দেওয়ানী কার্যবিধির সহজ নোট (৫১-১০০ ধারা)

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure, 1908) 

 

ধারা ৫১-১০০

ধারা ৫১:   ডিক্রি জারিতে আদালতের ক্ষমতা।    [২১ আদেশ ]

ডিক্রি জারির জন্য আদালত নিম্নলিখিত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। যথা:

(ক) ডিক্রিতে উল্লেখিত সম্পত্তি অর্পণ।

(খ) সম্পত্তি ক্রোক ও নিলাম বিক্রয়।

(গ) দেওয়ানী কয়েদে আটক।

(ঘ) রিসিভার নিয়োগ।

(ঙ) ডিক্রির প্রকৃতি অনুসারে অন্য কোনো আদেশ।

 

ধারা ৫২: বৈধ প্রতিনিধির উপর ডিক্রির কার্যকারিতা।

মোকদ্দমা চলাকালীন সময় দায়ীক মৃত্যুবরণ করলে ডিক্রিদারের আবেদনক্রমে আদালত দায়ীকের প্রতিনিধিকে মোকদ্দমায় অন্তর্ভূক্ত করে ডিক্রি জারি করতে পারেন।

 

ধারা ৫৪:    সম্পত্তি বাটোয়ারা বা অংশ/সাহাম বিভাজন।   [২০ আদেশ ১৮ বিধি]

সরকারী রাজস্বযুক্ত অবিভক্ত সম্পত্তির বিভাজন ও পৃথক দখলের জন্য আদালতের ডিক্রি হলে ইহা কার্যকর করবেন কালেক্টর বা তাহার কর্তৃক মনোনীত তাহার অধ:স্তন গেজেটেড কর্মকর্তা।

 

[প্রাসঙ্গিক আলোচনা:]

[Deputy Commissioner (DC) বা District Magistrate(DM) বা Collector একই ব্যক্তি। কাজের ধরণ অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত হন।

তিনি যখন প্রশাসনিক কাজ করেন তখন তাকে DC বলা হয়। তিনি যখন বিচার কার্য পরিচালনা করেন তখন তাকে DM বলা হয়। তিনি যখন রাজস্ব সংক্রান্ত কার্য পরিচালনা করেন তখন তাকে কালেক্টর বলা হয়।]

 

ধারা ৫৫: গ্রেফতার ও আটক (Arrest and Detention).

দেওয়ানী পরোয়ানায় যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো দিন যেকোনো সময় আটক করা যাবে।

 

ব্যতিক্রম (Restriction):

(I) সূর্যাস্তের পর এবং সূর্য উদয়ের পূর্বে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে তাহার বাসগৃহে প্রবেশ করা যাবে না।

(II) গৃহখানি যদি তাহার না হয় কিংবা তাহার হলে প্রবেশে বাধা না দিলে গৃহের বহিঃদার ভাঙ্গা যাবে না। গৃহের ভিতর প্রবেশের পর দায়িকের অবস্থান যদি কোনো কক্ষের ভিতর হয় সেইক্ষেত্রে গ্রেফতার নিশ্চিতের জন্য কক্ষের দরজা ভাঙ্গা যাবে।

(III) তবে কক্ষে যদি কোনো পর্দানশীল মহিলা থাকে যিনি দায়িক নহেন, সেইক্ষেত্রে উক্ত মহিলাকে বাহির হওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় ও সুযোগ না দিয়া প্রবেশ করা যাবে না।

(IV) ডিক্রিটি যদি অর্থের জন্য হয় এবং দায়িক ডিক্রিতে উল্লেখিত সম্পূর্ণ অর্থ ও গ্রেফতারের খরচ গ্রেফতারকারী কর্মকর্তার নিকট অর্পণ করিলে তাহাকে গ্রেফতার করা যাবে না।

 

ধারা ৫৬: মহিলার আটকে বাধা।

অর্থের ডিক্রি জারিতে কোনো মহিলাকে গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না।

 

ধারা ৫৭: খোরপোষ ভাতা (Subsistence Allowance).

দেওয়ানী কয়েদে আটককৃত ব্যক্তির খোরপোষ নির্ধারণ করবেন সরকার।

আটককৃত ব্যক্তির খোরপোষ নির্ধারণে সরকার ৩টি বিষয় বিবেচনা করবেন-

(I) পদমর্যাদা (II) গোত্র (III) জাতীয়তা

 

ধারা ৫৮: আটক ও মুক্তি (Detention and Release).

ডিক্রি জারিতে সাব্যস্ত দেনাদারকে দেওয়ানী কয়েদে আটক রাখা যাবে।

আটক:

(ক) পাওনার পরিমাণ ৫০ টাকার উর্ধে হলে অনধিক ৬ মাস।

(খ) অন্য সকল ক্ষেত্রে অনধিক ৬ সপ্তাহ (৪২ দিন)।

 

মুক্তি:

(I) যে টাকার জন্য দেওয়ানী কয়েদে আটক রাখা হয় দেনেদার যদি উক্ত টাকা জেলারের হাতে অর্পণ করেন।

(II) বিরোধটি যদি অন্য কোনো ভাবে মীমাংসিত হয়।

(III) যাহার আবেদনে দেনাদারকে আটক রাখা হয় সে অনুরোধ করলে।

(IV) পরবর্তী মাসের খোরপোষের ভাতা আবেদনকারী পূর্ববর্তী মাসের মধ্যে জেলারের কাছে জমা না দিলে।

[(II) ও (III) নং ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে]

 

ধারা ৫৯: অসুস্থতার জন্য মুক্তি।

সাব্যস্ত দেনাদার এর অসুস্থতার ব্যাপারে অবহিত হলে আদালত বা সরকার নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে মুক্তি দিতে পারেন-

(১) পরোয়ানা ইস্যুর পর অবহিত হলে আদালত পরোয়ানাটি বাতিল করতে পারবেন।

(২) গ্রেফতারের পর অবহিত হলে আদালত তাকে মুক্তি দিবেন।

(৩) কারাগারে নেওয়ার পর সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে সরকার (জেলার), গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে আদালত তাকে মুক্তি দিবেন।

(৪) এই ধারার আওতায় মুক্তিপ্রাপ্ত সাব্যস্ত দেনাদারকে পুরনায় গ্রাফতার করা যেতে পারে। কিন্তু আটকের মেয়াদ গড়ে ৫৮ ধারায় উল্লেখিত মেয়াদের বেশী হবে না।

 

ধারা ৬০: ডিক্রি জারিতে সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়।

ডিক্রি জারিতে আদালত সাব্যস্ত দেনাদারের স্থাবর/অস্থাবর সকল সম্পত্তি ক্রোক করতে পারবেন।

তবে নিম্নলিখিত সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে না-  [মোট ১৬ টি পয়েন্ট]

(ক) পরিধেয় বস্ত্রাদি।

(খ) কারিগরের জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার। যেমন কৃষক, কামার, কুমারদের হাতিয়ার। [গরু, লাঙ্গল. বীজ ইত্যাদি]।

(গ) কৃষক কিংবা চাষীর বাসগৃহ, অন্যান্য গৃহ ও সরঞ্জাম।

(ঘ) হিসাবের খাতাপত্র।

(ঙ) ক্ষতিপূরণের মোকদ্দমা দায়েরের অধিকার।

(চ) ব্যক্তিগত সেবা লাভের অধিকার।

(ছ) সরকারি সকল ধরণের পেনশন।

(জ) শ্রমিক ও গৃহ ভৃত্যের পারশ্রমিক।

(ঝ) রাষ্ট্রের কর্মচারীর প্রথম ১০০ টাকা এবং পরবর্তী বেতনের অর্ধেক একনাগারে ২৪ মাস পর্যন্ত ক্রোক করা যাবে না।

(ঞ) ৩ বাহিনীর সদস্যদের বেতন ভাতা (সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী)।

(ট) বাধ্যামূলক সঞ্চয়পত্র এবং ভবিষ্যত তহবিল আইন ১৯২৫ অনুযায়ী জমা দেয়া সমস্ত টাকা এবং তা থেকে প্রাপ্ত মুনাফা।

(ঠ) সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তির দ্বারা ক্রোকমুক্ত হলে।

(ড) ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্য সম্ভাব্য সম্পত্তি বা ভবিষ্যত স্বার্থ বা অধিকার।

(ঢ) খোরপোষ ভাতা প্রাপ্তির অধিকার।

(ণ) বাংলাদেশের কোনো আইন দ্বারা ক্রোক ও নিলাম হতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভাতাদি।

(ত) বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী অব্যাহতিপ্রাপ্ত বকেয়া ভূমি রাজস্ব।

 

প্রাসঙ্গিক আলোচনা:

ক্রোক (Attachment): সম্পত্তি আটক করাকে ক্রোক বলা হয়। ইহা দুই প্রকার। যথা:

(ক) আইনী ক্রোক (খ) বে-আইনী ক্রোক।

আইনী ক্রোক আবার দুই প্রকার। যথাঃ

(I) রায়ের পূর্বে ক্রোক     [৩৮ আদেশ] (II) রায়ের পর ক্রোক    [২১ আদেশ]

 

ধারা ৬১: কৃষিজাত উৎপাদিত দ্রব্যে আংশিক ক্রোক অব্যাহতি।

সাব্যস্ত দেনাদার যদি কৃষক হয় সেইক্ষেত্রে পরবর্তী ফলন না আসা পর্যন্ত সময়ের জন্য উক্ত কৃষক পরিবারের সদস্যদের জন্য জীবিকা নির্বাহের জন্য যতটুকু কৃষিজাত উৎপাদিত পণ্য প্রয়োজন ততটুকু ক্রোক করা যাবে না। উদ্বৃত্য থাকলে বা অতিরিক্ত থাকলে সেটি ক্রোক করা যাবে।

 

ধারা ৬৩: বিভিন্ন আদালতে ডিক্রি জারিতে ক্রোক কৃত সম্পত্তি।

ডিক্রি জারিতে একাধিক আদালত যদি দেনাদারের সম্পত্তি ক্রোক করেন সেইক্ষেত্রে ক্রোককারী আদালত সমুহের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ তিনি ক্রোকের বিষয়ে যাবতীয় দাবী দাওয়ার সমাধান করবেন।

ক্রোককারী আদালত সমূহ সমপর্যায়ের হলে প্রথম যে আদালতটি ক্রোক আদেশ দিয়েছেন তিনি ক্রোকের বিষয়ে যাবতীয় দাবী দাওয়া নিষ্পত্তি করবেন।

 

ধারা ৬৪: ক্রোকের পর সম্পত্তির বেসরকারী হস্তান্তর বাতিল হবে। আদালত যে সম্পত্তির ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন সেই সম্পত্তি কোনো প্রকার হস্তান্তর করা যাবে না কিংবা উক্ত ক্রোককৃত সম্পত্তির কোনো মুনাফা বা খাজনা বা ফলন সম্পত্তির মালিককে প্রদান করা যাবে না। হস্তান্তর করা হলে কিংবা খাজনা বা মুনাফা প্রদান করা হলে তাহা বাতিল বলে গন্য হবে।

 

ধারা ৭৪:    ডিক্রি জারি কার্যে বাধা।    [২১ আদেশ ৯৮ বিধি]

ডিক্রিদারকে ডিক্রি জারিতে কিংবা নিলাম ক্রেতাকে দখল লাভে, সঙ্গত কারণ ছাড়া দেনাদার বাধা প্রদান করলে ডিক্রিদার বা নিলাম ক্রেতার আবেদন ক্রমে আদালত বাধাদানকারীকে অনধিক ৩০ দিনের জন্য দেওয়ানী কয়েদে আটকের আদেশ দিবেন এবং ডিক্রিদার বা নিলাম ক্রেতাকে সম্পত্তির দখল প্রদানের আদেশ দিবেন।

 

ধারা ৭৫: কমিশন নিয়োগ।     [২৬ আদেশ ]

আদালত ৪টি ক্ষেত্রে কমিশন নিয়োগ করতে পারে-

(ক) সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ  [২৬ আদেশ ১ বিধি]

(খ) স্থানীয় তদন্ত  [২৬ আদেশ ৯ বিধি]

(গ) হিসাব পরীক্ষা  [২৬ আদেশ ১১ বিধি]

(ঘ) বাটোয়ারা  [২৬ আদেশ ১৩ বিধি]

 

প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ

কমিশন: মোকদ্দমা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আদালত কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলা হয় কমিশন।

যেমন: বন্টন নামা মামলায় জমি বন্টনের জন্য কমিশন প্রেরণ।

কমিশনের সদস্য সংখ্যা হবে ১ জন। কমিশন কোনো আদালত নয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত নয়। কমিশনের সুনির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতা নাই। আদালতের দৃষ্টিতে যোগ্যতর ব্যক্তিকে আদালত কমিশন নিয়োগ করে থাকেন।

আদালত, কোনো পক্ষের আবেদন ক্রমে কিংবা স্বতঃ প্রবৃত্ত/স্বেচ্ছা প্রণোদিত (Own motion) হয়ে কমিশন নিয়োগ করতে পারবেন।

 

রিসিভার/তত্ত্বাবধায়ক (Receiver):    [(ধারা ৫১]

মোকদ্দমা সংশ্লিষ্ট কোনো সম্পত্তি সংরক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার জন্য আদালত কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলা হয় রিসিভার।

 

ধারা ৭৭: অনুরোধপত্র (letter of Request).

আদালত বিদেশে অবস্থানরত কোনো সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য কমিশন প্রেরণ না করে অনুরোধপত্র প্রেরণ করেতে পারবেন।

 

ধারা ৭৯:  সরকার কর্তৃক বা সরকারের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা।    [আদেশ ২৭]

[Constitution article 146]

সরকার কর্তৃক বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়েরের ক্ষেত্রে বাদী বা বিবাদী হিসাবে কর্তৃত্বের নাম হবে “বাংলাদেশ”।

যেমনঃ আনোয়ার হোসেন বনাম বাংলাদেশ। [ফৌজদারীতে কর্তৃত্বের নাম হবে “রাষ্ট্র”]

 

ধারা ৮০: নোটিশ।

সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়েরের ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত অফিসে নোটিশ দেওয়ার পর ২ মাস অতিবাহিত না হলে মোকদ্দমা দায়ের করা যাবে না।

(I) বিষয়বস্তু কোনো মন্ত্রনালয়ের অধীন হলে সংশ্লিষ্ট সচীব এর বরাবরে।

(II) বিষয়বস্তু জেলা পর্যায়ে হলে DC এর বরাবরে।

(III) বিষয়বস্তু রেলওয়ের হলে GM (General Manager] এর বরাবরে।

নোটিশ না দিয়া কিংবা নোটিশ দেওয়ার পর ২ মাস অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে মোকদ্দমা দায়ের করা হলে ফলাফল হবে ২টি-

(১) মোকদ্দমা দায়েরের তারিখ হতে ২ মাসের মধ্যে সরকার দাবী মেনে নিলে বাদী ক্ষতিপূরণের দাবীতে আর মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবে না।

(২) আদালত সরকারকে লিখিত জবাব দেওয়ার সময় দিবেন ৩ মাস।

 

ধারা ৮১: গ্রেফতার ও ব্যক্তিগত হাজিরা হইতে অব্যাহতি।

সরকারের বিরুদ্ধে ডিক্রি জারি ছাড়া কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা যাবে না।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তার গুরুত্ব বিবেচনায় আদালত তাহাকে ব্যক্তিগত হাজিরা হতে অব্যাহতি দিতে পারেন।

 

ধারা ৮২: সরকারের বিরুদ্ধে ডিক্রি জারি।

আদালত সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ডিক্রি দিলে উক্ত ডিক্রিতে ডিক্রি কার্যকর করার সময় নির্ধারণ করে দিবেন। উক্ত সময়সীমার মধ্যে সরকার ডিক্রি কার্যকর না করলে আদালত সরকারকে একটি নোটিশ দিবেন। নোটিশ দেওয়ার তারিখ হতে ৩ মাস অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ডিক্রি জারি করা যাবে না।

 

ধারা ৮৩: বিদেশী শত্রু যখন মোকদ্দমা করিতে পারে।

বিদেশী শত্রু সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশের আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।

 

ধারা ৮৪: বিদেশী রাষ্ট্র যখন মকদ্দমা করিতে পারে।

যেকোনো বিদেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবে। তবে শর্ত এই যে, রাষ্ট্রটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত হতে হবে। রাষ্ট্রটি স্বীকৃতি প্রাপ্ত কিনা ইহা কোনো পক্ষকে প্রমাণ করতে হবে না। কারণ ইহা আদালতের Judicial Notice.

 

ধারা ৮৬এ: কূটনৈতিক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মোকদ্দমা। কোনো কূটনৈতিক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে নিম্নলিখিত ৩টি ক্ষেত্র ছাড়া কোনো মোকদ্দমা দায়ের করা যাবে না-

(I) মিশনের প্রয়োজন ব্যতীত নিজ নামে কোনো সম্পত্তি ক্রয় করলে।

(II) উইল মূলে বা উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো সম্পত্তি লাভ করলে।

(III) ব্যক্তিগত ভাবে কোনো ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করলে।

প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ

কূটনৈতিক প্রতিনিধি (Diplomatic Agent/Envoy):

দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনপূর্বক মিশন (অফিস) স্থাপন করে যে প্রতিনিধি বিনিময় করা হয় তাকে বলা হয় কূটনৈতিক প্রতিনিধি।

 

ধারা ৮৮:      [৩৫ আদেশ]

ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা যখন দায়ের করা যাবে। (স্বার্থবিহীন মোকদ্দমা)

ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা (Interpleader Suit): দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যদি অপর কোনো ব্যক্তির নিকট কোনো অর্থ বা সম্পত্তি দাবী করে এবং অপর সেই ব্যক্তির উক্ত অর্থ বা সম্পত্তিতে খরচের দাবী ছাড়া যদি আর কোনো দাবী না থাকে ও প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিতে চায় কিন্তু প্রকৃত মালিক নির্ণয় করা সম্ভব না হয় সেইক্ষেত্রে দাবীদার সকলকে বিবাদী করে যে মোকদ্দমা দায়ের করা হয় তাকেই বলে ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা।

ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমায় বিরোধীয় বিষয়বস্তুতে বাদীর কোনো স্বার্থ থাকে না। মূল বিরোধটি থাকে বিবাদীদের মধ্যে।

ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমায় বাদীর সংখ্যা হবে ১ বা একাধিক, কমপক্ষে ১ জন। বিবাদীর সংখ্যা হবে ২ বা ততোধিক, কমপক্ষে ২ জন।

 

ধারা ৮৯ক – ৮৯ঙ:

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা Altenative Dispute Resolution (ADR).

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা Altenative Dispute Resolution (ADR): প্রথাগত বা প্রচলিত বিচার ব্যাবস্থার পরিবর্তে স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে আদালতের বাহিরে কিংবা আদালতের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ADR.

ADR সাধারণত ৩ প্রকার-

(১) Mediation (মধ্যস্থতা)

(২) Arbitration (সালিশি)

(৩) Negotiation (সমঝোতা)

কিন্তু দেওয়ানী কার্যবিধিতে ADR বলতে ২টি বিষয়কে বুঝায়-

(১) Mediation (মধ্যস্থতা)

(২) Arbitration (সালিশি)

দেওয়ানী কার্যবিধিতে ADR এর বিধান সর্বপ্রথম সংযোজিত হয় ২০০৩ সালে, পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে সংশোধিত হয়।

 

ধারা ৮৯ক: ধারা ৮৯ক: মধ্যস্থতা (Mediation).

অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর অধীন মামলা ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে লিখিত জবাব পেশের পর উভয় পক্ষ আদালতে হাজির হলে আদালত পরবর্তী শুনানী বন্ধ রেখে মোকদ্দমাটির বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতা করতে পারেন অথবা ADR এর উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত লোকদের নিকট প্রেরণ করবেন-

(ক) পক্ষগণ এর নিকট

(খ) পক্ষগণের আইনজীবীগণ এর নিকট বা

(গ) জেলাজজ কর্তৃক প্রনয়ণকৃত মধ্যস্থতাকারীর তালিকা (Panel) হতে কাহারো নিকট।

 

[ যেদিন ADR এর জন্য প্রেরিত হলো সেইদিন হতে ১০ দিনের মধ্যে পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবীগণ মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করবেন। ব্যর্থ হলে আদালত নিজে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করবেন।

 

মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে আদালত স্বতঃ প্রবৃত্ত হয়ে বা পক্ষগণের আবেদনক্রমে সময়সীমা ৩০ দিন বর্ধিত করতে পারবেন।

 

বিরোধের মধ্যস্থতা হয়ে গেলে চুক্তিনামার মত একটি রিপোর্ট প্রনয়ণ করে উহাতে পক্ষগণ স্বাক্ষর করবেন অথবা বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ দিবেন এবং সাক্ষী হিসাবে পক্ষগণের আইনজীবীগণ ও মধ্যস্থতাকারী স্বাক্ষর করবেন। অতঃপর চুক্তিনামাটি আদালতে প্রেরণ করবেন।

 

আদালত চুক্তিনামাটি পাওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে ২৩ আদেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ডিক্রি বা আদেশ দিবেন। মধ্যস্থতাকারীর সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে।

 

মধ্যস্থতাকারীর যোগ্যতাঃ

(১) যেকোনো আইনজীবী

(২) অবসরপ্রাপ্ত জজ বা বিচারক

(৩) বিরোধ মীমাংসায় প্রশিক্ষিত কোনো ব্যক্তি।

মধ্যস্থতাকারীর অযোগ্যতাঃ

(১) পঅক্ষগণের নিযুক্ত আইনজীবীগণ

(২) সরকারি চাকুরিজীবী

ADR এর মাধ্যমে নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ে কোনো আপীল বা রিভিশন করা যাবে না। ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার রিভিউ (Review).

অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর মোকদ্দমার ক্ষেত্রে ADR এর বিধান প্রযোজ্য হবে না। ]

 

[ প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ

প্রত্যেক জেলার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা জজ জেলা বার এসোসিয়েশনের (Bar Association) সভাপতির সাথে পরামর্শ করে উক্ত জেলার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের (Mediator) একটি তালিকা প্রনয়ণ করবেন। সময় সময় তাহা হালনাগাদ করবেন। তালিকায় মধ্যস্থতাকারীদের সংখ্যা ষাট (৬০) জন নির্ধারিত থাকবে। ]

 

ধারা ৮৯খ: সালিশ (Arbitration).

মোকদ্দমার পক্ষগণ তাদের বিরোধটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সালিশের নিকট পাঠানোর উদ্দেশ্যে মোকদ্দমাটি তুলে নেবার জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করবেন। এই ক্ষেত্রে সালিশী আইন ২০০১ প্রযোজ্য হবে।

 

ধারা ৮৯গ: আপীলের মধ্যস্থতা।

আপীলটি যদি দেওয়ানী কার্যবিধির ৪১ আদেশের অধীন ও মূল মোকদ্দমার পক্ষগণ বা তাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে হয় তাহলে আপীলের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা হবে।

 

ধারা ৯১: গণ উতপাত (Public Nuisance).

গণ উৎপাতের ক্ষেত্রে Attorney General বা তাহার সম্মতি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞা, ঘোষণা বা অন্য কোনো প্রতিকারের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন।

[প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ]

উতপাত (Nuisance): ভোগ, দখল ও স্বাচ্ছন্দের অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত। সঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তির উক্ত অধিকারে হস্তক্ষেপ করাকে বলা হয় উৎপাত।

উৎপাত ২ প্রকার: (ক) গণ উৎপাত (খ) ব্যক্তিগত উৎপাত

 

ধারা ৯২: জনসাধারণের দাতব্য প্রতিষ্ঠান।

জনসাধারণের দাতব্য প্রতিষ্ঠান এর কোনো বিষয় সম্পর্কে আদালতের আদেশ প্রয়োজন হলে মোকদ্দমা করবেন Attorney General বা ট্রাস্টের সাথে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুই বা ততোধিক ব্যক্তি Attorney General এর সম্মতি সাপেক্ষে জেলার প্রধান দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে মোকদ্দমা হতে পারে-

(১) ট্রাস্টির অপসারণ

(২) নতুন ট্রাস্টি নিয়োগ

(৩) ট্রাস্টের হিসাব পরীক্ষা

(৪) ট্রাস্টের তহবিল বিনিয়োগ

(৫) ট্রাস্ট সম্পত্তির যেকোনো প্রকার হস্তান্তর (বিক্রয়, লীজ ইত্যাদি)

 

ধারা ৯৩: Attorney General এর ক্ষমতা প্রয়োগ।

৯১ ও ৯২ ধারা মোতাবেক Attorney General এর ক্ষমতা, সরকারের পূর্ব অনুমতি নিয়ে কালেক্টর (Collector/DC/DM) বা সরকার কর্তৃক এই উদ্দেশ্যে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তা প্রয়োগ করতে পারবেন।

 

ধারা ৯৪: অতিরিক্ত কার্যক্রম (Supplemental Proceedings).

ন্যায়বিচারের স্বার্থে আদালত নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন-

(১) বিবাদীর বিরুদ্ধে গ্রাফতারী পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। অথবা হাজিরের জন্য জামানত তলব করতে পারবেন। জামানত দিতে ব্যর্থ হলে দেওয়ানী কয়েদে আটকের আদেশ দিতে পারবেন।

(২) বিবাদীর কোনো সম্পত্তি আদালতে জমা দিবার আদেশ দিতে পারবেন কিংবা জামানত তলব করতে পারবেন। ব্যর্থ হলে সম্পত্তি ক্রোক এর আদেশ দিতে পারবেন।

(৩) বিবাদীর বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিতে পারবেন। ভঙ্গ করলে সম্পত্তি ক্রোক ও দেওয়ানী কয়েদে আটকের আদেশ দিতে পারবেন

(৪) সিসিভার (Receiver) নিয়োগ করতে পারবেন। রিসিভারের সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় দ্বারা তাহাকে দ্বায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে পারবেন।

(৫) আদালত সঙ্গত মনে করলে বা ন্যায্য মনে করলে অন্তর্বর্তীকালীন অন্য কোনো আদেশ দিতে পারবেন।

[প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ]

অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ (Interlocutory Order): মোকদ্দমার শুরু হতে রায় না হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশকে বলে হয় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ।

 

ধারা ৯৫: অপর্যাপ্ত কারণে গ্রেফতার, ক্রোক ও নিষেধাজ্ঞার আদেশ লাভ করলে ক্ষতিপুরণ।

অপর্যাপ্ত কারণে গ্রেফতার, ক্রোক ও নিষেধাজ্ঞার আদেশ লাভ করলে এবং মোকদ্দমায় বাদী পরাজিত হলে বিবাদীর আবেদনক্রমে আদালত বাদীকে নির্দেশ দিবেন বিবাদীকে অনধিক ১০,০০০ টাকা ক্ষতিপুরণ হিসাবে প্রদান করার জন্য।

 

ধারা ৯৬:   মূল ডিক্রী হতে আপীল।     [৪১ আদেশ ১-৬ বিধি]

(১) মূল ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।     [ধারা ২(২) ]

(২) এক তরফা ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে। [আদেশ ৯(৬) ]

(৩) সোলেনামা ডিক্রির (Compromised Diecree) বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না।

[আদেশ ২৩(৩)]

 

[প্রাসঙ্গিক আলোচনা:]

আপীল (Appeal): নিম্ন আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উক্ত রায় বাতিল বা সংশোধনের জন্য আপীল এখতিয়ার সম্পন্ন উচ্চ আদালতে আবেদন করাকেই আপীল বলা হয়।

 

ধারা ৯৭: প্রাথমিক ডিক্রী হতে আপীল দায়ের না করলে চূড়ান্ত ডিক্রী হতে আপীল।

প্রাথমিক ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল দায়ের না করলে পরবর্তীতে চুড়ান্ত ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীলের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ডিক্রির ন্যায্যতা অস্বীকার করা যাবে না।

 

ধারা ৯৮:                      [CrPC 429]

দুই বা ততোধিক বিচারক কর্তৃক শ্রুত আপীলের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত।

দুই বা ততোধিক বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ যদি কোনো আপীল শুনানী করে সেইক্ষেত্রে সকল বিচারকের কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের সিদ্ধান্তই হবে আপীলের সিদ্ধান্ত।

সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তই হয় নাই বলে গণ্য হবে এবং মূল আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

বিচারকগণ সমভাবে বিভক্ত হলে বিষয়টি একই আদালতের অপর এক বা একাধিক বিচারকের নিকট প্রেরণ করতে হবে। পরবর্তী বিচারক ও পূর্ববর্তী বিচারকগণ মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের সিদ্ধান্তই হবে আপীলের সিদ্ধান্ত।

 

ধারা ৯৯: গুনাগুন বা এখতিয়ার খর্ব না করিলে ভ্রান্তি বা অনিয়মের জন্য ডিক্রি পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না।

পক্ষের অপসংযোগ বা কারণের অপসংযোগ বা কোনো ভ্রান্তি বা কোনো অনিয়মের কারণে আদালতের গুনাগুণ বা এখতিয়ার খর্ব না করলে কোনো ডিক্রি পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

01711-068609 / 01540-105088

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *