) কারবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় কোনো দলিল বা উইলে লিপিবদ্ধ হলে।

৮) বহুলোকের বিবৃতি।

 

ধারা ৩৩: পূর্ববর্তী মামলার সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক।

কোনো ব্যক্তির পূর্বে দেওয়া সাক্ষ্য সত্য বলে প্রমাণিত হলে ও মামলার নথিতে থাকলে পরবর্তিতে একই পক্ষগণ বা তাহাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্য কোনো বিষয়ে মামলা হলে সেই মামলায় পূর্বের দেওয়া সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৩৪: হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ বিষয় যখন প্রাসঙ্গিক।

 

ব্যবসায়ের রীতি অনুযায়ী রক্ষিত হিসাবের খাতায় লিখিত বিবৃতি যখন উক্ত বিষয়ে অনুসন্ধান করা আদালতের কর্তব্য তখন উহা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু কেবলমাত্র এইরুপ বিবৃতি কাহারও উপর দায় আরোপ করিবার জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য বলিয়া বিবেচিত হইবে না।

 

উদাহরণঃ

ক ১০০০ টাকার দাবিতে খ -এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিল। খ -এর নিকট তাহার উক্ত টাকা পাওনা আছে ইহা প্রমাণ করিবার জন্য ক তাহার খাতায় লেখা হিসাবে দেখাইল। খাতায় লেখা হিসাবগুলি প্রাসঙ্গিক। কিন্তু যদি অন্য কোন সাক্ষ্য না থাকে, তবে খ -এর দেনা প্রমাণ করিবার জন্য উহা যথেষ্ট নহে।

 

ধারা ৩৫: কর্তব্য সম্পাদন প্রসঙ্গে সরকারী দলিলে লিপিবদ্ধ বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা।

 

সরকারী বা অন্য অফিসের খাতায়, রেজিস্টারে বা নথিতে যদি বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে এবং সরকারী কর্মচারী বা অপর কোন ব্যক্তি কর্তব্য পালনকালে লিখিয়া থাকে, তবে উক্ত লেখা প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৩৬: মানচিত্র, চার্ট ও পরিকল্পনায় প্রকাশিত বিবৃতির প্রাসঙ্গিকতা।

 

যেই সমস্ত মানচিত্র বা তালিকা জনসাধারণের নিকট বিক্রয়ের জন্য ছাড়া হয় অথবা যেই সমস্ত মানচিত্র বা নকশা সরকারী কর্তৃত্বাধীনে প্রণীত হয় তৎসংক্রান্ত বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বিবরণ প্রাসঙ্গিক।

 

 

ধারা ৪০: দ্বিতীয় মামলা নিষিদ্ধের জন্য পূর্ববর্তী মামলার রায় প্রাসঙ্গিক।

[Cpc- 11, Crpc- 403, Const- 35]

 

ধারা ৪১: প্রবেট (Probate), এখতিয়ার ইত্যাদির ক্ষেত্রে কোনো রায়ের প্রাসঙ্গিকতা।

প্রবেট (Probate), এডমিরালটি (Admiralty), বৈবাহিক (Matrimonial), দেওলিয়াত্ব (Insolvency) এই ৪ টি বিষয় সংশ্লিষ্ট আদালতের পূর্ববর্তী রায়, আদেশ বা ডিক্রি প্রাসঙ্গিক।

 

প্রবেট (Probate): উইল/ওসিয়াত/ইচ্ছাপত্র (Will) কার্যকরের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা জজের আদেশনামাকে বলা হয় প্রবেট।

 

এডমিরালটি (Admiralty): নৌবিভাগ (Ships) সম্পর্কিত আদালতের কোন চূড়ান্ত রায়, ডিক্রি বা আদেশ।

 

বৈবাহিক (Matrimonial): বিবাহ সম্পর্কিত আদালতের কোন চূড়ান্ত রায়, ডিক্রি বা আদেশ।

 

দেওলিয়াত্ব (Insolvency): কোন ব্যক্তিকে দেওলিয়া/ ঋণ পরিশোধে অক্ষম (Insolvency) বলিয়া প্রদত্ত আদালতের কোন চূড়ান্ত রায়, ডিক্রি বা আদেশ।

 

সাধারণত জেলা জজ আদালত দেওলিয়া আদালত হিসাবে কাজ করিয়া থাকে।

 

সাক্ষ্য আইন মোতাবেক রায় সাধারণত ২ প্রকার। যথাঃ

(I) Judgement in personam (পক্ষগণ সম্পর্কিত রায়/ ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে রায়): যে রায় শুধুমাত্র মামলার পক্ষগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহাকে বলা হয় Judgement in personam.

 

(II) Judgement in rem (সার্বজনিন রায়/ সর্বাত্মক রায়): যে রায়, মামলার পক্ষগণসহ বিশ্বের সকলে  মানতে বাধ্য থাকে তাহাকে বলা হয় Judgement in rem.

 

ধারা ৪৫: বিশেষজ্ঞ/ বিশারদের (Expert) অভিমত।

বিদেশী আইন, বিজ্ঞান, চারুকলা, হস্তলিপি ও টিপসহি এর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের অভিমত আদালতে প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৪৬: বিশেষজ্ঞের অভিমতের সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয়।

বিশেষজ্ঞের অভিমতের উপর বিশেষজ্ঞ কোনো কারণ বর্ণনা করলে তাহাও আদালতে প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৪৭: হস্তাক্ষর সম্পর্কে অভিমত যখন প্রাসঙ্গিক।

হস্তাক্ষর সম্পর্কে পরিচিত ব্যক্তির অভিমত আদালতে প্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৫২: দেওয়ানী মামলায় চরিত্র অপ্রাসঙ্গিক।

 

ধারা ৫৩: ফৌজদারী মামলায় আসামীর ভাল চরিত্র প্রাসঙ্গিক।

ধারা ৫৪: ফৌজদারী মামলায় আসামীর খারাপ চরিত্র অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু আসামীর ভাল চরিত্রের উত্তর দানের ক্ষেত্রের আসামীর খারাপ চরিত্র প্রাসঙ্গিক।

ধারা ৫৫: ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চরিত্র প্রাসঙ্গিক।

 

২য় খন্ড : ৫৬ – ১০০ ধারা – ঘটনার প্রমা

 

ধারা ৫৬: বিচারের দৃষ্টিগোচর হইবার বিষয় প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই।

যে সকল বিষয় বিচারকের দৃষ্টিগোচরে থাকার কথা সেই বিষয় প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই।

 

জুডিশল নোটিশ (Judicial Notice): যাহা সকলে জানে তাহা আদালতও জানে। সকলের জ্ঞাতব্য এই সকল বিষয়ই হইলো জুডিশল নোটিশ (Judicial Notice)। যে সকল বিষয় আদালত জানে তাহা মামলা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই।

যেমনঃ আমাদের দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রপতির নাম ‘মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ’। কোন কোন বিষয় জুডিশল নোটিশ বলিয়া গণ্য হইবে তাহার একটি তালিকা অত্র আইনের ৫৭ ধারায় উল্লেখিত আছে।

 

ধারা ৫৭: যে সকল বিষয় বিচারক হিসাবে অবশ্যই আদালতের দৃষ্টিগোচরে নিতে হবে।

(১) বাংলাদেশের আইন

(৩) সামরিক বাহিনীর আইন

(৪) বাংলাদেশের আইনসভা

(৬) সকল আদালতের সীলমোহর ও সীলমোহর ব্যবহারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত লক

(৭) গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, উপাধি কাজ ও স্বাক্ষর

(৮) সরকার স্বীকৃত রাজা রানীর অস্তিত্ব উপাধি পতাকা

(৯) সরকারী উতসব ও ছুটি

(১০) বাংলাদেশের ভূখন্ড

(১১) অন্য রাষ্ট্রের সাথে বিরোধ

(১২) সকল আইনজীবির নাম

(১৩) স্থল ও সমুদ্র পথের নিয়মাবলী

 

ধারা ৫৮: স্বীকৃত বিষয় (Admitted facts) প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই।

এক পক্ষের দাবী অন্য পক্ষ স্বীকার করিয়া নিলে তাহা আর প্রমাণ করার প্রয়োজন নাই।

 

ধারা ৫৯: মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা যাহা প্রমাণ করা যাইতে পারে।

দলিলের বিষয়বস্তু ব্যতীত সকল বিষয় মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যাইবে।

 

ধারা ৬০: মৌখিক সাক্ষ্য অবশ্যই প্রত্যক্ষ হইতে হইবে (Oral evidence must be direct) ।

অত্র ধারা অনুযায়ী নিম্নলিখিত ৪ টি বিষয় মৌখিক সাক্ষ্য বলিয়া গণ্য হইবে। যথাঃ

  • দেখার বিষয় – যে নিজ চোখে দেখিয়াছে সে সাক্ষ্য দিবে।
  • শোনার বিষয় – যে নিজ কানে শুনিয়াছে সে সাক্ষ্য দিবে।
  • অনুভব করার বিষয় – যে নিজ ইন্দিয় দ্বারা উপলব্ধি করিয়াছে সে সাক্ষ্য দিবে।
  • অভিমতের বিষয় – যে অভিমত পোষণ করিয়াছে সে সাক্ষ্য দিবে। যেমন ডাক্তারের অভিমত সম্পর্কে ডাক্তার নিজে আদালতে সাক্ষ্য দিবেন।

 

ধারা ৬১: দলিলের বিষয়বস্তু প্রমাণ।

দলিলের বিষয়বস্তু প্রাথমিক অথবা গৌণ সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ যাবে।

 

ধারা ৬২: প্রাথমিক সাক্ষ্য (Primary Evidence).

দলিলের বিষয়ে মূল দলিলটি হইলো প্রাথমিক সাক্ষ্য।

 

ধারা ৬৩: মাধ্যমিক বা গৌণ সাক্ষ্য (Secondary evidence)

নিম্নলিখিত ৫ ধরণের দলিল গৌণ সাক্ষ্য হিসাবে গন্য হইবে –

(১) জাবেদা নকল (Certified Copy)

(২) ফটোকপি (Photocopy Copy)

(৩) মিলাইয়া কপি (Made from or Compared with the original Copy)

(৪) কাউন্টার পার্ট (Counter Part)

(৫) মৌখিক সাক্ষ্য (Oral Evidence)

 

ডিজিটাল সাক্ষ্য (Digital Evidence/ Audio/ Video Evidence): নিম্নলিখিত আইন সাপেক্ষে ডিজিটাল সাক্ষ্য আদালতে গ্রহণযোগ্যঃ

১৯৯৬ সালে খালেদা আক্তার বনাম রাষ্ট্র মামলায় নজির অন্তর্ভুক্ত

২০০০ সালে জননিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত (বর্তমানে বাতিল)

২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইনের ১৪ ধারায় অন্তর্ভুক্ত

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ৫৭ ধারা

 

ধারা ৬৪: প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা দলিল প্রমাণ।

এই আইনের ৬৫ ধারায় উল্লেখিত ক্ষেত্র ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা দলিল প্রমাণ করিতে হইবে।

 

ধারা ৬৫: যেই সকল দলিল সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেয়া যায়।

নিম্নলিখিত ৭ টি ক্ষেত্রে দলিল সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেওয়া যায় –

  • দলিলের অধিকারী ব্যক্তি দলিল উপস্থিত না করিলে।
  • দলিলের অধিকারী ব্যক্তি দলিলের অস্তিত্ব স্বীকার না করিলে।
  • দলিলটি বিনষ্ট হইলে।
  • দলিলটি স্থানান্তর সম্ভব না হইলে।
  • সরকারী দলিল (Public documents)।
  • জাবেদা নকল (Certified copy) ব্যবহারের বিধান থাকিলে।
  • কেউ দেখিয়া আসিয়া সাক্ষ্য দিলে।

 

ধারা ৭৪: সরকারী দলিল বা সর্বসাধারণের দলিল (Public Document)

নিম্নলিখিত দলিলগুলো সরকারী দলিল বলে গণ্য হবে।

  • পার্লামেন্টের কাগজপত্র।
  • সরকারী অফিস আদালত বা ট্রাইবুনালের কাগজপত্র।
  • কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের বিচার বিভাগের কাগজপত্র।
  • সরকারের নিকট সংরক্ষিত ব্যক্তিগত দলিলের রেকর্ড।

 

ধারা ৭৫: বে-সরকারী বা ব্যক্তিগত দলিল (Private Document).

৭৪ ধারায় বর্ণিত দলিল ছাড়া সকল দলিল ব্যক্তিগত দলিল।

 

ধারা ৭৬: সরকারী দলিলের প্রত্যায়িত অনুলিপি।

সরকারী দলিলের হেফাজতকারী কর্মকর্তা নির্ধারিত ফি আদায়পূর্বক সরকারী দলিলের প্রত্যায়িত অনুলিপি প্রদান করবেন।

 

ধারা ৭৭: সরকারী দলিলের প্রত্যায়িত অনুলিপি উপস্থাপন করে দলিল প্রমাণ।

সরকারী দলিলের প্রত্যায়িত অনুলিপি উপস্থাপন করে সরকারী দলিল প্রমাণ করা যাবে।

 

ধারা ৯০: ৩০ বছরের পুরাতন দলিল সম্পর্কে অনুমান।

৩০ বছর বা তার বেশি বছরের পুরাতন দলিল উপযুক্ত হেফাজত থেকে আসিলে আদালত তাহা সঠিক বলিয়া অনুমান করিবেন।

 

ধারা ৯১: চুক্তি, সম্পত্তির মনজুরী, বা অন্যবিধ-বিলি বিলিব্যবস্থার শর্তাবলী দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ হইলে সেই সম্পর্কে সাক্ষ্য।

যখন কোন চুক্তি (Contact), মনজুরী/ দান (Grant), বা অন্য প্রকার সম্পত্তি বিলি-ব্যবস্থার (Any other disposition of property) শর্তাবলী দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয় সেইক্ষেত্রে এবং অন্যান্য যেই সমস্ত ক্ষেত্রে দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা আইনতঃ আবশ্যক সেই সমস্ত ক্ষেত্রে উক্ত দলিল ছাড়া অন্য কোনো সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না।

 

ধারা ৯৩: দ্ব্যর্থবোধক দলিল স্পস্ট করার জন্য আদালত কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না।

 

৩য় খন্ড : ১০১ – ১৬৭ ধারা – সাক্ষ্য উপস্থাপন ও ইহার ফলাফ

 

ধারা ১০১: প্রমানের দায়িত্ব।

যে ব্যক্তি কোনো অস্তিত্ব দাবি করিবে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

 

ধারা ১০২: সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে যেই পক্ষের হার, হইবে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

 

ধারা ১০৩: কোন নির্দিষ্ট বিষয় প্রমাণের দায়িত্ব।

যে ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের অস্তিত্ব আদালতকে বিশ্বাস করাইতে চায় উক্ত নির্দিষ্ট বিষয়ের অস্তিত্ব প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

যেমনঃ ক, চুরির দায়ে খ -এর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করিল। খ চুরি করিয়াছে কিনা তাহা প্রমাণের দায়িত্ব ক -এর। খ, আদালতকে বিশ্বাস করাইতে চায় যে সে উক্ত সময়ে ইংল্যান্ডে ছিল। তাহলে উক্ত নির্দিষ্ট ইংল্যান্ডে থাকার বিষয় প্রমাণের দায়িত্ব খ -এর।

 

ধারা ১০৪: সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য করানোর জন্য যে বিষয় প্রমাণ করিতে হইবে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব।

কোন সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য করানোর জন্য যে ব্যক্তি অন্য কোন বিষয়ের সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক তাহাকেই উক্ত অন্য বিষয় প্রমাণ করিতে হইবে।

 

যেমনঃ

  • খ -এর মৃত্যুকালীন ঘোষণা ক প্রমাণ করিতে ইচ্ছুক। এইক্ষেত্রে খ -এর মৃত্যু ক -এর প্রমাণ করিতে হইবে।
  • ক একটি হারাইয়া যাওয়া দলিলের বিষয় মাধ্যমিক সাক্ষ্য মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করিতে ইচ্ছুক। দলিলটি যে হারাইয়া গিয়াছে তাহা অবশ্যই ক-এর প্রমাণ করিতে হইবে।

 

ধারা ১০৫: আসামীর মামলা যে ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব।

আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দন্ডবিধির সাধারণ বা বিশেষ ব্যতিক্রম বা অন্য কোনো আইনের ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়িলে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব আসামীর। এইরূপ ক্ষেত্রে আদালত অবশ্যই অনুরূপ পরিস্থিতি অনুপস্থিত বলিয়া অনুমান করিবেন।

 

ধারা ১০৬: কোনো ঘটনা বিশেষভাবে যাহার অবগতিতে থাকিবে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

যেমনঃ ট্রেনের টিকেট করিয়াছে কিনা তাহা প্রমাণের দায়িত্ব যাত্রীর।

 

ধারা ১০৭: ৩০ বছর যাবত যে ব্যক্তি জীবিত বলিয়া জ্ঞাত আছে তাহার মৃত্যু প্রমানের দায়িত্ব যে ব্যক্তি মৃত্যু দাবি করিবে তাহার উপর।

[এই ধারায় জীবিত অনুমান এবং মৃত প্রমানের দায়িত্ব]

 

ধারা ১০৮: কোনো ব্যক্তি ৭ বছর খবরহীন থাকিলে তাহার জীবিত থাকার কথা যে ব্যক্তি দাবী করিবে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

[এই ধারায় মৃত অনুমান এবং জীবিত প্রমানের দায়িত্ব]

 

ধারা ১০৯: অংশীদারগণের মধ্যে, জমিদার ও প্রজার মধ্যে, মালিক ও প্রতিনিধির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক নাই বা অবসান হইয়াছে বলিয়া যে ব্যক্তি দাবি করিবে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

 

ধারা ১১০: মালিকানা প্রমাণের দায়িত্ব।

মালিকানা যে ব্যক্তি অস্বীকার করিবে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

 

ধারা ১১১: যে সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে এক পক্ষের সক্রিয় আস্থার সম্পর্ক, সেইক্ষেত্রে সরল বিশ্বাসের প্রমাণ।

আস্থার ও বিশ্বাসের সম্পর্কিটি যার উপর নির্ভর করে প্রমাণের দায়িত্ব তাহার।

যেমনঃ ডাক্তার-রোগী, উকিল-মক্কেল, শিক্ষক-ছাত্র এর মধ্যে আস্থার ও বিশ্বাসের সম্পর্ক যথাক্রমে ডাক্তার, উকিল ও শিক্ষকের উপর নির্ভর করে।

 

ধারা ১১২: বিবাহ স্থির থাকা কালে সন্তানের জন্মই উহার বৈধতার চুড়ান্ত প্রমাণ।

বিবাহ কায়েম থাকাকালে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২৮০ দিনের মধ্যে সন্তানের জন্মই উহার বৈধতার চুড়ান্ত প্রমাণ।

 

ধারা ১১৪: যেই সব ঘটনা আদালত অনুমান করিতে পারে।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আদালত অনুমান করিতে পারে –

(ক) চোরাই মাল যাহার দখলে পাওয়া যাইবে সেই চোর বা চোরাই মাল গ্রহণ করিয়াছে।

(খ) সহযোগীর বিবৃতি প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দ্বারা সমর্থিত না হইলে বিশ্বাসের অযোগ্য (An accomplice is unworthy of credit, unless he is corroborated in material particulars).

(গ) স্বীকৃত (Accepted) বা পৃষ্ঠাঙ্কিত (Endorsed) বিনিময় পত্র (Bill of exchange) উপযুক্ত প্রতিদানের বিনিময়ে স্বীকৃত বা পৃষ্ঠাঙ্কিত হইয়াছে।

(ঘ) কোনো জিনিস সাভাবিকভাবে যেই সময় পর্যন্ত বিদ্যমান থাকার কথা সেই সময়ের মধ্যে বিদ্যমান দেখানো হইলে তাহা বিদ্যমান আছে। যেমনঃ একটি ব্রিজ ১০ বছর যাবত একই অবস্থায় আছে বা এক জগ পানি ২ দিন যাবত একই অবস্থায় আছে।

(ঙ) বিচারক ও সরকারী (Judicial & Official) কার্যাবলী নিয়মিতভাবে সম্পন্ন হইয়াছে।

(চ) নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের কার্যের সাধারণ রীতি-নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। যেমনঃ ডাকে পত্র পাঠানো হইলে গোলযোগের কারণে বিঘ্ন না ঘটিলে উক্ত পত্র প্রেরণ স্বাভাবিক ভাবেই হইয়াছে।

(ছ) যে ব্যক্তি সাক্ষী হাজির হইতে দেয় নাই সাক্ষ্য তাহার বিপক্ষে যাইত।

(জ) কোনো ব্যক্তি যে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয় সে প্রশ্নের উত্তর সে দিতে অস্বীকার করিলে উত্তর তাহার প্রতিকূলে যাইত।

(ঝ) কোনো দলিল দ্বারা যদি কাহারো দায় সৃষ্টি হয়, সেই দলিলখানি তাহার কাছে থাকিলে সে দায়মুক্ত।

যেমনঃ ট্রেনের টিকেট, দর্জির স্লিপ, ডিড ইত্যাদি।

 

ধারা ১১৫: স্বকার্যজনিত বাধা/স্বীকৃতির বাধা/প্রতিবন্ধনীতি (Estoppel). [TP Act, Section 43]

যদি কোনো ব্যক্তি ঘোষণা, কর্ম বা কর্মবিরতি দ্বারা অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব বিশ্বাস করায় এবং সেই মতে তাহাকে দিয়ে কোনো কাজ করায়, পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ের অস্তিত্ব সৃষ্টি হলে ১ম ব্যক্তি বা তাহার বৈধ প্রতিনিধি উহা অস্বীকার করতে পারবে না ইহাই হলো স্বকার্যজনিত বাধা বা প্রতিবন্ধনীতি।

‘ক’ তার পিতার এক খন্ড জমি স্বেচ্ছায় ও মিথ্যাভাবে ‘খ’ কে বিশ্বাস করায় যে ‘ক’ এই জমির মালিক। উক্ত কথায় বিশ্বাস করে ‘খ’ জমিটি ক্রয় করে। পরবর্তীতে ঐ জমি উত্তরাধিকার সূত্রে  ‘ক’ এর জমিতে পরিণত হয়, এবং বিক্রয়ের সময় উক্ত জমিতে তাহার কোনো স্বত্ব ছিল না, এই অজুহাতে বিক্রয় নাকচ করার চেষ্টা করে। এইক্ষেত্রে  তাহার স্বত্বহীনতা অবশ্যই প্রামাণ করতে দেওয়া যাবে না।

 

ধারা ১১৬: প্রজার ক্ষেত্রে এবং দখলকারীর অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতি (Estoppel of tenant, and of licensee of person in possession).

এই ধারায় ২ টি ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।

১। ভাড়াটিয়া (Tenant) এবং মালিকের (Landlord) মধ্যে এস্টোপেল।

২। অনুমতিপ্রাপক (Licensee) এবং অনুমতিদাতার (Licensor) মধ্যে এস্টোপেল।

কোনো প্রজা বা ভাড়াটিয়াকে তাহার জমিদার বা মালিকের মালিকানা অস্বীকার করতে দেওয়া যাবে না।

কোনো সম্পত্তির ব্যবহারকারীকে ব্যবহার করার অনুমতি দাতার অনুমতি দানের ক্ষমতা অস্বীকার করতে দেওয়া যাবে না।

 

ধারা ১১৭: বিনিময় বিল/বরাত চিঠির স্বীকৃতিদাতা, গচ্ছিতগ্রহীতা এবং অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতি (Estoppel of acceptor of bill of exchange, Bailee or Licensee).

কোনো প্রজা বা ভাড়াটিয়াকে তাহার জমিদার বা মালিকের মালিকানা অস্বীকার করতে দেওয়া যাবে না।

এই ধারায় ৩ টি ক্ষেত্রে এস্টোপেল নীতির প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।

১। বিনিময় বিলের স্বীকৃতিদাতার (Acceptor of bill of exchange) ক্ষেত্রে এস্টোপেল: যে ব্যক্তি বিনিময় বিল প্রণয়ন বা পৃষ্ঠাংকন করে, সেই ব্যক্তির উক্ত বিলটি প্রণয়ন বা পৃষ্ঠাংকন করার ক্ষমতা যে ছিল, এটা বিনিময় বিলের স্বীকৃতিদাতা বা গ্রহীতাকে অস্বীকার করতে দেওয়া হবে না।

২। গচ্ছিতগ্রহীতার (Bailee) ক্ষেত্রে এস্টোপেল: গচ্ছিত রাখার সময় গচ্ছিত প্রদানকারীর গচ্ছিত রাখার ক্ষমতা যে ছিল, তা গচ্ছিতগ্রহীতারকে অবশ্যই অস্বীকার করতে দেওয়া হবে না।

৩। অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীর (Licensee) ক্ষেত্রে এস্টোপেল: ব্যবহারের অনুমতিদানের সময় অনুমতিদাতার (Licensor) ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা যে ছিল, তা অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীকে (Licensee) অবশ্যই অস্বীকার করতে দেওয়া হবে না।

 

ধারা ১১৮: সাক্ষীর অযোগ্যতা/ কে সাক্ষ্য দিতে পারবে (Who may testify).

অল্প বয়স্ক, অতিবৃদ্ধ বয়স্ক, দৈহিক বা মানসিক ব্যাধিগ্রস্থসহ সকল লোক, যে আদালতের দৃষ্টিতে প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে পারে সেই সাক্ষ্য দিতে পারবেন।

 

ধারা ১১৯: বোবা সাক্ষী (Dumb witness).

একজন বোবা সাক্ষী প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে সক্ষম হইলে লিখিতভাবে কিংবা আকার ইঙ্গিতে সাক্ষ্য দিতে পারিবেন। ইহা মৌখিক সাক্ষ্য হিসাবে গণ্য হইবে।

 

ধারা ১২০: দেওয়ানী মোকদ্দমার পক্ষগণ ও তাহাদের স্বামী বা স্ত্রী; ফৌজদারী মামলায় বিচারাধীন লোকের স্বামী বা স্ত্রী:

সমস্ত দেওয়ানী মোকদ্দমার পক্ষগণ ও তাহাদের স্বামী বা স্ত্রী অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন সাক্ষী হবে; ফৌজদারী মামলায় বিচারাধীন লোকের স্বামী বা স্ত্রী অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন সাক্ষী হবে।

 

ধারা ১২১: জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট যে আদালতের অধীনস্ত তাহার অনুমতি ছাড়া কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হবেন না।

 

ধারা ১২২: বিবাহ বজায় থাকাকালীন পত্রালাপ।

বিবাহ বজায় থাকাকালীন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পত্রালাপ প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না। তবে উভয়ের মধ্যে কোনো দেওয়ানী বা ফৌজদারী থাকলে প্রকাশ করতে দেওয়া যাবে।

 

ধারা ১২৩: রাষ্ট্রীয় বিষয়ে সাক্ষ্য।

রাষ্ট্রীয় কোনো অপ্রকাশিত দলিলপত্র বিষয়ে কাহাকেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানের অনুমতি ছাড়া সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।

 

ধারা ১২৪: সরকারী বার্তার আদান-প্রদান।

কোনো সরকারী কর্মচারীর নিকট যেসকল গোপন চিঠিপত্র আসে তাহা প্রকাশ করা জনস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হলে তাহা প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না।

 

ধারা ১২৫: অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে সংবাদ (Information as to commission of offences).

কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার কোনো অপরাধ সংঘটিত হবার সংবাদ কিভাবে পেয়েছে, তাহা বলতে তাকে বাধ্য করা যাবে না।

কোনো রাজস্ব কর্মকর্তাকে কোনো রাজস্ব ফাকির সংবাদ কিভাবে পেয়েছে, তাহা বলতে তাকে বাধ্য করা যাবে না।

 

ধারা ১২৬: পেশা সম্পর্কিত বার্তা (Professional communications).

কোনো আইনজীবি তার মক্কেলের দেওয়া কোনো তথ্য মক্কেলের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করতে পারবেন না। এই বিধান আইনজীবি নিযুক্ত থাকা অবস্থায় এবং নিযুক্তির পরও প্রযোজ্য হবে।

 

ধারা ১২৭: দোভাষী ইত্যাদির ক্ষেত্রে ১২৬ ধারার প্রয়োগ (Professional communications).

দোভাষী (Interpreters) এবং উকিলদের কেরানী (Clerk) বা কর্মচারীদের (Servants) ক্ষেত্রেও ১২৬ ধারার বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।

 

ধারা ১২৮: স্বত্ব: প্রবৃত্ত সাক্ষ্য দিবার দরুন সুবিধা পরিত্যক্ত হয় না (Privilege not waived by volunteering evidence).

দেওয়ানী মোকদ্দমার কোনো পক্ষ স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিলে ১২৬ ধারার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না। দেওয়ানী মোকদ্দমার কোনো পক্ষ উকিলকে সাক্ষী হিসাবে ডাকলে তথ্য প্রকাশে সম্মতি দিয়েছে বলে গণ্য হবে।

 

ধারা ১২৯: আইন উপদেষ্টার সহিত গোপন পত্রালাপ (Confidential communications with legal advisers).

কোনো লোক ও তাহার আইন পেশাদার উপদেষ্টার মধ্যে গোপন পত্রালাপ হলে তাকে তা প্রকাশে বাধ্য করা যাবে না।

 

ধারা ১৩২: কোনো প্রশ্নের উত্তর সাক্ষীকে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত করবে এই অজুহাতে উত্তর দান হতে সাক্ষীকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না।

কোনো দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলায় বিচার্য বিষয়ের প্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ে প্রশ্নে করা হলে সেই প্রশ্নের উত্তর সাক্ষীকে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত করবে এই অজুহাতে অক্ত সাক্ষীকে অনুরূপ উত্তর দান হতে অবশ্যই অব্যাহতি দেওয়া যাবে না।

তবে অনুরূপ উত্তর দানের কারণে তাকে গ্রফতার কর আবা ফৌজদারীতে সোপর্দ করা যাবে না। কিন্তু তবে অনুরূপ উত্তর দানের ফলে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অভিযোগে ফৌজদারীতে সোপর্দ করা যাবে।

 

ধারা ১৩৩: অপরাধের সহযোগী আসামী সাক্ষীর উপযুক্ত (Accomplice).

 

[ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪০ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক আসামীর তার আত্মপক্ষ সমর্থন (Defence) করার অধিকার এবং সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা থাকবে।]

 

ধারা ১৩৪: সাক্ষীর সংখ্যা।

কোনো মোকদ্দমায় কোনো ঘটনা প্রমানের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সাক্ষীর প্রয়োজন নাই। অর্থাৎ সাক্ষী এক বা একাধিক হইতে পারে।

[সাক্ষীর সংখ্যা একাধিক নির্ধারিত হইলে কৃত্রিম সাক্ষী হইবার সম্ভাবনা থাকে]

 

ধারা ১৩৭: জবানবন্দি (Examination-in-Chief)

জবানবন্দি (Examination-in-Chief): সাক্ষী আহ্বানকারী যখন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে তখন তাকে জবানবন্দি বলে।

জেরা (Cross Examination): বিরুদ্ধ পক্ষ যখন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে তখন তাকে জেরা বলে।

পুন:জবানবন্দি (Re-examination): জেরার পর সাক্ষী আহ্বানকারী যদি পুনরায় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে তখন তাকে পুন:জবানবন্দি বলে।

 

ধারা ১৩৮: সাক্ষ্য গ্রহণের ক্রম (Order of Examination).

প্রথমে সাক্ষীর জবানবন্দি, তারপর জেরা, তারপর পুন:জবানবন্দী গ্রহণ করতে হবে।

 

ধারা ১৩৯: দলিল দাখিল করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তির জেরা।

দলিল দাখিল করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তি দলিল দাখিল করলে সে সাক্ষী বলে বিবেচিত হবে না এবং সাক্ষী হিসাবে তলব না করা পর্যন্ত তাকে জেরা করা যাবে না।

 

ধারা ১৪০: চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষী (Witnesses to character)

কোনো আসামীর চরিত্র সম্পর্কে কেউ সাক্ষী দিলে উক্ত সাক্ষীকে জেরা (Cross examination) করা এবং পুনঃজবানবন্দি (Re-examination) গ্রহণ করা যাবে।

 

ধারা ১৪১: ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন/ ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন  (Leading question).

যে প্রশ্নের মধ্যে প্রশ্ন কর্তার উত্তর লুকায়িত থাকে এবং প্রশ্নের উত্তর হ্যা বা না দিয়া দেওয়া হয় তাহাকেই বলে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন।

 

ধারা ১৪২: ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন যখন অবশ্যই করা যাবে না।

জবানবন্দিতে এবং পুন:জবানবন্দিতে আদালতের অনুমতি ব্যতীত ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন অবশ্যই করা যাবে না।

তবে পরিচয়মূলক/ভূমিকামূলক বিষয় (Introductory), অবিসংবাদিত/স্বীকৃত বিষয় (Undisputed) কিংবা পূর্বেই যথেষ্টরূপে প্রমাণিত (Already sufficiently proved) বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন অবশ্যই করা যাবে।

 

ধারা ১৪৩: ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন যখন করা যেতে পারে।

জেরায় ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন যখন করা যাবে।

 

ধারা ১৪৫: পূর্ববর্তী লিখিত বিবৃতি সম্পর্কে জেরা।

সাক্ষী পূর্ববর্তীকালে লিখিত বিবৃতি দিলে কিংবা তার বিবৃতি লিপিবদ্ধ হলে উক্ত লেখা তাকে না দেখিয়ে সেই সম্পর্কে তাকে জেরা করা যাবে।

[ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আসামীর দোষস্বীকারমূলক বক্তব্য লিপিবদ্ধ করলে উক্ত বক্তব্যের উপর এই ধারা অনুযায়ী জেরা করা যাবে]

 

ধারা ১৪৬: জেরায় যেই সব প্রশ্ন করা যাবে।

জেরায় ৩ ধরণের প্রশ্ন করা যাবে। যে প্রশ্নের মাধ্যমে-

ক) সত্যবাদিতা পরীক্ষা করা যায়।

খ) পরিচয় ও মর্যাদা জানা যায়।

গ) চরিত্রে আঘাত করে প্রশ্ন করা যাবে। চরিত্রে আঘাত করে তার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা/দূর্বলতা সৃষ্টি করা যায়। এইরূপ প্রশ্নের দ্বারা যদি সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে গেলেও এরূপ প্রশ্ন করা যাবে।

 

ধারা ১৪৮: কখন প্রশ্ন করতে হবে এবং সাক্ষী কখন উত্তর দিতে বাধ্য, তাহা আদালত নির্ধারণ করবেন।

 

ধারা ১৫১: অশালীন ও কুতসাজনক প্রশ্ন (Indecent and scandalous questions).

কোনো প্রশ্ন বা অনুসন্ধান যদি আদালত অশালীন ও কুতসাজনক বলে মনে করেন তাহলে আদালত এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করতে পারেন (May forbid).

 

ধারা ১৫২: অপমান (Insult) কিংবা উত্যক্ত (Annoy) করার উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্ন।

কোনো প্রশ্ন যদি কাহাকে অপমান বা উত্যক্ত করার উদ্দেশে করা হয়েছে বলে আদালত মনে করেন তাহলে আদালত এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে অবশ্যই নিষেধ করবেন (Shall forbid).

 

ধারা ১৫৩: সাক্ষী মিথ্যা উত্তর দিলে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে।

 

ধারা ১৫৪: বৈরী সাক্ষী/ নিজের সাক্ষীকে জেরা করা যায়।            (২০১৭)

 

ধারা ১৫৫: সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ করা (Impeaching credit of witness).

নিম্নলিখিত ৪ টি উপায়ে বিরুদ্ধ পক্ষ কিংবা সাক্ষী হাজিরকারী পক্ষ আদালতের অনুমতি নিয়ে সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ আনয়ন করতে পারেন।

(১) সাক্ষ্য দ্বারা (২) ঘুষ প্রমাণ করে (৩) গরমিল দেখিয়ে (৪) দুশ্চরিত্র প্রমাণ করে।

[কোনো ব্যক্তি ধর্ষণ কিংবা শ্লিলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারীতে সোপর্দ হলে সে অভিযোগকারিনীকে দুশ্চরিত্রসম্পন্ন রমনী হিসাবে দেখাতে পারবে]

 

ধারা ১৫৭: সাক্ষীর পূর্বে প্রদত্ত বিবৃতি প্রমাণ করা যেতে পারে/ সমর্থনমূলক সাক্ষ্য (Corroborative evidence)

 

ধারা ১৫৯: সাক্ষ্য দানের সময় সাক্ষী আদালতের অনুমতি নিয়ে দলিল দেখে স্মৃতি জাগ্রত (Refreshing memory) করতে পারেন।

 

ধারা ১৬১: স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সাক্ষী যে লিখিত বিবৃতি ব্যবহার করে, বিরোধী পক্ষ সেই লিখিত বিবৃতি সম্পর্কে সাক্ষীকে জেরা করতে পারবে।

 

ধারা ১৬৫: বিচারকের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা ও দলিল দাখিল করার নির্দেশ দানের ক্ষমতা।

বিচারক কোনো পক্ষকে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক যেকোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে বা কোনো দলিল বা বস্তু দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন।

বিচারকের এরূপ প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী যাহা বলবে সেই সম্পর্কে আদালতের অনুমতি ছাড়া জেরা করা যাবে না।

১২১ ও ১৩১ ধারা অনুযায়ী সাক্ষী যে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নহে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য করা যাবে না।

১৪৮ ও ১৪৯ ধারা অনুযায়ী অপর লোকের পক্ষে যে প্রশ্ন করা অসঙ্গত, বিচারকও সেইরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন না।

 

ধারা ১৬৭: অন্যায়ভাবে সাক্ষ গ্রাহ্য কিংবা অগ্রাহ্য হলে তজ্জন্য নতুন করে বিচার হবে না।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *