অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হতে পারে বিস্তারিত জানুন।

 

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কেমন হওয়া উচিত ? ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকার (Bangladesh Interim Government) কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে? এই নিয়ে বিএনপি, জামাতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে রয়েছে নানান গুঞ্জন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব তিন মাসের মধ্যে করার দাবি জানিয়েছে অনেকেই। আজকে আমরা আইনের আলোকে জানার চেষ্টা করবো কতদিন থাকতে পারবে এই সরকার।

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার:

সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান রয়েছে বাংলাদেশ সংবিধানে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে বাংলাদেশ সংবিধানসহ দেশের কোন আইনে কিছুই বলা নাই। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও সাংবিধানিক বৈধতা সম্পর্কে কিছু উল্লেখযোগ্য বিভ্রান্তি ও বিতর্ক লক্ষ করা যাচ্ছে। এই বিভ্রান্তির কারণ হলো সাধারণ অন্তর্বর্তী সরকার ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভিতর সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নির্ণয়ে অসতর্কতা। সাধারণ অন্তর্বর্তী সরকারকে কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কখনও অস্থায়ী সরকার আবার কখনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বলা হয়। যেটাই বলা হোক মূলত এটি একটি অস্থায়ী জনপ্রশাসন ব্যবস্থা। এই সরকারের দায়িত্ব হলো একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচন করে তাদের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা। সুতরাং নাম যেটাই হোক এবং যেভাবেই আসুক একটি অন্তর্বর্তী সরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা:

বাংলাদেশ বর্তমানে রয়েছে একটি গণতন্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা। দেশের বর্তমান সংবিধান মোতাবেক প্রতি পাঁচ বছর পর পর একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা করেন একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ইতিপূর্বে ১২ তম সংসদ শপথ গ্রহণ করেছিল ৯ জানুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে। সেই হিসাবে ১৩ তম সংসদ নির্বাচন আগামী ৯ জানুয়ারী, ২০২৯ ইং তারিখের পূর্ববর্তী তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেহেতু ১২ তম সংসদের সকল সদস্য ছাত্র জনতার আন্দোলনে এখন পলাতক আছে। আর গত ৮ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার অর্থাৎ ড. ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাই এই সরকারের সামনে এখন মূল চ্যলেঞ্জ হচ্ছে ১৩ তম সংসদ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠান করা।

 

ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ:

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেন ৮ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখ (বৃহস্পতিবার)। এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ১৩ তম সংসদ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠান করা। কিন্তু যেহেতু গণবিপ্লবের মাধ্যমে এই সরকারের উদ্ভব তাই দেশের সংস্কারের বিশাল দায়িত্ব জনগণই তাদেরকে দিয়েছেন। শুধুমাত্র একটি সংসদ নির্বাচন তিন মাসে করা সম্ভব। কিন্তু দেশের সংস্কারের কাজ করতে গেলে তা কোন ভাবে তিন মাসে সম্ভব না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কতদিন লাগতে পারে।

 

এই পরিস্থিতিতে সরকারের মেয়াদ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার জন্য যতদিন থাকার দরকার হবে, অন্তর্বর্তী সরকার ততদিন থাকবে”।

 

এই নতুন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের কেউ সরকারের মেয়াদ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি।

 

আর আইনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে স্পষ্ট কোন বিদাহ্ন নাই, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে এবং সামনে দেশ সংস্কারের চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেহেতু এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে একটু অনিশ্চয়তাই রয়েছে বলা যায়।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

ainbid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *