স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীর কি করা উচিৎ ?
প্রশ্নের ধরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এটি একটি আইনি প্রশ্ন, পারিবারিক প্রশ্ন এবং ব্যক্তিগত প্রশ্ন।
কারণ এই প্রশ্নের সাথে আইন, পারিবার এবং ব্যক্তিগত বিষয় জড়িত। তাই প্রশ্নটি তিন দিক থেকেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
নিচে অত্যন্ত সহজভাবে ধাপে ধাপে বিষয়টি আলোচনা করা হলো-
স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীর কি করা উচিৎ-
প্রথমেই নিশ্চিত করুন যে, এই তালাকটি আইনগতভাবে বৈধ কিনা। তালাকের আইনগত পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো।
তালাকের আইনগত পদ্ধতি-
বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইনে স্বামীর তালাক বৈধ হওয়ার শর্তাবলী-
১। তালাকনামা অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
২। সংশ্লিষ্ট তালাক রেজিস্ট্রার বা কাজী কর্তৃক নোটিশ দিতে হবে।
৩। একটি নোটিশ স্ত্রীকে দিতে হবে।
৪। একটি নোটিশ সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর বা উপজেলার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দিতে হবে।
নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিনের “ইদ্দত” সময় গণনা শুরু করা হবে। এই ৯০ দিন (ইদ্দতকালীন সময়) পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
স্ত্রীর অধিকার-
১। তালাকের নোটিশ সঠিকভাবে পাঠানো হয়েছে কিনা তা যাচাই করা।
২। স্ত্রীর ভরণ-পোষণ (Maintenance) পাওয়ার অধিকার। তালাকের পর ইদ্দতকালীন ৯০ দিন স্ত্রীর ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকার আছে। যাহা দিতে স্বামী আইনত বাধ্য।
৩। দেনমোহর (Dower) আদায় করা। দেনমোহরের সাথে তালাকের সম্পর্ক নাই। তালাক হোক বা না হোক দেনমোহর স্ত্রীর আইনগত অধিকার দেনমোহর পরিশোধ করতে স্বামী আইনগতভাবে বাধ্য।
স্বামী পাওনা না দিলে স্ত্রীর করণীয়-
মামলা ছাড়া সমাধান-
তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর স্থানীয় কাউন্সিলর বা উপজেলার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তিন মাসের মধ্যে উভয় পক্ষকে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করবেন। তিন মাসের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব না হলে তিন মাস পর তালাক স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যাবে। তালাক কার্যকর হয়ে গেলে সেটি আর বাতিল করা যাবে না।
তবে আবার সংসার করার ইচ্ছা উভয়ের সৃষ্টি হলে নতুন করে ২য় বার বিয়ে করে নিতে আইনগত কোন বাঁধা নাই।
মামলার মাধ্যমে সমাধান-
তালাক কার্যকর হয়ে গেলে ঐ তালাক আর বাতিল করা যায় না। তবে স্ত্রীর অধিকার স্বামী স্বেচ্ছায় না দিলে নিম্নলিখিত মামলার মাধ্যমে আদায় করা যাবে।
১। দেনমোহর ও ভরণ-পোষণের জন্য মামলা-
দেনমোহর ও ভরণ-পোষণের জন্য পারিবারিক আদালতে দেওয়ানী মামলা করা যাবে। সেক্ষেত্রে স্ত্রী কাবিননামায় উল্লেখিত দেনমোহরের টাকা এবং ৩ মাসের খোরপোষ বা ভরণ-পোষণের টাকা পাবেন। তালাকের পর ইদ্দতকালীন ৯০ দিন স্ত্রীর ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকার আছে। যাহা দিতে স্বামী আইনত বাধ্য।
২। স্ত্রীকে কোন ধরণের নির্যাতন করা হলে মামলা-
স্বামী বা অন্য কেউ স্ত্রীকে কোন ধরণের নির্যাতন করলে নারী নির্যাতন আইনে নির্যাতনকারীদের আসামী করে মামলা দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে নির্যাতনের বিষয় প্রমাণ করা গেলে আসামীদের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
৩। যৌতুকের জন্য মামলা-
স্বামী বা তার পক্ষে অন্য কেউ স্ত্রী কিংবা তার পরিবারের নিকত থেকে যৌতুক নিলে কিংবা যৌতুক দাবি করলে যৌতুক নিরোধ আইনে যৌতুক গ্রহণকারীদের বা দাবিকারীদের আসামী করে মামলা দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে যৌতুকের বিষয় প্রমাণ করা গেলে আসামীদের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
৪। সন্তানের হেফাজত (Guardianship) এর মামলা-
সন্তানের জন্য পারিবারিক আদালতে Guardianship মামলা করে সন্তানকে স্ত্রী তার হেফাজতে নিতে পারবেন। সন্তান ছোট থাকলে সাধারণত আদালত মায়ের কাছে থাকাই অনুমোদন করে। স্বামী-স্ত্রী আলাদা হলে সন্তান ভরণ-পোষণের জন্য মায়ের মামলা করার অধিকার আছে।
অধিকতর পরামর্শের প্রয়োজন হলে বিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিন।
যোগাযোগ-
Ainbid Legal Solution
সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)
কোর্ট চেম্বার- ২/১, কোর্ট হাউজ স্ট্রিট, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা
অথবা
রেসিডেন্স/ইভনিং চেম্বার- ব্লক-এ, রোড-৫, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা
মোবাইল- 01540105088/ 01711068609 (Whatsapp)
ওয়েবসাইট- www.ainbid.com