দন্ডবিধির সহজ নোট ধারা ১-১০৬

Penal Code, 1860 (দন্ডবিধি, ১৮৬০) 

 

দন্ডবিধি (Penal Code):

যেই বিধিতে অপরাধের উপাদান অথবা শাস্তি বা দন্ডের বিধান বর্ণিত আছে সেই বিধিকেই বলা হয় দন্ডবিধি (Penal Code)।

 

দণ্ডবিধির প্রেক্ষাপট:

অবিভক্ত ভারতে ইংরেজ সরকার এর শাসন আমলে “১ম আইন কমিশন” এর সভাপতি “লর্ড মেকলে” ১৮৩৫ সালে “ভারতীয় দণ্ডবিধি” এর একটি খসড়া (Draft) প্রস্তুত করেন। যা ১৮৩৭ সালে গভর্নর জেনারেল কাউন্সিলে পেশ (Submit) করেন। অতঃপর ইহা ১৮৫৬ সালে বিধান সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং ১৮৬০ সনের ৬ অক্টোবর বিধান সভায় অনুমোদিত হয়।

সুতরাং অবিভক্ত ভারতে ইংরেজ সরকার ১৮৬০ সালে “ভারতীয় দণ্ডবিধি” (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন) নামে একটি আইন প্রবর্তন করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর এর নামকরণ করা হয় পাকিস্তান “পাকিস্তান দণ্ডবিধি”। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৩০-০৬-১৯৭৩ তারিখের ৮ নং আইন দ্বারা পাকিস্তান শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং এর নাম হয় “দণ্ডবিধি” যা বাংলাদেশে “দণ্ডবিধি, ১৮৬০” নামে প্রচলিত।

 

দন্ডবিধির প্রাথমিক ধারণা:

মোট অধ্যায় – ২৩ টি
মোট ধারা – ৫১১ টি
আইন নং ১৮৬০ সালের ৪৫ নং আইন
আইনের ধরণ – মূল আইন (Substantive Law)
প্রকাশিত হয় – ৬ অক্টোবর ১৮৬০ সালে
কার্যকর হয় – ১লা মে ১৮৬১ হইতে
দন্ডবিধির সর্বোচ্চ শাস্তি – মৃত্যুদন্ড।  [১০ টি ধারায় আছে]
দন্ডবিধির সর্বনিম্ন শাস্তি – ২৪ ঘন্টা বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১০ টাকা অর্থদিন্ড   [ধারা ৫১০]

 

প্রয়োজনীয় ধারাসমূহের বিবরণ:

অধ্যায়

অবতরণিকা

ধারা ১ – ৫

 

ধারা : শিরোনাম, সীমা, শুরু ।

শিরোনাম    –  দন্ডবিধি ১৮৬০ (Penal Code 1860)

সীমা           – সমগ্র বাংলাদেশ

শুরু           – ১লা মে ১৮৬১

 

ধারা : বাংলাদেশের ভিতরে কৃত অপরাধের শাস্তি।

বাংলাদেশের ভিতরে এই বিধির পরিপন্থি কোনো কাজ করলে বা করা হতে বিরত থাকলে যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন প্রত্যেক ব্যক্তি এই বিধির আওতায় সাজার জন্য দায়ী হবে।

[অপরাধকারী যেদেশেরই নাগরিক হোক না কেন তার বিচার করার এখতিয়ার ফৌজদারী আদালতের আছে।

৫টি ব্যতিক্রম আছে –

(I) বিদেশী রাজা বা রাণীগণ

(II) কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ

(II) যুদ্ধবন্দিগণ

(IV) বাংলাদেশের আমন্ত্রণে বিদেশী সামরিক বাহনীর সদস্য

(V) রাষ্ট্রপতি।]

 

ধারা : বাংলাদেশের বাহিরে সংঘটিত অপরাধসমূহের শাস্তি।

বাংলাদেশের বাহিরে সংঘটিত অপরাধসমূহ বাংলাদেশের আইনে বিচারযোগ্য হলে বাংলাদেশের ভিতরে অপরাধটি করা হলে যেভাবে বিচার করা হত সেভাবেই বিচার করা হবে।

 

ধারা : বাংলাদেশের বাহিরে দন্ডবিধির ব্যাপ্তি/সম্প্রসারণ।

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে-

(I) বাংলাদেশের নাগরিকের ক্ষেত্রে: দেশের ভিতরে, বাহিরে বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত জাহাজ বা বিমানে কৃত অপরাধ।

(II) বিদেশী নাগরিকের ক্ষেত্রে: দেশের ভিতরে বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত জাহাজ বা বিমানে কৃত অপরাধ।

 

ধারা : যে কয়টি আইন দন্ডবিধি দ্বারা প্রভাবিত হবে না।

নিম্নলিখিত আইনসমূহ দন্ডবিধি দ্বারা প্রভাবিত হবে না-

(I) তিন বাহিনীর আইন (সেনা ১৯৫২, নৌ ১৯৬১, বিমান ১৯৫৩ আইন)

(II) বিশেষ আইন (যেমন- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০)

(III) স্থানীয় আইন (যেমন- পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন-১৯৯৮)

 

অধ্যায়

সাধারণ ব্যাখ্যাসমূহ

ধারা ৬ – ৫২ক

 

ধারা ১৪: রাষ্ট্রের কর্মচারী (Servant of the state).

বাংলাদেশে যাদেরকে সরকারী চাকুরিতে বহাল রাখা হয়েছে এমন সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাষ্ট্রের কর্মচারী বলে গন্য হবে।

 

ধারা ১৯: বিচারক (Judge).

সরকারীভাবে বিচারক হিসাবে নিযুক্ত ব্যক্তিকে বিচারক বলে। এছাড়াও যিনি দেওয়ানী বা ফৌজদারী আইনগত কার্যক্রমে আইনগতভাবে চুড়ান্তভাবে রায় দান করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত তাকে বিচারক বলে।

 

ধারা ২১: সরকারি কর্মচারী (Government Servant).

এই ধারায় ১২ টি পয়েন্টে উল্লেখিত ব্যক্তিগণ সরকারি কর্মচারী বলে গণ্য হবে।

 

ধারা ২৩: অবৈধ লাভ বা অবৈধ ক্ষতি (Wrongful gain or wrongful loss).

অবৈধ লাভ:

অবৈধ ক্ষতি:

 

ধারা ৩৪: সাধারণ অভিপ্রায় (Common Intention)

কতিপয় ব্যক্তি একই উদ্দেশ্যে কোনো অপরাধ সংঘটন করলে প্রত্যেকে দায়ী হবে।

উপাদানঃ

(ক) ২ বা ততোধিক ব্যক্তি।

(খ) উদ্দেশ্য অভিন্ন হবে।

(গ) অপরাধটি অবশ্যই সংঘটিত হতে হবে।

 

ধারা ৩৫: অপরাধমূলক জ্ঞান বা অভিপ্রায়ে সম্পাদিত কাজ।

কতিপয় ব্যক্তি অপরাধমূলক জ্ঞান বা অভিপ্রায়ে কোন অপরাধ সংঘটন করিলে প্রত্যেকে উক্ত কাজটি অপরাধমূলক জ্ঞান বা অভিপ্রায়ে একাকী সম্পাদন করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। অর্থাৎ জ্ঞানের ভিন্নতার জন্য শাস্তি হইবে ভিন্ন ভিন্ন।

যেমনঃ ক ও খ, গ-কে আঘাত করিয়াছে। ক এর উদ্দেশ্য ছিল গ-কে মারিয়া ফেলা কিন্তু খ এর উদ্দেশ্য ছিল গ-কে শুধুমাত্র আঘাত করা। একজন অন্য জনের উদ্দেশ্য জানিত না।  এক্ষেত্রে জ্ঞানের ভিন্নতার জন্য শাস্তি হইবে ভিন্ন। ক, নরহত্যার জন্য দায়ি হইবে অপরদিকে খ, আঘাত করার জন্য দায়ি হইবে।

 

ধারা ৩৭: কতিপয় কাজের যেকোনো একটি সংঘটনে সহযোগিতা।

একটি অপরাধের সাথে জড়িত কার্যসমূহের ভিতর যেকোনো একটি সংঘটনে সহযোগিতা করলে সহযোগিতাকারী ব্যক্তি উক্ত অপরাধে অপরাধী হবে।

 

ধারা ৩৮: অভিপ্রায়ের ভিন্নতা।

অভিপ্রায়ের ভিন্নতার জন্য শাস্তি হবে ভিন্ন ভিন্ন।

 

ধারা ৪০: অপরাধের সংজ্ঞা।

অত্র আইনে দন্ডনীয় কোন কাজ বা বিষয়কে অপরাধ বলে।

 

অপরাধ (Offence):

যে কাজ বা নিবৃত্তিকে আইন সমর্থন করে না এবং যাহার জন্য আইনে শাস্তির বিধান আছে তাহাকেই অপরাধ (Offence) বলা হয়।

 

অপরাধের উপাদান/স্তর (Elements/Steps of Offence):

অপরাধের উপাদান/স্তর ৪ টি। যথাঃ

১। অভিপ্রায় (Intention)

২। প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ (Attempt)

৩। প্রস্তুতি (Preparation)

৪। অপরাধ সংঘটন (Commiting offence)।

 

অধ্যায়

দন্ড সম্পর্কিত

ধারা ৫৩ – ৭৫

 

ধারা ৫৩: দণ্ডের প্রকারভেদ।

দন্ডবিধিতে বর্তমানে ৫ ধরণের শাস্তির বিধান আছে। যথাঃ

(ক) মৃত্যুদন্ড (Death)

(খ) যাবজ্জীবন কারাদন্ড (Imprisonment for life)

(গ) কারাদন্ড (Imprisonment)

(ঘ) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত (Confiscation of property)

(ঙ) অর্থদন্ড (Fine)

 

এছাড়াও ফৌজদারী কার্যবিধিতে আরও ৩ ধরণের অপরাধের বর্ণনা আছে। যথাঃ

(১) বেত্রাঘাত (Whipping) – (ধারা ৩২)

(২) নির্জন কারাবাস (Solitary confinement) – (ধারা ৩২)

(৩) সংশোধনাগারে আটক (Confinement in reformatories) – (ধারা ৩৯৯)

 

দন্ডবিধিতে মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে মোট  – ১০টি ধারায়।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান  – ৫৫ টি ধারায়।

কারাদন্ডের বিধান  – ১৯ টি ধারায়।

সম্পত্তি বাজেয়াপ্তির বিধান – ৩ টি ধারায়।

অর্থদন্ডের বিধান – ১১ টি ধারায়।

 

দন্ডবিধির মৃত্যুদন্ডের ১০টি ধারাঃ

নিম্নলিখিত ধারাসমূহের অপরাধ সংঘটিত হইলে সর্বোচ্চ শাস্তি হইবে মৃত্যুদন্ড।

১। ধারা ১২১ – বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।

২। ধারা ১৩২ – স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিদ্রোহে সহায়তা করা।

৩। ধারা ১৯৪ – মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান।

৪। ধারা ৩০২ – খুন (Murder)

৫। ধারা ৩০৩ – যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় ব্যক্তি কর্তৃক খুন।

৬। ধারা ৩০৫ – নাবালক বা পাগলকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া।

৭। ধারা ৩০৭ – যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় ব্যক্তি কর্তৃক খুনের উদ্যোগ।

৮। ধারা ৩২৬ক – দুই চোখ উপড়াইয়া ফেলা বা এসিডে গুরুতর আঘাত।

৯। ধারা ৩৬৪ক – ১০ বছরের কম বয়স্ক শিশুকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ।

১০। ধারা ৩৯৬ – খুনসহ ডাকাতি।

 

সুতরাং দন্ডবিধি এবং ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৮ ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

 

সর্বোচ্চ শাস্তি – মৃত্যুদন্ড – (ধারা ১২১, ১৩২, ১৯৪, ৩০২, ৩০৩, ৩০৫, ৩০৭, ৩২৬ক, ৩৬৪ক, ৩৯৬)

সর্বনিম্ন শাস্তি – ২৪ ঘন্টা বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ১০/- টাকা জরিমানা – (ধারা ৫১০)

যাবজ্জীবন কারাদন্ড সর্বদা সশ্রম কারাদন্ড হিসাবে বিবেচিত হইবে। (ধারা )

যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মেয়াদ হইবে ৩০ বছর (ধারা ৫৭)

 

ধারা ৫৪: সরকার কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশ হ্রাস বা রূপান্তরকরণ।

সরকার আসামীর অনুমতি ব্যতীত মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে যেকোনো লঘু দন্ড দিতে পারে।

 

ধারা ৫৫: সরকার কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হ্রাস বা রূপান্তরকরণ।

সরকার আসামীর অনুমতি ব্যতীত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হ্রাস করে ২০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে পরিবর্তন করতে পারে।

 

[সরকার বিভিন্ন উৎসবে যেমন ঈদ, পূজা, স্বাধীনতা দিব, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি উৎসবে কারাদন্ড হ্রাস করে থাকেন]

 

ধারা ৫৫ক: রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধিকার সংরক্ষণ (Saving president’s prerogative)

রাষ্ট্রপতি যেকোনো সাজা মওকুফ করতে এবং যেকোনো সাজা হ্রাস করতে পারবেন।

[সংবিধান এর ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা]

 

ধারা ৫৭: সাজার মেয়াদের ভগ্নাংশ।

সাজার মেয়াদের ভগ্নাংশের হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ৩০ বছর ধরে গননা করতে হবে।

 

ধারা : কতিপয় ক্ষেত্রে কারাদন্ড সামগ্রীক, আংশিক, সশ্রম বা বিনাশ্রম হতে পারবে।

অপরাধীকে যেকোনো প্রকারের কারাদন্ডের বিধান থাকলে আদালত সমগ্রভাবে সশ্রম বা সমগ্রভাবে বিনাশ্রম অথবা আংশবিশেষ সশ্রম বা অবশিষ্টাংশ বিনাশ্রম হবে বলে নির্দেশ দিতে পারেন।

 

ধারা ৬৩: অর্থদন্ডের পরিমাণ।

অর্থদন্ডের পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে অসীম হতে পারবে কিন্তু অত্যাধিক হবে না।

 

[এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে-

(১) আসামীর অর্থনৈতিক অবস্থা।

(২) আদালতের এখতিয়ার।

ফৌজদারী কার্যবিধির ৩২ ধারা মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিম্নলিখিত হারে অর্থদন্ড দিতে পারেন-

(১) ১ম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট – অনধিক ১০,০০০ টাকা।

(২) ২য় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট – অনধিক ৫,০০০ টাকা।

(৩) ৩য় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট – অনধিক ২,০০০ টাকা।]

 

ধারা ৬৪: অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদন্ডের আদেশ।

উভয় দন্ডের ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ড মূল কারাদন্ডের অতিরিক্ত হসাবে গন্য হবে।

 

ধারা ৬৫: উভয় দন্ডের (কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড) ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ডের সীমা।

যেক্ষেত্রে অপরাধী কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হয় কিন্তু অর্থদন্ড পরিশোধে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে আদালত নির্ধারিত সর্বোচ্চ কারাবাসের ১/৪ অংশে দন্ডিত করতে পারেন।

 

ধারা ৬৬: অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ডের ধরণ/বর্ণনা।

মূল কারাদন্ড যেই বর্ণনার (সশ্রম বা বিনাশ্রম) অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ড হবে সেই বর্ণনার।

 

ধারা : শুধুমাত্র অর্থদণ্ড অনাদায়ে কারাদণ্ড।

শুধুমাত্র অর্থদন্ডের বিধান থাকলে তা অনাদায়ে কারাদন্ড হবে নিম্নলিখিত হারে-

(ক) অর্থদণ্ড ৫০ টাকা পর্যন্ত হলে অনাদায়ে কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ২ মাস।

(খ) অর্থদণ্ড ১০০ টাকা পর্যন্ত হলে অনাদায়ে কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ৪ মাস।

(গ) অর্থদণ্ড ১০০ টাকার বেশি হলে অনাদায়ে কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ৬ মাস।

 

ধারা : অর্থদণ্ড আদায় হলে কারাদণ্ড সমাপ্ত হবে।

যখনই অর্থদণ্ড আদায় হবে তখনই কারাদণ্ড সমাপ্ত হয়ে যাবে।

 

ধারা ৭০: ৬ বছরের মধ্যে অর্থদণ্ড আদায় না হলে কিংবা কারাবাসের মধ্যে দন্ডিত ব্যক্তির মৃত্যু হলেও সম্পত্তির দায় থেকে মুক্তি পাবে না।

 

ধারা ৭৩: নির্জন কারাবাস (Solitary confinement).

শুধুমাত্র সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকেই নিম্নলিখিত হারে নির্জন কারাবাস প্রদান করা যাবে-

(ক) মূল কারাবাস ৬ মাস পর্যন্ত হলে নির্জন কারাবাস হবে অনধিক ১ মাস।

(খ) মূল কারাবাস ৬ মাস -১ বছর পর্যন্ত হলে নির্জন কারাবাস অনধিক ২ মাস।

(গ) মূল কারাবাস ১ বছরের হলে নির্জন কারাবাস অনধিক ৩ মাস।

 

ধারা : নির্জন কারাবাসের সীমা।

নির্জন কারাবাস কোনো অবস্থাতেই একাদিক্রমে ১৪ দিনের বেশি হবে না।

দুটি নির্জন কারাবাসের মধ্যবর্তী সময়ে কমপক্ষে ১৪ দিনের বিরতি দিতে হবে।

যদি আসামীর নির্জন কারাবাস হয় ১ মাস এবং মূল কারাবাস হয় ৩ মাসের বেশি তাহলে তাকে ১ মাসে ৭ দিনের বেশি নির্জন কারাবাসে রাখা যাবে না।

 

অধ্যায়

সাধারণ ব্যতিক্রম সমূহ

ধারা ৭৬ – ১০৬

 

ধারা : ভুল ধারণা বশত নিজেকে আইন বলে বাধ্য মনে করে কৃত কাজ।

ভুল ধারণা বশত নিজেকে আইন বলে বাধ্য মনে করে কেউ কোনো কাজ করলে তা অপরাধ হবে না।

[পুলিশ ভুলে কাউকে গ্রেফতার করলে]

 

ধারা : বিচার কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কাজ।

বিচার কার্য পরিচালনাকালে বিচারকের কোনো কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

এক্ষেত্রে ৪টি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে-

(ক) কাজটি বিচারক হিসাবে করেছে কিনা।

(খ) এখতিয়ারের মধ্যে কিনা।

(গ) সরল বিশ্বাসে করেছে কিনা।

(ঘ) অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছিল কিনা।

 

ধারা : আদালতের রায় বা আদেশ অনুসারে সম্পাদিত কাজ।

আদালতের রায় বা আদেশ অনুসারে আদেশ বলবত থাকাকালে সম্পাদিত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা : ভুল ধারণাবশত নিজেকে আইন সমর্থিত মনে সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

[খুন করেছে মনে করে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশে দিলে]

ধারা ৮০: আইনানুগ কার্য সম্পাদনকালে দুর্ঘটনা।

আইনানুগ কোনো কার্য যথাযথ সতর্কতা ও যত্নসহকারে সম্পাদনকালে কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ও অবগতি ছাড়া দুর্ঘটনা অনুষ্ঠিত হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

[কুঠার (Hatchet) দিয়ে গাছ কাটার সময় তা ছুটে গিয়ে কেউ আঘাত প্রাপ্ত হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।]

 

ধারা ৮১: মারাত্মক ক্ষতি রোধ কল্পে অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছাড়া কৃত সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কাজ।

মারাত্মক ক্ষতি রোধ কল্পে অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছাড়া কৃত সম্ভাব্য ক্ষতিকারক কাজ সরল বিশ্বাসে করা হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা ৮২:  ৯ বছরের কম বয়সের শিশুর দ্বারা কৃত কোনো কাজই অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা ৮৩:  ৯ বছরের বেশি কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সের শিশুর কাজ।

৯ বছরের বেশি কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সের শিশুটি অপরিণত বোধশক্তিসম্পন্ন/ হাবা/ জড়বুদ্ধি সম্পন্ন/ প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিতে অক্ষম হলে তার দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা ৮৪: পাগল/উম্মাদ/ অপ্রকৃতিস্থ (Unsound) ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজ।

কোনো কাজ অন্যায় বা আইনবিরুদ্ধ তা বুঝতে অসমর্থ কোনো পাগল/উম্মাদ/ অপ্রকৃতিস্থ (Unsound) ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা ৮৫: অনিচ্ছাকৃতভাবে নেশাগ্রস্থ হবার ফলে বিচার বিবেচনা লোপ পেলে তার দ্বারা কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা ৮৭: মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটাতে পারে বলে না জেনে সম্মতিক্রমে সম্পাদিত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

[আনন্দ উপভোগের উদ্দেশ্যে পরস্পর সম্মত হয়ে অসি/তরবারি চালনা শুরু করার ফলে কোনো ক্ষতি হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না]

 

ধারা ৮৮: মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্য ব্যতীত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপকার করার উদ্দেশ্যে সম্মতিক্রমে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

[যেমন: চিকিতসকের কাজ]

 

ধারা ৮৯: ১২ বছরের নিচের বয়সের কোনো শিশু বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির মঙ্গলার্থে তাহার অভিভাবক কর্তৃক বা অভিভাবকের অনুমতিক্রমে কৃত কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

[যেমন:  বাবার অনুমতি নিয়ে চিকিতসকের কাজ]

 

ধারা ৯০: নিম্নলিখিতভাবে সম্মতি প্রদত্ত হলে সম্মতি বলে গনয় হবে না।

(ক) ভীতি বা ভ্রান্ত ধারণায় প্রদত্ত সম্মতি।

(খ) পাগলের সম্মতি।

(গ) ১২ বছরের কম বয়স্ক শিশুর সম্মতি।

 

ধারা ৯১: যে কাজ স্বতন্ত্রভাবে অপরাধ সম্মতি দিলেও তা বর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে ৮৭, ৮৮, ৮৯ ধারার ব্যতিক্রমগুলো প্রযোজ্য হবে না।

[যেমন:  গর্ভপাত ঘটানোর কাজ সম্মতি দিলেও তা অপরাধ বলে গণ্য হবে]

 

ধারা ৯৩: সরল বিশ্বাসে কৃত যোগাযোগ অপরাধ হবে না।

[যেমন:  সরল বিশ্বাসে কোনো ডাক্তার যদি কোনো রোগীকে বলে যে সে আর বাচবেনা তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না]

 

ধারা ৯৪: ভীতি প্রদর্শনের ফলে বাধ্য হয়ে কৃত কাজ।

ভীতি প্রদর্শনের ফলে বাধ্য হয়ে খুন এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

 

ধারা ৯৫: সামান্য ক্ষতিকারক কাজ অপরাধ হবে না।

[যেমন: ২ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অপরাধ বলে গণ্য হবে না। কারণ তা খুবই মামলি ব্যাপার]

 

ধারা ৯৬: আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগজনিত কাজ অপরাধ নয়।

আত্মরক্ষার্থে ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কৃত কাজ অপরাধ নয়।

 

ধারা ৯৭: শরীর ও সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অপরাধ নয়।

নিজের দেহ, অন্যের দেহ, নিজের সম্পত্তি, অন্যের সম্পত্তি রক্ষায় ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অপরাধ না।

 

ধারা ৯৮: পাগলের কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা।

সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যতটুকু আত্মরক্ষার অধিকার আছে পাগলের ক্ষেত্রেও যতটুকু আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

 

ধারা ৯৯: আত্মরক্ষার অধিকারের সীমা/ বাধা নিষেধ/ যেসকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার নাই।

৫টি ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার নাই-

(ক) সরকারী কর্মচারির আইন বহির্ভুত কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা না থাকলে।

(খ) সরকারী কর্মচারির নির্দেশে আইন বহির্ভুত কাজ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের সম্ভাবনা না থাকলে।

(গ) সরকারী কর্মচারির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ থাকলে।

(ঘ) সরকারী কর্মচারির পরিচয় পাওয়া গেলে।

(ঙ) আঘাত যতটুকু প্রতিঘাত ততটুকু।

 

ধারা ১০০: দেহ রক্ষার জন্য মৃত্যু ঘটানোর অধিকার।

নিম্নলিখিত ৬ টি ক্ষেত্রে দেহের আত্মরক্ষায় আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যায়-

(১) নিহত হবার আশঙ্কা দেখা দিলে।

(২) গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা দেখা দিলে।

(৩) ধর্ষণের আশঙ্কা দেখা দিলে।

(৪) কাম লালসার আশঙ্কা দেখা দিলে।

(৫) অপহরণের উদ্দেশ্যে আঘাত করলে।

(৬) অবৈধ আটকের সম্ভাবনা দেখা দিলে।

 

ধারা ১০১: যে সকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।

১০০ ধারায় বর্ণিত ৬ টি ক্ষেত্র ছাড়া আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।

 

ধারা ১০২: আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের আরম্ভ এবং স্থিতিকাল।

আক্রমণকারী কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা, আতংক বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃস্টি হবার সাথে সাথে আত্মরক্ষার অধিকার আরম্ভ হবে আর আতংক কেটে গেলেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের স্থিতিকাল শেষ হয়ে যাবে।

[সংক্ষেপে বলতে গেলে আতংক যতক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ]

 

ধারা ১০৩: সম্পত্তি রক্ষার জন্য মৃত্যু ঘটানোর অধিকার।

নিম্নলিখিত ৪ টি ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষায় আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যায়-

(১) দস্যুতাকারী

(২) রাতে ঘর ভেঙ্গে প্রবেশকারী

(৩) অগ্নি সংযোগকারী

(৪) চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতে আশংকা থাকলে।

 

ধারা ১০৪: যে সকল ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষায় মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।

১০৩ ধারায় বর্ণিত ৪ টি ক্ষেত্র ছাড়া সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় যায়না ।

 

ধারা ১০৫: সম্পত্তি রক্ষায় আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের আরম্ভ এবং স্থিতিকাল।

আক্রমণকারী কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা, আতংক বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃস্টি হবার সাথে সাথে আত্মরক্ষার অধিকার আরম্ভ হবে আর আতংক কেটে গেলেই আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের স্থিতিকাল শেষ হয়ে যাবে।

[সংক্ষেপে বলতে গেলে আতংক যতক্ষণ আত্মরক্ষার অধিকার ততক্ষণ]

 

ধারা ১০৬: নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার।

নিরপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকলেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।

 

[দন্ডবিধির ৭৬ – ১০৬ ধারার সাধারণ ব্যতিক্রম যে দাবি করবে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তার অপরাধ উক্ত ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে  – সাক্ষ্য আইন ধারা ১০৫]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *