যেসকল কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না উহা রেফারেন্সেসহ বরণনা করা হলো-
দন্ডবিধি অনুযায়ী নিম্নলিখিত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না-
ধারা ৭৬: ভুল ধারণা বশত নিজেকে আইন বলে বাধ্য মনে করে কৃত কাজ। [পুলিশ ভুলে কাউকে গ্রেফতার করলে]
ধারা ৭৭: বিচার কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কাজ।
বিচার কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কোনো কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
এক্ষেত্রে ৪টি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে-
(ক) কাজটি বিচারক হিসাবে করেছে কিনা।
(খ) এখতিয়ারের মধ্যে কিনা।
(গ) সরল বিশ্বাসে করেছে কিনা।
(ঘ) অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছিল কিনা।
ধারা ৭৮: আদালতের রায় বা আদেশ অনুসারে সম্পাদিত কাজ।
ধারা ৭৯: ভুল ধারণাবশত নিজেকে আইন সমর্থিত মনে সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
[খুন করেছে মনে করে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশে দিলে]
ধারা ৮০: আইনানুগ কার্য সম্পাদনকালে দুর্ঘটনা। আইনানুগ কোনো কার্য যথাযথ সতর্কতা ও যত্নসহকারে সম্পাদনকালে কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ও অবগতি ছাড়া দুর্ঘটনা অনুষ্ঠিত হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
[কুঠার (Hatchet) দিয়ে গাছ কাটার সময় তা ছুটে গিয়ে কেউ আঘাত প্রাপ্ত হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।]
ধারা ৮১: মারাত্মক ক্ষতি রোধ কল্পে অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছাড়া কৃত সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কাজ।
মারাত্মক ক্ষতি রোধ কল্পে অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছাড়া কৃত সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কাজ সরল বিশ্বাসে করা হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ধারা ৮২: ৯ বছরের কম বয়সের শিশুর দ্বারা কৃত কোনো কাজই অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ধারা ৮৩: ৯ বছরের বেশি কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সের শিশুটি অপরিণত বোধ শক্তি সম্পন্ন/ হাবা/ জড়বুদ্ধি সম্পন্ন/ প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে অক্ষম হলে তার দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ধারা ৮৪: পাগল/উম্মাদ/ অপ্রকৃতিস্থ (Unsound) ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজ।
কোনো কাজ অন্যায় বা আইনবিরুদ্ধ তা বুঝতে অসমর্থ কোনো পাগল/উম্মাদ/ অপ্রকৃতিস্থ (Unsound) ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ধারা ৮৫: অনিচ্ছাকৃতভাবে নেশাগ্রস্থ হবার ফলে বিচার বিবেচনা লোপ পেলে তার দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ধারা ৮৭: মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটাতে পারে বলে না জেনে সম্মতিক্রমে সম্পাদিত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
[আনন্দ উপভোগের উদ্দেশ্যে পরস্পর সম্মত হয়ে অসি/তরবারি চালনা শুরু করার ফলে কোনো ক্ষতি হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না]
ধারা ৮৮: মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্য ব্যতীত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপকার করার উদ্দেশ্যে সম্মতিক্রমে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। [যেমন: চিকিতসকের কাজ]
ধারা ৮৯: ১২ বছরের নিচের বয়সের কোনো শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির মঙ্গলার্থে তাহার অভিভাবক কর্তৃক বা অভিভাবকের অনুমতিক্রমে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। [যেমন: বাবার অনুমতি নিয়ে চিকিতসকের কাজ]
ধারা ৯৩: সরল বিশ্বাসে কৃত যোগাযোগ অপরাধ হবে না।
[যেমন: সরল বিশ্বাসে কোনো ডাক্তার যদি কোনো রোগীকে বলে যে সে আর বাচবেনা তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না]
ধারা ৯৪: ভীতি প্রদর্শনের ফলে বাধ্য হয়ে কৃত কাজ।
ভীতি প্রদর্শনের ফলে বাধ্য হয়ে খুন এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
ধারা ৯৫: সামান্য ক্ষতিকারক কাজ অপরাধ হবে না। [যেমন: ২ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। কারণ তা খুবই মামলি ব্যাপার]
ধারা ৯৬: আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগজনিত কাজ অপরাধ নয়। আত্মরক্ষার্থে ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কৃত কাজ অপরাধ নয়।
ধারা ৯৭: শরীর ও সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অপরাধ নয়। নিজের দেহ, অন্যের দেহ, নিজের সম্পত্তি, অন্যের সম্পত্তি রক্ষায় ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অপরাধ না।
ধারা ৯৮: পাগলের কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা। সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যতটুকু আত্মরক্ষার অধিকার আছে পাগলের ক্ষেত্রেও যতটুকু আত্মরক্ষার অধিকার আছে।
ধারা ৯৯: আত্মরক্ষার অধিকারের সীমা/ বাধা নিষেধ/ যেসকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার নাই।
৫টি ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার নাই-
(ক) সরকারী কর্মচারির আইন বহির্ভুত কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা না থাকলে।
(খ) সরকারী কর্মচারির নির্দেশে আইন বহির্ভুত কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা না থাকলে।
(গ) সরকারী কর্মচারির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ থাকলে।
(ঘ) সরকারী কর্মচারির পরিচয় পাওয়া গেলে।
ধারা ১০০: দেহ রক্ষার জন্য মৃত্যু ঘটানোর অধিকার।
নিম্নলিখিত ৬ টি ক্ষেত্রে দেহের আত্মরক্ষায় আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যায়-
(১) নিহত হবার আশঙ্কা দেখা দিলে।
(২) গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা দেখা দিলে।
(৩) ধর্ষণের আশঙ্কা দেখা দিলে।
(৪) কাম লালসার আশঙ্কা দেখা দিলে।
(৫) অপহরণের উদ্দেশ্যে আঘাত করলে।
(৬) অবৈধ আটকের সম্ভাবনা দেখা দিলে।
ধারা ১০১: যে সকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।
১০০ ধারায় বর্ণিত ৬ টি ক্ষেত্র ছাড়া আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।
ধারা ১০২: আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের আরম্ভ এবং স্থিতিকাল।
আক্রমণকারী কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা, আতংক বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃস্টি হবার সাথে সাথে আত্মরক্ষার অধিকার আরম্ভ হবে আর আতংক কেটে গেলেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের স্থিতিকাল শেষ হয়ে যাবে।
[সংক্ষেপে বলতে গেলে আতংক যতক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ]
ধারা ১০৩: সম্পত্তি রক্ষার জন্য মৃত্যু ঘটানোর অধিকার।
নিম্নলিখিত ৪ টি ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষায় আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যায়-
(১) দস্যুতাকারী
(২) রাতে ঘর ভেঙ্গে প্রবেশকারী
(৩) অগ্নি সংযোগকারী
(৪) চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতে আশংকা থাকলে।
ধারা ১০৪: যে সকল ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষায় মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।
১০৩ ধারায় বর্ণিত ৪ টি ক্ষেত্র ছাড়া সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না
ধারা ১০৫: সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের আরম্ভ এবং স্থিতিকাল।
আক্রমণকারী কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা, আতংক বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃস্টি হবার সাথে সাথে আত্মরক্ষার অধিকার আরম্ভ হবে আর আতংক কেটে গেলেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের স্থিতিকাল শেষ হয়ে যাবে।
[সংক্ষেপে বলতে গেলে আতংক যতক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ]
ধারা ১০৬: নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার।
নিরপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকলেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।
[দন্ডবিধির ৭৬ – ১০৬ ধারার সাধারণ ব্যতিক্রম যে দাবি করবে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তার অপরাধ উক্ত ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে – সাক্ষ্য আইন ধারা ১০৫]
সম্মতি নিয়ে কৃত অপরাধ-
ধারা ৯০: নিম্নলিখিতভাবে সম্মতি প্রদত্ত হলে সম্মতি বলে গন্য হবে না।
(ক) ভীতি বা ভ্রান্ত ধারণায় প্রদত্ত সম্মতি।
(খ) পাগলের সম্মতি।
(গ) ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশুর সম্মতি।
ধারা ৯১: যে কাজ স্বতন্ত্রভাবে অপরাধ সম্মতি দিলেও তা বর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে ৮৭, ৮৮, ৮৯ ধারার ব্যতিক্রমগুলো প্রযোজ্য হবে না। [যেমন: গর্ভপাত ঘটানোর কাজ সম্মতি দিলেও তা অপরাধ বলে গণ্য হবে]
Written by
Advocate Muhammad Mohiuddin (Shishir)
LLB, LLM, MBA
01711-068609 / 01540-105088