মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টন
একজন সচেতন মানুষ হিসাবে নিজের ধর্মীয় সম্পত্তি বন্টন আইন জানা উচিৎ। সুতরাং একজন মুসলিম হিসাবে মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টন পদ্ধতি জানা থাকা উচিৎ। মুসলিম আইনে সম্পত্তি বন্টন সম্পর্কে জানতে হলে ধারাবাহিকভাবে নিচের বিষয়গুলো জানতে হবে-
(১) মুসলিম আইনের উৎস।
(২) মুসলিম আইন ও সংবিধিবদ্ধ আইন।
(৩) মুসলিম আইন ও সংবিধিবদ্ধ আইনে সম্পত্তি বন্টন।
(১) মুসলিম বা ইসলামি আইনের উৎস-
মুসলিম আইন বা ইসলামি আইনের উৎস হলো মূলত চারটি। যথা-
১। কুরআন,
২। হাদিস,
৩। ইজমা ও
৪। কিয়াস।
১। কুরআন- ইসলামি আইনের ১ম উৎস হলো কুরআন। ইহা সরাসরি আল্লাহ তায়ালার বাণী।
২। হাদিস- ইসলামি আইনের ২য় উৎস হলো হাদিস। ইহা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বাণী বা সম্মতি।
৩। ইজমা- ইসলামি আইনের ৪র্থ উৎস হলো ইজমা। কুরআন ও হাদিসের আলোকে যেসব বিষয়ে ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন।
৪। কিয়াস- ইসলামি আইনের ৪র্থ উৎস হলো কিয়াস। কুরআন, হাদিস ও ইজমার পর কয়াসের অবস্থান। এই তিনটি উৎসে কোন বিষয় না পেলে সেই বিষয়ে অনুমান করে যে মাসয়ালা বা বিধান নির্ণয় করা হয় তাকে কিয়াস বলে।
(২) মুসলিম আইন ও সংবিধিবদ্ধ আইন-
মুসলিম আইন বা ইসলামি আইন-
আইনবিজ্ঞানী কুলসন এর মতে, “মহান আল্লাহ তায়ালার ঐশী ইচ্ছার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রকাশই হল মুসলিম বা ইসলামী আইন”। সুতরাং মুসলিম আইন বা ইসলামি আইন মানে হলো ১। কুরআন, ২। হাদিস, ৩। ইজমা ও ৪। কিয়াস। ইহা কোন দেশের প্রণীত আইন নয়। দেশের মানুষ এই আইন পালনে বাধ্য নয়। তবে এটা সবাই পালন করতে পারে।
সংবিধিবদ্ধ আইন-
একটি দেশের সংসদ বা আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকে সংবিধিবদ্ধ আইন (Statutory Law) বলা হয়। দেশের মানুষ এই আইন পালনে বাধ্য। এবং ইহা লংঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সংবিধিবদ্ধ আইনসমূহ-
- Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974 (মুসলিম বিবাহ এবং তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪)
- The Muslim Family Laws Ordinance, 1961 (মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১)
- The Dissolution of Muslim Marriages Act, 1939 (মুসলিম বিবাহ বিলুপ্তি আইন, ১৯৩৯)
এই আইনগুলো বাংলাদেশে প্রচলিত আইন। ইহা মুসলিম আইনের উৎস সমূহকে অনুসরণ করেই প্রণয়ন করা হয়েছে।
(৩) মুসলিম আইন ও সংবিধিবদ্ধ আইনে সম্পত্তি বন্টন-
উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করা হয়। হানাফি আইনে উত্তরাধিকারী (Heirs) তিন প্রকার। যথা-
১. আংশিদার (Sharer)
২. অবষিষ্টভোগী (Residuaries) ও
৩. দূরবর্তী জ্ঞাতিগণ (Distant kindred)
১. আংশিদার (Sharer)-
পবিত্র কোরআনের সূরা নিসায় ১২ জনের অংশ (Share) নির্ধারিত করে দিয়েছে। এই ১২ জনকে শেয়ারার বলা হয়। এই ১২ জন হলেন–
১. স্বামী (Husband)
২. স্ত্রী (Wife)
৩. বাবা (Father)
৪. মা (Mother)
৫. কন্যা (Daughter)
৬. পুত্রের কন্যা (Son’s daughter)
৭. দাদা (Grand Father)
৮. দাদি (Grand Mother)
৯. আপন বোন (Sister)
১০. বৈপিত্রেয় বোন (Uterine Sister)
১১. বৈমাত্রেয় বোন (Consanguine Sister)
১২. বৈমাত্রেয় ভাই (Consanguine Brother)
এই ১২ জনের মধ্যে ৬ জন হলো প্রাথমিক উত্তরাধিকারী বা Primary Heirs. এই ৬ জন কখনও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন না। এরা হলেন-
(১) স্বামী, (২) স্ত্রী, (৩) বাবা, (৪) মা, (৫) কন্যা এবং (৬) পুত্র।
এদের অংশ-
১. স্বামী (Husband)-
১/২ অংশ পাবে কোন সন্তান না থাকলে।
১/৪ অংশ পাবে কোন সন্তান থাকলে।
শুধু নিজের ঔরশজাত বা গর্ভের সন্তান নয় বরং স্বামী বা স্ত্রীর সকল সন্তানকে বুঝাবে।
২. স্ত্রী (Wife)-
১/৪ অংশ পাবে কোন সন্তান না থাকলে।
১/৮ অংশ পাবে কোন সন্তান থাকলে।
শুধু নিজের ঔরশজাত বা গর্ভের সন্তান নয় বরং স্বামী বা স্ত্রীর সকল সন্তানকে বুঝাবে।
৩. পিতা (Father)-
১/৬ অংশ পাবে পুত্র বা পুত্রের পুত্র থাকলে
১/৬+অবশিষ্টাংশভোগী হবে যদি মৃত ব্যক্তির কন্যা বা পুত্রের কন্যা থাকে কিন্তু কোন পুত্র বা পুত্রের পুত্র না থাকে।
অবশিষ্টাংশভোগী হবে যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে।
৪. মা (Mother)-
১/৬ অংশ পাবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকলে।
১/৩ পাবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে।
অবশিষ্টাংশের ১/৩ (1/3 of residue)
৫. কন্যা (Daughter)-
১/২ অংশ পাবে সে একমাত্র কন্যা হলে এবং কোন পুত্র না থাকলে।
২/৩ অংশ পাবে একাধিক কন্যা থাকলে এবং কোন পুত্র না থাকলে।
অবশিষ্টাংশভোগী হবে পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অংশ পাবে।
৬. পুত্র (Son)-
কন্যা থাকলে ২:১ অনুপাতে অংশ পাবে।
কন্যা না থাকলে অবশিষ্টাংশভোগী হিসাবে পাবে।
৭। দাদা
বাব না থাকলে বাবার মতো দাদা পাবে।
৮। দাদি/ নানি (Paternal true grandmother / Maternal true grandmother)
মায়ের অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির দাদি/ নানি সম্পত্তির অংশ পেয়ে থাকে।
৯. আপন বোন (Sister)
১০. বৈপিত্রেয় বোন (Uterine Sister)
১১. বৈমাত্রেয় বোন (Consanguine Sister)
১২. বৈমাত্রেয় ভাই (Consanguine Brother)
চলবে-