চেক ডিজঅনার মামলায় দ্রুত সমাধান

চেক ডিজঅনার মামলা কি এবং কিভাবে দ্রুত সমাধান পাওয়া যাবে। 

 

চেক ডিজঅনার কি ?

ডিজঅনার এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Dishonour যার অর্থ হলো অস্মমান করা। কিন্তু আইনের পরিভাষায় ব্যাংকের একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে উপস্থাপিত চেকটি ফেরত দেওয়াকে চেক ডিজঅনার বুঝায়।

ব্যাংকের কোন চেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে উপস্থাপন করার পর যদি চেকে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা উক্ত ব্যাংকে না থাকে তাহলেই উহাকে বলা হয় চেক ডিজঅনার (Check Dishonour)। চেক ডিজঅনার হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চেকে উল্লেখিত পরিমাণ টাকা উক্ত একাউন্টে নাই মর্মে একটা স্লিপ প্রদান করেন যাহাকে বলা হয় চেক ডিজঅনার হলে স্লিপ। এই স্লিপ নিয়ে আদালতে চেক প্রদানকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয় তাই চেক ডিজঅনার মামলা।

 

এই বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়ার জন্য এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো-

আবুল, বাবুলকে দুই লক্ষ টাকা ধার দিল। প্রমাণ হিসাবে বাবুল, আবুলকে দুই লক্ষ টাকার একটা ব্যাংক চেক দিল। আবুল যথসময়ে তার দুই লক্ষ টাকা উঠানোর জন্য ঐ চেক নিয়া ব্যাংকে গেল। এইবার ব্যাংক অফিসার আবুলকে বলল, একাউন্টে দুই লক্ষ টাকা নাই। তখন আবুল ব্যাংক অফিসারকে বলল, বাবুলের একাউন্টে যে টাকা নাই তার একটা প্রমাণ আমাকে দেন প্লিজ। ব্যাংক অফিসার, আবুলকে একটি লিখিত স্লিপ বা মেমো দিলো। যেই স্লিপে লেখা আছে একাউন্টে পর্যাপ্ত তাকা নাই। এই স্লিপটির নাম ডিজঅনার স্লিপ। চেক ও ডিজঅনার স্লিপ নিয়ে আবুল ফিরে আসল। এটাই হলো চেক ডিজঅনার।

বর্তমানে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ব্যবসায়িক সহ নানাবিধ প্রয়োজনে চেকের বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের পরিমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে চেক ডিজঅনারের মামলার বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।

 

চেক ডিজঅনারের মামলা কিভাবে করবেন-

হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ (The Negotiable Instrument Act, 1881) এর ১৩৮ – ১৪১ ধারায় চেক ডিজঅনারের মামলা করার বিধান, ইহার শাস্তি ও প্রকার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

 

চেক ডিজঅনার মামলা করার পূর্বে নিম্নলিখিত শর্তসমূহ পালন করতে হবে-

১। চেকের উপরে যে তারিখ লেখা আছে, সেই তারিখ হতে ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে চেকটি ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে এবং ব্যাংক থেকে চেক ডিজঅনার করাতে হবে।

২। চেক ডিজঅনার হওয়ার তারিখ হতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেক দাতাকে চেকে উল্লেখিত টাকা প্রদানের দাবী জানিয়ে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হবে।

৩। চেক দাতা নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেকের টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে।

ব্যাংক সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে চেক ফেরত দিয়ে থাকে-

১। ব্যাংক একাউন্টে অপর্যাপ্ত টাকা থাকলে।

২। চেক প্রদানকারী ব্যক্তির স্বাক্ষর না মিললে।

৩। চেকে উল্লেখিত অর্থের অংক ও কথার গরমিল পাওয়া গেলে।

৪। চেক মেয়াদউত্তীর্ণ হলে।

৫। যথাযথভাবে চেক পূরণ করা না হলে।

৬। চেকে ঘষামাজা করলে।

৭। চেকে কাটাকাটি থাকলে পূর্ণ স্বাক্ষর দিয়ে তা সত্যকরণ করা না হলে।

চেক ডিজঅনার মামলা করার পদ্ধতি-

১। প্রথমে আপনাকে ব্যাংকে গিয়ে চেক ডিজঅনার করে নিয়ে আসতে হবে।

২। তারপর চেকের টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ (ত্রিশ) দিন সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে।

৩। লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে এখতিয়ারসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

[হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা]

মামলা দায়েরের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-

১। বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র,

২। উল্লেখিত চেকটি,

৩। চেক ডিজঅনারের স্লিপ,

৪। লিগ্যাল নোটিশ,

প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি সহ মামলার আরজি প্রস্তুত করে ইহার সাথে উল্লেখিত কাগজপত্রের একটি করে সত্যায়িত ফটোকপি ফিরিস্তি করে জমা দিতে হবে এবং মামলায় সাক্ষ্য প্রদানের সময় সকল কাগজের মূল কপি আদালতে জমা দিতে হবে।

নোটিশে দেওয়া ৩০ (ত্রিশ) দিন শেষ হওয়ার আগে চেক ডিজঅনারের মামলা করা যাবে কিনা ?

নোটিশে দেওয়া ৩০ দিন সময় শেষ হওয়ার পূর্বেও চেক ডিজঅনারের মামলা করা যাবে। তবে আইনে উল্লেখিত বিধান মোতাবেক মামলা করাই ভাল।

 

চেক ডিজঅনার মামলায় বাদীর পক্ষে রায় পাবার শর্তসমূহ-

পুরাতন আইনে চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনো কারণ আছে কিনা, সেটি দেখা হতো না। শুধুমাত্র চেক ডিজঅনার হলেই চেকদাতাকে সাজা দেওয়া হতো। তারপর কতিপয় অসাধু লোক প্রতারণা বা চুরি করে চেক নিয়ে এই আইনে মামলা দিয়ে অতি সহজেই রায় পেয়ে এই আইনের অপব্যবহার শুরু করল। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৬ সালে এই আইনের সংশোধন করা হয়। বিদ্যমান সংশোধনী অনুযায়ী এই আইনে শুধুমাত্র চেক দিয়েই মামলা করে রায় পাওয়া যায় না। চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনো কারণ আছে কিনা, সেটি দেখা হয়। এখন চেকগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনও বৈধ চুক্তি ছিল। অবশ্যই মনে রাখতে হবে চেকপ্রাপ্তির বৈধ কোনও প্রমাণ দিতে না পারলে চেকদাতার আর কোন সাজা হবে না।

 

চেক ডিজঅনারের মামলা কোথায় করবেন-

চেক ডিজঅনারের মামলা, সবসময় সি.আর মামলা হিসাবে “হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১” এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (CMM) অথবা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (CJM) আদালতে দায়ের করতে হয়। মেট্রোপলিটন বা মহানগর এলাকায় চেক ডিজঅনারের মামলা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা CMM এর আদালতে দায়ের করতে হয়। আর মেট্রোপলিটন বা মহানগর এলাকার বাহিরের এই মামলা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা CJM এর আদালতে দায়ের করতে হয়। তারপর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (CMM Court) অথবা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (CJM Court) ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুযায়ী নালিশকারীকে পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষা করার পর যদি ম্যাজিস্ট্রেট দেখেন নালিশের প্রাইমা ফেসি (Prima facie) ভিত্তি আছে তাহলে তিনি মামলা আমলে নিয়ে মামলাটি প্রস্তুত করে বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দিবেন। তারপর মামলাটি দায়রা আদালত কর্তৃক বিচার করা হবে।

কারণ “হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১” এর ১৪১(গ) ধারা মোতাবেক দায়রা আদালতের নিচের কোন আদালত এই মামলার বিচার করতে পারবে না। তাই চেক ডিজঅনারের মামলা কখনো CJM বা CMM আদালত বিচার করতে পারবে না।

চেক ডিজঅনারের মামলার বিচার সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের রায়-

১৮৮১ সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ১৪১(গ) ধারা অনুযায়ী, চেক ডিজঅনার এর মামলার বিচার করতে পারে দায়রা আদালত।  অর্থাৎ দায়রা জজ (Sessions Judge), অতিরিক্ত দায়রা জজ (Additional Sessions Judge) এবং যুগ্ম দায়রা জজ (Joint Sessions Judge) এই তিন ধরণের জজগণ সবাই দায়রা জজ। এতদিন এই সকল দায়রা জজগণ চেক ডিজঅনারের মামলার বিচার করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে- এখন থেকে চেক ডিজঅনার এর মামলার বিচার করতে পারবে শুধুমাত্র যুগ্ম দায়রা জজ (Joint Sessions Judge)। তাই বর্তমানে চেক ডিজঅনার মামলার শুনানি ও বিচার হয় শুধুমাত্র যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে। যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হয় দায়রা জজ আদালত। আর দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ এর আপীলে প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করতে হবে হাইকোর্টে বিভাগে।

এই বিধানটি বৈষম্যমূলক এবং বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ এবং ৩১ এর সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

 

চেক হারিয়ে গেলে করণীয়-

চেক হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব আপনার নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারন ডাইরী (GD) করা উচিৎ। জিডির সত্যায়িত কপি হিসাবধারীর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া চেক দিয়ে কেউ আর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে না। আর চেক ডিসঅনারের মামলা দায়ের করার পর মূল চেক, ডিজঅনারের রশিদ, পোস্টাল রশিদ, প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ হারিয়ে ফেললেও নিকটস্থ থানায় একটি সাধারন ডাইরী (GD) করতে হবে। আবার চেক ডিসঅনার হওয়ার পর মামলা দায়ের করার পূর্বেই ডিজঅনার স্লিপ সহ চেক হারিয়ে গেলে এ বিষয়ে থানায় জিডি করে ১৩৮ ধারায় মামলা করা হয় তাহলে মামলার বাদীকে সমর্থন করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিলে ধরে নেয়া হয় যে বাদী তার মামলায় উক্ত বিষয়ে প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন।

 

বাদী/আসামীর মৃত্যু হলে করণীয়-

চেক ডিজঅনারের মামলায় বাদী/আসামী কোন এক পক্ষ মারা গেলে মামলাটি শেষ হয়ে যায় না। চেক ডিজঅনারের মামলা অন্য সকল ফৌজদারী মামলা থেকে একটু ভিন্ন প্রকৃতির এবং এটি কিছুটা দেওয়ানী প্রকৃ্তির হওয়ায় বাদী অথবা আসামীর মৃত্যুর কারণে মামলা শেষ হয়ে যায় না। বাদীর মৃত্যুর পর তার বৈধ প্রতিনিধি মামলার বাদী হিসাবে পক্ষভুক্ত হয়ে মামলা পরিচালনা করতে পারবে। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আসামীর মৃত্যু হলে মামলার আরজী সংশোধন করে মামলা চলানো যায়। আর মামলা করার পূর্বে আসামীর মৃত্যু হলে বাদীর একমাত্র প্রতিকার হলো আসামীর বৈধ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে দেওয়ানী আদালতে টাকা আদায়ের মামলা করে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করা।

 

শাস্তিঃ

চেক ডিজঅনারের মামলায় অপরাধ প্রমানীত হলে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারা অনুসারে শাস্তি হিসেবে ১ (এক) বছর কারাদন্ড অথবা চেকে উল্লেখিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। তবে চেক ডিজঅনারের শাস্তি যদি চেকে উল্লেখিত টাকার তিন গুণ জরিমানা হয়, তাহলে পুরো টাকাটাই বাদী পাবে না। এই ক্ষেত্রে বাদী বা চেকগ্রহীতাকে তার দাবীকৃত টাকাটা পরিশোধ করে বাকী টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।

 

আপীলঃ

চেক ডিজঅনারের মামলায় আদালতের রায়ের পরে আপীল করার সুযোগ আছে। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার মামলায় প্রদও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে। তবে চেক ডিজঅনারের মামলায় প্রদত্ত দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা প্রসঙ্গে হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ -এ কিছু বলা হয়নি। বিধায় এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০৮ ধারার আপীলের বিধানটি প্রযোজ্য হবে। হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় প্রদত্ত দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে দায়রা জজ আদালতে। যুগ্ম দায়রা জজের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজের নিকট আপীল করতে হবে এবং দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে হবে।

 

আপীলের পূর্বশর্তঃ

“হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১” এর ১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার মামলায় প্রদও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা্র পূর্বে দন্ডাদেশে উল্লেখিত অর্থের ৫০% টাকা দন্ডাদেশ প্রদানকারী বিচারিক আদালতে জমা দিয়ে আপীল করতে হবে।

 

রিভিশন দায়ের-

যেহেতু শুধুমাত্র আইনগত প্রশ্নে রিভিশন দায়ের করার বিধান রয়েছে। সেহেতু চেক ডিসঅনারের মামলায়ও রিভিশন দায়ের করা যাবে শুধুমাত্র আইনগত প্রশ্নে। এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির রিভিশনের বিধান প্রযোজ্য হবে। আইনগত প্রশ্ন হচ্ছে- যেমন- মামলা করার কারণ আছে কিনা, চেক ডিসঅনার হবার পর ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে কিনা, মামলাটি তামাদিতে বারিত কিনা, এগুলো আইনগত প্রশ্ন।

“হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১” এর ১৩৮ ধারার মামলা থেকে আইনগত বিষয় উদ্ভূত হলে ফৌজধারী কার্যবিধির ৪৩৯ ধারা মতে হাইকোর্ট বিভাগে অথবা একই আইনের ৪৩৯ক ধারা মতে দায়রা আদালতে রিভিশন দায়ের করা যায়।  

১৯৭৮ সালের পূর্বে শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগেরই রিভিশন ক্ষমতা ছিল। ১৯৭৮ সালে Law Reforms Ordinance দ্বারা ফৌজদারী কার্যবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে দায়রা জজকে রিভিশন ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।  

 

রিভিশন দায়েরের সময়সীমা

তামাদি আইন, ১৯০৮ -এ ফৌজদারী মামলায় রিভিশন দায়েরের সময়সীমা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের case law এর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হবে। উচ্চ আদালত অভিমত হলো, “ফৌজদারী আপীল মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রচলিত সময়সীমাই রিভিশন মামলা দায়েরের সময়সীমা বলে গণ্য হবে।”

১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ১৫৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালত রায় প্রদানের ৬০ দিনের মধ্যে ফৌজদারী আপীল দায়ের করতে হয়। উচ্চ আদালত অভিমত অনুযায়ী রিভিশন দায়েরের ক্ষেত্রেও একই সময়সীমা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ বিচারিক আদালত কর্তৃক রায় প্রচারের ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন দায়ের করতে হবে।

 

রিভিশন নিষ্পত্তির সময়সীমা

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৪২ক(২) ধারায় বলা হয়েছে, পক্ষগণের উপর নোটিশ জারী হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রিভিশন আদালত রিভিশন কার্যক্রম নিষ্পত্তি করবেন।

নোট: ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৯ক(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন পক্ষ কর্তৃক দায়রা জজের নিকট রিভিশন দায়ের করা হলে, এই বিষয়ে দায়রা জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তার মানে ফৌজদারী মামলায় দ্বিতীয় রিভিশনের কোন সুযোগ নেই।

 

রিভিউ(Review)-

দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ -এর ১১৪ ধারা এবং ৪৭ আদেশে রিভিউ করার বিধান আছে। ফৌজদারী কার্যবিধিতে রিভিউ সংক্রান্ত কোন বিধান নাই। তাই ফৌজদারী মামলায় রিভিউ করার কোন সুযোগ নেই। তবে উচ্চ আদালতের বিভিন্ন মামলার সিদ্ধান্ত থেকে দেখা যায়, ১৩৮ ধারার চেক ডিজঅনারের মামলা কিছুটা ফৌজদারী এবং কিছুটা দেওয়ানী প্রকৃতির বিধায় চেক ডিজঅনারের মামলায় রিভিউ করা যেতে পারে।

Nizam Uddin Mahmood v. Abdul Hamid Bhuiyan and another [24 BLD (2004)(AD)239] মামলায় সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় রিভিউ সংক্রান্ত বিধানের অনুমতি দিয়েছেন।

 

চেক ডিজঅনার হলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করার পদ্ধতি-

“হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১” এর ১৩৮(৩) ধারা মোতাবেক চেক ডিজঅনার মামলার ক্ষেত্রে দেওয়ানী আইনে মামলা করতে কোন বাধা নাই। দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের ১ বিধিতে বলা হয়েছে, হস্তান্তরযোগ্য দলিল বিষয়ে মামলা কেবলমাত্র হাইকোর্ট বিভাগ এবং জেলা জজ আদালতে দায়ের করা যাবে। আমরা জানি “চেক(cheque)” একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল। তাই চেক ডিসঅনার হলে দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের অধীনে হাইকোর্ট বিভাগ অথবা জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা করা যায়। মোকদ্দমা দায়েরের ক্ষেত্রে দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারার বিধান বিবেচনায় রেখে এখতিয়ার সম্পন্ন সর্বনিম্ন আদালতে অর্থেৎ জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হবে।

চেক ডিজঅনারের মামলা কিছুটা দেওয়ানী এবং কিছুটা ফৌজদারী প্রকৃতির। তাই চেক ডিসঅনার হলে দেওয়ানী আদালতেও মামলা দায়ের করা যাবে তবে সেটা দেওয়ানী কার্যবিধির ৩৭ আদেশের ১-৭ বিধিতে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে মামলা পরিচালনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, বিবাদীকে এক্ষেত্রে লিখিত জবাব দাখিল করতে হয় না।

 

আইনি সেবা-

প্রয়োজন হলে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞ আইনজীবীগণ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সকল ধরণের মামলা পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করে থাকে।

 

যোগাযোগ-

জাস্টিস ফোরাম, 

জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা। এবং

ব্লক-এ, রোড-৫, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।

01540105088 / 01711068609

ইমেইল: justiceforum@ainbid.com

ওইয়েবসাইট: www.ainbid.com 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *