সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করার নিয়ম

সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করার নিয়ম

 

সাইবার ক্রাইম কি:

বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির (Technology) ডিজিটাল ডিভাইস বা যেকোন মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটন করলে তাকে সাইবার ক্রাইম বলা যায়।

 

প্রযোজ্য আইন:

বাংলাদেশে “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮” প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এই আইনটি বিলুপ্ত করা হয়েছে “সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩” প্রণয়ন করে। এখন সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে “সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩” আইনটি প্রযোজ্য হবে। নিম্নে এই আইনের অপরাধ সমূহ ও শাস্তি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:

 

সাইবার অপরাধ ও শাস্তি:

ধারা ১৭:

(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে (Information infrastructure) বে-আইনিভাবে প্রবেশের দন্ড অনধিক ৩(তিন) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

(খ) ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে (Information infrastructure) বে-আইনিভাবে প্রবেশ করে উহার ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করা অথবা কবার চেষ্টা করার দন্ড অনধিক ৬(ছয়) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ১৮:

(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বে-আইনি প্রবেশ করলে বা প্রবেশ করতে সহায়তা করার দন্ড অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

(খ) কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে বে-আইনি প্রবেশ করলে বা প্রবেশ করতে সহায়তা করার দন্ড অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ১৯:

(ক) কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হতে কোনো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কোনো ধরনের সংক্রামক, ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করার দন্ড অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২০: কম্পিউটার সিস্টেমে বা নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কম্পিউটার সোর্স কোড গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করার বা কবার চেষ্টা করার দন্ড অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২১: মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২২: ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতির অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৩: ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণার দন্ড অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৪: ডিজিটাল সিস্টেমে পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ করার দন্ড অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৫: ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদির দন্ড অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৬: অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দণ্ড অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৭: সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘট অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা উহার কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করার দণ্ড অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৮: ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার দন্ড অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ২৯: মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদির দন্ড অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড।

 

ধারা ৩০: আইনানুগ কৰ্তৃত্ব বহির্ভূত ই-ট্রানজেকশনের দণ্ড অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড।

 

ধারা ৩১: আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির দণ্ড অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ৩২: হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধের দণ্ড অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

 

ধারা ৩৩:  অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও উহার দণ্ড মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সেই দণ্ড।

 

ধারা ৩৪: মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়ের, ইত্যাদির দন্ড মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রইয়েছে সেই দণ্ড।

 

ধারা ৩৫: কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মালিক, প্রধান নির্বাহী, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা প্রতিনিধি উক্ত কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানিকে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাবে, তবে উহার উপর সংশ্লিষ্ট বিধান মোতাবেক কেবল অর্থদণ্ড আরোপযোগ্য হবে।

 

সাইবার অপরাধের শিকার হলে করণীয়:

(১) প্রাথমিকভাবে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করা যায়।

(২) Police Cyber Support for Women (PCSW) নামক ফেইসবুক পেইজে মেসেজ দিয়ে অভিযোগ করা যায়। এই ক্ষেত্রে cybersupport.women@police.gov.bd বা cyberhelp@dmp.gov.bd  এই দুইটি ঠিকানায় ইমেইল করা যায়।

 

(৩) পুলিশ সদর দফতরের (police Head Quarter) ০১৩২০০০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে।

 

(৪) হটলাইন নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করেও অভিযোগ করা যাবে।

 

(৫) এছাড়া ডিএমপি এর কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে এসে সরাসরি কথা বলা যাবে। এখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে এই নাম্বারে-০১৭৬৯৬৯১৫২২ যোগাযোগ করা যাবে। ঠিকানা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ৩৬, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা।

 

প্রয়োজনীয় প্রমাণ:

(১) আলামতের স্ক্রীনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস।

(২) স্ক্রীনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন Address Bar এর URL টি দৃশ্যমান হয়।

 

অভিযোগ করার পদ্ধতি:

(১) ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ করতে চাইলে সকল ডকুমেন্ট এটাচ করে আপলোড করতে হবে।

(২) প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা করা যাবে।

 

তদন্ত পদ্ধতি:

সাইবার ক্রাইম মামলার তদন্ত করবেন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নে নহেন এই রূপ কোন পুলিশ অফিসার।

 

আইনি পরামর্শ বা সহায়তা:

আইনি পরামর্শ বা সহায়তার প্রয়োজন হলে নিশ্চিন্তায় যোগাযোগ করুন:

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *