অর্পিত সম্পত্তি (Vested Property)
অর্পিত সম্পত্তির পটভূমি–
ব্রিটিশরা প্রায় ২০০ বছর ভারতে রাজত্ব করার পর ধর্মীয় দ্বন্দের কারণে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। দুটি স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান নামে দেশ তৈরি করা হয়েছিল। বিভাজনের ঘটনাটি জেলা-ভিত্তিক অমুসলিম বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশের বিভাজনের সাথে জড়িত ছিল। বিভাজনের পর নাম হয়-
১। ভারত অধিরাজ্য (বর্তমানে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র)
২। পাকিস্তান অধিরাজ্য (বর্তমানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ)
এই বিভাজনটি ভারতীয় “স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭” -এ বর্ণিত হয়েছিল এবং এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ রাজ বা ক্রাউন শাসনের অবসান ঘটে। দুটি স্ব-শাসিত দেশ ভারত ও পাকিস্তান আইনত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে অস্তিত্ব লাভ করে।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হলে উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের দেশের অংশ দাবি করে। এই কাশ্মীরকে নিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধীতা চলতে থাকে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয় ১৯৪৭ সালে। আবার এই কাশ্মীর নিয়েই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় ১৯৬৫ সালে।
অর্পিত সম্পত্তি কি-
১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে কতিপয় লোক পাকিস্তান (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান) ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। তখন তাদের রেখে যাওয়া পরিত্যক্ত সম্পত্তি (Abandoned property) ই মূলত অর্পিত সম্পত্তি (Vested Property)।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি অধ্যাদেশ ১৯৬৯ জারি করার মাধ্যমে এই পরিত্যক্ত সম্পত্তি (Abandoned property) কে শত্রু সম্পত্তি (Enemy Property) হিসেবে ঘোষণা করে যা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে আইনের ধারাবাহিকতা প্রয়োগাদেশ ১৯৭১ (The Laws of Continuance Enforcement Order, 1971) অনুসারে শত্রু সম্পত্তি-সংক্রান্ত আইন বলবৎ রাখা হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পূর্ব পাকিস্তান এর নাম হয় বাংলাদেশ। তারপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এক আইনি ঘোষণার মাধ্যমে এই শত্রু সম্পত্তির নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেয় অর্পিত সম্পত্তি (Vested Property)।
অর্পিত সম্পত্তি (Vested property) এর কর্তৃপক্ষ-
১৯৭৬ সালে ১৯৭৪ সালের এ আইনটি সংশোধন করে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে সরকার বরাবর অর্পিত সকল শত্রু সম্পত্তির প্রশাসন, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, হস্তান্তর ইত্যাদি সরকার অথবা সরকার নির্দেশিত কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৭৭ সালের ২৩ মে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির (জমি ও ইমারত) ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন ও বিলিবন্টন সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশাবলি জারি করা হয়। চার খন্ডে বিভক্ত ৩৮টি অনুচ্ছেদের এ প্রজ্ঞাপনে ভূমি ও বাড়িঘর-সংক্রান্ত যাবতীয় সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ, দখল গ্রহণ, ইজারা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত আদেশ দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে মহকুমা প্রশাসকদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থিত অর্পিত সম্পত্তির অনুসন্ধান, দখল গ্রহণ, প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও ইজারা প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
অর্পিত সম্পত্তির প্রকার–
অর্পিত সম্পত্তির শ্রেণী নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তির তালিকাসহ ‘ক’ তফসিল এবং ‘খ’ তফসিল গেজেট প্রকাশ করে। উক্ত গেজেট মোতাবেক অর্পিত সম্পত্তি দুই ধরণের। যথা-
(১) ‘ক’ তফসিল ভুক্ত সম্পত্তি- যে সকল সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
(২) ‘খ’ তফসিল ভুক্ত সম্পত্তি- যে সকল সম্পত্তি কোন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
‘খ‘ তফসিল বিলুপ্ত–
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ২৮ক ধারার মাধ্যমে ‘খ’ তফসিল বিলুপ্ত করা হয়। ফলে ‘খ’ তফসিল ভুক্ত সম্পত্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়ে যায় এবং ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির বিষয়ে সকল মামলা মোকদ্দমা অকার্যকর হয়ে যায়।
কিন্তু ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি সম্পর্কিত কোন মামলা বিচারাধীন থাকিলে উহা চলমান থাকবে।
সুতরাং বর্তমানে শুধুমাত্র ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির অবমুক্তির জন্যই মামলা করতে হবে। ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির জন্য আর কোন মামলা করতে হবে নে
লেখক-
এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন
০১৭১১-০৬৮৬০৯
ভূমি বা ফ্লাট সংক্রান্ত যেকোন জটিলতায় আমাদের অভিজ্ঞ আইনজীবিদের সহায়তা নিতে পারেন।
যোগাযোগ–
মহীউদ্দীন এন্ড এসোসিয়েটস
সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন
ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা অথবা
বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
01540-105088 / 01711-068609
Ainbid.com