দেওয়ানী কার্যবিধির সহজ নোট (১-৫০ ধারা)

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure, 1908) 

ধারা ১ – ৫০

দেওয়ানী কার্যবিধির পটভূমি:

সর্বপ্রথম দেওয়ানী কার্যবিধি প্রণীত হয় ১৮৫৯ সালে। অন্যভাবে বলা যায়, সর্বপ্রথম সিভিল কোড সংক্রান্ত পদ্ধতিগত আইন বিধিবদ্ধ (Codified) হয় ১৮৫৯ সালে।

দিতীয়বার প্রণীত হয় ১৮৭৮ সালে।

তৃতীয়বার প্রণীত হয় ১৮৮২ সালে।  (১৮৮২ সালের আইনে মোট ধারা ছিল ৬৫৩ টি)

চতুর্থবার/সর্বশেষ/বর্তমান দেওয়ানী কার্যবিধি প্রণীত হয় ১৯০৮ সালে যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারী ১৯০৯ সাল থেকে। দেওয়ানী কার্যবিধি এক প্রকার Code বা সংবিধি। এটি এক প্রকার পদ্ধতিগত আইন/ Adjective  Law/ Procedural Law. তবে ইহা নিছক/কেবলমাত্র পদ্ধতিগত আইন নহে বরং মূল আইন এবং পদ্ধতিগত আইনের সংমিশ্রন।

 

মূল আইন (Substantive Law):

যে আইন জনগণের পরস্পরের মধ্যে অধিকার ও দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করে তাহাকেই বলা হয় মূল আইন। যেমনঃ চুক্তি আইন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, দন্ডবিধি ইত্যাদি।

 

পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law/Adjective Law):

মূল আইনকে বাস্তবে প্রয়োগের জন্য যে আইনের সাহায্য নিতে হয় তাহাকেই বলা হয় পদ্ধতিগত। যেমন: দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন ইত্যাদি

 

প্রাথমিক তথ্য:

আইন নং – ৫  (১৯০৮ সালের আইন)
প্রস্তাবনা – ১টি
অধ্যায় – ১১টি
মোট ধারা (Section) – ১৫৮ টি
আদেশ (Order) – ৫১ টি   (১ম তফসীলে)
পরিশিষ্ট (Appendix) – ৮টি   (১ম তফসীলে)
তফসীল (Schedule) – ৫টি
সর্বপ্রথম বিধিবদ্ধ হয় – ১৮৫৯ সালে
প্রণীত/প্রকাশিত হয় – ২১ মার্চ ১৯০৮
কার্যকর হয় – ১ জানুয়ারী ১৯০৯
সর্বশেষ সংশোধনী হয় – ২০১২ সালে (ধারা ৮৯ক, ৮৯খ, ৮৯গ, ৮৯ঘ ও ৮৯ঙ)
দেওয়ানী কার্যবিধি একটি – পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law/ Adjective Law)

ধারা ১: সংক্ষিপ্ত শিরোনাম,  সীমা ও শুরু ।

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম (Short title): দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure 1908)

সীমা/আওতা (Extent): সমগ্র বাংলাদেশ

শুরু/আরম্ভ/প্রবর্তন/কার্যকর (Commencement): ১ জানুয়ারি ১৯০৯

 

ধারা ২: সঙ্গাসমুহ (Definitions)

ধারা (): বিধি (Code): বিধি (Code) অন্তর্ভূক্ত করে বিধিমালাকে।  

ধারা (): ডিক্রি (Decree): ডিক্রি হচ্ছে আদালতের কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত (Formal adjudication) যাহা মোকদ্দমার তর্কিত সকল বিষয় বা যেকোনো একটি বিষয় পক্ষগণের অধিকার চুড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে।

 

আরজি বাতিল/খারিজ/প্রত্যাখান/নাকচ (Rejection of a plaint) এবং ১৪৪ ধারায় প্রদত্ত আদালতের সিদ্ধান্ত/প্রত্যর্পণ (Restitution) বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত ডিক্তি বলিয়া বিবেচিত হইবে

 

যা ডিক্তি বলিয়া বিবেচিত হইবে (Deemed as Decree):

(১) ৭ আদেশের ১১ বিধি মোতাবেক আরজি খারিজ/ বাতিল/প্রত্যাখান/নাকচ (Rejection of a plaint)

(২) ১৪৪ ধারায় প্রদত্ত আদালতের সিদ্ধান্ত/প্রত্যর্পণ (Restitution)

 

যা ডিক্রি বলিয়া বিবেচিত হইবেনা (Not deemed as Decree):

(১) আপীলযোগ্য আদেশসমূহ (Appealable order), (৪৩ আদেশে ও ১০৪ ধারায় উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহ যেমন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ, আরজি ফেরতের আদেশ ইত্যাদি)

(২) নির্দেশ প্রতিপালনে ব্যর্থতার নিমিত্তে খারিজ আদেশ। যেমন শুনানীর জন্য নির্ধারিত দিনে বাদী হাজির না হইলে আদালত মোকদ্দমা খারিজের আদেশ দিলে।

 

ডিক্রি প্রধানত ৩ প্রকার। যথা:

(ক) প্রাথমিক ডিক্রি (Preliminary Decree): যখন ডিক্রির বিষয়ে কোনো কিছু বাকি থাকে তাহাকে বলা হয় প্রাথমিক ডিক্রি।

(খ) চুড়ান্ত ডিক্রি (Final Decree): যখন ডিক্রির বিষয়ে আর কিছু বাকি থাকেনা তখন তাহাকে বলা হয় চুড়ান্ত ডিক্রি।

(গ) আংশিকভাবে প্রাথমিক ও আংশিকভাবে চুড়ান্ত ডিক্রি।

 

ইহা ছাড়াও এই বিধি মোতাবেক আরো ৩ প্রকার ডিক্রি আছে। যথা:

(I) দু’তরফা ডিক্রি (Contestant Decree) [ধারা ২(২)]

(II) এক তরফা ডিক্রি (Ex parte Decree) [৯ আদেশ ৬ বিধি]

(III) সোলেনামা ডিক্রি (Compromised Decree) [২৩ আদেশ ৩ বিধি]

 

২(২) ধারা মোতাবেক যা ডিক্রি বলিয়া বিবেচিত হইবে (Deemed as Decree):

  • প্রাথমিকডিক্রি (Preliminary Decree)
  • চুড়ান্তডিক্রি (Final Decree)
  • আংশিক প্রাথমিকও আংশিক চুড়ান্ত ডিক্রি (Partial Preliminary and partial Final Decree)
  • একতরফা ডিক্রি (Ex parte Decree)  [৯ আদেশ ৬ বিধি]
  • দু’তরফাডিক্রি (Contestant Decree)  [ধারা ২(২)]
  • সোলেনামাডিক্রি (Compromised Decree)  [২৩ আদেশ ৩ বিধি]
  • আরজি খারিজ(Rejection of Plaint) [৭ আদেশের ১১ বিধি মোতাবেক]
  • প্রত্যর্পণ (Restitution) ডিক্রি বা ১৪৪ ধারায় প্রদত্ত ডিক্রি।

 

ধারা ২(৩): ডিক্রিদার (Decree Holder):

আদালত যেই পক্ষের অনুকূলে ডিক্রি প্রদান করেন সেই পক্ষকে বলা হয় ডিক্রিদার।

 

ধারা (): বিচারক (Judge) : দেওয়ানী আদালতের Presiding Officer কে বলা হয় বিচারক।

 

ধারা (১০): সাব্যস্ত দেনাদার/দায়িক/ঘাতক (Judgement Debtor): আদালত যে পক্ষের প্রতিকূলে ডিক্রি প্রদান করেন সেই পক্ষকেই বলা হয় সাব্যস্ত দেনাদার।

 

ধারা (১১): বৈধ প্রতিনিধি (Legal Representative): কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি যাহার উপর ন্যস্ত হয় বা যিনি উক্ত সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন বা যিনি মৃত ব্যক্তির পক্ষে মোকদ্দমা করিতে পারিবেন তাহাকেই বলা হয় বৈধ প্রতিনিধি।

 

ধারা (১২): অন্তর্বর্তীকালীন মুনাফা (Mesne Profit): বে-আইনী দখলদার ব্যক্তি কর্তৃক তাহার দখলকৃত সম্পত্তি হইতে অর্জিত মুনাফাকে সুদসহ বলা হয় অন্তর্বর্তীকালীন মুনাফা। তবে বে-আইনী দখলকার কর্তৃক সম্পত্তির উন্নয়নের ফলে অর্জিত মুনাফা ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না।

 

ধারা (১৪): আদেশ (Order) : আদেশ হইলো আদালতের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত যাহা ডিক্রি নহে। যেমন আরজি ফেরতের আদেশ, রায়ের পূর্বে সম্পত্তি ক্রোক বা আটকের সিদ্ধান্ত।

 

আদেশ ২ প্রকার হইতে পারে। যেমন-

(১) আপীলযোগ্য আদেশ (Appealable order): যে আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায় তাহাকে আপীলযোগ্য আদেশ বলা হয়। ৪৩ আদেশ ও ১০৪ ধারায় উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহ আপীলযোগ্য আদেশ। যেমন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ, আরজি ফেরতের আদেশ ইত্যাদি]

(২) আপীল অযোগ্য আদেশ (Non-appealable order): যে আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায় না তাহাকে আপীল অযোগ্য আদেশ বলা হয়। ৪৩ আদেশ ও ১০৪ ধারায় উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহ ব্যতিত অন্যান্য আদেশ আপীল অযোগ্য আদেশ।

 

ধারা ২(১৫): উকিল (Pleader) : যিনি অন্যের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকিতে ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করিতে অধিকারী তাহাকেই বলা হয় উকিল।

 

ধারা ২(১৮): বিধিমালা (Rules).

 

আরজি (Plaint): ঘটনার বিবরণ, মোকদ্দমার কারণ ও প্রতিকার চাহিয়া যে দরখাস্ত মূলে দেওয়ানী মোকদ্দমা রুজু করা হয় তাহাকে বলা হয় আরজি। আরজির শুরুতে থাকবে সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম এবং শেষে থাকবে সত্যপাঠ (Varification)। আরজিতে সাক্ষর থাকবে বাদী ও আইনজীবীর (যদি থাকে)। সত্যপাঠে সাক্ষর থাকিবে বাদী বা যিনি ঘটনা সম্পর্কে অবগত।

 

মোকদ্দমা (Suit): আরজির (Plaint) মাধ্যমে যেটি রুজু করা হয় তাকে বলা হয় মোকদ্দমা (Suit)। আরজির শেষে থাকিবে সত্যপাঠ (Varification)।

 

বিবিধ মোকদ্দমা (Miscellaneous suit): দরখাস্তের মাধ্যমে যেটি রুজু করা হয় তাকে বলায় হয় বিবিধ মোকদ্দমা (Miscellaneous suit)। দরখাস্তের শেষে থাকিবে হলফনামা (Affidavit)

 

আপীল (Apeal): নিম্ন আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপত্তি দাখিল করাকে বলা হয় আপীল (Apeal)। মেমোরেন্ডামের (Memoramdum) মাধ্যমে আপীল (Apeal) রুজু করা।

 

বিবিধ আপীল (Miscellaneous Apeal): নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপত্তি দাখিল করাকে বলা হয় বিবিধ আপীল (Misc / Miscellaneous Apeal)

 

দেওয়ানী কার্যবিধিতে উল্লেখিত ধারা ও আদেশের পার্থক্যঃ

ক্রমিক ধারা আদেশের
1. ধারা আছে ১৫৮ টি আদেশ আছে ৫১ টি
2. ধারার ইংরেজি প্রতিশব্দ Section আদেশের ইংরেজি প্রতিশব্দ Order
3. ধারা সংশোধন করিতে পারে জাতীয় সংসদ

(সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক)

আদেশ সংশোধন করিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট (১২২ ধারা মোতাবেক)
4. ধারার মধ্যে উপধারা (Sub-section) আছে আদেশের মধ্যে বিধি (Rules) আছে

 

 

ধারা : আদালতের পর্যায়ক্রম বা অধীনতা (Subordination of Court).

জেলা জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের অধীন। জেলা জজ আদালতের অধস্তন সকল আদালত ও স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতসহ সকল আদালত জেলা জজের অধীন এবং হাইকোর্টের অধীন।

 

এই ধারা অনুযায়ী:

জেলা জজের অধস্তন আদালত:

সহকারি জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, যুগ্ম জেলা জজ আদালত, অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত ও স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত।

 

হাইকোর্টের অধস্তন আদালত:

সহকারি জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, যুগ্ম জেলা জজ আদালত, অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, জেলা জজ ও স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত,

 

দেওয়ানী আদালতের প্রকারভেধঃ

 

The Civil court (Amendment) Act 2001 এর ৩ ধারা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন দেওয়ানী আদালত ৫ প্রকার। যথা:

(I) জেলা জজ আদালত (District Judge Court)

(II) অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত (Additional District Judge Court)

(III) যুগ্ম জেলা জজ আদালত (Joint District Judge Court)/(অর্থঋণ আদালত)

(IV) সিনিয়র সহকারী জজ আদালত (Senior Assistance Judge Court) /(স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত) [পুর্বের নাম সাব জজ]

(V) সহকারী জজ আদালত (Assistance Judge Court) /(পারিবারিক আদালত)

[পুর্বের নাম মুনসেফ কোর্ট]

 

ধারা ৫: রাজস্ব আদালতে দেওয়ানী কার্যবিধির প্রয়োগ।

(১) সরকারী গেজেট বিজ্ঞপ্তি দ্বারা ঘোষিত না হইলে রাজস্ব আদালতে দেওয়ানী কার্যবিধির প্রয়োগ হইবে না।

(২) আইন অনুসারে কৃষি কার্যে ব্যবহৃত জমির খাজনা, রাজস্ব বা মুনাফা সম্পর্কে মামলা বা কার্যক্রম গ্রহণের এখতিয়ার যে আদালতের আছে তাকে রাজস্ব আদালত (Revenue Court) বলে।

 

এখতিয়ার/অধিক্ষেত্র/ক্ষমতা (Jurisdiction):

আদালত কর্তৃক মোকদ্দমা গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাকে বলা হয় এখতিয়ার। এখতিয়ার সাধারণত ৩ প্রকার। যথা:

(I) বিষয়বস্তুর এখতিয়ার (Jurisdiction of Subject Matter)

(II) আঞ্চলিক/স্থানিয় এখতিয়ার (Teritorial/ Local Jurisdiction)

(III) আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction)

 

ইহা ছাড়াও আরও ২ প্রকার এখতিয়ার রয়েছে। যথাঃ

(IV) আদি/মূল এখতিয়ার (Original Jurisdiction)

(V) আপীল এখতিয়ার (Appellate Jurisdiction)

 

(I) বিষয়বস্তুর এখতিয়ার (Jurisdiction of Subject Matter):

দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, “যে মোকদ্দমায় সম্পত্তি বা পদের অধিকার নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা হয় তাকে দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা বলা হয়”। সুতরাং সম্পত্তি বা পদের অধিকার হইতেছে দেওয়ানী মোকদ্দমার বিষয়বস্তু। অত্র বিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে “নিষেধ না থাকিলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমার বিচার করিবেন”। সুতরাং বলা যায় যে, দেওয়ানী আদালতের সকল দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমার বিচার করিবার এখতিয়ার আছে।

 

(II) আঞ্চলিক/স্থানীয় এখতিয়ার (Teritorial/ Local Jurisdiction):

মোকদ্দমার বিষয়বস্তু যেই স্থানে অবস্থিত মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইবে সেই স্থানের আদালতে। ইহাই আঞ্চলিক/স্থানীয় এখতিয়ার।

 

(III) আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction):

কোন আদালত কত টাকা মূল্যমানের মোকদ্দমার বিচার করিতে পারিবেন তাহা “দেওয়ানী আদালত আইন, ১৮৮৭” (Civil Courts Act, 1887) এর ১৯ ধারায় স্পষ্ট বিধান বর্ণিত আছে। উক্ত The Civil courts Act, 1887 এর ১৯ ধারা অনুযায়ী আর্থিক এখতিয়ারসমুহ নিম্নরূপ –

(I)  জেলা জজ আদালত – আপীল এখতিয়ার ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত

– পুর্বে ছিল ৫ লক্ষ টাকা

– আদি এখতিয়ার নাই।

(II) অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত – সরাসরি কোনো মোকদ্দমা গ্রহণ করিতে পারে না।

– জেলা জজ কোন মামলা বদলী করিলে তিনি বিচার করেন।

(III) যুগ্ম জেলা জজ আদালত – ২৫ লক্ষ টাকার উর্ধ্ব মূল্যমান

– পুর্বে ছিল ৪ লক্ষ টাকা।

(IV) সিনিয়র সহকারী জজ আদালত – ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

– পুর্বে ছিল ৪ লক্ষ টাকা।

(V) সহকারী জজ আদালত – ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

– পুর্বে ছিল ২ লক্ষ টাকা।

 

বর্তমান আর্থিক এখতিয়ারটি ১২ই মে ২০১৭ সালে সংশোধন করা হইয়াছে। কিন্তু ইহা হাইকোর্ট স্থগিত করিয়াছিলেন। ২০২১ সালের আইন দ্বারা পূনরায় সংশোধন করা হইয়াছে।

(IV) আদি/মূল এখতিয়ার (Original Jurisdiction):

সরাসরি কোনো মোকদ্দমা গ্রহণ করার অধিকারকে বলা হয় আদি/মূল এখতিয়ার। এই আদি/মূল এখতিয়ার আছে সহকারী জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও যুগ্ম জেলা জজ আদালতের।

 

(V) আপীল এখতিয়ার (Appellate Jurisdiction)

নিম্ন আদালতের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হইলে উক্ত রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিকার চাহিয়া উচ্চ আদালতে যে মামলা দায়ের করা হয় তাহাকেই বলা হয় আপীল। আপীল এখতিয়ার আছে জেলা জজ আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগের।

 

দেওয়ানী আদালতের প্রকারভেধঃ

দেওয়ানী আদালতের প্রকারভেধ সম্পর্কে “দেওয়ানী আদালত আইন, ১৮৮৭” (Civil Courts Act, 1887) এর ৩ ধারায় বর্ণনা করা হইয়াছে। উক্ত ধারা মোতাবেক দেওয়ানী আদালত ৫ প্রকার। যথাঃ

(I)  জেলা জজ আদালত (Court of District Judge)

(II) অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত (Court of Additional District Judge)

(III) জুগ্ম জেলা জজ আদালত (Court of Joint District Judge)

(IV) সিনিয়র সহকারী জজ আদালত (Court of Senior Assistant Judge)

(V) সহকারী জজ আদালত (Court of Assistant Judge)

 

এখতিয়ার/অধিক্ষেত্র/ক্ষমতা (Jurisdiction):

আদালত কর্তৃক মোকদ্দমা গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাকে বলা হয় এখতিয়ার। এখতিয়ার সাধারণত ৩ প্রকার। যথা:

(I) বিষয়বস্তুর এখতিয়ার (Jurisdiction of Subject Matter)

(II) আঞ্চলিক/স্থানিয় এখতিয়ার (Teritorial/ Local Jurisdiction)

(III) আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction)

 

ইহা ছাড়া আরও ২ প্রকার এখতিয়ার রহিয়াছে। যথাঃ

(IV) আদি/মূল এখতিয়ার (Original Jurisdiction)

(V) আপীল এখতিয়ার (Appellate Jurisdiction)

 

(I) বিষয়বস্তুর এখতিয়ার (Jurisdiction of Subject Matter):

দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, “যে মোকদ্দমায় সম্পত্তি বা পদের অধিকার নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা হয় তাকে দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা বলা হয়”। সুতরাং সম্পত্তি বা পদের অধিকার হইতেছে দেওয়ানী মোকদ্দমার বিষয়বস্তু। অত্র বিধির ৯ ধারায় বলা হয়েছে “নিষেধ না থাকিলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমার বিচার করিবেন”। সুতরাং বলা যায় যে, দেওয়ানী আদালতের সকল দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমার বিচার করিবার এখতিয়ার আছে।

 

(II) আঞ্চলিক/স্থানীয় এখতিয়ার (Teritorial/ Local Jurisdiction):

মোকদ্দমার বিষয়বস্তু যেই স্থানে অবস্থিত মোকদ্দমা দায়ের করিতে হইবে সেই স্থানের আদালতে। ইহাই আঞ্চলিক/স্থানীয় এখতিয়ার।

 

(III) আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction):

কোন আদালত কত টাকা মূল্যমানের মোকদ্দমার বিচার করিতে পারিবেন তাহা “দেওয়ানী আদালত আইন, ১৮৮৭” (Civil Courts Act, 1887) এর ১৯ ধারায় স্পষ্ট বিধান বর্ণিত আছে। উক্ত The Civil courts Act, 1887 এর ১৯ ধারা অনুযায়ী আর্থিক এখতিয়ারসমুহ নিম্নরূপ –

(I)  জেলা জজ আদালত – আপীল এখতিয়ার ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত

– পুর্বে ছিল ৫ লক্ষ টাকা

– আদি এখতিয়ার নাই।

(সরাসরি কোনো মোকদ্দমা গ্রহণ করিতে পারে না।)

(II) অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত – আদি এখতিয়ার নাই

(সরাসরি কোনো মোকদ্দমা গ্রহণ করিতে পারে না।)

– জেলা জজ কোন মামলা বদলী করিলে তিনি বিচার করেন।

(III) যুগ্ম জেলা জজ আদালত – ২৫ লক্ষ টাকার উর্ধ্ব মূল্যমান

– পুর্বে ছিল ৪ লক্ষ টাকা।

(IV) সিনিয়র সহকারী জজ আদালত – ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

– পুর্বে ছিল ৪ লক্ষ টাকা।

(V) সহকারী জজ আদালত – ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

– পুর্বে ছিল ২ লক্ষ টাকা।

 

বর্তমান আর্থিক এখতিয়ারটি ১২ই মে ২০১৭ সালে সংশোধন করা হইয়াছে। কিন্তু ইহা হাইকোর্ট স্থগিত করিয়াছিলেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের আইন দ্বারা পূনরায় সংশোধন করা হইয়াছে বিধায় বর্তমানে উপরে উল্লেখিত আর্থিক এখতিয়ার প্রচলিত আছে।

 

(IV) আদি/মূল এখতিয়ার (Original Jurisdiction):

সরাসরি কোনো মূল মোকদ্দমা গ্রহণ করার অধিকারকে বলা হয় আদি/মূল এখতিয়ার (Original Jurisdiction)। এই আদি/মূল এখতিয়ার আছে সহকারী জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও যুগ্ম জেলা জজ আদালতের।

 

(V) আপীল এখতিয়ার (Appellate Jurisdiction)

নিম্ন আদালতের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হইলে উক্ত রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিকার চাহিয়া উচ্চ আদালতে যে মামলা দায়ের করা হয় তাহাকেই বলা হয় আপীল। আপীল এখতিয়ার আছে জেলা জজ আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগের।

 

ধারা ৬: আর্থিক এখতিয়ার (Pecuniary Jurisdiction).

কোনো আদালত তার জন্য নির্ধারিত আর্থিক এখতিয়ারের অতিরিক্ত মূল্যমানের মোকদ্দমা সে গ্রহণ করিতে পারিবে না।

 

ধারা ৭: স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত (Small Causes Court)

স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ও ধারাগুলি প্রযোজ্য হইবে না।

(১) ক্ষুদ্র বিষয়ক বিচার আদালতে বিচার এখতিয়ার বহির্ভুত মোকদ্দমা।

(২) এইরূপ মামলার ডিক্রি জারি।

(৩) স্থাবর সম্পত্তির ডিক্রি জারি।

(৪) দেওয়ানী কার্যবিধির ৯, ৯১, ৯২, ৯৪, ৯৫, ৯৬-১১২, ১১৫ ধারার বিধান

 

স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত পরিচালিত হয় The Small Cause Courts Act, 1887 (স্বল্প এখতিয়ার আদালত আইন ১৮৮৭) আইন দ্বারা।

 

ধারা : সাধারণ এখতিয়ার।

নিষেধ না থাকিলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমার বিচার করিবেন।

 

ব্যাখ্যাঃ যে মোকদ্দমায় সম্পত্তি বা পদের অধিকার নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা হয় তাকে দেওয়ানী প্রকৃতির মোকদ্দমা বলা হয়। এই অধিকার ধর্মীয় কার্য বা উৎসব সম্পর্কিত প্রশ্নের মীমাংসার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিলেও তাহার ফলে দেওয়ানী প্রকৃতি নষ্ট হয় না।

 

ধারা ১৩: কখন বিদেশী রায় চুড়ান্ত নয়।

বিদেশী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায় চুড়ান্ত বলিয়া অভিহিত হইবে। তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ছাড়া:

(ক) এখতিয়ার বিহীন আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হইলে

(খ) মোকদ্দমার গুনাগুণের উপর ভিত্তি করিয়া রায় দেওয়া না হইলে

(গ) আন্তর্জাতিক আইনের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা কিংবা বাংলাদেশের আইন অস্বীকার করিয়া রায় দেওয়া হইলে

(ঘ) ন্যায়বিচার বহির্ভূত হইলে

(ঙ) প্রতারণা মারফত রায় লাভ করিলে

(চ) বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী কোনো দাবি রায়ে বজায় রাখা হইলে।

 

ধারা ১৪: বিদেশী রায় সম্পর্কে অনুমান।

বিদেশী রায়ের সত্যায়িত নকল বলিয়া কথিত কোনো দলিল কোনো আদালতে দাখিল করা হইলে এবং বিপরীত কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলে, আদালত ধরিয়া নিবেন যে, রায়টি উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতই প্রদান করিয়াছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ার ছিলনা বলিয়া প্রমাণ করা হইলে অনুমানটি খর্ব হইতে পারে।

 

ধারা ২১: এখতিয়ার এ আপত্তি।

এখতিয়ার এর উপর আপত্তি দিতে হইলে মোকদ্দমার শুরুতেই অর্থাৎ বিচার্য বিষয় বির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দিতে হইবে।

 

ধারা ২২: একাধিক আদালতে মোকদ্দমা রুজু করা যায় এইরূপ মোকদ্দমা স্থানান্তরের ক্ষমতা।

যে মোকদ্দমা দুই বা ততধিক আদালতে দায়ের করা যায় এবং তার ভিতর যেকোনো একটিতে রুজু করা হয় সেই মোকদ্দমা স্থানান্তরের জন্য যেকোনো বিবাদী অপর পক্ষকে নোটিশ দিয়ে প্রথম সম্ভাব্য সুযোগে (At the earliest possible opportunity) অথবা বিচার্য বিষয় (Facts in issue) নির্ধারণের সময় বা তার পূর্বে অপর একটি আদালতে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেত পারবে। আদালত এইরূপ আবেদন পাওয়ার পর অপর পক্ষের আপত্তি (যদি থাকে) শ্রবণ করে এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতসমূহের কোনটিতে অগ্রসর হবে তা স্থির করে দিবেন।

এই ধারার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমুহ:

১। শুধুমাত্র বিবাদী এই ধারায় আবেদন করতে পারবে।

২। শধুমাত্র মোকদ্দমা স্থানান্তর করা যাবে।

৩। মোকদ্দমাটি দুই বা ততধিক আদালতে দায়েরযোগ্য হতে হবে।

৪। অপর পক্ষকে নোটিশ দিতে হবে।

৫। প্রথম সম্ভাব্য সুযোগে অথবা বিচার্য বিষয় নির্ধারণের সময় বা তার পূর্বে।

 

ধারা ২৩: মোকদ্দমা স্থানান্তরের জন্য যে আদালতে আবেদন করা যায়।

১। একই জেলার এক আদালত হতে অন্য আদালতে মোকদ্দমা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে হবে একই জেলা আদালতে।

২। এক জেলা হতে অন্য জেলায় মোকদ্দমা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করতে হবে হাই কোর্ট বিভাগে।

ব্যতিক্রম হলো, মোকদ্দমার বিষয়বস্তুর মূল্য ৫ কোটি টাকার উর্দ্ধ মূল্যমান হলে সেইক্ষেত্রে এক যুগ্ম জেলা জজ হতে মোকদ্দমা একই জেলা কিংবা ভিন্ন জেলার অন্য যুগ্ম জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আবেদন করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে।

 

ধারা ২৪: স্থানান্তর (Transfer) ও প্রত্যাহার (Withdrawal) এর সাধারণ ক্ষমতা।

হাইকোর্ট বিভাগ বা জেলা জজ আদালত কোনো পক্ষের আবেদন ক্রমে অন্য পক্ষকে নোটিশ দিয়ে, তাহার কোনো বক্তব্য থাকলে শুনে কিংবা কোনো পক্ষকে কোনো নোটিশ না দিয়ে স্বঃতপ্রবৃত্ত হয়ে বা স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়ে মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে নিম্নলিখিতভাবে মোকদ্দমা/আপীল/অন্য কোনো কার্যক্রম স্থানান্তর বা প্রত্যাহার করতে পারেন-

(ক) নিজের আদালতে বিচারাধীন মোকদ্দমা/আপীল এখতিয়ার সম্পন্ন অধস্তন যেকোনো আদালতে প্রেরণ করতে পারেন। অথবা

(খ) অধস্তন যেকোনো আদালত হতে মোকদ্দমা/আপীল প্রত্যাহার করে

(I) নিজে নিষ্পত্তি করতে পারেন।

(II) নিষ্পত্তির জন্য অধস্তন যেকোনো আদালতে প্রেরণ করতে পারেন।

(III) যে আদালত হতে প্রত্যাহার করা হয়েছিল পূণরায় সেই আদালতে ও প্রেরণ করতে পারেন।

 

স্থানান্তর বা প্রত্যাহারের আদেশ দানের কারণসমূহ:

সাধারণত ৫টি কারণে আদালত মোকদ্দমা/আপীল স্থানান্তর বা প্রত্যাহারের আদেশ দিতে পারেন। যথা-

(১) ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশংকা থাকলে।

(২) আদালতের পক্ষেপাতমূলক আচরণ থাকলে।

(৩) মামলার বহুত্ব কমানোর জন্য।

(৪) আদালতের কার্যক্রমের অপব্যবহার রোধ করার জন্য।

(৫) পক্ষদ্বয়ের সুবিধার জন্য।

 

এই ধারার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমুহ:

১। বাদী/বিবাদী আবেদন করতে পারবে।

২। মোকদ্দমা/আপীল/অন্য কোনো কার্যক্রম স্থানান্তর বা প্রত্যাহার করা যাবে।

৩। হাইকোর্ট এবং জেলা জজ কোর্ট স্থানান্তর বা প্রত্যাহার করতে পারবে।

৪। স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়ে বা আবেদনক্রমে আদালত স্থানান্তর বা প্রত্যাহার করতে পারবে।

৫। আবেদনক্রমে স্থানান্তর বা প্রত্যাহার করলে অপর পক্ষকে নোটিশ দিতে হবে।

৬। মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে স্থানান্তর বা প্রত্যাহারের আবেদন করা যায়।

 

ধারা ২৬: মোকদ্দমা রুজুকরণ।

আরজির মাধ্যমে কিংবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত হতে পারে এমন কোনো উপায়ে দেওয়ানী মোকদ্দমা রুজু করতে হবে।

[প্রাসঙ্গিক আলয়চনা:]

আরজি (Plaint): ঘটনার বিবরণ, মোকদ্দমার কারণ ও প্রতিকার চাহিয়া যে দরখাস্ত মূলে দেওয়ানী মোকদ্দমা রুজু করা হয় তাহাকে বলা হয় আরজি। আরজির শুরুতে থাকবে সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম এবং শেষে থাকবে সত্যপাঠ (Varification)। আরজিতে সাক্ষর থাকবে বাদী ও আইনজীবীর (যদি থাকে)। সত্যপাঠে সাক্ষর থাকবে বাদী বা যিনি ঘটনা সম্পর্কে অবগত।

আরজির মাধ্যমে যেটি রুজু করা হয় তাকে বলায় হয় মোকদ্দমা (Suit)।

দরখাস্তের মাধ্যমে যেটি রুজু করা হয় তাকে বলায় হয় বিবিধ মোকদ্দমা (Miscellaneous suit)। দরখাস্তের শেষে থাকবে হলফনামা (Affidavit)

মেমোরেন্ডামের মাধ্যমে যেটি রুজু করা হয় তাকে বলায় হয় আপীল (Apeal)।

 

ধারা ২৭:   বিবাদীর প্রতি সমন।         (আদেশ ৫)

মোকদ্দমা সঠিকভাবে রুজু হলে আদালত বিবাদীকে নির্ধারিত তারিখে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং লিখিত জবাব প্রদানের জন্য বিবাদীর প্রতি সমন জারী করবেন।

মোকদ্দমা রুজুর তারিখ হতে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সমন ইস্যু করতে হবে। অন্যথায় ইহা দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে।

সমন বাদী, বিবাদী, সাক্ষী বা যেকোনো ব্যক্তির প্রতি জারী হতে পারে।

প্রাসঙ্গিক আলোচনা:

সমন: আদালত কর্তৃক জারীকৃত তলবনামাকে বলা হয় সমন। ইহা অবশ্যই লিখিত, Presiding Officer কর্তৃক কিংবা এই উদ্দেশ্যে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও আদালতের সীলমোহরযুক্ত হবে।

সমন জারীর পদ্ধতি: (৫ আদেশের ৯ বিধি)

বর্তমানে ৪ ভাবে সমন জারী হয়। যথা:

(I) ব্যক্তিগতভাবে

(II) বিকল্পভাবে

(III) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে

(IV) ফ্যাক্স বা ইমেইলের মাধ্যমে।

 

ধারা ২৯: বিদেশী সমন জারী।

বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত কোনো দেওয়ানী বা রাজস্ব আদালত কর্তৃক প্রেরিত কোনো সমন বাংলাদেশের আদালত নিজের সমন অনুরুপভাবে সমন জারী করবেন।  (নিজের সমন মনে করে)

 

ধারা ৩০:

উদঘাটন ও অনুরূপ বিষয়ে আদেশদানের ক্ষমতা।

আদালত যেকোনো সময় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বা কোনো পক্ষের আবেদনক্রমে নিম্নলিখিত আদেশে দিতে পারেন-

(ক) প্রশ্নামালা দাখিল, জবাবদান, দলিল দাখিল, উদঘাটন ও পরিদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন।

(খ) সাক্ষ্য দান বা দলিল পেশ করার জন্য কোন ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন দিতে পারেন।

(গ) কোন তথ্য এফিডেভিট দ্বারা প্রমানের আদেশ দিতে পারেন।

 

ধারা ৩১:     সাক্ষীর প্রতি সমন।   (১৬ আদেশ)

আদালত কোনো পক্ষের আবেদনক্রমে বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে যেকোনো সাক্ষীর প্রতি সমন জারী করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে ২৭, ২৮ ও ২৯ ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে।

 

ধারা ৩২: সমন অমান্যের দন্ড।

৩০ ধারা মোতাবেক যাকে সমন দেয়া হয়েছে, আদালত তাকে হাজির হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে-

(ক) গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করতে পারেন;

(খ) তাহার সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয় করতে পারেন;

(গ) তাহাকে অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা করতে পারেন;

(ঘ) তাহার হাজিরার জন্য তাকে জামানত দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন এবং জামানত না দিলে তাহাকে দেওয়ানী কারাগারে প্রেরণ করতে পারেন।

 

ধারা ৩৩:    রায় ও ডিক্রী।     [২০ আদেশ]

শুনানী সমাপ্তির দিন কিংবা পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করেবেন।

রায় ঘোষণার তারিখ হতে ৭ দিনের মধ্যে আদালত ডিক্রী দিবেন।

 

ধারা ৩৪: সুদ (Interest).

শুধুমাত্র অর্থ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে (Money Suit) রায় প্রদানের সময় আদালত মোকদ্দমা দায়েরের তারিখ হতে রায়/ডিক্রী প্রদানের তারিখ পর্যন্ত সময়ের জন্য মূল অর্থের উপর নিজ বিবেচনায় সুদ ধার্য করে দিবেন।

আদালত চাইলে মোকদ্দমা দায়েরের পূর্ববর্তী কোনো সময়ের জন্য কিংবা ডিক্রী পরবর্তী অর্থ পরিশোধের তারিখ পর্যন্ত সময়কালের জন্য সুল ধার্য করতে পারবেন।

প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ

শুধুমাত্র অর্থ মোকদ্দমায় সুদ ধার্য হবে।

* এই ধারায় সুদের পরিমাণ নির্ধারিত নয়। ইহা আদালতের সম্পূর্ণ বিবেচনামূলক ক্ষমতা।

 

ধারা ৩৫:  খরচ (Costs).

যেকোনো মোকদ্দমায় ডিক্রী প্রদানের সময় আদালত মোকদ্দমার খরচ নির্ধারণ করবেন। কোন পক্ষ কি অনুপাতে এবং কোন সম্পত্তি হতে খরচ বহন করবেন সেটিও নির্ধারণ করবেন।

আদালত কোনো মোকদ্দমার খরচ নির্ধারণ করলে উক্ত খরচের উপর ৬% সুদ ধার্য করবেন।

 

ধারা ৩৫এ: মিথ্যা বা বিব্রতকর দাবি কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থন সম্পর্কে ক্ষতিপূরণমূলক খরচ।

কোনো পক্ষের মিথ্যা দাবি বা মিথ্যা জবাব যদি আদালতে প্রতিষ্ঠিত/প্রমাণিত হয় সেইক্ষেত্রে আদালত মিথ্যা দাবিকারীকে বা জবাবদানকারীকে নির্দেশ দিবেন অপর পক্ষকে ক্ষতিপূরণমূলক খরচ (Compensatory cost) হিসাবে অনধিক ২০,০০০ টাকা প্রদানের জন্য।

[এই ধারায় ক্ষতিপূরণমূলক খরচ প্রদানের আদেশ প্রদান আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।]

 

ধারা ৩৫বি: অন্তর্বর্তী বিষয়গুলি সম্বন্ধে আনীত দরখাস্ত ইত্যাদিতে বিলম্বের জন্য খরচ।

(১) মোকদ্দমার যেকোনো স্তরে আদালতের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো দরখাস্ত বা লিখিত আপত্তি দাখিল না করলে অপর পক্ষকে ২০০০ টাকা না দিলে তাহা শুনানীর জন্য গ্রহণ হবে না।

(২) লিখিত জবাব পেশের পর এরূপ বিলম্ব হলে অপর পক্ষকে ৩০০০ টাকা না দিলে উক্ত দরখাস্ত আদালত নিবেন কিন্তু শুনানী ও নিষ্পত্তি করবেন না। খরচ দিতে না পারলে দরখাস্ত তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল হয়ে যাবে। [২০০৩ সালের ৪০ নং আইন দ্বারা সংশোধিত]

 

ধারা ৩৭: ডিক্রি দানকারী আদালতের সঙ্গা।

নিম্নলিখিত আদালতসমূহ ডিক্রি দানকারী আদালত হিসাবে গণ্য হবে।

(ক) ডিক্রি প্রদানকারী আদালত।

(খ) ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল হলে, আপীলে নতুন ডিক্রি দিলে, সেই ক্ষেত্রেও মূল আদালতই হবে ডিক্রি দানকারী আদালত।

(গ) ডিক্রি দেওয়ার পর আদালতটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে বিলুপ্তকৃত আদালতের দায়িত্বভার যেই আদালতের উপর ন্যস্ত হয় সেই আদালতই হবে ডিক্রি দানকারী আদালত।

 

ধারা ৩৮: ডিক্রি জারিকারক আদালতের সঙ্গা।

যেই আদালত ডিক্রি প্রদান করেছেন সেই আদালত অথবা যেই আদালতে উহা জারির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে সেই আদালত ডিক্রি জারি করতে পারে। অর্থাৎ

(I) ডিক্রি প্রদান কারী আদালত

(II) ডিক্রি প্রাপক আদালত

 

ধারা ৩৯: ডিক্রি স্থানান্তরকরণ।

ডিক্রিদারের আবেদনক্রমে কিংবা ডিক্রিদানকারী আদালত নিজ উদ্যোগে (Own motion) ডিক্রিটি জারির জন্য অন্য কোনো আদালতে স্থানান্তর করতে পারেন।

সাধারণত সাব্যস্ত দেনাদার/ঘাতক/দায়িক (Judgement debtor) বা তাহার কোনো সম্পত্তি যদি অন্য কোনো আদালতের এখতিয়ারে থাকে সেই ক্ষেত্রে ডিক্রিটি স্থানান্তর হয়ে থাকে।

 

ধারা ৪১: জারি কার্যক্রমের ফলাফল অবহিতকরণ।

ডিক্রি জারির জন্য যদি অন্য কোনো আদালতে প্রেরিত হয় সেইক্ষেত্রে প্রাপক আদালত ডিক্রি জারির বিষয়ে কিংবা ব্যর্থ হলে কারণ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিক্রি প্রেরণকারী আদালতকে অবহিত করবেন।

 

ধারা : বিচারকের আদেশপত্র (precepts)

ডিক্রিদানকারী আদালত দায়িকের সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য ডিক্রি ইস্যু করতে ক্ষমতা সম্পন্ন আদালতে আদেশপত্র প্রেরণ করতে পারেন।

 

ধারা ৪৮: কতিপয় ক্ষেত্রে ডিক্রি জারি বারিত।

নিষেধাজ্ঞার ডিক্রি ছাড়া অন্য সকল ডিক্রি প্রদানের তারিখ বা কিস্তিতে টাকা প্রদানের নির্দেশ থাকলে উহা লংঘনের তারিখ হতে ১২ বছরের মধ্যে ডিক্রি জারির আবেদন করতে হবে।

ব্যতিক্রম:

(ক) দেনাদারের (Judgement Debtor) প্রতারণা/ প্রবঞ্চনা (Fraud) বা বল/ শক্তি প্রয়োগ (Force) প্রমাণ করা গেলে ১২ বছর পরেও আদালত ডিক্রী জারির আদেশ দিতে পারেন।

(খ) তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ১৮৩ অনুচ্ছেদের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে না।

 

[নিষেধাজ্ঞার ডিক্রি প্রদানের সাথে সাথে জারি হয়ে যায়]

 

ধারা ৫০: বৈধ প্রতিনিধি (Legal Representative)

ডিক্রির অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধের পূর্বে দেনাদার মারা গেলে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য মৃত ব্যক্তির বৈধ প্রতিনিধিকে বাধ্য করা যাবে।

তবে বৈধ প্রতিনিধি মৃত ব্যক্তির নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তির অনুপাতে দেনা পরিশোধে বাধ্য থাকবে। এই ক্ষেত্রে বৈধ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ডিক্রি জারির আবেদন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *