যৌতুক মামলার আরজি

যৌতুক মামলা কি এবং আরজি কিভাবে লিখতে হয়-

কোন পুরুষ বিয়ের পর তার স্ত্রীর কাছে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা দাবি করে থাকে। স্বামীর নানান চাপে অসহায় স্ত্রী নিজে না পারলে বাবার বাড়ি থেকে হলেও অনেক ক্ষেত্রে স্বামী টাকা এনে দেয়। ইহাই যৌতুক। যৌতুক দাবি করলে কিংবা যৌতুক নিলে ঐ স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায়। ইহাকে যৌতুক মামলা বলে। যৌতুক মামলা করার জন্য নিম্নলিখিতভাবে আরজি লিখতে হবে-

 

মোকামঃ বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা।  

(আমলী আদালত নং         )

সি.আর. মামলা নং  ১০২৬/২০২২

ধারাঃ ৩ ও ৪, যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮

মোসাঃ সুমি আক্তার (২৪),

স্বামীঃ মোঃ রাব্বী মিয়া

পিতাঃ কালাম হাওলাদার, মাতাঃ জুলেখা বেগম

বর্তমান ঠিকানাঃ বাদশা মাতুব্বরের বাড়ি, ইউনিয়ন পরিষদ রোড, পূর্ব নরসিংহপুর,  সোনামিয়া মার্কেটের পূর্ব দিকে, আশুলিয়া, ঢাকা ।

স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-দূর্গাবরদী, ডাকঘর-শাফিয়া শরীফ, থানা-রাজৈর, জিলা-মাদারীপুর।

জাতীয় পরিচয় পত্র নং –

মোবাইল নং –

——————–বাদীনী।

 

= বনাম =

 

১।  মোঃ মহসীন আলী (৫২),

পিতা- মৃত তহির উদ্দিন

মোবাইল নং-

 

২।  মোঃ রাব্বী মিয়া (২৫),

পিতাঃ মোঃ মহসীন আলী, মাতাঃ মোছাঃ রোজিনা বেগম

জাতীয় পরিচয় পত্র নং –

মোবাইল নং –

 

৩। রোজিনা বেগম (৪৮),

স্বামীঃ মোঃ মহসীন আলী

সর্ব সাং মান্নান ভূইয়ার বাড়ি, পূর্ব নরসিংহপুর, সোনামিয়া মার্কেট, ৬ নং ওয়ার্ড, থানাঃ আশুলিয়া, জেলাঃ ঢাকা ।

সর্ব স্থায়ী সাং গ্রাম- জগন্নাথপুর, ডাকঘর- রামপুর, থানা- কাহারোল,

জেলা- দিনাজপুর।

 

৪। মোঃ মমিনুল ইসলাম (৫৫),

পিতাঃ মৃত তহির উদ্দিন

সাং – জগন্নাথপুর, পোঃ রামপুর, থানা- কাহারুল, জেলাঃ দিনাজপুর ।

 

আরো অনেকে

——————আসামীগণ।

 

সাক্ষীসমূহঃ

 

১।  বাদিনী স্বয়ং।

 

২।  মোঃ ইসরাফিল,

পিতাঃ চান্দু হাওলাদার, মাতাঃ তাছলিমা বেগম

বর্তমান ঠিকানাঃ মতিন মিয়ার বাড়ি, নরসিংহপুর, সোনামিয়া মার্কেটের পূর্ব দিকে, থানাঃ আশুলিয়া, জেলাঃ ঢাকা ।

 

৩।  আলামিন

পিতাঃ শহিদ হাওলাদার,

বর্তমান ঠিকানাঃ মতিন মিয়ার বাড়ি, নরসিংহপুর, সোনামিয়া মার্কেটের পূর্ব দিকে, থানাঃ আশুলিয়া, জেলাঃ ঢাকা ।

স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-দূর্গাবরদী, ডাকঘর-শাফিয়া শরীফ, থানা-রাজৈর, জিলা-মাদারীপুর।

 

৪। মোঃ অমিত হাসান, পিতাঃ মৃত হবি খান,

ঠিকানাঃ আহমদ ভূইয়ার বাড়ি, কন্টকপাড়া মসজিদ গলি, কদমতুলী, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

৫। কালাম হাওলাদার, পিতা- মৃত ওহাব আলী,

সাং  গ্রাম-দূর্গাবরদী, ডাকঘর-শাফিয়া শরীফ, থানা-রাজৈর, জিলা-মাদারীপুর।

 

প্রয়োজনে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে আরো সাক্ষী হাজির করা হইবে।

 

ঘটনার তারিখ  সময়ঃ 

 

১ম ঘটনাঃ

তাং- ২০/১২/২০২১ ইং ও সময়ঃ সন্ধ্যা ০৭.৩০ ঘটিকায়।

 

ঘটনার স্থানঃ ১ নং আসামীর ভাড়া বাসায়।

(মান্নান ভূইয়ার বাড়ি, পূর্ব নরসিংহপুর, সোনামিয়া মার্কেট, ৬ নং ওয়ার্ড, থানাঃ আশুলিয়া, জেলাঃ ঢাকা)

 

২য় ঘটনাঃ

তাং- ২৮/১২/২০২১ ইং ও সময়ঃ রাত ০৮.০০ ঘটিকায়।

 

ঘটনার স্থানঃ ১ নং আসামীর ভাড়া বাসায়।

(মান্নান ভূইয়ার বাড়ি, পূর্ব নরসিংহপুর, সোনামিয়া মার্কেট, ৬ নং ওয়ার্ড, থানাঃ আশুলিয়া, জেলাঃ ঢাকা)

 

২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারার বিধান মতে বাদিনী পক্ষে প্রার্থনা।

 

অত্র মামলার বাদিনী পক্ষে বিনীত নিবেদন এই যে,

১। যেহেতু দরখাস্তকারী বাদীনি একজন সহজ, সরল, স্বামীভক্ত, শান্তিপ্রিয়, অসহায়, নিরীহ, আইনমান্যকারী ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মহিলা বটে। অপরপক্ষে আসামীগণ এক পাল্লাভুক্ত, দুশ্চরিত্র, পরধন লোভী, যৌতুক লোভী, দাঙ্গাবাজ, নারী নির্যাতনকারী ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বটে।

 

২।  যেহেতু দরখাস্তকারী বাদীনি এবং ২ নং আসামী একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার সুবাদে উভয়ের মধ্যে পরিচয় ঘটে। উক্ত পরিচয়ের সূত্র ধরেই উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্টতা বাড়ে। এই ঘনিষ্টতা এক পর্যায়ে ভালবাসায় রূপ নেয়। যার ফলশ্রুতিতে বিগত ১৭/১১/২০২১ ইং তারিখে অত্র দরখাস্তকারী বাদীনির সহিত ২ নং আসামীর সামাজিক ও পারিবারিকভাবে রেজিস্ট্রি কাবিননামার বালাম নং ১৯/বি, পৃষ্ঠা নং ৪৯, তাং ১৭/১১/২০২১ ইং মূলে নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ দ্বীন ইসলামের পরিচালনায় ইসলামী শরা-শরিয়ত মোতাবেক ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া মোঃ

 

মোস্তফা কর্তৃক বিবাহ পড়ানোর মাধ্যমে অত্র বিবাহ কার্যক্রম সুসম্পন্ন হয়। উক্ত বিবাহের সময় ১ নং আসামী (বাদীনির স্বশুর) যৌতুক দাবি করিলে বাদিনীর পিতা কালাম হাওলাদার বাদিনীর সংসার জীবনে সুখের কথা চিন্তা করিয়া নগদ ১,০০,০০০.০০ (এক লক্ষ) টাকা, স্বর্ণালংকার ও কাপড়-চোপড় ইত্যাদিসহ মোট ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকার উপঢৌকন প্রদান করেন।

 

৩। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর ২নং আসামীর (বাদীনির স্বামী) সহিত বাদিনী সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করিতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় অতি অল্পদিনের মধ্যেই বাদিনী গর্ভ ধারণ করেন। এইরূপ পরিস্থিতিতে ৪ নং আসামীর প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় ১, ২ ও ৩ নং আসামী বিগত ২৭/১১/২০২১ ইং তারিখে ২ নং আসামীর (বাদীনির স্বামী) ভাড়া বাসায় রাত আনুমানিক ০৭.০০ ঘটিকায় বাদিনীর নিকট হইতে ব্যবসায়িক প্রয়োজন প্রদর্শন করিয়া যৌতুক বাবদ ৮,০০,০০০.০০ (আট লক্ষ) টাকা দাবী করিয়া বাদিনীর উপর বিভিন্নভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন।

 

৪। বিগত ১৭/১২/২০২১ ইং তারিখে ২ নং আসামীর (বাদীনির স্বামী) ভাড়া বাসায় আনুমানিক সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় ১, ২, ৩ ও ৪ নং আসামী স্বশরীরে উপস্থিত থাকিয়া উক্ত ,০০,০০০.০০ (আট লক্ষ) টাকা যৌতুকের দাবি করেন। কিন্তু বাদীনি উহা দিতে অস্বীকার করিলে আসামীগণ অন্তস্বত্তা বাদিনীর উপর কিল, ঘুষি এবং লাঠি মারিয়া অমানবিকভাবে নির্যাতন করিতে থাকে। উল্লেখ্য, উক্তদিনের এহেনরূপ নির্যাতনের কারণে অত্র বাদিনীর গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হইয়া যায়। এইরূপে অমানবিকভাবে নির্যাতন করিয়া আসামীগণ বাদিনীর নিকট হইতে যৌতুকের টাকা প্রদানের স্বীকারোক্তি আদায় করেন। বাদীনি নিরুপায় হইয়া স্ট্যাম্পে অঙ্গিকার পত্র লিপিবদ্ধ করিলে উক্ত যৌতুকের টাকা প্রদান করিতে রাজি হন। পরবর্তীতে বিগত ২০/১২/২০২১ ইং তারিখে আসামীগণ ১০০.০০ (এক শত) টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গিকার পত্র লিপিবদ্ধ করেন যাহাতে ১ নং আসামী (বাদীনির স্বশুর) ও ৪ নং আসামী (বাদীনির চাচা স্বশুর) সাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষর করেন এবং ২ নং আসামী (বাদীনির স্বামী) প্রথম পক্ষ হিসাবে স্বাক্ষর করেন। উক্ত অঙ্গিকার পত্রের মাধ্যমে বাদীনি অতি কষ্টে নিজের চাকুরীর জমানো টাকা হইতে যৌতুক বাবদ ,০০,০০০.০০ (তিন লক্ষ) টাকা এবং বাবা মায়ের নিকট হইতে প্রাপ্ত ৪ (চার) ভরি ৮ (আট) আনা স্বর্ণালংকার ২ নং আসামীকে (বাদীনির স্বামী) প্রদান করেন যাহা ২ নং আসামী (বাদীনির স্বামী) স্বহস্তে গ্রহণ করিয়া তৎক্ষণাৎ উক্ত ৩,০০,০০০.০০ (তিন লক্ষ) টাকা  ১ নং আসামীকে (বাদীনির স্বশুর)  এবং উক্ত স্বর্ণালংকার ৩ নং আসামীকে (বাদীনির শ্বাশুরী) প্রদান করেন।

 

৫। বিগত ২৮/১২/২০২১ ইং তারিখে ২ নং আসামীর (বাদীনির স্বামী) ভাড়া বাসায় আনুমানিক বিকাল ০৩.৩০ ঘটিকায় ১, ২, ৩ ও ৪ নং আসামী স্বশরীরে উপস্থিত হইয়া ১ নং আসামী স্বহস্তে বাদিনীর নিকট হইতে যৌতুক বাবদ আরো ,০০,০০০.০০ (দুই লক্ষ) টাকা নিয়া যায় এবং যাবার সময় ১ নং আসামী (বাদীনির স্বশুর) বলে যায় যে, আমাদের চাহিদা মত যৌতুকের মোট ৮,০০,০০০.০০ (আট লক্ষ) টাকার বাকি টাকা বুঝিয়া না পাইলে তোকে আমার ছেলের (২ নং আসামী) সহিত সংসার করিতে দিব না বরং তিলে তিলে যন্ত্রণা দিয়া তোকে (বাদীনি) চির তরে শেষ করিয়া দিব।

 

৬। আসামীগণ যৌতুক বাবদ সর্বমোট ৪,০০,০০০.০০ (চার লক্ষ) টাকা এবং ৪ (চার) ভরি ৮ (আট) আনা স্বর্ণালংকার জোরপূর্বক নিয়া যায়। অতঃপর আরো ৪,০০,০০০.০০ (চার লক্ষ) টাকা বাদিনী দিতে না পারায় বিগত ০৫/০১/২০২২ ইং তারিখে আসামীগণ বাদিনীকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেন এবং ১ ও ২ নং আসামী বাদীনিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়া বাসা থেকে বাহির করিয়া দেন এবং হুমকি প্রদান করেন যে, যৌতুকের বাকি টাকা না দিলে ঘরে তুলিবে না। তারপর থেকে অদ্যবধি ২ নং আসামী (বাদীনির স্বামী) বাদিনীর কোনোরকম খোজ খবর রাখিতেছেন না এমনকি থাকা খাওয়ার খরচও প্রদান করিতেছেন না। এহেন অবস্থায় বাদীনি পূনরায় সংসার করিবার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় ব্যর্থ ও নিরুপায় হইয়া বাদিনী সুবিচারের আশায় অত্র বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হইলেন।

 

৭। অত্র মামলার ১, ২, ৩ ও ৪ নং আসামীগণ প্রত্যক্ষভাবে যৌতুক দাবি করায় এবং অতঃপর যৌতুক গ্রহণ করায় ২০১৮ সনের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারায় অপরাধ করিয়াছেন বটে।

 

উপরোল্লিখিত বর্ণিত কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামীগণের বিরুদ্ধে ২০১৮ সনের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারায় অপরাধ আমলে গ্রহণ পূর্বক আসামীগণের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করতঃ সুবিচার করিতে মর্জি হয়।  ইতি,

 

তাং- ২০/১১/২০২২ ইং

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711-068609

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *