নাবালকের বৈধ অভিভাবক কে হবেন সেটি জানতে হলে আগে নাবালক সম্পর্কে জানতে হবে।
নাবালক কে-
The Court of Wards Act, 1879 আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী-
নাবালক (Minor) বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যার বয়স আঠারো (১৮) বছর পূর্ণ হয়নি।
সাবালকত্ব আইন, ১৮৭৫ (The Majority Act, 1875) এর ৩ ধারা এবং অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এর ৪(১) ধারা অনুযায়ী-
বাংলাদেশে বসবাসকৃত প্রতিটি নাবালকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তার ব্যক্তি বা সম্পত্তির অথবা উভয়ের অভিভাবক বা সম্পত্তির তত্ত্বাবধান (দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর তফসিল-১ এর আদেশ ৩২ এর অর্থ অনুসারে মামলার অভিভাবক ব্যতীত) কোনও বিচার আদালত কর্তৃক নিযুক্ত বা ঘোষিত হয়েছে তার বয়স ২১ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে তার প্রাপ্তবয়স্কতা অর্জন করেছে বলে গণ্য হবে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই প্রাপ্তবয়স্কতা অর্জন করেছে বলে গণ্য হবে।
নাবালকের অভিভাবক-
নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির অথবা উভয়ের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ব্যক্তিই হলো অভিভাবক। যে নাবালকের অভিভাবক (Guardian) আছে তাকে বলা হয় প্রতিপাল্য (ward)।
অভিভাবক মূলত দুই প্রকার। যথা-
(১) স্বাভাবিক অভিভাবক-
যে ব্যক্তি নাবালকের স্বার্থে আদালতের অনুমতি ছাড়াই নাবাকের সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারেন।
(২) আইনগত অভিভাবক-
যে ব্যক্তি নাবালকের স্বার্থে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে নাবাকের সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারেন।
নাবালকের সাভাবিক অভিভাবক-
নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির সাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক নাবালকের পিতা।
নাবালকের সম্পত্তি নাবালকের মৌলিক অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি) পূরণ করার জন্য সম্পত্তি বিক্রয় করার দরকার হলে নাবালকের পিতা স্বাভাবিক অভিভাবক হিসাবে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবেন। এইক্ষেত্রে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নাই। [𝟏𝟐 𝐃𝐋𝐑 𝟒𝟑𝟑]
নাবালকের আইনগত অভিভাবক-
নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির আইনগত অভিভাবক তার মাতা কিংবা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অন্য কোন ব্যক্তি।
নাবালকের পিতা জীবিত না থাকলে নাবালকের মাতা অথবা অন্য কোন ব্যক্তি নাবালকের স্বার্থে বা সার্বিক কল্যাণে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সম্পত্তি বিক্রয় করিতে পারিবেন।
[𝟏𝟒 𝐃𝐋𝐑 𝟓𝟎𝟔]
কে নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবেন-
অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এর ৮ ধারা অনুযায়ী-
নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবেন। এই ব্যক্তিদের আবেদন ব্যতীত আদালত কোন আদেশ দিতে পারবেন না।
(১) নাবালকের অভিভাবক হতে ইচ্ছুক বা দাবিকারী যেকোন ব্যক্তি।
(২) নাবালকের কোন আত্মীয় বা বন্ধু।
(৩) নাবালকের বাসস্থান বা সম্পত্তি আছে ঐ জেলার কালেক্টর।
নাবালকের অভিভাবক নিয়োগের আবেদন কোন আদালতে-
পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ এর ৫ ধারা এবং অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ এর ৯ ধারা অনুযায়ী- ৫ ধরণের মামলা পারিবারিক আদালতে দায়ের করা যাবে। যথা-
(ক) বিবাহ বিচ্ছেদ;
(খ) দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার;
(গ) দেনমোহর;
(ঘ) ভরণপোষণ; এবং
(ঙ) শিশু সন্তানদের অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধান।
পারিবারিক আদালত-
পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ এর ৪(২) ধারা মোতাবেক সহকারী জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার ১ (এক) জন বিচারক সমন্বয়ে পারিবারিক আদালত গঠিত হবে।
সুতরাং এখতিয়ার সম্পন্ন জেলা আদালতে অর্থাৎ স্থানীয় ও আর্থিক এখতিয়ার সম্পন্ন সহকারী জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে অভিভাবক নিয়োগের আবেদন করতে হবে।
মা পুনরায় বিয়ে করলে নাবালকের জিম্মাদারি থাকবে কিনা-
মা পুনরায় বিয়ে করলেও নাবালক সন্তানের জিম্মাদারি হারায় না। মায়ের পুনর্বিবাহের পরও সে নাবালককে জিম্মায় রাখতে পারেন।
বাবা অভিভাবক হিসেবে অযোগ্য হন কখন-
অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০-এর ১৯ ধারা অনুযায়ী বাবা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে নাবালকের অভিভাবক হিসেবে অযোগ্য হতে পারেন-
(১) যদি তিনি চারিত্রিকভাবে অসৎ হন,
(২) মাদকাসক্ত হন,
(৩) অধার্মিক হন,
(৪) শিশুদের প্রতি অমানবিক হন,
(৫) দুস্থ অথবা নিঃস্ব হন,
(৬) স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে এ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি থাকে,
(৭) বাবা পুনরায় বিয়ে করেন,
(৮) সন্তানের ভরণপোষণ না দেন।
মা কখন সন্তানের জিম্মাদার হারান-
মা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে নাবালকের অভিভাবক হিসেবে অযোগ্য হতে পারেন-
(১) সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে,
(২) দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে,
(৩) নীতিহীন জীবন যাপন করলে,
(৪) এমন কোন ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে হলে, যে ব্যক্তি শিশুটির নিষিদ্ধ স্তরের।
(৫) বিয়ে বলবত থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে থাকলে,
(৬) ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করলে,
(৭) মায়ের জিম্মায় থাকা অবস্থায় যদি সন্তানের বাবাকে তার সন্তানকে দেখতে না দেন।
নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হওয়ার অধিকারী কারা:
পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ (অগ্রগণ্যতার ক্রম অনুযায়ী) নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হওয়ার অধিকারী।
(১) পিতা,
(২) পিতা কর্তৃক নিয়োগকৃত ব্যক্তি;
(৩) পিতার পিতা অর্থাৎ দাদা,
(৪) দাদা কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
এসব ব্যক্তিগণের কেউ না থাকলে, আদালত কর্তৃক নিয়োগকৃত আইনগত অভিভাবকই নাবালকের সম্পত্তির অভিভাবক হবেন।
নাবালকের মাতা সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন কিনা-
মাতা কেবলমাত্র নাবালকের একজন তত্ত্বাবধায়ক। তিনি নাবালক সন্তানের কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন না। সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হলে তাকে অবশ্যই আদালত কর্তৃক সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্ত হতে হবে।
মা কোন ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অভিভাবক হন-
মা শুধুমাত্র অবৈধ সন্তানের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অভিভাবক। কিন্তু তার বাবার সন্ধান পাওয়া বা জানা গেলে, বৈধ অভিভাবক হিসেবে বাবাই অগ্রাধিকার পাবে।
হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে নাবালকের অভিভাবক-
হিন্দু আইনে নাবালকের প্রকৃত ও স্বাভাবিক অভিভাবক বাবা। বাবা জীবিত অবস্থায় উইল করে অন্য কাউকে নাবালক সন্তানের অভিভাবক নিযুক্ত করে গেলে মা অপেক্ষা সে ব্যক্তির দাবি অগ্রগণ্য হবে।
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে হিন্দু আইন প্রযোজ্য।
খ্রিষ্ট ধর্মে নাবালকের অভিভাবক-
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও বাবাই স্বাভাবিক অভিভাবক।
মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির অভিভাবক-
মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮ এর ২১ (১) ধারা অনুযায়ী মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হবে তার পিতা বা মাতা। পিতা বা মাতা কেহ না থাকলে সেক্ষেত্রে আদালত অভিভাবক নির্ধারণ করে দিবেন। [২২(৩) ধারা]
যেকোন আইনগত উপদেশ ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করুন-
যোগাযোগ-
আইনবিদ এসোসিয়েটস
অন-স্টপ লিগ্যাল সলিউশন
সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)
১৬, কোইলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা
অথবা
রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইল- 01711068609 / 01540105088
ওয়েবসাইট- www.ainbid.com