সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের সহজ নোট

Specific Relief Act, 1877

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭

 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার (Specific Relief):

বাদী আরজিতে যে প্রতিকার প্রার্থনা করে আদালত যদি তাকে হুবহু সেই প্রতিকার প্রদান করে তাকে বলা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার।

অথবা

সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন (Specific Performance):

চুক্তি ভঙ্গকারীকে চুক্তি মোতাবেক কাজ করতে বাধ্য করাকেই বুঝায় সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন।

 

প্রকারভেদ: 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার ২ প্রকার। যথা:

(১) আইনগত প্রতিকার ও (২) ন্যায়পর প্রতিকার

 

উৎপত্তি (Origin):

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের উৎপত্তি ইকুইটি আইন থেকে। The New York Civil Code, 1862 অনুযায়ী Dr. Whiteley Stokes ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের খসড়া প্রণয়ন করেন।

 

প্রতিকার সমূহ:

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৮ ধরণের প্রতিকারের উল্লেখ আছে-

১। স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার (Recovery of possession of property)– ধারা ৮–১১

২।  চুক্তির সুনির্দিষ্ট বাস্তবাতন (Specific Performance of contract) – ধারা ১২ – ধারা ৩০

৩। দলিল সংশোধন (Rectification of instruments) – ধারা ৩১ – ধারা ৩৪

৪। চুক্তি রদ (Rescission of contract) – ধারা ৩৫ – ধারা ৩৮

৫। দলিল বাতিল (Cancellation of instruments) – ধারা ৩৯ – ধারা ৪১

৬। ঘোষণামূলক প্রতিকার (Declaratory Relief) – ধারা ৪২ – ধারা ৪৩

৭। তত্ত্বাবধায়ক/ রিসিভার নিয়োগ (Appointment of Receiver) – ধারা ৪৪

৮। নিষেধাজ্ঞা বা প্রতিরোধমূলক প্রতিকার (Injunction/ Preventive Relief) – ধারা ৫২ – ধারা ৫৭

 

ক্ষেত্রসমূহ:

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আদালত সাধারণত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করে থাকেন –

(১) স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি (২) আইনগত বৈশিষ্ট্য বা পরিচয়

 

প্রাথমিক তথ্য:

আইন নং : ১ নং আইন ১৮৭৭ সনের

প্রণয়ন/প্রকাশ : ৭ই ফেব্রুয়ারী ১৮৭৭

কার্যকর : ১লা মে ১৮৭৭

সর্বশেষ সংশোধন : ২০০৪ সালে। [ধারা ২১ক]

প্রকৃতি : দেওয়ানী প্রকৃতির

আইনের ধরণ : মূল আইন (Substantive Law)

প্রস্তাবনা : ১টি

খন্ড : ৩টি

অধ্যায় : ১০টি

ধারা : ৫৭টি

 

সর্বশেষ সংশোধন :

১লা মে ২০০৪ এর ২৭ নং আইন দ্বারা, সংশোধিত ধারা ২১ক – স্থাবর সম্পত্তির অলিখিত বিক্রয় চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবতযোগ্য নহে)

সর্বশেষ সংশোধন কার্যকর : ১লা জুলাই ২০০৫

 

মূল আইন(Substantive Law): 

যে আইনে মানুষের অধিকার এবং প্রতিকারের বিধান বর্ণিত আছে তাকে বলে মূল আইন। তাই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন একটি মূল আইন

 

খন্ড ৩ টি, অধ্যায় ১০ টি, ধারা ৫৭ টি

১ম খন্ড সূচনা ধারা ১ – ৭
২য় খন্ড সুনির্দিষ্ট প্রতিকার অধ্যায় ১ – ৮ ধারা ৮ – ৫১
৩য় খন্ড নিরোধক প্রতিকার অধ্যায় ৯ – ১০ ধারা ৫২ – ৫৭

 

১ম খন্ড (Part –I)

ধারা ১ – ৭

 

ধারা ১: 

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, সীমা, শুরু।

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম : সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ (Specific Relief Act 1877)

সীমা/ আওতা : সমগ্র বাংলাদেশ

শুরু/ আরম্ভ/ কার্যকর : ১লা মে ১৮৭৭ সাল থেকে

 

ধারা ৩: 

ব্যাখ্যা (Interpretation). [এই ধারায় ৩ টি ব্যাখ্যা আছে]

বাধ্যবাধকতা (Obligation): আইনে বলবত যোগ্য প্রত্যেকটি কার্যক্রমকে বাধ্যবাধকতা বলা হয়। (Obligation includes every duty enforceable by law)

 

জিম্মা (Trust): আইন দ্বারা কার্যকর যোগ্য সুস্পষ্ট বা আনুমানিক বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ন্যস্ত মালিকানাকে জিম্মা/অছি বলা হয়।(Trust includes implied or constructive fiduciary ownership)

 

জিম্মাদার (Trustee): আইন দ্বারা কার্যকর যোগ্য সুস্পষ্ট বা আনুমানিক বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ন্যস্ত মালিকানার অধিকারী ব্যক্তিকে জিম্মাদার বলা হয়। (Trustee includes a person holding an implied or constructive fiduciary ownership)

 

ধারা ৫: 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার ৫ ভাবে প্রদান করা যায়/ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদানের পদ্ধতি/ পন্থা ৫ টি।

ক) দখল গ্রহণ ও অর্পণ   [ধারা ৮ – ধারা ১১]

খ) আদেশমূলক প্রতিকার   [ধারা ১২ – ধারা ৩০ ও ৫৫]

গ) নিষেধমূলক প্রতিকার   [ধারা ৫২ – ধারা ৫৪ ও ৫৭]

ঘ) ঘোষণামূলক প্রতিকার   [ধারা ৩১ – ধারা ৪৩]

ঙ) রিসিভার নিয়োগ   [ধারা ৪৪]

 

ধারা ৬: 

নিরোধক প্রতিকার/নিবারণমূলক প্রতিকার/প্রতিরোধমূলক প্রতিকার/নিষেধমূলক প্রতিকার এর সঙ্গা (Preventive Relief). 

৫ ধারার গ অনুচ্ছেদের অধীন যে প্রতিকার মঞ্জুর করা হয় তাকে নিরোধক প্রতিকার বলা হয়।

 

ধারা ৭: 

দন্ডমূলক বা ফৌজদারী বিষয়ে কোনো প্রতিকার এই আইন মঞ্জুর করে না।

দন্ডমূলক আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করবে না। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন কোনো দন্ডমূলক আইন নয়। [এটি একটি দেওয়ানী প্রকৃতির আইন]

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ১ (Chapter-1) – ধারা ৮ – ১১

ধারা ৮: 

সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি পূরুদ্ধার/স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখল পূনরুদ্ধার/মালিক কর্তৃক স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার (Recovery of specific immoveable property).

সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধিতে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুযায়ী তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

এই ধারায় মোকদ্দমা করতে হলে নিম্নের শর্তসমূহ প্রযোজ্য হবে –

(১) সর্বপ্রথম প্রমানের বিষয় বা দেখার বিষয় হলো “মালিকানা (Title)”

(২) বেদখল হওয়ার দিন থেকে ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে – তামাদি আইন অনুচ্ছেদ ১৪২ ও ১৪৪

(৩) মোকদ্দমা দায়েরের পূর্বে ১২ বছরের মধ্যে বাদীকে ১ দিনের জন্য হলে দখলে থাকতে হবে।

(৪) মূল্যানুপাতিক (Advalorem) কোর্ট ফি প্রদান করে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।

(৫)  সরকারসহ যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করা যায়।

(৬) আদালত স্থাপনা ভাঙার আদেশ দিতে পারেন।

(৭) সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আপীল বা রিভিউ করতে পারে।

(৮) ডিক্রী জারির মাধ্যমে আদালত ডিক্রী কার্যকর করতে পারেন।

(৯) এই ধারায় আদালত বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না।

 

কোর্ট ফি :

কোর্ট ফী প্রধানত ২ প্রকার। যথা:

১) নির্ধারিত কোর্ট ফী (Fixed court fee)

২) মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফী (Advalorum court fee)

সাধারণত স্থাবর সম্পত্তিতে কোর্ট ফি ২% যাহা ৪০,০০০ টাকার বেশি নয় +১৫% ভ্যাট। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কোর্ট ফি ৪০,০০০+৬০০০ = ৪৬,০০০ টাকা।

অর্থ মোকদ্দমায় কোর্ট ফি ২.৫% যাহা ৫০,০০০ টাকার বেশি নয় +১৫% ভ্যাট। সুতরাং অর্থ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কোর্ট ফি ৫০,০০০+৭৫০০ = ৫৭,৫০০ টাকা]

 

ধারা ৯: 

স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত ব্যক্তি কর্তৃক মামলা রুজু (Suit by person dispossessed of immoveable property) 

এই ধারায় মোকদ্দমা করতে হলে নিম্নের শর্তসমূহ প্রযোজ্য হবে –

১) বাদীকে বে-আইনীভাবে বেদখল হতে হবে।

২) সরকারের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করা যায় না।

৩) ৬ মাসের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। [তামাদি আইন ৩ অনুচ্ছেদ]

৪) বেদখলের পূর্বে কমপক্ষে ধারাবাহিকভাবে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ২ মাস দখলে থাকতে হবে।

৫) মুল্যানুপাতিক কোর্ট ফি এর অর্ধেক কোর্ট ফি দিতে হবে।

৬) আদালত স্থাপনা ভাঙার আদেশ দিতে পারেন না।

৭) ডিক্রী জারির মাধ্যমে আদালত ডিক্রী কার্যকর করতে পারেন।

৮। আপীল বা রিভিউ করা যাবে না ।

৯) আপীলের বিধান না থাকায় রিভিশন করা যায়।

১০) নিষ্পত্তির পর সম্পত্তির মালিক হলে ৮ ধারায় মোকদ্দমা করা যাবে।

১১) ডিক্রি জারির মাধ্যমে কার্যকর করা যাবে।

(১২) এই ধারায় আদালত বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না।

 

ধারা ১০: 

সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার (Recovery of specific moveable property).

সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তি দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধিতে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুযায়ী তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

[এই ধারা অনুযায়ী প্রদত্ত ডিক্রি, কার্যকর করা যাবে দেওয়ানী কার্যবিধির ২১ আদেশের ৩০ ও ৩১ বিধি মোতাবেক]

ব্যাখ্যা ১: কোনো জিম্মাদার যে ব্যক্তির জন্য নিযুক্ত হয়েছেন তার মঙ্গলার্থে অস্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার এর জন্য মোকদ্দমা করতে পারেন।

ব্যাখ্যা ২: বর্তমানে অস্থায়ী বা বিশেষভাবে দখলে রাখার অধিকারী ব্যক্তি অস্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার এর জন্য মোকদ্দমা করতে পারেন।

[এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করার জন্য বাদীকে সম্পুর্ণ মালিকানার অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নাই। ট্রাস্টি এবং অস্থায়ী দখলকারীও এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন। যারা এই ধারায় মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন –

(I) মালিক (Owner)

(II) জিম্মাদার/ ট্রাষ্টি (Trustee)

(III) জামিনদার (Bailee)

(IV) বন্ধকদাতা (Pawner) বা বন্ধকগ্রহীতা (Pawnee)

(V) হারানো পণ্য খুজে পেয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি]

 

ধারা ১১: 

তাৎক্ষণিক/আশু দখলের অধিকারী (Entitle to immediate possession) ব্যক্তির নিকট দখল অর্পণে অন্য দখল কারী ব্যক্তির দায় দায়িত্ব হবে মালিক হিসাবে নয়।

যে ব্যক্তি কোনো অস্থাবর সম্পত্তির মালিক নয় কিন্তু সম্পত্তিটি তার নিয়ন্ত্রণে বা দখলে আছে সেই ব্যক্তিকে নিম্নলিখিত ৪ টি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক দখলের অধিকারী ব্যক্তির নিকট সম্পত্তিটি অর্পণে বাধ্য করা যাবে –

(ক) বিবাদী ট্রাস্টি বা এজেন্ট হিসাবে বাদীর অস্থাবর সম্পত্তি ধারণ করলে।

(খ) আর্থিক ক্ষতিপুরণ অপর্যাপ্ত হলে।

(গ) প্রকৃত ক্ষতি নির্ণয় করা কঠিন হলে।

(ঘ) বেআইনীভাবে/ প্রতারণা করে দখল করলে।

 

ক) ইউরোপ যাবার সময় ‘ক’ তার আসবাব পত্র ‘খ’ এর জিম্মায় রাখে। ‘খ’ এগুলো অনুমতি ছাড়া ‘গ’ এর নিকট বন্ধক রাখে। ‘গ’-কে আসবাবপত্র ‘ক’ এর নিকট ফেরত দিতে বাধ্য করা যাবে।

খ) ‘ক’ একটি দেবমূর্তির মালিক। দেবমূর্তিটি ‘খ’ দখল করে। ‘খ’ -কে উহা ক’ এর নিকট ফেরত দিতে বাধ্য করা যাবে।

গ) একজন মৃত চিত্রকরের একজোড়া দুষ্প্রাপ্য চীনামাটির কারুকার্য খচিত পাত্রের অধিকারী ‘ক’। ‘খ’ উক্ত পাত্রটি দখল করে। ইহার বাজার দর নির্ণয় করা কঠিন। ‘খ’ – কে উক্ত পাত্রটি ‘ক’ এর নিকট ফেরত দিতে বাধ্য করা যাবে।

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ২ (Chapter-2) – ধারা ১২ – ৩০

 

ধারা ১২: 

যেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন আদায়যোগ্য/চুক্তি প্রবল বা বলবতের মামলা/যেসকল ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা হয় (Cases in which specific performance enforceable)

নিম্নের ৪ টি ক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করবেন।

ক) চুক্তিটি জিম্মার অন্তর্ভুক্ত হলে।

খ) ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের মানদন্ড না থাকলে।

গ) আর্থিক ক্ষতিপূরণ আপর্যাপ্ত হলে।

ঘ) আর্থিক ক্ষতিপূরণ অনিশ্চিত হলে।

ব্যাখ্যা: আদালত অবশ্যই ধরে নিবেন যে, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দ্বারা পর্যাপ্ত প্রতিকার সম্ভব নয়, কিন্তু অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দ্বারা পর্যাপ্ত প্রতিকার সম্ভব। অর্থাৎ স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর সুনির্দিষ্টভাবে বলবতযোগ্য, কিন্তু অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর সুনির্দিষ্টভাবে বলবতযোগ্য নয়।

 

[চুক্তি প্রবলের মামলা দায়েরের তামাদি মেয়াদ ১ বছর, তামাদি আইন আনুচ্ছেদ ১১৩ ।

তামাদি মেয়াদ শুরু হবে চুক্তি পালনের জন্য নির্ধারিত তারিখ হতে বা তারিখ নির্ধারিত না থাকলে অস্বীকৃতির বিষয় অবগত হওয়ার তারিখ হতে।

সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের ডিক্রি প্রদান করা আদালতের বিবেচনামূলক (Discretionary) ক্ষমতা।

চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের মোকদ্দমার ক্ষেত্রে মূল্যানুপাতিক (Advalurem) কোর্ট ফি দিতে হবে]

 

ধারা ১৩: 

যে চুক্তির বিষয়বস্তু আংশিকভাবে বিলুপ্ত (Subject partially ceased to exist)/ যেক্ষেত্রে আংশিক ক্ষতিপূরণ সম্ভব/চুক্তিটি ধারা ১৪, ১৫, ১৬ এর আওতায় পড়লে আংশিক সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন সম্ভব।

 

চুক্তি সম্পাদনের সময় অস্তিত্ব ছিল কিন্তু আংশিক বিলুপ্তির কারণে পুরোপুরি চুক্তিটি পালন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আংশিক চুক্তি পালন করা যাবে।

‘ক’ তার বাড়িটি ১ লক্ষ টাকায় বিক্রির জন্য ‘খ’ এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরের দিন ঘুর্ণিঝরে বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়। এক্ষেত্রে ‘খ’-কে ক্রয়মূল্য প্রদান করে তার অংশের চুক্তি পালনে বাধ্য করা যাবে।

চুক্তিটি ধারা ১৪, ১৫, ১৬ এর আওতায় পড়লে আংশিক ক্ষতিপূরণ সম্ভব।

[এই ধারাটি চুক্তি আইনের ৫৬ ধারার ব্যতিক্রম। চুক্তি আইন ১৮৭২ এর ধারা ৫৬: An agreement to do an act impossible in itself is void ]

 

ধারা ১৪: যেক্ষেত্রে চুক্তির অসম্পাদিত অংশ ছোট।

চুক্তির অসম্পাদিত অংশ ছোট হলে আদালত যতটুকু সম্পাদন সম্ভব ততটুকু সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের নির্দেশ দিয়ে বাকিটুকুর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করবেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে মূল্যের সমন্বয় হবে।

‘ক’ ১০০ বিঘা জমি ‘খ’ এর নিকট বিক্রির জন্য চুক্তি করে। পরে দেখা গেল ‘ক’ ৯৮ বিঘার মালিক এবং বাকি ২ বিঘার মালিক অন্য একজন। এক্ষেত্রে ‘খ’ মোকদ্দমা দায়ের করলে আদালত ‘ক’ কে নির্দেশ দিতে পারেন ৯৮ বিঘা জমি বুঝিয়ে দিতে এবং বাকি ২ বিঘার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে।

 

ধারা ১৫: যেক্ষেত্রে চুক্তির অসম্পাদিত অংশ বড়।

চুক্তির অসম্পাদিত অংশ বড় হলে আদালত যতটুকু সম্পাদন সম্ভব ততটুকু সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের নির্দেশ দিবেন না। তবে বাদী বাকিটুকুর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ এর দাবি পরিহার করলে নির্দেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে মূল্য সমন্বয়ের দাবী পরিহার করতে হবে। অর্থাৎ মূল্য সমন্বয় হবে না।

‘ক’ ১০০ বিঘা জমি ‘খ’ এর নিকট বিক্রির জন্য চুক্তি করে। পরে দেখা গেল ‘ক’ ৫০ বিঘার মালিক। বাকি ৫০ বিঘার মালিক অন্য একজন।

 

ধারা ১৬: 

চুক্তির সতন্ত্র অংশের সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন (Specific performance of independent part of contract)/ যেক্ষেত্রে চুক্তির অসম্পাদিত অংশ  সতন্ত্র।

যখন চুক্তির একটি অংশের স্বতন্ত্রভাবে কার্যসম্পাদন করা আবশ্যক এবং তাহা একই চুক্তির এমন অন্য অংশ হতে স্বতন্ত্র এবং স্বাধীনভাবে অবস্থান করে, যাহা সুনির্দিষ্টভাবে সম্পাদন করা যাবে না বা অবশ্যক নয়, তাহলে আদালত পূর্ববর্তী অংশের সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন।

অথবা অসম্পাদিত অংশ  সতন্ত্র অর্থাৎ সম্পূর্ণ আলাদা হলে আদালত আংশিক সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে মূল্যের সমন্বয় হবে।

 

ধারা ১৭: চুক্তিটি ধারা ১৪, ১৫, ১৬ এর আওতায় না পড়লে আংশিক সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন সম্ভব না।

 

ধারা ১৮: ত্রুটিপূর্ণ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার পরবর্তী অধিকার। (Estoppel).

যেক্ষেত্রে বিক্রয়/ইজারা প্রদানের সময় মালিক ছিল না কিন্তু মালিক বলে বিক্রয়/ইজারা প্রদানের পর পরবর্তীতে মালিক হয় সেই ক্ষেত্রে বিক্রেতা/ইজারাদাতাকে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে বাধ্য করা যাবে।

 

ধারা ১৯: ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষমতা/বিকল্প প্রতিকার।

অপূরনীয় ক্ষতি কিংবা মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আদালত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর না করে ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করতে পারেন।

এই ধারা মোতাবেক আদালত ২ ধরণের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন-

(ক) চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের পরিবর্তে (In substitution of) ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ।

(খ) চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনসহ অতিরিক্ত হিসাবে (In addition to) ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ।

[চুক্তির জন্য সমুদয় বা আংশিক পরিশোধিত বায়না অর্থ (Earnest money)  ফেরতের মামলা এর ধারায় করা যাবে]

 

ধারা ২০: 

ক্ষতিপূরণ প্রদান/ খেসারত পরিশোধ সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে প্রতিবন্ধক নয় (Liquidation of damages  not a bar to specific performance).

চুক্তিভঙ্গের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রদানের অঙ্গিকার, সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা নহে।

 

ধারা ২১: 

যেসকল ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর হবে না/ যে সকল চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না/অবলবতযোগ্য চুক্তি।

নিম্নলিখিত ৮ টি ক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করবেন না।

ক) যেক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত।

খ) ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যোগ্যতার চুক্তি।

গ) চুক্তির শর্তাবলী নির্ণয়ে অসমর্থ হলে/জটিল ও অসংখ্য বিবরণের সমষ্টি।

ঘ) বাতিলযোগ্য/প্রত্যাহারযোগ্য চুক্তি।

ঙ) ক্ষমতা বহির্ভুত জিম্মা চুক্তি।

চ) কোম্পানির পরিচালক বা উদ্যোক্তা কর্তৃক ক্ষমতা বহির্ভুত চুক্তি

ছ) চুক্তিটি বাস্তবায়নে ৩ বছরের বেশি সময় লাগলে।

জ) চুক্তির বিষয়বস্তু বিলুপ্ত হলে।

 

ধারা ২১ক: অলিখিত বিক্রয় চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে বলবতযোগ্য নহে।

কোনো স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করতে হলে অবশ্যই নিম্নের ২টি শর্ত পূরণ করতে হবে-

(ক) চুক্তিটি, নিবন্ধন আইন ১৯০৮ মোতাবেক লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে।

(খ) চুক্তির অবশিষ্ট টাকা আদালতে জমা দিতে হবে।

[অত্র ধারাটি Specific Relief (Amendment) Act, 2004 (২০০৪ সালের ২৭ নং আইন) দ্বারা সন্নিবেশিত এবং ১ জুলাই ২০০৫ হতে কার্যকর হয়]

[স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি সম্পাদন হওয়ার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে চুক্তিটি নিবন্ধনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। রেজস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ১৭ক]

 

ধারা ২২: 

সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের আদেশ প্রদান আদালতের ইচ্ছাধীন/বিবেচনামূলক ক্ষমতা (Discretionary power).

সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের আদেশ প্রদান আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা। ইচ্ছাধীন ক্ষমতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। ইচ্ছাধীন ক্ষমতা আইন-সম্মত ক্ষমতার সংমিশ্রিত একটি প্রক্রিয়া। তাই আদালত ইহার ডিক্রি প্রদানে বাধ্য নয়। ইচ্ছাধীন ক্ষমতা নিখুত, বিবেচনা প্রসূত, সুচিন্তিত, যুক্তিসঙ্গত, ন্যয়ভিত্তিক যা বিচার বিভাগীয় মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং আপীল আদালত কর্তৃক সংশোধনযোগ্য।

আদালত ২টি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের ডিক্রি না দিতে বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন-

(ক) অন্যায় সুবিধা (Unfair Advantage): বিবাদীর উপর অন্যায় সুবিধা প্রদান করা হলে।

(খ) কঠোরতা (Hardship): বিবাদীকে কঠোরতায় জড়িয়ে ফেললে।

আদালত যেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের ডিক্রি দিতে বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন-

(ক) যেক্ষেত্রে বাদী চুক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পাদন করে ফেলেছে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

 

ধারা ২৩: 

যে সকল ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন পেতে পারে/যেসকল ব্যক্তির পক্ষে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন করা যেতে পারে (Who may obtain specific performance)।

এই ধারা অনুযায়ী ৮ ধরণের ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পেতে পারে-

(১) চুক্তির যেকোনো পক্ষ

(২) স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি

(৩) বিবাহের/একই পরিবারের আপোষের চুক্তিতে লাভভোগী ব্যক্তি

(৪) আজীবন প্রজা কর্তৃক ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ করিয়া ক্রীত চুক্তিতে অবশিষ্ট ব্যক্তি

(৫) পূর্বাধিকারীর চুক্তিতে লাভ পাবার অধিকারী উত্তরাধীকারী

(৬) উত্তরাধীকারী যখন লাভ ভোগের অধিকারী সেই চুক্তি ভঙ্গের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ

(৭) পাবলিক কোম্পানীর সাথে নতুন কোনো কোম্পানীর চুক্তি হলে নতুন কোম্পানী

(৮) পাবলিক কোম্পানী গঠনের পূর্বে উদ্যোক্তা বা পরিচালক কর্তৃক চুক্তি ভঙ্গের ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানী।

 

ধারা ২৪: 

যে সকল ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পেতে পারে না/প্রতিকারের পথে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা (Personal bars to the relief)।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাবে না –

(ক) যে চুক্তি ভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় না।

(খ) চুক্তির শর্তভঙ্গের ফলে নিজের অংশের কার্য সম্পাদন সম্পূর্ণ বাকি থাকলে।

(গ) চুক্তিভঙ্গের জন্যে ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকলে।

(ঘ) চুক্তির আগেই অবগত ছিলো যে, উহার বিষয়বস্তু বিলিবন্দোবস্ত করা হয়েছে।

 

ধারা ২৫: 

স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় বা ইজারা প্রদানের চুক্তির ক্ষেত্রে, বিক্রেতা বা ইজারাদাতার পক্ষে চুক্তি ৩ টি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।

(ক) স্বত্ব নেই জেনে চুক্তিবদ্ধ হলে

(খ) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্দেহ মুক্ত স্বত্ব প্রদান করতে না পারলে

(গ) চুক্তির আগেই বিষয়বস্তু বন্দবস্ত করলে।

 

ধারা ২৬: 

যেক্ষেত্রে পরিবর্তন ছাড়া সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন সম্ভব নয় (Non-enforcement except with variation).

নিম্নলিখিত ৫ টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন ছাড়া চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন সম্ভব নয়:

(ক) প্রতারণা বা তথ্যগত ভুলের কারণে চুক্তিটি সম্পাদিত হলে।

(খ) ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে চুক্তিটি সম্পাদিত হলে।

(গ) পরিবর্তন করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলে

(ঘ) প্রত্যেকে পৃথকভাবে দায়ী হলে

(ঙ) ভুল লেখা হলে

[যেমন- ১৫ কাঠা জমি বিক্রয়ের চুক্তিতে ২৫ কাঠা লেখা হলে।]

 

ধারা ২৭: 

যার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন সম্ভব/যে পক্ষকে কার্যসম্পাদনে বাধ্য করা যায় (Against whom contracts may be enforced).

নিম্নলিখিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন সম্ভব –

ক) যেকোনো পক্ষের বিরুদ্ধে।

খ) চুরির পরে দাবিদারদের বিরুদ্ধে।

গ) স্থানচ্যুত করলে দাবিদারদের বিরুদ্ধে।

ঘ) দুটি পাবলিক কোম্পানি একত্রিত হলে নতুন কোম্পানির বিরুদ্ধে।

ঙ) পাবলিক কোম্পানি গঠনের পুর্বে উদ্যোক্তারা চুক্তি করলে কোম্পানির বিরুদ্ধে।

 

ধারা ২৭ক: 

ইজারা সংক্রান্ত চুক্তির আংশিক কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন।

স্থাবর সম্পত্তির ইজারা চুক্তি অনুযায়ী কিছু কাজ করে থাকলে আংশিক কার্য সম্পাদনের মামলা করা যাবে।

১৯৩০ সালের ১লা এপ্রিলের পর সম্পাদিত ইজারা চুক্তি সমূহের উপরই এই ধারা প্রযোজ্য হবে।

 

ধারা ২৮: 

যার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন সম্ভব নয়/ যে পক্ষকে কার্যসম্পাদনে বাধ্য করা যায় না।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন সম্ভব নয়-

ক) প্রতিদান মারাত্মকভাবে অপর্যাপ্ত।

খ) ভুল বিবরণ, গোপনীয়তা, অসদাচরণের মাধ্যমে সম্মতি অর্জিত হলে।

গ) ভুল তথ্য দ্বারা প্রভাবিত করলে।

 

ধারা ২৯: 

খারিজের পর চুক্তিভঙ্গের মোকদ্দমা দায়েরে প্রতিবন্ধকতা (Bar of suit for breach after dismissal).

সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের মোকদ্দমা খারিজ হওয়ার পর নতুন করে ক্ষতিপূরণের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করা যাবে না।

[তবে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বে বাদীপক্ষ দেওয়ানী কার্যিবিধির ৬ আদেশের ১৭ বিধি মোতাবেক আরজি সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে।]

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ৩ (Chapter-3) – ধারা ৩১ – ৩৪

 

ধারা ৩১: 

দলিল সংশোধন (Rectification of Instrument).

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অবগতির তারিখ হতে ৩ বছরের মধ্যে দলিল/চুক্তি সংশোধনের মোকদ্দমা দায়ের করা যাবে।

(ক) প্রতারণার মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদিত হলে।

(খ) ভুলভাবে দলিলটি লিপিবদ্ধ হলে।

(গ) দলিলের গর্ভে পক্ষগণের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে ব্যক্ত করা না হলে।

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ৪ (Chapter-4) – ধারা ৩৫ – ৩৮

ধারা ৩৫: 

চুক্তি রদ/ বাতিল (Rescission of Contracts). 

মূলত নিম্নলিখিত ৩ টি ক্ষেত্রে চুক্তি রদের মোকদ্দমা করা যায়।

(১) চুক্তিটি বাতিলযোগ্য হলে।

(২) যেক্ষেত্রে বাদীর চেয়ে বিবাদীর দোষ বেশি থাকে।

(৩) যেক্ষেত্রে আদালত সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের ডিক্রি প্রদান করার পরেও বাদী তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়।

এছাড়াও,

(৪) অনৈতিক চুক্তি হলে।

(৫) নাবালক কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি।

(৬) উম্মাদ কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি।

(৭) বল প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তি।

(৮) প্রতারণায় বা মিথ্যা বর্ণনায় সম্পাদিত চুক্তি।

(৯) অনুচিত প্রভাবে সম্পাদিত চুক্তি।

(১০) স্বাধীন সম্মতি ব্যতীত সম্পাদিত চুক্তি।

(১১) প্রতিদান বিহীন চুক্তি।

[চুক্তি রদের মোকদ্দমা দায়েরের তামাদি সময় ১ বছর, তামাদি আইন অনুচ্ছেদ ১১৪]

[চুক্তি রদের মামলায় এডভোলেরাম কোর্ট ফি দিতে হবে।]

 

ধারা ৩৬: কেবলমাত্র ভুলের জন্য বিচারপূর্বক লিখিত চুক্তি রদ করা যায় না।

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ৫ (Chapter-5) – ধারা ৩৯ – ৪১

 

ধারা ৩৯: দলিল বাতিল/ রদ (Cancellation of instruments).

(১) নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে দলিল বাতিলের মোকদ্দমা দায়ের করা যায়:

(ক) প্রতারণার মাধ্যমে সম্পাদিত দলিল।

(খ) জাল, অসত্য, ভূয়া দলিল।

(গ) মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে।

(১) এই ধারায় আদালত তার বিবেচনামূলক ক্ষমতায় নিম্নলিখিত আদেশ দিতে পারেন:

(ক) দলিলটি বাতিল বা বাতিলযোগ্য হিসাবে নিষ্পত্তি করতে পারে।

(খ) দলিলটি অর্পণের আদেশ দিতে পারে।

(গ) দলিলটি বাতিল করতে পারে।।

(২) নিবন্ধনকৃত/ Registered দলিল বাতিলের মোকদ্দমায় আদালত ডিক্রির কপি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রার অফিসে প্রেরণ করবেন।

(৩) দলিল বাতিলের মোকদ্দমা আবগতির তারিখ থেকে ৩ বছরের মধ্যে করতে হবে। [তামাদি আইন, ১৯০৮ এর অনুচ্ছেদ ৯১]

(৪) মূল্যানুপাতিক (Advalorem) কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে।

(৫) দলিল বাতিলের মোকদ্দমায় বাদীকে অবশ্যই মোকদ্দমার পক্ষ থাকতে হবে।

 

ধারা ৪০: যে দলিলসমূহ আংশিক বিলুপ্ত করা যেতে পারে।

যেখানে একটি দলিল বিভিন্ন অধিকারসমূহ বা বিভিন্ন বাধ্যবাধকতায় সাক্ষ্য হয়, সেখানে আদালত দলিলটি আংশিক বিলুপ্ত এবং অবশিষ্ট অংশ বহাল রাখতে পারেন।

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ৬ (Chapter-6) – ধারা ৪২ – ৪৩

 

ধারা ৪২: ঘোষণামুলক প্রতিকার (Declaratory Relief).

(১) কোনো ব্যক্তির আইনগত বৈশিষ্ট্য/পরিচয় বা সম্পত্তির আইনগত অধিকার অন্যের দ্বারা অস্বীকৃত হলে মোকদ্দমাটি যে প্রতিকারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় তাকে বলা হয় ঘোষণামূলক প্রতিকার।

২। দুইটি ক্ষেত্রে ঘোষণামূলক ডিক্রির আবেদন করা যায় –

  • আইনগত বৈশিষ্ট্য/ পরিচয়ের অধিকার
  • সম্পত্তির আইনগত অধিকার।

(৩) ঘোষণামূলক প্রতিকার প্রদান করা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা (Discretionary Power).

৪। ঘোষণামূলক প্রতিকারে কোনো তামাদি আইন উল্লেখ না থাকায় তামাদি আইনের ১ম তফসিলের ১২০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক ৬ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।

৫। ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় আনুষঙ্গিক প্রতিকার (Consequential/ Further Relief) প্রয়োজন হলে অবশ্যই আনুষঙ্গিক প্রতিকার চাইতে হবে অন্যথায় মোকদ্দমাটি খারিজ হয়ে যাবে।

৬। আনুষঙ্গিক প্রতিকার ছাড়া ঘোষণামূলক ডিক্রির জন্য মোকদ্দমা রুজু করলে কোর্ট ফি নির্ধারিত। অর্থাৎ মোকদ্দমাটি যতটি প্রতিকারের জন্য করা হয় প্রতিটি ঘোষনার জন্য ৩০০ টাকা করে কোর্ট ফি দিতে হবে।

৭। আনুষঙ্গিক প্রতিকারসহ ঘোষণামূলক ডিক্রির জন্য মোকদ্দমা রুজু করলে মূল্যানুপাতিক (Advaluram) কোর্ট ফি দিতে হবে।

৮। চুক্তি থেকে  উদ্ভুত কোনো বিষয়ে আদালত ঘোষণামূলক প্রতিকার প্রদান করেন না। কোনো দলিলে কোনো ব্যক্তি পক্ষভুক্ত না হলে, সেক্ষেত্রে ঘোষণার মাধ্যমে দলিলটি অকার্যকর করতে পারেন। এক্ষেত্রে দলিলের পক্ষভুক্ত পক্ষগণ দলিল বাতিলের মামলা করতে পারেন।

৯। ইস্যুকৃত (Issued) বা নিবন্ধিত (Registered) দলিল জাল বলে ঘোষণার তামাদি মেয়াদ ৩ বছর। [তামাদি আইন, ১৯০৮ এর অনুচ্ছেদ ৯২]

১০। দলিল বাতিল বলে ঘোষণার তামাদি মেয়াদ ৩ বছর। [তামাদি আইন, অনুচ্ছেদ ৯২]

১১। ঘোষণামূলক প্রতিকারে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপীল বা রিভিউ করতে পারে।

 

ধারা ৪৩: ঘোষনার ফলাফল (Effect of declaration).

৪২ ধারা অনুসারে প্রদত্ত ঘোষণা নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের উপর অবশ্য পালণীয় হবে।

(১) মোকদ্দমার পক্ষগণ

(২) স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিনিধি।

 

২য় খন্ড (Part –II)

অধ্যায় ৮ (Chapter-8) – ধারা ৪৪ – ৫১

 

ধারা ৪৪: রিসিভার নিয়োগ সুবিবেচনামূলক (Appointment of receivers discretionary).

মোকদ্দমার নালিশী বিষয়বস্তু সংরক্ষণ, তত্ত্বাবধান বা পরিচালনার জন্য আদালত কর্তৃক নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে বলা হয় রিসিভার।

আদালত সাধারণত ২ টি ক্ষেত্রে রিসিভার নিয়োগ করে থাকেন-

(১) সম্পত্তি সংরক্ষণ বা

(২) ডিক্রি জারি।

আদালত সাধারণত ২ টি চাহিদার ভিত্তিতে রিসিভার নিয়োগ করে থাকেন-

(১) স্বপ্রনোদিত হয়ে বা

(২) পক্ষের আবেদনক্রমে।

আদালত সাধারণত রিসিভারকে একটি পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দিবেন।

রিসিভারের দায়িত্ব কর্তব্য ও প্রত্যাহারসহ যাবতীয় বিষয় দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ আদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

 

৩য় খন্ড (Part –III)

অধ্যায় ৯ (Chapter-9) – ধারা ৫২ – ৫৩

 

ধারা ৫২: প্রতিরোধমূলক/ নিরোধক প্রতিকার যেভাবে মঞ্জুর করা যায় (Preventive relief how granted).

আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে অস্থায়ী বা চিরস্থায়ী (Temporary or Perpetual) নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে নিরোধক প্রতিকার মঞ্জুর করা হয়।

 

ধারা ৫৩: অস্থায়ী ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সংজ্ঞা।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction):

নালিশি বিষয়বস্তু স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য সম্পত্তিটি হস্তান্তর, রুপান্তর বা ধ্বংসসাধন থেকে রক্ষা করার জন্য অপর পক্ষকে নোটিশ প্রদান করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অথবা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আদালত যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন তাকে বলা হয় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা। মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে তাহা মঞ্জুর করা যায় এবং ইহা দেওয়ানী কার্যবিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

 

সাধারণত পাঁচটি অবস্থা বিবেচনায় রেখে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে থাকেন –

(১) দাবির যথার্থতা (২) অপূরণীয় ক্ষতি (৩) কাজের অগ্রগতি (৪) অন্যায় সংগঠন (৫) প্রাইমা ফেসি কেইস (Prima Facie)

 

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৯ আদেশ মোতাবেক নিয়িন্ত্রিত হবে।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দে: কা: ৩৯ আদেশ মোতাবেক হলে উক্ত আদেশে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দে: কা: এর ১০৪ ধারা মোতাবেক বিবিধ আপীল করতে পারবেন।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দে: কা: এর ৩৯ আদেশ মোতাবেক না হয়ে দে: কা: ১৫১ ধারা মোতাবেক হলে রিভিশন করতে পারবেন।

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে আদালত একটি সুনির্দিষ্ট সময় দিয়া কারণ দর্শানোর নোটিশ দিবেন।

 

স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual Injunction):

শুনানীর পর মোকদ্দমার গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণ করে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা।

 

[নিষেধাজ্ঞা (Injunction): কোনো কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকার জন্য আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ বা আজ্ঞাকেই বলা হয় নিষেধাজ্ঞা।]

 

নিষেধাজ্ঞা সাধারণত/ কার্যের বা প্রকৃতির দিক থেকে ২ প্রকার –

(১) আদেশমূলক/ আদেশাত্মক/ বাধ্যতামূলক/ প্রতিরোধমূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory)

(২) নিষেধমূলক/ নিষেধাত্মক/ নিরোধক নিষেধাজ্ঞা।

 

সময়ের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকার-

(১) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction)

(২) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)

(৩) অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction)

 

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ৩ ধরণের নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ আছে –

(১) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) – [ধারা ৫৩]

(২) স্থায়ী/ চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction) – [ধারা ৫৪]

(৩) আদেশমূলক/ বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা – [ধারা ৫৫]

 

দেওয়ানী কার্যবিধিতে ৩ ধরণের নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ আছে –

(১) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction) [আদেশ ৩৯]

(২) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Permanent Injunction)

(৩) অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction)

 

বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা ছাড়া সকল ধরণের নিষেধাজ্ঞা হলো নিরোধক প্রতিকার।

 

[অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad-interim Injunction): এক পক্ষের কথা শুনে অপর পক্ষের কথা না শুনে মোকদ্দমার গুনাগুন বিচার বিশ্লেষণ না করে মোকদ্দমার শুরুতে যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয় তাকে বলা হয় অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা। অত্যন্ত জরুরী মূহুর্তে অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করবেন। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রচলিত নাই। ২০০৭ সাল হতে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে নালিশি বিষয়বস্তু স্থিতি অবস্থার আদেশ দিয়ে থাকেন।]

 

৩য় খন্ড (Part –III)

অধ্যায় ১০ (Chapter-10) – ধারা ৫৪ – ৫৭

 

ধারা ৫৪: চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual injunctions).

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিধানের অধীন আবেদনকারীর স্বপক্ষে কোনো বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ করা রোধ করার জন্য চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা যেতে পারে। এই বাধ্যবাধকতা চুক্তির ফলে উদ্ভূত হলে এই আইনের ২য় অধ্যায়ের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

 

ব্যাখ্যা: এই ধারার উদ্দেশ্য অনুযায়ী ট্রেড মার্ক সম্পতি বলে গণ্য হবে।

 

নিম্নলিখিত ৫টি ক্ষেত্রে আদালত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন।

ক) চুক্তিটি জিম্মার অন্তর্ভূক্ত হলে।

খ) ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের মাপকাঠি না থাকলে।

গ) আর্থিক ক্ষতিপূরণ অপর্যাপ্ত হলে।

ঘ) আর্থিক ক্ষতিপূরণ অনিশ্চিত হলে।

ঙ) মামলার বহুতা রোধের উদ্দ্যেশ্যে।

 

চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে ৬ বছরের মধ্যে।

এই মোকদ্দমা আরজির মাধ্যমে শুরু হয় এবং ডিক্রির মাধ্যমে শেষ হবে।

 

ধারা ৫৫: আদেশমূলক বা বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা (Mandatory Injunctions). 

যখন একটি বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ করা রোধ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করা আবশ্যক হয় তখন আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলে ঐ নির্দিষ্ট কাজটি সম্পাদন করার জন্য যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন তাকে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা বলে।

 

ধারা ৫৬: যেসকল ক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান/নামঞ্জুর করবেন।

নিম্নলিখিত ১১ টি ক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান/নামঞ্জুর করবেন।

ক) বিচারবিভাগীয় কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য যদি না মামলার বহুতা রোধে এরূপ আদেশ প্রয়োজন হয়।

খ) অধস্তন আদালত নয় এরূপ কোনো আদালতের কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য।

গ) আইনগত সহায়তা নিতে বিরত রাখার জন্য বা আইন প্রনয়ণকারী সংস্থার নিকট আবেদন করা থেকে বিরত রাখার জন্য।

ঘ) সরকারের কোনো বিভাগের কাজ বা বিদেশী সরকারের কোনো সার্বভৌম কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য।

ঙ) ফৌজদারী কোনো কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য।

চ। যে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।

ছ। উৎপাতের অযুহাতে উৎপাত নয় এমন কাজ বন্ধ করার জন্য।

জ। যে চুক্তি ক্রমাগত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বাদীর মৌন সম্মতি আছে।

ঝ। যে চুক্তির প্রতিকার অন্যভাবে প্রদান করা সম্ভব।

ঞ। আবেদনকারীর আচরণ সন্তোষজনক না হলে।

ট। যেক্ষেত্রে দরখাস্তকারীর বা বাদীর কোনো স্বার্থ নাই।

 

ধারা ৫৭: নেতিবাচক চুক্তি পালনে নিষেধাজ্ঞা। 

কোনো নেতিবাচক চুক্তি পালনে বাধা প্রদানের জন্য আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন।

[যেমন, ২১ ধারা মোতাবেক চুক্তি করার পরও কোনো কন্ঠ শিল্পীকে গান গাইতে বাধ্য করা যায় না। কিন্তু একজন কন্ঠ শিল্পী যদি একই সাথে দুই যায়গায় গান গাওয়ার জন্য যুক্তিবদ্ধ হয় তাহলে দ্বিতীয় চুক্তিটি পালনে আদালত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন ৫৭ ধারা মোতাবেক। কারণ এটি একটি নেতিবাচক চুক্তি।]

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *