জমির খাজনা অনলাইনে

জমির খাজনা অনলাইনে প্রদানের বিস্তারিত বিবরণ 

 

বাংদেশ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ‍ভূমি ব্যাবস্থাপনাকে সেবা সম্পূর্ণ ডিজিটাল করে ‍ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা অনলাইনে প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছেন। ওয়েবসাইটটি হচ্ছে https://land.gov.bd/  উক্ত ওয়েবসাইটের বর্তমানে নিম্নলিখিত সেবাসমূহ ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে-

 

(১) ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান,

(২) জমির খাজনা চেক,

(৩) মৌজা ম্যাপ অনুসন্ধান ও ডাউনলোড,

(৪) ই-নামজারি,

(৫) নামজারি খতিয়ান,

(৬) ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড,

(৭) সি.এস, এস.এ, আর এস খতিয়ান, মহানগর খতিয়ান,

(৮) রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা,

(৯) অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি

 

জমির খাজনা অনলাইনে

জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর (Land Tax) অনলাইনে প্রদানের পদ্ধতি বা ধাপ সমূহ নিম্নে উল্লেখা করা হলো-

 

ধাপ ১- প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.land.gov.bd অথবা www.ldtax.gov.bd এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে।

 

ধাপ ২- তারপর নাগরিক কর্নার এ ক্লিক করুন।

 

 

ধাপ ৩- প্রদর্শিত নির্দেশনা অনুসরণ করে নাগরিক নিবন্ধন করুন। অনলাইন পোর্টাল (www.land.gov.bd) অথবা (www.ldtax.gov.bd) এ জাতীয় পরিপয়পত্র বা এনআইডি নম্বর, মোবাইল ফোন নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে। অথবা কল সেন্টার নম্বরে (১৬১২২ অথবা ৩৩৩) ফোন করে জাতীয় পরিপয়পত্র বা এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ ও জমির তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে।

 

ধাপ ৪- আপনার প্রোফাইল সেটিং করুন।

 

ধাপ ৫- আপনার জমির নতুন খতিয়ান যুক্ত করুন।

 

ধাপ ৬- হোল্ডিং ও ভূমি উন্নয়ন করের তথ্য পূরণ করুন।

 

ধাপ ৭- পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করুন।

 

ধাপ ৮- ই-পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।

 

ধাপ ৯- খাজনা রশিদ ডাউনলোড করে সংরক্ষন করুন।

 

খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন রের প্রচলন

খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করের প্রচলন জমিদার আমল থেকে শুরু হয়েছিল। তখন জমিদারগণ রায়ত বা বর্গা চাষীদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করতো। তারপর ১৯৫০ সালে ভূমি অধিগ্রহণের পর থেকে এই খাজনা গ্রহণ করেন সরকার।

 

ভূমি উন্নয়ন ” কথাটির উৎপত্তি-

‘ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ ১৯৭৬’ জারির মাধ্যমে খাজনা শব্দটির পরিবর্তে “ভূমি উন্নয়ন কর” আনুষ্ঠানিক পরিভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশে “ভূমি উন্নয়ন কর” বাংলা সনের ভিত্তিতে আদায় করা হয়।

 

বর্তমানে “ভূমি উন্নয়ন ” প্রদান পদ্ধতি-

বাংলাদেশ এযাবৎ সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে “ভূমি উন্নয়ন কর” প্রদান করা হতো। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে “ভূমি উন্নয়ন কর” ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন আর ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। ঘরে বসেই অনলাইনে জমির “খাজনা” বা “ভূমি উন্নয়ন কর” প্রদান করা যায়।

 

ভূমি উন্নয়ন ” প্রদানের সময়কাল-

জমির খাজনা আদায় শুরু হয় ১৫৮৪ সালে সম্রাট আকবরের মোঘল আমলে। তারপর ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও বাংলাদেশে “খাজনা” প্রতি বছর বাংলা সনের ১লা বৈশাখ থেকে ৩০শে চৈত্র সময়কালের জন্য আদায় করা হত। ৪৪০ বছর পর ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে নতুন সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন প্রণীত “ভূমি উন্নয়ন কর আইন ২০২৩” এর ধারা ১(৩) অনুযায়ী জাতীয় অর্থ বছরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি বছর ইংরেজি সালের ১লা জুলাই থেকে ৩০ জুন সময়কালের জন্য “খাজনা” বা “ভূমি উন্নয়ন কর” আদায় করা হবে যা কার্যকর হবে ১লা জুলাই ২০২৪ থেকে।

 

জমির খাজনা দেওয়ার মাধ্যম বা উপায়-

জমির খাজনা বর্তমানে শুধুমাত্র অনলাইনে মোবাইল অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে দেওয়া যাবে যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন নিম্নলিখিত দুইটি উপায়ে দিতে হবে-

(১) ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। (ldtax.gov.bd)

(২) ‘ভূমি উন্নয়ন কর’ মোবাইল এপসের মাধ্যমে।

 

জমির খাজনা অনলাইনে প্রদানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-

জমির খাজনা অনলাইনে প্রদান করতে যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তানিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(১) সর্বশেষ রেকর্ড/ খারিজ খতিয়ানের কপি,

(২) পূর্ববর্তী দাখিলার কপি,

(৩) জাতীয় পরিচয়পত্র (NID Card)

(৪) স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার, মোবাইল নাম্বার ও ইন্টারনেট সংযোগ,

(৫) সংশ্লিষ্ট জমির অবস্থান অনুযায়ী উহার বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা ইত্যাদির তথ্য,

(৬) পাসপোর্ট সাইজের ছবি ১ কপি,

(৭) সচল মোবাইল ফোন নম্বর।

 

খাজনার অর্থ পরিশোধ কীভাবে-

জনগণের দোরগোড়ায় ভূমিসেবা পৌঁছে দিতে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ‘ভূমিসেবা’ নামে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। নাগরিকেরা ঘরে বসেই মোবাইল ফোন বা অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য যেকোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করের অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন, ইউনিয়ন/পৌর ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

 

বৈধতা যাচাই

অনলাইনে জমির নিবন্ধন করে পেমেন্ট গেটওয়ে সোনালী সেবা/ উপায়/ ইউ-পে/ একপে/ ই-চালানের মাধ্যমে খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পর কিউআর কোড (QR COde) বা বার কোড সংবলিত ইলেক্ট্রনিক দাখিলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে এবং তা ডাউনলোড করা যাবে। ইহা প্রচলিত দাখিলার মতোই গ্রহণযোগ্য ও আইনসিদ্ধ হবে। কোড স্ক্যান করে দাখিলার সঠিকতা যাচাই করা যাবে।

 

লেখক-

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711068609 / 01540105088

3 thoughts on “জমির খাজনা অনলাইনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *