হুমকি দিলে কি করবেন

হুমকি দিলে কি করবেন এই বিষয়ে স্পস্ট ধারণা পেতে মনোযোগ দিয়ে লেখাটি পড়ুন। কেউ আপনাকে হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে, উৎপাত করলে, জমি দখলের চেষ্টা, রাস্তায় বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে,  বিরক্ত করলে কিংবা শান্তি নষ্ট করলে আপনি আইনের মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করতে পারে।

 

হুমকির বিরুদ্ধে আইনের মাধ্যমে তিনটি ধাপে তিন জায়গায় থেকে আপনি প্রতিকার পেতে পারেন।

(১) স্থানীয় থানায় জিডি,

(২) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন,

(৩) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন,

 

(১) স্থানীয় থানায় জিডি:

আপনার স্থানীয় থানায় গিয়ে হুমকি দাতার নাম ঠিকানা ও হুমকি দেওয়ার সময় ও স্থান উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে একটা জিডি করতে পারেন। জিডি করলে আপনার বিষয়টি দেখার জন্য থানার ওসি একজন পুলিশ অফিসারকে দায়িত্ব দিবেন। তারপর আপনাকে একটি জিডি নম্বর দেওয়া হবে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ঐ পুলিশ অফিসারের মোবাইল নম্বর দেওয়া হবে। আপনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ঐ পুলিশ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী কোন সমস্যা হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। আপনার অভিযোগটি অধিক গুরুতর হলে পুলিশ এই জিডি থেকে নন-প্রসিকিউশন প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। জিডি করে সমস্যার সমাধান না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারেন।

 

(২) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন:

কেউ আপনাকে হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে, উৎপাত করলে, জমি দখলের চেষ্টা, রাস্তায় বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, বিরক্ত করলে কিংবা শান্তি নষ্ট করলে, কেউ কোন অবৈধ কাজের উদ্যোগ নিলে কিংবা কেউ বিরক্তিকর কোন কাজ করলে, একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ আইনের ১০৭/১১৭(সি) ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করে মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়ী ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকেন। এভাবে এই ধারার আদেশের মাধ্যমে দায়ী বা অভিযুক্ত ব্যক্তির বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

 

আদেশ হলে কিংবা মামলার খারিজ হলে করণীয়:

১১৭(সি) ধারায় বন্ড বা মুচলেকা প্রদানের আদেশ হলে কিংবা এই মামলার খারিজের আদেশ হলে উক্ত বিরুদ্ধে দায়রা জজ কিংবা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ আইনের যথাক্রমে ৪৩৫ বা ৪৩৯(এ) ধারামতে রিভিশন দায়ের করে প্রতিকার পাওয়া যায়।

 

(৩) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন:

উপরের দুইটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরও যদি হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত থাকে তাহলে দন্ডবিধি, ১৮৬০ আইনের ৫০৬ ধারা অনুযায়ী একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে হুমকি দাতা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনকারীর বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করতে পারেন।

 

শাস্তি:

এই ক্ষেত্রে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন প্রমাণিত হলে আসামীর দুই বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।

 

মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের ভয়ভীতি প্রদর্শন প্রমাণিত হলে আসামীর সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।

 

সতর্কতা:

কেউ আপনাকে হুমকি দিলে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে, উৎপাত করলে, জমি দখলের অপচেষ্টা চালালে, রাস্তায় বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, বিরক্ত করলে কিংবা শান্তি বিনষ্ট করলে শুরু থেকেই সকল ধরণের প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। হুমকি দেওয়ার অডিও, ভিডিও, ছবি, সাক্ষীসহ যেকোন ধরণের প্রমাণ পান সংগ্রহে রাখুন।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

ainbid.com

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *