আসল দলিল চেনার উপায়

Spread the love

অরিজিনাল দলিল ও জাল দলিলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারলেই আসল দলিল চেনা সম্ভব। এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আসল দলিল চেনার উপায় পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

 

স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের পূর্বে বিক্রেতার মালিকানা যাচাই করার জন্য দলিল দেখা দরকার। আর এই দলিল জাল নাকি অরিজিনাল তা বোঝার জন্য একাগ্রচিত্তে এই লেখাটি পড়ুন।

 

দলিলের সত্যতা যাচাই করার উপায়-

দলিলের সত্যতা যাচাই সাধারণত দুই ভাবে করা যায়। যথা-

১। নিজে দলিল যাচাই।

২। আইনজীবির মাধ্যমে যাচাই।

 

এই দুই উপায়ের যেভাবেই দলিল যাচাই করেন না কেন আপনাকে উভয় ক্ষেত্রেই ভাল ভাবে বুঝে নিতে হবে।

 

১। নিজে দলিল যাচাই-

নিজে দলিল যাচাই করতে চাইলে তা দুইটা স্টেপে করতে হবে। যথা-

(ক) ঘরে বসে দলিল দেখে যাচাই।

(খ) সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে যাচাই।

 

(ক) ঘরে বসে দলিল দেখে যাচাই-

আপনি চাইলে ঘরে বসে নিজে নিজে দলিলের সত্যতা যাচাই করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করুণ-

 

  • দলিলের ছবি ও প্রিন্ট যাচাই-

০১ জুলাই ২০০৫ ইং তারিখের পূর্বে দলিলে দাতা ও গ্রহিতার ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু উক্ত তারিখের থেকে দলিলে দাতা ও গ্রহিতার ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং দলিলটি কম্পিউটার প্রিন্টেড হতে হবে। সুতরাং এর ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে দলিলটি অরিজিনাল নয়।

 

  • ক্রমিক নম্বর ও দলিল নম্বর যাচাই-

একটি দলিলের প্রথম পৃষ্ঠার সর্ব উপরে বাম পাশে থাকে দলিলের ক্রমিক নম্বর এবং ডান পাশে থাকে দলিল নম্বর। ক্রমিক নম্বরের সংখ্যাটির চেয়ে দলিল নম্বরের সংখ্যাটি ছোট থাকে। এর ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে দলিলটি অরিজিনাল নয়।

 

  • দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ যাচাই-

সরকারি কোন ছুটির দিনে দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। কোন দলিলে উল্লেখিত দলিল রেজিস্ট্রির তারিখটি খেয়াল করতে হবে যে, ঐ দিনটি কোন সরকারি ছুটির দিন ছিল কিনা। সেরকম হলে বুঝতে হবে দলিলটি অরিজিনাল নয়।

 

  • দলিলের সিল যাচাই-

কোন দলিল যদি অনেক পুরাতন হয় আর উক্ত দলিলের কোন সিল যদি নতুন মনে হয়। তাহলে বুঝতে হবে দলিলটি অরিজিনাল নয়।

 

  • দলিলে আঙ্গুলের ছাপ যাচাই-

মূল দলিলের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় দলিল দাতার নাম ও আঙ্গুলের ছাপ এবং আঙ্গুলের ছাপের একটা নম্বর থাকে। আঙ্গুলের ছাপের এই নম্বরের সংখ্যাটি দলিল নম্বরের চেয়ে বড় হবে। এর ব্যতিক্রম হলে বুঝতে হবে দলিলটি অরিজিনাল নয়।

 

  • দলিলের প্রকৃতি যাচাই-

দলিল বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যথা- সাফ কবলা দলিল, হেবা দলিল, দান দলিল, উইল দলিল, আম-মোক্তারনামা দলিল। দলিলের প্রথম পৃষ্ঠায় নিচের দিকে দলিলের প্রকৃতি লেখা থাকে। সেটি লেখা আছে কিনা তা দেখতে হবে।

 

  • দলিলের স্ট্যাম্প ভেল্যু যাচাই-

স্ট্যাম্প ভেল্যু বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যথা- ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা ৩০০ টাকা, ১০০০ টাকা, ৫০০০ টাকা। মূল দলিলের স্ট্যাম্প ভেল্যু বেশি হবে। কমপক্ষে ১০০ টাকা বা তার বেশি হবে।

 

  • দলিলের শেষ পৃষ্ঠা যাচাই-

দলিলের শেষ পৃষ্ঠায় বুক নং, ভলিয়ম নং, পৃষ্ঠা নং, দলিল নং ও সাল ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। এইগুলো আছে কিনা দেখে নিন।

 

  • দানপত্র দলিলের হলে করণীয়-

দলিল বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যথা- সাফ কবলা দলিল, হেবা দলিল, দান দলিল, উইল দলিল, আম-মোক্তারনামা দলিল। দলিলটি “হেবার ঘোষণাপত্র” বা “দানের ঘোষণাপত্র” হলে দাতা ও গ্রহিতার মধ্যে সম্পর্ক কি তা নিশ্চিত হতে হবে। কারণ রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী এই ধরনের দলিল নির্দিষ্ট কয়েকটি সম্পর্কের মধ্যে হয়ে থাকে। যেমন- স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, আপন ভাই-বোন, নানা-নানী, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনীর মধ্যে। উল্লেখিত উক্ত নির্দিষ্ট সম্পর্কের বাইরে হেবা দলিল বা দান দলিল রেজিস্ট্রি হলে তা সঠিক হবে না।

 

 

(খ) সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে যাচাই-

 

  • সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভলিউমের তথ্যযাচাই-

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি বা ধরণ অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে এবং রেজিস্ট্রি অফিসে প্রয়েকটি নিবন্ধিত দলিলের একটি মূল কপি সংরক্ষিত থাকে। অফিসের এই সকল ভলিউম এবং সংরক্ষিত মূল কপির সাথে দলিলটি মিলিয়ে দেখতে হবে। এর জন্য দলিলটির যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করে নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। অথবা সার্টিফাইড কপি উঠিয়ে মিলিয়ে দেখতে পারেন।

 

  • মূল মালিক যাচাই-

এইক্ষেত্রে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে মূল মালিকের তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখতে হবে। এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষিত মূল কপির সাথে দলিলটি মিলিয়ে দেখতে হবে।

 

  • দলিলের স্বাক্ষর যাচাই-

স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে দলিলের স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন। এছাড়া ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন ধরণের সিল পরীক্ষা করেও স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।

 

  • নামজারি যাচাই-

জমিটি যে এলাকায় উক্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির নামজারি (Mutation) হয়েছে কিনা তা জানতে হবে। পূর্ববর্তী সিএস জরিপ খতিয়ান থেকে শুরু করে সর্বশেষ নামজারি খতিয়ান পর্যন্ত মালিকানার ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না তা দেখতে হবে। সবগুলো খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তীতে যতবার বিক্রয় হয়েছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। এছাড়াও দাগ নম্বর ও ঠিকানা সহ অন্যান্য তথ্য ভাল করে যাচাই করে দেখতে হবে।

 

  • আম-মোক্তারনামা(Power pf Attorney)-

জমিটির কোন আম-মোক্তারনামা দলিল হয়ে থাকলে উহাতে উভয় পক্ষের জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং উভয়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা দেখতে হবে।

 

  • দলিল লেখকযাচাই-

দলিলটি যদি সম্প্রতি সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং দলিল লেখক যদি জীবিত থাকে তাহলে উক্ত দলিল লেখকের সাথে সরাসরি কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। দলিল লেখকের নাম দলিলে থাকে।

 

  • দলিলের সিল-স্ট্যাম্প যাচাই-

প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে উপরে বাম পাশে একটি ক্রমিক নম্বর ও তারিখ উল্লেখ থাকে এবং স্ট্যাম্প ভেন্ডারের নামের সিল থাকে। উক্ত স্ট্যাম্প ভেন্ডারের সাথে সরাসরি কথা বলে এবং তার রেজস্ট্রার দেখে নিশ্চিত হতে পারবেন যে, স্ট্যাম্পটি তার কাছ থেকে কেনা হয়েছে কিনা, স্ট্যাম্প নম্বর ও তারিখ ঠিক আছে কিনা এবং কার নামে কেনা হয়েছে।

 

২। আইনজীবির মাধ্যমে যাচাই-

উপরে উল্লেখিত পন্থায় আপনি নিজে দলিল যাচাই করতে না পারলে কিংবা ঝামেলা মনে করলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে এটি করতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে আপনাকে দুইটা জিনিস নিতে হবে। যথা-

(ক) আইনগত লিখিত মতামত (Legal Opinion)

(খ) তল্লাশী প্রতিবেদন (Search Report)

 

(ক) আইনগত লিখিত মতামত (Legal Opinion)-

এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আইনজীবির কাছে সকল কাগজপত্র দিলে তিনি এইগুলো পর্যালোচনা করে আপনাকে আইনগত লিখিত মতামত দিবেন।

 

(খ) তল্লাশী প্রতিবেদন (Search Report)-

এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আইনজীবির নিজে অথবা তার ক্লার্ক সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সরাসরি পাঠিয়ে সব কিছু যাচাই করে আপনাকে একটি লিখিত তল্লাশী প্রতিবেদন দিবেন।

 

দলিল জাল হলে করনীয়-

উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, দলিলটি জাল তাহলে আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-

(১) আপনি কোন জমি ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়ে থাকলে তা পরিহার করুণ।

(২) দলিলটি বাতিল করা প্রয়োজন হলে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মোকাদ্দমা দায়ের করতে হবে। কারণ রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিল করার এখতিয়ার/ক্ষমতা রয়েছে শুধুমাত্র আদালতের। সুতরাং সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৩৯ ধারায় রেজিস্ট্রিকৃত দলিলটি বাতিলের জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

(৩) জাল দলিল প্রস্তুতকারকের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৩/৪৭৩ ধারায় মামলা দায়ের করুণ। কারণ এই সকল অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিৎ।

 

তামাদি সময় বা মামলা করা মেয়াদ-

তামাদি আইন, ১৯০৮-এর ৯১ ধারা মোতাবেক দলিল সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ০৩ বছরের মধ্যে মামলা দাখিল করতে হবে।

 

আরও জানার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

যোগাযোগ-

আইনবিদ লিগ্যাল সলিউশন

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711-068609 / 01540-105088

ঢাকা জজ কোর্ট, কোতোয়ালী, ঢাকা।

বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

ইমেইল- adv.mohiuddin1980@gmail.com

ওয়েবসাইট- ainbid.com

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What do you like about this page?

0 / 400