ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন

বৈধভাবে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি-

 

আপনি যদি বাংলাদেশে একটি ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন, তাহলে আপনার একটি ছোট বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। আপনি যদি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তা হন তবে এটি আপনার জন্য একটি মজাদার, উত্তেজনাপূর্ণ এবং লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। এছাড়াও, এই ব্যবসা থেকে আয়ের সাথে ভ্রমণের সুবিধাগুলি উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।

 

এছাড়াও, আপনি আপনার প্রধান ব্যবসার পাশাপাশি পরিপূরক হিসাবে ট্যুর প্যাকেজ, হোটেলে থাকার ব্যবস্থা, গাড়ি ভাড়া, ইত্যাদির ব্যবসা করতে পারবেন। ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা আপনি অল্প খরচেই শুরু করতে পারবেন।

 

বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করার পদ্ধতি।

 

বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা একটি বৃহৎ শিল্প। সারা দেশে অনেক ট্রাভেল এজেন্ট আছে; এমনকি গ্রাম এলাকায়ও এই ব্যবসা আপনি খুঁজে পাবেন। ইহাকে দেশে প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট এর সরবরাহ ব্যবস্থার অগ্রগতির ফলাফল বলা যায়।

 

এই সেক্টরে অনেক এজেন্সির উপস্থিতির কারণে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সকল বৈধ ও আইনগত অনুমতির কাগজপত্র নিয়ে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করতে হবে।

 

বর্তমানে অন লাইন ট্রাভেল এজেন্সিগূলো সমস্ত জটিলতা দূর করে টিকিট কেনা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যের প্যাকেজ বাছাইয়ের সুযোগ করে গ্রাহকদের জন্য ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলেছে। এর কারণে অফলাইন ট্রাভেল এজেন্ট এবং তাদের ব্যবসার গতি কমে গেছে।

 

বাংলাদেশে একটি ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করার সহজ পদক্ষেপ-

আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনি কি একটি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি খুলছেন নাকি একটি প্রচলিত অফলাইন এজেন্সি সেট আপ করছেন। মনে রাখবেন, আপনি যখন ব্যবসায় থাকবেন, তখন আপনার প্রতিযোগী হিসাবে অনেক নতুন এবং প্রতিষ্ঠিত অনুরূপ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

 

যেহেতু লোকেরা সাধারণত পুরাতন এবং নামকরা কোম্পানীগুলোকে পছন্দ করে, আপনার সেগুলিও নোট করা উচিত। যদিও ট্রাভেল মার্কেট অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিতে সয়লাব হয়েছে, তবুও বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

 

এখন, একটি ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করার কিছু সহজ এবং মৌলিক পদক্ষেপ জেনে নিন।

 

ব্যবসা সেবার ধরন ঠিক করা।

 

প্রথমে আপনার ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা সেবার ধরন ঠিক করুন। কারণ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যথা-

১। কোনো এজেন্সি শুধুমাত্র বিমানের টিকেট বিক্রি করে।

২। কোনো এজেন্সি বিভিন্ন ভ্রমণ বা ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে কাজ করে।

৩। কোনো এজেন্সি হোটেল বুকিং নিয়ে কাজ করে।

৪। কোনো এজেন্সি নিজেরাই বিভিন্ন ট্যুর নিয়ে কাজ করে।

 

সুতরাং একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্দিষ্ট ধরন ঠিক করে ব্যবসা শুরু করা উচিৎ।

 

আপনি ছোট পরিসরে শুরু করতে চাইলে শুধুমাত্র টিকেট বুকিং দিয়েই শুরু করতে পারেন। এইক্ষেত্রে যেসব স্থানের টিকেট পাওয়া কষ্টসাধ্য অথবা কিছু কিছু সময়ে টিকেট পাওয় দুষ্কর হয়ে যায়, সেই সময় এজেন্সি থেকে সেসব টিকেট সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারেন।

 

আর একটু বড় পরিসরে শুরু করতে চাইলে নিজেরাই বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ এরেঞ্জ করতে পারেন। এইক্ষেত্রে টিকেট বুকিং, হোটেল ভাড়া নেয়া, খাবার দাবার ও প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ করা সহ সকল সার্ভিস একত্রে ট্যুর প্লান করতে হয়। প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট গাইড ও সরবরাহ করা যেতে পারে। পুরো প্যাকেজের একটি মূল্য নির্ধারণ করে প্যাকেজ সেল করতে হয়। অনেক গ্রাহকরা প্যাকেজ আকারেই নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।

 

তবে এই ধরণের আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের পছন্দ অপছন্দের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভাল এবং নিরাপদ সার্ভিস পেলে ঐ ক্রেতারাই আবার আবার সেবা নিতে আগ্রহী হবেন এবং তারাই আপনার মার্কেটিং করবেন।

 

বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে জ্ঞান রাখা।

ট্রাভেল মানেই ভ্রমণ। তাই ট্রাভেল এজেন্সী ব্যবসা শুরু করতে চাইলে বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। তাই বিভিন্ন স্থানের তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে।

 

যাতায়াত ব্যবস্থা ও খরচ, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ও খরচ, জায়গা ঘুরে দেখার খরচ সহ বিভিন্ন খরচ জানতে হবে। পরিবহন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গার হোটেল মালিকদের সাথে কথা বলে খরচ জেনে রাখতে হবে।

 

লাইসেন্স।

যেকোন ব্যবসা শুরু করতে হলেই লাইসেন্স নেওয়া জরুরি। কারণ লাইসেন্স ছাড়া কোন ব্যবসা পরিচালনা করা আইনগতভাবে বৈধ নয়। প্রথমে কোম্পানির নাম ঠিক করতে হবে এরপর অফিস নিতে হবে তারপর লাইসেন্স তৈরি করতে হবে।

 

ট্রাভেল এজেন্সি লাইসেন্স করার ধাপ সূমহ-

 

প্রথম ধাপ- ট্রেড লাইসেন্স করা।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের যেকোন ব্যক্তি ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স প্রদানকারী অফিসসমূহ-

 

১। সিটি কর্পোরেশন- সিটি কর্পোরেশনের ভিতরে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।

২। ইউনিয়ন পরিষদ – সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।

 

দ্বিতীয় ধাপ- সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ।

১। প্রথমে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার পর সাধারণত ৩ –  ৪ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

 

২।  অনুমোদিত হলে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক একাউনেটে ৫০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা জমা দিতে হয়।

 

৩।  যথাযথভাবে পূরণকৃত নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন ফরমের সাথে নিম্নবর্ণিত কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।

(ক) আবেদন ফি বাবদ ৫,০০০/- টাকার ট্রেজারি চালানের মূলকপি;

(খ) হালনাগাদ ট্রেডলাইসেন্সের সত্যায়িত অনুলিপি;

(গ) টিআইএন সনদ এর সত্যায়িত অনুলিপি;

(ঘ) ব্যবসায়িক ঠিকানার সমর্থনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ/বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র ও ভাড়া পরিশোধের রশিদ;

(ঙ) কোম্পানি হইলে, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন, এবং সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশনের সত্যায়িত অনুলিপি; অথবা অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হলে অংশীদারী চুক্তিপত্র।

(চ) ৩০০ টাকার নন- জুডিশিয়াল স্টাম্পে হলফনামা;

(ছ) নূন্যতম ১০ (দশ) লক্ষ টাকা স্থিতির ব্যাংক সার্টিফিকেট; \

(জ) অফিসের ছবি;

(ঝ) রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ও ভ্যাট ৭,৫০০/- (সাত হাজার পাঁচ শত) টাকা জমার ট্রেজারি চালানের মূল কপি।

 

তৃতীয় ধাপ –  ব্যাংক একাউন্ট।

 

ট্রাভেল এজেন্সি খোলার পর সেই নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় লেনদেন সেই একাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

 

চতুর্থ ধাপ –  ওয়েবসাইট তৈরি।

 

যেহেতু ট্রাভেল এজেন্সী ব্যবসাটি বর্তমানে অনলাইনেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই ব্যবসা শুরু করার সাথে সাথে কোম্পানির একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলে নিতে হবে। ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য ওয়েবসাইট টি সুন্দর করে সাজাতে হবে। ওয়েবসাইটে ট্যুর এর সকল প্যাকেজ, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদর্শন করতে হবে।

 

পঞ্চম ধাপ –  অফিস নিতে হবে।

 

সহজে গমনযোগ্য এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একটি পরিপাটি এবং সুসজ্জিত অফিস নিতে হবে। ক্রেতাদেরকে উন্নত ও দক্ষ সেবা দিতে হবে।

 

এভাবেই আপনি আপনার একটি সুন্দর ব্যবসা পরিচালনা করে সফল হতে পারেন। আপনার সফলতা কামনা করছি।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

 

সিভিল এভিয়েশন লাইসেন্সের জন্য এবং আইনগত যেকোন সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন।

 

যোগাযোগ-

মহীউদ্দীন এন্ড এসোসিয়েটস

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা, অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।

মোবাইল- 01711-068609 / 01540-105088

Website- www.ainbid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *