মুসলিম আইনে অগ্রক্রয়ের মোকদ্দমায় ১নং বিবাদীপক্ষের লিখিত বর্ণনা।
মোকাম: বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালত নং–৬, ঢাকা।
দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ১২২/২০২৪
ইয়ারুন নেছা
——————–বাদী।
-বনাম-
মোঃ তুহিন খান গং
—————–বিবাদী।
১নং বিবাদী পক্ষে লিখিত বর্ণনা নিম্নরূপঃ-
১। বর্তমান আকারে ও প্রকারে অত্র মোকদ্দমা আইনের দৃষ্টিতে অচল ও বাতিলযোগ্য।
২। বাদীর আরজীর বিবরণ তথা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, আজগুবি, তঞ্চকতামূলক, প্রবঞ্চণাপূর্ণ ও দূরভিসন্ধিমূলক। কাজেই, বাদীর মোকদ্দমা খারিজ হইবে।
৩। বাদীর মোকদ্দমা Principle Of Estopple, Waiver and Acquiscence দ্বারা গুরুতর বারিত বিধায় বাদীর অত্র মোকদ্দমাটি অত্র বিবাদীর অনুকূলে উপযুক্ত খরচসহ খারিজ হইবে।
৪। অত্র মোকদ্দমাটি বাদীর স্বকীয় দোষে বারিত বটে।
৫। বাদীর উপরোক্ত মোকদ্দমা আনায়ন করিবার কোন আইনগত অধিকার (Locus Standi) বর্তমান বাদীর নাই। কাজেই, বাদিনীর উপরিউক্ত মোকদ্দমাটি অত্র বিবাদীর অনুকূলে উপযুক্ত খরচসহ খারিজ হইবে।
৬। বাদীর মোকদ্দমার কোন কারণ. (Cause Of Action) নাই। কাজেই, কারণাভাবে মোকদ্দমাটি খারিজ হইবে।
৭। বাদীর বর্তমান মোকদ্দমাটি মুসলিম আইনের এবং একই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন আইনের পরিপন্থী বিধায় বাদিনী অত্র মোকদ্দমায় কোন প্রতিকার পাইতে হকদার নহেন বিধায় অত্র মোকদ্দমাটি অত্র বিবাদীর অনুকূলে উপযুক্ত খরচসহ খারিজ হইবে।
৮। মুসলিম আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয়ের তথা হক সাফা মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইলে যে সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন করিতে হয় বাদিনী তাহা যথাযথভাবে পরিপালন না করায় বাদিনীর অত্র মোকদ্দমাটি সরাসরি খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
৯। বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমাটি তামাদি আইনে গুরুতরভাবে বারিত। কাজেই, অত্র মোকদ্দমাটি খারিজ হইবে।
১০। মুসলিম আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয়ের তথা হকসাফার মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইলে যে সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন করিতে হয়; বাদিনী তাহা যথাযথভাবে পরিপালন না করায় অত্র মোকদ্দমার কোন কারণ (Cause of Action) উদ্ভব না হওয়ায় বর্তমান মোকদ্দমাটি কারণাভাবে (Want of Cause of Action) খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
১১। বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমাটি একটি টেষ্ট কেস (Test Case) ছাড়া আর কিছুই নহে। কাজেই, বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমাটি অত্র বিবাদীর অনুকূলে উপযুক্ত খরচসহ খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
১২। উল্লেখ্য, বর্তমান মোকদ্দমার বাদিনী এবং তাহার অপর ভ্রাতা- ভগ্নি এবং মাতা সম্মিলিতভাবে আরজীর তফসিল বর্ণিত নালিশী সমুদয় সম্পত্তি ৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা মূল্য নির্ধারণ পূর্বক অত্র বিবাদীর নিকট সাফ বিক্রয়ের নিমিত্তে মৌখিক বায়নাবদ্ধ হন এবং উক্ত মৌখিক বায়নার ভিত্তিতে বিগত ২০/০২/২০০৮ তারিখে বাদিনী ব্যতীত অপর সকলে একটি বায়নাপত্র দলিল সহি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করিয়া দেন যাহার নম্বর ১৭২৭। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বাদিনী উক্ত তারিখে সন্তান প্রসব জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি আর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যাইতে পারেন নাই এবং বর্ণিত বায়নাপত্র দলিলটি সহি সম্পাদন করিতে পারেন নাই। যদিও বাদী এবং বিবাদীর মধ্যে মৌখিক শর্ত থাকে যে, বাদিনী সুস্থ হইয়া হাসপাতাল ত্যাগ করিলে তিনি অত্র বিবাদীর অনুকূলে একটি পৃথক বায়নাপত্র দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দিবেন। কিন্তু বাদীনি তাহার মৌখিক শর্ত ভঙ্গ করিয়া আর তাহার বায়নাপত্রটি সহি সম্পাদন করিয়া দেন নাই। পরবর্তীতে বর্ণিত বায়নাপত্রের পোষকতায় বিগত ২৩/০৯/০৮ তারিখে সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রিকৃত ২০০৯ সনের ১০১৩২ নম্বর সাফ কবলা দলিলটি সহি সম্পাদন করিয়া দেন। কিন্তু অত্র মোকদ্দমার বাদীনি এবং তাহার অপর ভ্রাতা দেলোয়ার হোসেন (যিনি বিগত ২০/০২/০৮ তারিখে অন্যান্য বিক্রেতাদের সহিত বায়নাপত্র দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দিয়া ছিলেন) অত্র বিবাদীর বরাবরে যথাক্রমে তাহাদের মৌখিক ও বর্ণিত চুক্তিপত্র তথা বায়নাপত্র দলিলের শর্ত ভঙ্গ করিয়া সাফ কবলা দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দেন নাই। প্রসঙ্গতঃ আরও উল্লেখ্য, নালিশী মৌজায় প্রকৃত বিক্রয় মূল্য হইতে সরকারী হিসাব অনুযায়ী রেজিস্ট্রি অফিসে রক্ষিত রেজিষ্ট্রেশন ফি চার্ট কম হওয়ায় অত্র বিবাদী নালিশী সম্পত্তি =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা দিয়া খরিদ করিলেও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দেওয়া মূল্য অনুযায়ী নালিশী সম্পত্তির মূল্য ১৫,০০,০০০/ (পনের লক্ষ) টাকা ধরিয়া নালিশী সাফ কবলা দলিলটি রেজিষ্ট্রি হওয়ায় বাদিনী দূর্লোভের বশবর্তী হইয়া মিথ্যা বর্ণনা দিয়া বর্তমান মোকদ্দমাটি আনায়ন করিয়াছে যাহা খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
১৩। যেহেতু অত্র বিবাদী বিগত ২০/০২/০৮ তারিখের বায়নাপত্রে উল্লেখিত ৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা মূল্য প্রদান করিয়া অত্র মোকদ্দমার নালিশী সম্পত্তি খরিদ করিয়াছেন যাহা বাদিনী শুরু হইতেই অবগত আছেন। কিন্তু পরবিত্তলোভে লোভাতুর বাদিনী উক্ত মূল্যের উপর বর্তমান মোকদ্দমাটির মূল্যায়ন না করিয়া এবং উক্ত পরিমাণ টাকা বিজ্ঞ আদালতে দাখিল না দেওয়ায় বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমাটি কোর্ট ফি ও স্যুট ভেলুয়েশন আইনের পরিপন্থী বিধায় বাদিনী অত্র বিবাদীর বিরুদ্ধে অত্র মোকদ্দমায় কোন প্রতিকার পাইতে হকদার নহেন বিধায় অত্র মোকদ্দমাটি সরাসরি খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
১৪। আরজীর ১নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী বাদীনির পিতা আমির হোসেন বিগত ইং ২৬/১০/১৯৭৬ সন তারিখে ঢাকা সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত ২৫৪৪৩ নং এক খন্ড সাফ কবলা দলিল মূলে সামসুল হকগংদের নিকট হইতে তফসিল বর্ণিত গ্রাম ভাটুলিয়া মৌজার সি. এস. ১০০ নং কিম্বা এস. এ. ১২৪ নং কিম্বা আর. এস. ৩০ নং খতিয়ান ভূক্ত সি. এস. ও এস. এ. ২৪৫ নং আর. এস. ২৫০ নং দাগে ৯১ শতাংশ জমির কাতে ৪৫.৫০ শতাংশ জমি খরিদ করিয়া উহাতে মালিক ও ভোগ দখলকার নিয়ত ছিলেন কিম্বা উক্ত জমিতে বাদীনির পিতা চাষাবাদ করিয়া ফসল উৎপাদন করিযা আসিবার কথা অত্র বিবাদীর স্বত্বের বর্ণনাও এক এবং অভিন্ন হওয়ায় উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে অত্র বিবাদীর কোনরূপ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে বাদীনি উক্ত বর্ণনা সমূহ বিজ্ঞাদালতের সম্মুখে সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করিতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
১৫। আরজীর ২নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী পরবর্তীতে বাদীনির পিতা উক্ত আমির হোসেন মালিক ও স্বত্ববান নিয়ত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করিলে তাহার ত্যাজ্যবিত্ত সম্পত্তিতে বাদীনির পিতার খরিদা উক্ত ৪৫.৫০ শতাংশের কাতে বাদীনি পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে ৪.৯৮ শতাংশ জমি প্রাপ্ত হইয়া ২ নং হইতে ৬ নং বিবাদীগণের সহিত যৌথ ভাবে বর্তমান ঢাকা সিটি জরীপে জরীপ করাইয়া কিম্বা সহকারী কমিশনার ভূমি তেজগাঁও সার্কেল ঢাকায় নামজারী ও জমাভাগ মোকদ্দমা নং ১৩৫৮২/০৭ তারিখে ০২/০৭/২০০৮ ইং মোতাবেক নামজারী করিয়া নং জোতের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করিবার কথা রেকর্ডীয় বিষয় বিধায় উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে অত্র বিবাদীর কোনরূপ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে উক্ত পরিচ্ছেদের অবশিষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী বাদিনী উহাতে মালিক ও ভোগদখলকার নিয়ত থাকিবার কথা কিম্বা বাদীনির পিতার মৃত্যুর পর বাদীনি ও ২-৭ নং বিবাদীগণ সকলে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিজমা পারিবারিক ভাবে ভাগ বন্টন করিয়া লইবার কথা কিম্বা বাদীনির ছাহাম প্রাপ্ত উক্ত কৃষি বোর জমিতে বাদীনি চাষাবাদ করিয়া ফসল উৎপাদন করিয়া আসিবার কথা ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
১৬। আরজীর ৩নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী ২০০৮ সনের নভেম্বর মাসের ৬ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার শুনিতে পায় যে ১নং বিবাদী মোঃ তুহিন খান তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি খরিদ করিয়াছেন কিম্বা তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে বাদীনি একজন সহ শরীক (সাফী-ই-শরীক) এবং তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি বাদীনির বিশেষ প্রয়োজন কিম্বা বিক্রয়ের সংবাদ শোনার সাথে সাথেই বাদীনি তাহার মহল্লার (১) আব্দুল জব্বার, পিতা-মৃত নুরুল হক কিম্বা (২) জাকির হোসেন, পিতা- মোহাম্মদ মোতালেব, (৩) মোঃ রিপন, পিতা-জোহর আলী দেরকে সংগে লইয়া তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির উপর যান কিম্বা উচ্চ স্বরে তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি অগ্রক্রয় (সুফা) করিবেন মর্মে ঘোষনা করেন কিম্বা তাহাদিগকে সংগে নিয়া বিকাল বেলায় ১নং মূল বিবাদীর বাড়ী নং২৭, লেন-১, ব্লক নং-বি, সেকশন-৬, মিরপুর, ঢাকার বাড়ীতে যান কিম্বা ১নং বিবাদীকে বলেন যে বাদীনি তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি অগ্রক্রয় (সুফা) করিবেন কিম্বা বাদীনি মূল্যের টাকা ১নং বিবাদীকে প্রদান করিবেন মর্মে বলেন কিংবা এইভাবে বাদী তলব-ই-মোয়াসিবাত সম্পন্ন করেন করেন মর্মে যে বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন তাহা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, আজগুবি, মনগড়া, তঞ্চকতামূলক, প্রবঞ্চনাপূর্ণ ও দূরভিসন্ধিমূলক এবং অত্র মোকদ্দমা আনায়ন করিবার অসৎ উদ্দেশ্যে সৃজিত বর্ণনা তথা বক্তব্য বিধায় উপরিউক্ত সমূদয় বক্তব্য অত্র বিবাদী অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত অস্বীকার করেন। প্রকৃতপক্ষে আরজীর তফসিল বর্ণিত নালিশী সম্পত্তি ২-৭ নং বিবাদীগণ যখন সাফ বিক্রয়ের নিমিত্তে মৌখিক কথা বার্তা হয় তখন বাদীনিও তাহাদের সহিত তাহার অংশ অত্র বিবাদীর নিকট সাফ বিক্রয়ের জন্য মৌখিক বায়নাবদ্ধ হন। কিন্তু পরবর্তীতে বাদিনী সন্তান সম্ভাবা থাকায় এবং বর্ণিত বিবাদীগণ যখন তাহাদের মৌখিক বায়নাকৃত সম্পত্তি সম্পর্কে বিগত ২০/০২/০৮ তারিখে বায়নাপত্র দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দেন তখন বাদীন হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি উক্ত বায়নাপত্র দলিলটি সহি সম্পাদন করিয়া দিতে পারেন নাই। পরবর্তীতে যখন ২ হইতে ৬নং বিবাদীগণ নালিশী সম্পত্তি সম্পর্কে বিগত ২৩/০৯/২০০৮ তারিখে নালিশী সাফ কবলা দলিলটি অত্র বিবাদীর বরাবরে সহি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করিয়া দেয় ঠিক তখনই বাদিনী অত্র বিবাদীর নিকট নালিশী সম্পত্তি সাফ বিক্রয়ের বিষয় জানিতে পারেন এমনকি নালিশী সম্পত্তির দখলও যখন অত্র বিবাদীর বরাবরে বুঝাইয়া দেওয়া হয় তখন বাদিনী তাহার স্বামীসহ নালিশী সম্পত্তিতে উপস্থিত থাকিয়া অত্র বিবাদী কোন পার্শ্ব দিয়া তাহার সম্পত্তি লইবেন তাহা দেখাইয়া দেন। কাজেই, বিগত ২০০৮ সনের নভেম্বর মাসের ৬ তারিখে অত্র বিবাদীর নিকট নালিশী সম্পত্তি সাফ বিক্রয়ের কথা বাদিনীর প্রথম জানিবার কথা ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাহাছাড়া বাদিনী তাহার কথিত মতে উক্ত ৬/১১/০৮ তারিখে বর্ণিত (১) আব্দুল জব্বার, পিতা-মৃত নুরুল হক কিম্বা (২) জাকির হোসেন, পিতা- মোহাম্মদ মোতালেব, (৩) মোঃ রিপন, পিতা-জোহর আলীদের-কে সঙ্গে লইয়া নালিশী সম্পত্তিতে যান নাই এবং তিনি যে নালিশী সম্পত্তি সম্পর্কে হক সাফার মোকদ্দমা করিবেন এমন কোন কথা তিনি বলেন নাই কিম্বা পরবর্তীতে তিনি উক্ত তারিখে অত্র বিবাদীর আরজীতে উল্লেখিত ঠিকানায়ও তাহাদেরকে লইয়া যান নাই এবং তিনি বিবাদীর সম্মুখে নালিশী সম্পত্তির হক সাফার মোকদ্দমা করিবেন কিম্বা বিবাদীর খরিদা মূল্য বিবাদীকে ফেরৎ প্রদান করিবেন এমন কোন কথা বলেন নাই। কাজেই, বাদিনী যেখানে তলব-ই-মুয়াসিবত কিম্বা তলব-ই-ইসাদ পরিপালন করেন নাই সেখানে বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমার কোন কারণ উদ্ভব না হওয়ায় বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমাটি কারণাভাবে খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
১৭। আরজীর ৪নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী ইহার বাদীনি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশী দিয়া বিগত ১৩/১১/২০০৮ ইং তারিখে উত্তরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ২৩/০৯/২০০৮ তারিখের ১০১৩২ নং সাফ কবলা দলিলের সই মোহরী নকল পান কিম্বা দলিলটি পাঠ করিয়া ইহার মর্ম বুঝিতে পারিয়া সংগে সংগে বাদীনি নালিশী সম্পত্তিতে যাইয়া নালিশী সম্পত্তিতে তিনি সহ-শরীক (সাফী-ই- শরীক) মর্মে সাক্ষীগণের সামনে ঘোষনা করেন কিম্বা নালিশী সম্পত্তি প্রিয়েমশন করিবেন মর্মে ঘোষনা করেন কিম্বা এই সময়ে তুরাগ থানাধীন ধউর গ্রামের আব্দুল জব্বার, পিতা-মৃত নুরুল হক, জাকির হোসেন, পিতা মোহাম্মদ মোতালেব কিম্বা মোঃ রিপন পিতা, জোহর আলী উপস্থিত ছিলেন কিম্বা এইভাবে বাদীনি তলব-ই এশাদ সম্পন্ন করেন কিম্বা এই সময়ে ১ নং বিবাদী মোঃ তুহিন খান ও ২ নং বিবাদী মোঃ আনোয়ার হোসেন নালিশী সম্পত্তিতে উপস্থিত ছিলেন কিম্বা প্রথমত তলব-ই-মোয়াসিবাদ পরে তলব-ই-এশাদ বিক্রেতা ও ক্রেতার সম্মুখেই সম্পাদন করা স্বত্বেও উক্ত ১ নং মূল বিবাদী ও ২-৬ নং মোকাবিলা বিবাদীগণ কোনরূপ সাড়া দেন নাই কিম্বা এছাড়া বিক্রয় সংক্রান্ত কোন নোটিশ আজ পর্যন্ত বাদীনি পায়নি মর্মে যে বর্ণনা তথা অভিযোগ প্রদান করিয়াছেন তাহা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, আজগুবি, মনগড়া, তঞ্চকতামূলক, প্রবঞ্চনাপূর্ণ ও দূরভিসন্ধিমূলক এবং অত্র মোকদ্দমা আনায়ন করিবার অসৎ উদ্দেশ্যে সৃজিত বর্ণনা তথা বক্তব্য বিধায় উপরিউক্ত সমূদয় বক্তব্য অত্র বিবাদী অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত অস্বীকার করেন। পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, প্রকৃতপক্ষে আরজীর তফসিল বর্ণিত নালিশী সম্পত্তি ২-৭ নং বিবাদীগণ যখন সাফ বিক্রয়ের নিমিত্তে মৌখিক কথা বার্তা হয় তখন বাদীনিও তাহাদের সহিত তাহার অংশ অত্র বিবাদীর নিকট সাফ বিক্রয়ের জন্য মৌখিক বায়নাবদ্ধ হন। কিন্তু পরবর্তীতে বাদিনী সন্তান সম্ভাবা থাকায় এবং বর্ণিত বিবাদীগণ যখন তাহাদের মৌখিক বায়নাকৃত সম্পত্তি সম্পর্কে বিগত ২০/০২/০৮ তারিখে বায়নাপত্র দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দেন তখন বাদীন হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তিনি উক্ত বায়নাপত্র দলিলটি সহি সম্পাদন করিয়া দিতে পারেন নাই। পরবর্তীতে যখন ২ হইতে ৬নং বিবাদীগণ নালিশী সম্পত্তি সম্পর্কে বিগত ২৩/০৯/২০০৮ তারিখে নালিশী সাফ কবলা দলিলটি অত্র বিবাদীর বরাবরে সহি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করিয়া দেয় ঠিক তখনই বাদিনী অত্র বিবাদীর নিকট নালিশী সম্পত্তি সাফ বিক্রয়ের বিষয় জানিতে পারেন এমনকি নালিশী সম্পত্তির দখলও যখন অত্র বিবাদীর বরাবরে বুঝাইয়া দেওয়া হয় তখন বাদিনী তাহার স্বামীসহ নালিশী সম্পত্তিতে উপস্থিত থাকিয়া অত্র বিবাদী কোন্ পার্শ্ব দিয়া তাহার সম্পত্তি লইবেন তাহা দেখাইয়া দেন। কাজেই, বিগত ১৩/১১/২০০৮ তারিখের ১০১৩২ নম্বর সাফ কবলা দলিলের সইমোহরী নকল পান কিম্বা উক্ত নকল প্রাপ্ত হইয়া বাদিনী উহার মর্ম বুঝিতে পারিয়া তিনি সহ-শরীক বা সাফী-ই-শরীক মর্মে সাক্ষীগণের সামনে ঘোষনা করেন কিম্বা তিনি উক্ত ১৩/১১/০৮ তারিখে বর্ণিত (১) আব্দুল জব্বার, পিতা-মৃত নুরুল হক কিম্বা (২) জাকির হোসেন, পিতা-মোহাম্মদ মোতালেব, (৩) মোঃ রিপন, পিতা-জোহর আলীদের সম্মুখে নালিশী সম্পত্তি সম্পর্কে প্রিয়েমশন করিবেন মর্মে ঘোষনা করেন কিম্বা ঐ সময় অত্র বিবাদী ও ২নং বিবাদী নালিশী সম্পত্তিতে উপস্থিত ছিলেন তাহা ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। যেহেতু বাদিনী নালিশী সম্পত্তি অত্র বিবাদীর নিকট সাফ বিক্রয় এবং বিক্রয় দলিল সহি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির বিষয় জানিবার দিন অর্থাৎ বিগত ২৩/০৯/০৮ তারিখে তলব-ই-মুসাবিয়াত পালন করেন নাই এবং উহার সঙ্গে সঙ্গে তলব-ই-ইসাদ পরিপালন করেন নাই সেইহেতু বাদিনী কর্তৃক বর্তমান হক সাফার মোকদ্দমাটি তামাদি আইনে গুরুতরভাবে বারিত বিধায় অত্র মোকদ্দমাটি অত্র বিবাদীর অনুকূলে উপযুক্ত খরচসহ খারিজ হইবে।
১৮। আরজীর ৫নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী বাদীনির আপন ভাই বোন ও মাতা অত্র মোকদ্দমার ২নং হইতে ৬নং বিবাদীগণ বিগত ২৩/০৯/২০০৮ ইং তারিখে নালিশী দলিল মূলে ১৬.৫০ শতাংশ সম্পত্তি বিবাদীর নিকট সাফ বিক্রয়ের কথা রেকর্ডীয় বিষয় বিধায় অত্র বিবাদীর কোনরূপ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে উক্ত পরিচ্ছেদের অবশিষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী বাদীনির ভোগ দখলীয় সম্পত্তির পশ্চিম পার্শ্বের সংলগ্ন হইতে ১৬.০৫ শতাংশ জমি উপরোক্ত ১ নং প্রতিপক্ষ মোঃ তুহিন খানের নিকট ১৫,০০,০০০/= (পনের লক্ষ) টাকায় কবলা দলিলের মূল্যে বিক্রয় করিবার কথা ডাহা মিথ্যা ও রেকর্ড বিরুদ্ধ কথা বিধায় উক্ত বর্ণনা সমূহ অত্র বিবাদী অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত অস্বীকার করেন। প্রসঙ্গতঃ বলা আবশ্যক, পূর্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে যে, নালিশী সম্পত্তি অত্র বিবাদী =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা মূল্য ধার্য্য করিয়া ২ হইতে ৭নং বিবাদীগণের সহিত প্রথমে মৌখিক বায়নায় এবং পরবর্তীতে রেজিস্ট্রিকৃত বায়নায় আবদ্ধ হন। কিন্তু যেহেতু সংশ্লিষ্ট সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের মূল্য তালিকা অনুযায়ী নালিশী সম্পত্তির মূল্য =১৫,০০,০০০/ (পনের লক্ষ) টাকা হওয়ায় অত্র বিবাদী দলিল লেখকের পরামর্শ অনুযায়ী উক্ত মূল্যেই তাহার খরিদা সাফ কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি করাইতে বাধ্য হন। তাহাছাড়া নালিশী সম্পত্তির অবস্থান বাদিনীর স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তির পশ্চিম পার্শ্বে বলিয়া যে বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন তাহাও সঠিক নহে। কারণ নালিশী সম্পত্তির পশ্চিম পার্শ্বে ৭নং বিবাদী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সম্পত্তি তাহার পর বাদিনীর সম্পত্তি। কাজেই, উক্ত বর্ণনা সমূহ ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
১৯। আরজীর ৬নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী ১নং প্রতিপক্ষ মোঃ তুহিন খান সম্পত্তিতে আগন্তক কিম্বা বাদীনি তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির সহ শীরক কিম্বা তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির লাগ জমির মালিক ও দখলকার কিম্বা ১ নং বিবাদী তফসিল বর্ণিত সম্পত্তিতে আসিলে বাদীনির ক্ষতির কারণ হইবে কিম্বা এই কারণে বাদীনি পক্ষ অত্র অগ্রক্রয়ের (সুফা) মোকদ্দমা করিলেন মর্মে যে বর্ণনা তথা অভিযোগ প্রদান করিয়াছেন তাহা ডাহা মিথ্যা ও রেকর্ড বিরুদ্ধ কথা বিধায় উক্ত বর্ণনা সমূহ অত্র বিবাদী অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত অস্বীকার করেন। কেননা পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, নালিশী সম্পত্তির পূর্ব পার্শ্বে ৭নং বিবাদী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সম্পত্তি এবং তৎপর বাদিনীর সম্পত্তি। কাজেই, যেহেতু বাদিনীর সম্পত্তি এবং নালিশী সম্পত্তির মধ্যবর্তী স্থানে অপর একজনের সম্পত্তি রহিয়াছে সেইহেতু বাদিনী নালিশী সম্পত্তির সহ-শরীক নহে বিধায় বাদিনী কর্তৃক আনীত অত্র অগ্রক্রয়ের মোকদ্দমা আইনতঃ অচল বিধায় অত্র মোকদ্দমাটি সরাসরি খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
২০। আরজীর ৭নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী ২ নং হইতে ৬ নং বিবাদীগণ ১ নং বিবাদরি নিকট বিক্রেতা ৭নং বিবাদী সহ শরীক কিম্বা ৮ নং বিবাদী পাশের জমি ওয়ালা মর্মে যে বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন তাহা কিছুটা রেকর্ডীয় বিষয় বিধায় অত্র বিবাদীর কোনরূপ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে বাদীনি উক্ত বর্ণনা সমূহ বিজ্ঞাদালতের সম্মুখে সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করিতে বাধ্য ও দায়ী বটে। প্রসঙ্গতঃ বলা আবশ্যক, যেহেতু বাদিনী নালিশী সম্পত্তিতে সহ-অংশীদার তথা শাফি-ই-শরীক নহেন সেইহেতু বাদিনীর অত্র হক সাফা তথা অগ্রক্রয়ের মোকদ্দমা দায়ের করিবার কোন আইনগত অধিকার বাদিনীর নাই। তদুপরি, বাদীনি হক শুফার মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইলে যে সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন করিতে হয় তাহা তিনি না করায় অত্র মোকদ্দমাটি আইন অনুযায়ী তিষ্ঠনীয় নহে বিধায় অত্র মোকদ্দমাটি খারিজ হইবে।
২১। আরজীর ৮নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী মোকদ্দমার কারণ প্রথমে ২৩/০৯/২০০৮ ইং তারিখে ১-৬ বিবাদীগণ গোপনে উত্তরা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ১০১৩২ নং সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রির সময়ে কিম্বা পরবর্তীতে বিগত ১৩/১১/২০০৮ ইং তারিখে বাদীনি উক্ত দলিলের সই মোহরী নকল পাওয়ার সময়ে অত্রদালাতের এলাকাধীন সাবেক উত্তরা হালে তুরাগ থানাধীন গ্রাম ভাটুলিয়া মৌজার নালিশী সম্পত্তিতে উদ্ভব হইবার কথা সঠিক নহে। কারণ অত্র বিবাদী বাদিনীর অজ্ঞাতে কিম্বা গোপনে কোন দলিল করেন নাই। পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, নালিশী সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের বিষয় বহু পূর্ব হইতেই বাদিনী এবং তাহার ভ্রাতা ৭নং বিবাদী অবহিত ছিলেন বিধায় বাদীনি কর্তৃক আনীত অত্র মোকদ্দমাটি তামাদি আইনে গুরুতরভাবে বারিত। কাজেই, অত্র মোকদ্দমার কারণ বিগত ২৩/০৯/২০০৮ তারিখে কিম্বা উহার আগে অথবা পরে অথবা অন্য কোন তারিখে কিম্বা বিগত ১৩/১১/২০০৮ তারিখে কিম্বা উহার আগে অথবা পরে অথবা অন্য কোন তারিখে অত্র মোকদ্দমার কোন কারণ উদ্ভব না হওয়ায় কারণাভাবে বাদিনীর অত্র মোকদ্দমাটি অত্র বিবাদীর অনুকূলে উপযুক্ত খরচসহ খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
২২। আরজীর ৯নং পরিচ্ছেদের বিবরণ অনুযায়ী বাদীনি নালিশী জমির যে মূল্য নির্দ্ধারণ করিবার কথা উল্লেখ করিয়াছেন তাহা সঠিক নহে। পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, বাদিনী, তাহার ভ্রাতা-ভগ্নি এবং তাহাদের মাতা অর্থাৎ ২ হইতে ৭নং বিবাদীগণ সম্মিলিতভাবে আরজীর তফসিল বর্ণিত নালিশী সমুদয় সম্পত্তি =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা মূল্য নির্দ্ধারণ পূর্বক অত্র বিবাদীর নিকট সাফ বিক্রয়ের নিমিত্তে মৌখিক বায়নাবদ্ধ হন এবং উক্ত মৌখিক বায়নার ভিত্তিতে বিগত ২০/০২/২০০৮ তারিখে বাদিনী ব্যতীত অপর সকলে একটি বায়নাপত্র দলিল সহি সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করিয়া দেন যাহার নম্বর ১৭২৭। পরবর্তীতে বর্ণিত বায়নাপত্রের পোষকতায় বিগত ২৩/০৯/০৮ তারিখে সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রিকৃত ২০০৯ সনের ১০১৩২ নম্বর সাফ কবলা দলিলটি সহি সম্পাদন করিয়া দেন। নালিশী মৌজায় সম্পত্তির প্রকৃক্ত বিক্রয় মূল্য তথ্য বর্তমান বাজার দর হইতে সরকারী মূল্য কম হওয়ায় দলিল লেখকের পরামর্শ অনুযায়ী অত্র বিবাদী নালিশী সম্পত্তি =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা দিয়া খরিদ করিলেও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দেওয়া মূল্য অনুযায়ী নালিশী সম্পত্তির মূল্য =১৫,০০,০০০/ (পনের লক্ষ) টাকা ধরিয়া নালিশী সাফ কবলা দলিলটি প্রস্তুত করিতে বাধ্য হন। সুতরাং বাদিনী নালিশী সম্পত্তির যে মূল্য দেখাইয়া বর্তমান মোকদ্দমাটি দায়ের করিয়াছেন তাহা সঠিক নহে। কাজেই, বাদিনীর বর্তমান মোকদ্দমাটি কোর্ট ফি ও স্যুট ভেলুয়েশন অ্যাক্টের পরিপন্থী বিধায় অত্র মোকদ্দমা খারিজ হইবে।
২৩। আরজীর ১০নং পরিচ্ছেদের বর্ণনাও সঠিক নহে। যেহেতু অত্র বিবাদী নালিশী সম্পত্তি প্রকৃতপক্ষে বাজার দর অনুযায়ী = ৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা মূল্য প্রদান করিয়া এবং একই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রক্ষিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী ষ্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রি ফি প্রদান করিয়া নালিশী সম্পত্তি খরিদ করিয়াছেন যাহা বাদীনি শুরু হইতেই অবগত আছেন। অত্র বিবাদী কর্তৃক প্রদত্ত মূল্য জানা স্বত্বেও বাদিনী তাহার মোকদ্দমাটি প্রকৃত মূল্য হইতে কম মূল্য নির্দ্ধারণ করায় বর্তমান মোকদ্দমাটি কোর্ট ফি ও স্যুট ভেলুয়েশন অ্যাক্টের পরিপন্থী বিধায় অত্র মোকদ্দমাটি খারিজ হইবে।
২৪। বাদিনীর আরজীর প্রার্থনা অলীক, মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, আজগুবি, তঞ্চকতামূলক, প্রবঞ্চণাপূর্ণ ও দূরভিসন্ধিমূলক। যেহেতু বাদিনী অত্র বিবাদী কর্তৃক নালিশী সম্পত্তি ক্রয়ের বিষয়টি পূর্ব হইতেই অবগত ছিলেন এবং তদুপরি হক সাফার মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইলে যে সকল আনুষ্ঠানিকতা পরিপালন করিতে হয় বাদিনী তাহা না করায় এবং সর্বোপরি নালিশী সম্পত্তির বাজার মূল্য =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা দিয়া বিবাদী খরিদ করা স্বত্বেও বাদিনী তাহার মোকদ্দমার মূল্য উক্ত মূল্য হইতে অনেক কম মূল্য নির্দ্ধারণ করায় বাদীনি তাহার প্রার্থনা অনুযায়ী অত্র বিবাদীর বিরুদ্ধে কোন ডিক্রী পাইতে হকদার নহেন বিধায় বাদীনির মোকদ্দমাটি সরাসরি খারিজ হইবে।
২৫। অত্র মোকদ্দমার বাদিনী প্রকৃত সত্য গোপন করিয়া এবং বিভিন্ন মিথ্যা বর্ণনা তথা অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমান মোকদ্দমাটি দায়ের করিয়াছে। বাদীর বর্তমান মোকদ্দমাটি একটি টেষ্ট কেস ছাড়া আর কিছুই নহে বিধায় বাদীর বর্তমান মোকদ্দমাটি দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৫/এ ধারা অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সহ খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
প্রকৃত বৃত্তান্ত নিম্নরূপঃ–
(ক) অত্র মোকদ্দমার নালিশী সম্পত্তিসহ নালিশী দাগের সমুদয় ৪৫.৫০ শতাংশের সম্পত্তির তৎকালীন মালিক ছিলেন জনৈক আছুমদ্দিন। বর্ণিত আছুমদ্দিন নালিশী সম্পত্তিসহ তাহার স্বত্ব দখলীয় অপরাপর সম্পত্তিতে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় এস. এ. জরীপ আমলে আসিলে তাহার নামে। যথাক্রমে এস. এ. এবং আর. এস. খতিয়ান সঠিক ও শুদ্ধরূপে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।
(খ) অতঃপর বর্ণিত আছুমদ্দিন ২ (দুই) পুত্র যথাক্রমে (১) সামসুল হক ও (২) সিরাজুল হক এবং স্ত্রী গোল বাহার বিবি-কে তদিয় ত্যাজ্য বিত্তভোগী একমাত্র ওয়ারিশ বিদ্যমান রাখিয়া পরলোক গমন করিলে বর্ণিত সামসুল হকগং তাহাদের যথাক্রমে পিতার ও স্বামীর ওয়ারিশ হিসাবে নালিশী সম্পত্তিতে মালিক দখলকার নিয়ত হন ও থাকেন।
(গ) পরবর্তীতে বর্ণিত সামসুল হক নালিশী সম্পত্তিসহ নালিশী দাগের আরও কতিপয় সম্পত্তিতে উপরিউক্তভাবে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় উক্ত সমুদয় সম্পত্তি সাফ বিক্রয়ের নিমিত্তে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিলে বাদিনীর পিতা আমির হোসেন তাহা জানিতে পারিয়া তিনি উপযুক্ত মূল্যে উক্ত সম্পত্তি খরিদ করিতে সম্মত হইলে বর্ণিত সামসুল হকগং কর্তৃক বিগত ২৬/১০/১৯৭৬ তারিখে সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রিকৃত ১৯৭৬ সনের ২৫৪৪৩ নম্বর সাফ কবলা দলিল মূলে সাফ বিক্রয় করতঃ বিক্রীত সম্পত্তির খাস দখল বর্ণিত আমির হোসেনের বরাবরে বুঝাইয়া দিয়া চিরতরে নিঃস্বত্ববান হন।
(ঘ) অতঃপর বর্ণিত আমির হোসেন তাহার খরিদা নালিশী সম্পত্তিসহ নালিশী দাগের অপরাপর সম্পত্তিতে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় ২ (দুই) পুত্র (অর্থাৎ ১ ও ৭নং বিবাদী), ৪ (চার) কন্যা (বাদিনী ও ৩ হইতে ৫নং বিবাদী) এবং স্ত্রী ৬নং বিবাদীকে তদিয় ত্যাজ্য বিত্তভোগী একমাত্র ওয়ারিশ বিদ্যমান রাখিয়া পরলোক গমন করেন।
(ঙ) পরবর্তীতে বর্ণিত আমির হোসেনের ওয়ারিশ অর্থাৎ বাদীনি এবং ২ নং হইতে ৬ নং বিবাদীগণ তাহাদের স্ব স্ব অংশে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় সিটি জরীপ আমলে আসিলে তাহাদের নামে সিটি খতিয়ান নম্বর ২৬ এবং দাগ নম্বর ১০২৭ রেকর্ড করাইয়া এবং তাহাদের নামে নামজারী জমাভাগ কেস নম্বর ১৩৫৮২/০৭ তারিখে ০২/০৭/২০০৮ ইং মোতাবেক নামজারী করিয়া ভোগ ০১ দখলে রত থাকেন।
(চ) অতঃপর বাদিনী ও ২ হইতে ৭নং বিবাদীগণ বর্ণিত আমির হোসেনের ত্যাজ্য সম্পত্তি অর্থাৎ নালিশী সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে মৌখিকভাবে বন্টন করিয়া লইলে সর্ব পূর্বের অংশ বাদিনী এবং উহার পশ্চিমের অংশ ৭নং বিবাদী মোঃ দেলোয়ার হোসেন এবং তাহার পশ্চিমের অংশ মোঃ আনোয়ার হোসেন এবইভাবে বণ্টন করিয়া লন এবং ভোগ দখলে রত থাকেন।
(ছ) অতঃপর বাদিনী এবং ২ হইতে ৭নং বিবাদীগণ তাহাদের স্বত্ব দখলীয় নালিশী সম্পত্তিসহ বাদিনীর এবং ৭নং বিবাদীর অংশ সাফ বিক্রয়ের নিমিত্তে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিলে অত্র বিবাদী উহা জানিতে পারিয়া উক্ত সম্পত্তি উপযুক্ত মূল্যে খরিদ করিতে সম্মত হন এবং পক্ষদ্বয়ের মধ্যে নালিশী সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের নিমিত্তে মৌখিক কথাবার্তা তথা তাহারা মৌখিকভাবে বায়নাবদ্ধ হন এবং নালিশী সম্পত্তির মূল্য নির্দ্ধারণ হয় =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা।
(জ) অতঃপর মৌখিক বায়নার পোষকতায় নালিশী সম্পত্তির সম্পর্কে বায়নাপত্র রেজিস্ট্রি হইবার তারিখে বাদিনীর গর্ভবর্তী থাকায় এবং তাহার সন্তান প্রসবের সময় আসন্ন হওয়ায় তিনি ঐ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় বাদিনী ছাড়াই ১ ও ২ এবং ৪ হইতে ৭নং বিবাদীগণ কর্তৃক বিগত ২০/০২/২০০৮ তারিখে সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রিকৃত ১৭২৭ নম্বর বায়নানামা তথা বিক্রয়ের চুক্তি দলিল সহি সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রি হয়। উক্ত বায়না তথা বিক্রয়ের চুক্তি দলিলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ তথা শর্ত রহিয়াছে যে নালিশী সম্পত্তির বিক্রয় তথা ক্রয় মূল্য =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা। সুতরাং বাদিনী নালিশী সম্পত্তির যে মূল্য নির্দ্ধারণ করিয়াছেন তাহা অববাস্তব ও ভিত্তিহীন (আছমা কেন বায়না করিয়া দিল না তাহা বলিতে হইবে)।
(ঝ) অতঃপর অত্র বিবাদী নালিশী সম্পত্তি খরিদের জন্য বায়নাবদ্ধ হইয়া নালিশী সম্পত্তি সম্পর্কে কাহারও কোন প্রকার দাবী দাওয়া আছে কি-না তৎবিষয়ে সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য অত্র বিবাদী তাহার আইনজীবী জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম-কে দিয়া বিগত ২৮/০২/০৮ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় একটি আইনগত বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন।
(ঞ) পরবর্তীতে নালিশী সম্পত্তি সম্পর্কে কাহারও কোন দাবী দাওয়া না আসায় অত্র বিবাদী বর্ণিত বায়নাপত্রের পোষকতায় বায়না দাতা ও তাহাদের অপর ২ ভগ্নি যথাক্রমে বাদিনী ও ৩নং বিবাদী- কে প্রয়োজনীয় সাফ কবলা দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দিতে বলিলে বাদিনী ও ৭নং বিবাদী তাহাদের কি অসুবিধার কারণে তাহাদের অংশ সম্পর্কে সাফ কবলা দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দিতে পারেন নাই। তবে ২ হইতে ৬নং বিবাদীগণ বিগত ২৩/০৯/০৮ তারিখে সম্পাদিত ও রেজিস্ট্রিক্ত ২০০৯ সনের ১০১৩২ নম্বর সাফ কবলা দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দেন এবং ঐদিনই নালিশী সম্পত্তির খাস দখল অত্র বিবাদীর বরাবরে বাদীনি ও ৭নং বিবাদীসহ স্থানীয় আরও গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বুঝ্যাইয়া দেন। প্রসঙ্গতঃ বলা আবশ্যক, বাদীনি এবং তাহার ভ্রাতা ৭নং বিবাদী ঐদিনও অত্র বিবাদীর নিকট স্বীকার করেন যে অনতি বিলম্বে তাহারা তাহাদের অংশ বিবাদীকে প্রয়োজনীয় সাফ কবলা দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দিবেন। সুতরাং বাদিনী যেখানে নালিশী সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের বিষয় শুরু হইতেই অবগত ছিলেন এবং বিক্রয়ের পর পরই তিনি তাহার হক সাফার দাবী করেন নাই পরবর্তীতে তাহার উক্তরূপ দাবী তামাদি আইনে বারিত। প্রসঙ্গতঃ বলা আবশ্যক, অত্র বিবাদী নালিশী সম্পত্তি =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা দিয়া খরিদ করিলেও সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক বিবাদীকে জানান যে, নালিশী মৌজায় সরকারী যে মূল্য তালিকা আছে সেই মোতাবেক তিনি নালিশী সম্পত্তির মূল্য =১৫,০০,০০০/ (পনের লক্ষ) টাকা ধরিয়া তাহার খরিদা সাফ কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি করিতে পারেন। পরবর্তীতে অত্র বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার সাহেবের সহিত আলোচনা করিলে তিনি জানান যে যেহেতু বিবাদী সরাকারী মূল্য তালিকা অনুযায়ী তাহার দলিল রেজিস্ট্রি করিতেছেন সুতরাং তাহার কোন অসুবিধার কারণ নাই। ফলে বিবাদী নালিশী সম্পত্তি =৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা দিয়া খরিদ করিলেও সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক ও সাব-রেজিস্ট্রার সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী নালিশী সম্পত্তির মূল্য =১৫,০০,০০০/ (পনের লক্ষ) টাকা উল্লেখে তাহার খরিদা দলিলটি রেজিষ্ট্রি করাইতে বাধ্য হন যাহা বাদিনী এবং তাহার অপর ভ্রাতা ৭নং বিবাদী শুরু হইতেই অবগত আছেন।
(ট) পরবর্তীতে ৭নং বিবাদীকে তাহার সম্পাদিত বিগত ২০/০২/০৮ তারিখের সম্পাদিত বায়নাপত্র অনুযায়ী তাহার অংশ এবং তাহার ভগ্নি অর্থাৎ বাদিনীর অংশ সম্পর্কে অত্র বিবাদীর অনুকূলে প্রয়োজনীয় সাফ কবলা দলিল সহি সম্পাদন করিয়া দিতে বলিলে ৭নং বিবাদী অত্র বিবাদীর নিকট অধিক টাকা দাবী করিলে অত্র বিবাদী ও ৭নং বিবাদীর সহিত কিছুটা কথা কাটাকাটি হয় এবং ৭নং বিবাদী অত্র বিবাদীকে দেখাইয়া দিবে বলিয়া হুমকী দেয়। পরবর্তীতে ৭নং বিবাদী অত্র বিবাদীকে ঘায়েল করিবার অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা বর্ণনা তথা অভিযোগ দিয়া তাহার ভগ্নি বাদিনীকে দিয়া অত্র বিবাদী নালিশী সম্পত্তি ৪২,০০,০০০/ (বিয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা দিয়া খরিদ করিয়াছে তাহা জানা স্বত্বেও =১৫,০০,০০০/ (পনের লক্ষ) টাকা মূল্য নির্দ্ধারণ করিয়া যোগ সাজসীভাবে তলব-ই-মুয়াসিবত ও তলব-ই-ইসাদ পরিপালন না করিয়া বর্তমান মোকদ্দমাটি আনায়ন করিয়াছে যাহা খারিজ হইতে বাধ্য ও দায়ী বটে।
২৬। অত্র লিখিত জবাবে বাদিনীর আরজীর যে সকল বর্ণনা তথা অভিযোগ স্পষ্ট করিয়া স্বীকার করা হইল তদ্ভিন্ন অপরাপর অভিযোগ তথা বর্ণনা অত্র বিবাদী কর্তৃক তীব্রভাবে অস্বীকৃত বলিয়া গণ্য হইবে।
অতএব অত্র বিবাদীর বিনীত প্রার্থনা হুজুরাদালত দয়া করিয়া উপরোক্ত মোকদ্দমাটি এই বিবাদীর অনুকূলে দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৫/এ ধারা অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সহ খারিজ করিবার আদেশ দানে সুবিচার করিতে মর্জি হয়।
সত্যপাঠঃ-
অত্র লিখিত জবাবের সকল বর্ণনা আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য এবং আমাদের কথামত লেখা হইয়াছে জানিয়া উহার সত্যতা স্বীকারে আমাদের আইনজীবী সাহেবের চেম্বারে বসিয়া অদ্য ০৫/০৭/০৯ খ্রীষ্টাব্দে অত্র সত্যপাঠে আমি ১নং বিবাদী দস্তখত প্রদান করিলাম।
———————–
সত্যপাঠকারীর স্বাক্ষর