দেওয়ানী কার্যবিধির সহজ নোট (১-৫০ আদেশ)

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ (The Code of Civil Procedure, 1908) 

আদেশসমূহ (Orders)

১-৫০ আদেশ

 

আদেশ :    [মোট বিধি ১৩ টি]

মোকদ্দমার পক্ষসমুহ (Parties of Suits).

 

আদেশ (১): কারা মোকদ্দমায় বাদী হিসাবে সামিল হতে পারে।

একাধিক ব্যক্তিকে বাদী বা বিবাদী হিসাবে মোকদ্দমায় অন্তর্ভূক্ত করা যাবে যদি-

ক) প্রত্যেক বাদী/বিবাদীর দাবিকৃত প্রতিকার একই কার্য বা লেনদেন থেকে উৎপত্তি হয়।

খ) বাদী/বিবাদী পৃথক মোকদ্দমা দায়ের করলে আইন বা তথ্য সংক্রান্ত একটি সাধারণ প্রশ্নের উদ্ভব হয়।

আদেশ (৩): কারা মোকদ্দমায় বিবাদী হিসাবে সামিল হতে পারে।

আদেশ (৬): একই চুক্তি অনুসারে দায়ী ব্যক্তিগণকে পক্ষ হিসাবে শামিল করা।

বাদী ইচ্ছা একই চুক্তি অনুসারে দায়ী ব্যক্তিগণকে একই মামলায় পক্ষভুক্ত করিতে পারে। বিল অব এক্সচেঞ্জ, হুন্ডি ও প্রমিসরি নোটের সহিত সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

[ব্যাংক দ্বারা ঋণ আদায়ের মোকদ্দমায় শুধুমাত্র প্রধান দেনাদার এবং জামিনদারের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করিলেই চলিবে।]

আদেশ (৭): বিবাদী কে হবে এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে সকলের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করা যাবে।

আদেশ (৮): এক ব্যক্তি একই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে অপর সকলের পক্ষে মামলা দায়ের করিতে বা জবাব দিতে পারিবে।

অনেকের পক্ষে এক বা একাধিক ব্যক্তি মোকদ্দমা দায়ের করিলে তাহাকে বলা হয় প্রতিনিধিত্বমূলক মোকদ্দমা (Representative Litigation)।

এই বিধিতে প্রতিনিধিত্বমূলক মোকদ্দমার বিধান করা হইয়াছে। এইরূপ মোকদ্দমার নিমিত্তে আদালতের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন।  [AIR 1994 (Bom) 327 Yousuf Vs. L.A.O]

 

আদেশ (৯): Misjoinder বা Nonjoinder এর জন্য মোকদ্দমার কোনো ক্ষতি হবে না। Non-Joinder এর ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পক্ষ অন্তর্ভুক্ত না করলে মোকদ্দমা খারিজ হবে।

আদেশ (১০): 

(১) পবিত্র উদ্দেশ্যে কৃত মোকদ্দমায় ভুল বাদীর নামে মোকদ্দমা করা হলে আদালত অপর ব্যক্তিকে স্থলাভিষিক্ত বা সংযোজিত করতে পারবেন।

(২) আদালত পক্ষগুলোকে কর্তন কিংবা সংযোজন করেতে পারবেন/পক্ষ কর্তন কিংবা সংযোজন এর আবেদন।

১(১২) বিধি: বাদী কিংবা বিবাদী সকলের পক্ষে একজন উপস্থিত থাকতে পারবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতা অর্পণ লিখিতভাবে করতে হবে এবং তাহা আদালতে পেশ করতে হবে।

 

 

প্রাসঙ্গিক আলোচনা:

Misjoinder (অপসংযোগ): যাকে মোকদ্দমায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ নয়, তাকে যদি ভ্রান্তভাবে মোকদ্দমায় অন্তর্ভূক্ত করা হয় তাহলে তাকে Misjoinder বলে।

Nonjoinder (পক্ষাভাব): যাকে মোকদ্দমায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ ছিল, তাকে যদি ভ্রান্তভাবে মোকদ্দমায় অন্তর্ভূক্ত করা না হয় তাহলে তাকে Nonjoinder বলে।

 

আদেশ : মোকদ্দমা গঠন।     [মোট বিধি ৭ টি]

আদেশ ():

(১) সমগ্র দাবী মোকদ্দমায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

(২) আংশিক দাবী বর্জন করলে পরে আর মামলা দায়ের করা যাবে না।

 

আদেশ : স্বীকৃতি এজেন্ট এবং আইনজীবীবৃন্দ       [মোট বিধি ৬ টি]

আদেশ (): হাজিরা ৩ ভাবে দেওয়া যাবে-

(ক) ব্যক্তিগতভাবে

(খ) স্বীকৃত প্রতিনিধির মাধ্যমে বা

(গ) আইনজীবী/কৌসুলির মাধ্যমে।

আদেশ (): আইনজীবী নিয়োগ হবে লিখিত ও স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আদালতে পেশের মাধ্যমে।

 

আদেশ :       [মোট বিধি ২ টি]

মোকদ্দমা দায়েরকরন।

আদেশ (): আরজির মধ্যমে মোকদ্দমা রুজু করতে হবে। যতজন বিবাদী ততকপি আরজির অবিকল নকল দাখিল করতে হবে।

আদেশ (): মোকদ্দমার নিবন্ধন বহিতে লিপিবদ্ধ ও ক্রমিক সংখ্যা দিবে।

 

আদেশ :      [মোট বিধি ৩১ টি] (ধারা ২৭)

সমন দেওয়া ও জারি

 

আদেশ (): লিখিত জবাব দাখিলের জন্য বিবাদীকে সমন দিতে হবে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে।

আদেশ (): নিম্নলিখিত এলাকার মধ্যে বসবাস না করলে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার আদেশ প্রদান করা যাবে না-

ক) আদালতের এখতিয়ারভূক্ত এলাকা।

খ) এখতিয়ারের বাহিরে কিন্তু আদালত হতে ৫০ মাইলের মধ্যে।

গ) যানবাহনের ব্যবস্থা থাকলে ২০০ মাইলের মধ্যে।

আদেশ (): বর্তমানে ৪ ভাবে সমন জারি করা যায়-

(I) ব্যক্তিগতভাবে

(II) বিকল্পভাবে (লটকিয়ে বা ঝুলিয়ে)

(III) রেজিস্ট্রি ডাক যোগে বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে

(IV) ফ্যাক্স বা ইমেইলের মাধ্যমে

কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সমন প্রেরিত হলে কুরিয়ার সার্ভিস ৩০ দিনের মধ্যে তা প্রেরণ করবে। ব্যর্থ হলে জেলা জজ উক্ত কুরিয়ার সার্ভিসের নাম তালিকা থেকে বাদ দিবেন।

আদেশ (১০): সমন জারির পদ্ধতি।

 

আদেশ :  প্লিডিংস (Pleadings).   [মোট বিধি ১৮ টি]

আদেশ (): প্লিডিংস বলতে আরজি বা জবাবকে বুঝায়।

আদেশ ৬(২): প্লিডিংসে শুধুমাত্র ঘটনা (Facts) উল্লেখ করতে হবে, সাক্ষ্য (Evidence) উল্লেখ করার প্রয়োজন নাই।

আদেশ ৬(): ক পরিশিষ্টে উল্লেখিত আরজি জবাবের ফরমের নমুনাসমূহ মোতাবেক আরজি জবাব লিখতে হবে।

আদেশ ৬(১৪): প্লিডিংসে স্বাক্ষর থাকবে বাদী/বিবাদী ও আইনজীবীর (যদি থাকে)

আদেশ ৬(১৫): প্লিডিংসের শেষে সত্যপাঠ (Varification) থাকবে।

আদেশ ৬(১৬): প্লিডিংসে উল্লেখিত কোনো বিষয় অপ্রয়োজনীয় বা কুৎসাজনক হলে আদালত  তাহা কর্তন করার বা সংশোধন করার জন্য যেকোনো পর্যায়ে আদেশ দিবেন।

আদেশ ৬(১৭): প্লিডিংস (আরজি/জবাব) সংশোধন করা যায় প্রসিডিংস (Proceedings) বা কার্যধারার এরযেকোনো পর্যায়ে।

প্লিডিংস (আরজি/জবাব) সংশোধনের আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর আদেশ হলে প্রতিকার রিভিশন। কারণ এটি ডিক্রি না এবং আপীলযোগ্য আদেশও না।

আদেশ ৬(১৮): প্লিডিংস সংশোধন করতে হবে সংশোধনের অনুমতিসূচক আদেশ হবার পর আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে বা ১৪ দিনের মধ্যে।

 

আদেশ :   আরজি (Plaints).      [মোট বিধি ১৮ টি]

আদেশ (): আরজির শুরুতে থাকবে আদালতের নাম। তারপর বাদী বিবাদীর নাম পরিচয় ইত্যাদি ৯ টি বিষয় উল্লেখ থাকবে।

আদেশ (): অর্থ মোকদ্দমায় আরজিতে অর্থের যথাযথ পরিমাণ উল্লেখ থাকবে।

অন্তর্বর্তীকালীন ও অমীমাংশিত হিসাবের মোকদ্দমায় আনুমানিক পরিমাণ উল্লেখ থাকবে।

আদেশ (১০): আরজি ফেরৎ (Return of plaint).

একটি মাত্র কারণে আরজি ফেরত হতে পারে-

আদালতের এখতিয়ার না থাকলে বা ভুল আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করলে আরজি ফেরত হতে পারে।

আরজি ফেরতের ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার-

(ক) আরজিটি এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে দায়ের করা।

(খ) বিবিধ আপীল (Mis appeal) [আদেশ ৪৩(১/ক)]

 

আদেশ (১১): আরজি প্রত্যাখ্যান/নাকোচ (Rejection of Plaint)

৪টি কারণে আরজি প্রত্যাখ্যান/নাকোচ (Rejection) হতে পারে-

(ক) নালিশের কারণ না থাকলে।

(খ) প্রার্থিত প্রতিকারের মূল্য কম হলে।

(গ) কম মূল্যমানের স্ট্যাম্পে আরজি লিখিত হলে বা কোর্ট ফি কম হলে।

(ঘ) কোনো আইনে নিষেধ হলে।

আরজি খারিজের ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার-

(ক) তামাদি সাপেক্ষে নতুন আরজি দাখিল করা যাবে আদেশ ৭(১৩) মোতাবেক।

(খ) ৯৬ ধারায় আপীল করা যাবে।

(গ) কোর্ট ফি কম এর জন্য আরজি খারিজ হলে ১৪৯ ধারা মোতাবেক ঘাটতি পূরণ এর জন্য সময় প্রার্থনা করা যাবে আদেশ ৭(১১) মোতাবেক ২১ দিনের মধ্যে।

(১৩) বিধি: তামাদি সাপেক্ষে নতুন আরজি দাখিল।

 (১৪) বিধি: আরজির সাথে দলিল দাখিল।

 

[ আরজি প্রত্যাখ্যান/নাকচ (Rejection of Plaint): আরজি প্রত্যাখ্যান হচ্ছে ২(২) ধারা মোতাবেক ডিক্রি তাই এর বিরুদ্ধে আপীল করা যায়। আদেশ ৭(১১) ]

[আরজি খারিজ (Dismissal of Plaint): মোকদ্দমা খারিজ হলো আদেশ এবং ইহা আপীলযোগ্য হতে পারে আবার আপীলঅযোগ্যও হতে পারে। আদেশ ৯ এর ২,৩,৫ ও ৮ বিধি।]

 

আদেশ : লিখিত জবাব (Written statement).     [মোট বিধি ১০ টি]

[লিখিত জবাব: বাদীর আরজিতে উল্লেখিত দাবি খন্ডন করে বা অস্বীকার করে বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক যে জবাব প্রাদান করে তাহাকেই বলা হয় লিখিত জবাব।]

 

আদেশ (): সমন জারির তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব পেশ করতে হবে। তবে সংগত কারণ থাকলে আদালত সময়সীমা আরো ৩০ দিন বর্ধিত করতে পারবেন। কিন্তু তাহা সর্বসাকূল্যে ৬০ দিন অতিক্রম করবে না। নির্ধারিত সময়ে লিখিত জবাব দাখিলে ব্যর্থ হলে আদালত এক তরফা নিষ্পত্তি করবেন।

[এক তরফা নিষ্পত্তি হলে প্রতিকার রিভিশন। কারণ ৪৩ আদেশ মোতাবেক ইহা আপীলঅযোগ্য আদেশ]

বিবাদী তার আত্মপক্ষ সমর্থনে যেসকল দলিলপত্রের উপর নির্ভর করেন তাহা জবাবের সাথে দাখিল করবেন। ব্যর্থ হলে আদালতের অনুমতি ছাড়া আর দাখিল করতে পারবেন না। তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে না-

ক) বাদীর সাক্ষীদের জেরা করার জন্য।

খ) বাদীর উত্থাপিত বিষয়ের জবাবে।

গ) সাক্ষীর স্মৃতিশক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য।

আদেশ (): বিবাদী তার লিখিত জবাবে আরজির প্রতিটি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে অস্বীকার করবে।

আদেশ (): আরজিতে উল্লেখিত কোনো দাবি বিবাদী তাহার লিখিত জবাবে অস্বীকার না করলে বা কোনো ব্যাখ্যা না দিলে এবং যদি বিবাদী অক্ষম না হয় তাহলে আদালত তাহা বিবাদী কর্তৃক স্বীকৃত বলে ধরে নিবেন।

আদেশ (): সমন্বয় (Set off).

বাদীর দাবির চেয়ে বিবাদীর দাবি যদি কম হয়, তখনই তাহাকে সমন্বয় বলা হয়।

[আদেশ ২১(১৯) এ পাল্টা দাবি/উল্টা দাবি (Counter claim). বাদীর দাবির চেয়ে বিবাদীর দাবি যদি বেশি হয়, তখনই তাহাকে পাল্টাদাবি বলা হয়।]

[অর্থ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে Set off বা Counter claim এর দাবি উত্থাপন করা যায়]

আদেশ ৮(৯): আদালত প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় যেকোনো পক্ষের কাছে অতিরিক্ত লিখিত বিবৃতি পেশের আদেশ দিতে পারেন।

আদেশ ৮(১০): আদেশ ৮(৯) মোতাবেক আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী লিখিত বিবৃতি পেশে ব্যর্থ হলে আদালত বিপক্ষে রায় দিতে পারেন।

[এরুপ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিকার আপীল। আদেশ ৪৩/১(খ)]

 

আদেশ : পক্ষগণের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ফলাফল।    [মোট বিধি ১৫ টি]

আদেশ (): বাদী ও বিবাদীগণ সমনে নির্ধারিত তারিখে স্বশরীরে বা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিবেন।

মোকদ্দমা খারিজ/বাতিল (Dismissal of Suits):

আদেশ ৯ মোতাবেক ৪টি ক্ষেত্রে মোকদ্দমা খারিজ/বাতিল হতে পারে-

আদেশ (): বাদীর ত্রুটি থাকলে (কোর্ট ফি/কাগজপত্র কম/আরজির কপি না দিলে)।

আদেশ (): শুনানীর তারিখে উভয়পক্ষ অনুপস্থিত থাকলে।

আদেশ (): সমন জারি না হয়ে ফেরত আসলে এবং বাদী পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে পূণরায় সমন জারির আবেদন না করলে।

আদেশ (): শুনানীর তারিখে বাদী অনুপস্থিত থাকলে এবং বিবাদী উপস্থিত থাকলে ও বাদীর দাবি অস্বীকার করলে।

খারিজ আদেশ রদ রহিতের (Set aside/cancel) বিধান:

উপরোক্ত খারিজ আদেশ রদ রহিতের জন্য নিম্নলিখিত বিধান প্রযোজ্য হবে-

আদেশ (): ২ ও ৩ বিধি মোতাবেক মোকদ্দমা খারিজ হলে ৩০ দিনের মধ্যে খারিজ আদেশ রদের (Set aside) আবেদন করা যাবে।

আদেশ ():  মোতাবেক বিধি মোকদ্দমা খারিজ হলে ৩০ দিনের মধ্যে খারিজ আদেশ রদের আবেদন করা যাবে।

আদেশ (): ৮ বিধি মোতাবেক মোকদ্দমা খারিজ হলে কারণ দর্শিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে খারিজ আদেশ রদের আবেদন করা যাবে।

আদেশ (৯এ): ৮ বিধি মোতাবেক মোকদ্দমা খারিজ হলে কারণ না দর্শিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে ১০০০ টাকা খরচ জমা দিয়ে সরাসরি খারিজ আদেশ রদের আবেদন করা যায়।

 

এক তরফা ডিক্রি (Exparte Decree):

আদেশ (): এই আদেশ অনুসারে ১টি ক্ষেত্রে এক তরফা ডিক্রির হতে পারে:

বাদী উপস্থিত ও বিবাদী অনুপস্থিত এবং সমন যথারীতি জারি হলে।

আদেশ (১৩): একতরফা ডিক্রি রদের জন্য কারণ দর্শিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করা যাবে।

আদেশ (১৩এ): একতরফা ডিক্রি রদের জন্য কারণ না দর্শিয়ে ৩০০০ টাকা জমা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সরাসরি আবেদন করা যাবে।

 

[একতরফা ডিক্রি বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করলে আপীলযোগ্য মোকদ্দমায় বিবাদী আপীল করতে পারবে। একতরফা ডিক্রি বাতিলের আবেদন মঞ্জুর করলে বাদী রিভিশন করতে পারবে।]

 

[আরজি প্রত্যাখ্যান/নাকচ (Rejection of Plaint): আরজি প্রত্যাখ্যান হলো ডিক্রি এবং এর বিরুদ্ধে আপীল করা যায়। আদেশ ৭ এর ১১ বিধি।]

[আরজি খারিজ (Dismissal of Plaint): মোকদ্দমা খারিজ হলো আদেশ এবং ইহা আপীলযোগ্য হতে পারে আবার আপীলঅযোগ্যও হতে পারে। আদেশ ৯ এর ২,৩,৫ ও ৮ বিধি।]

 

আদেশ ১০: উভয় পক্ষের জবানবন্দি গ্রহণ   [মোট বিধি ৪ টি]

আদেশ (): প্রথম শুনানীতে আদালত পক্ষগণের জবানবন্দি গ্রহণ করতে পারেন।

আদেশ (): আইনজীবী হাজির হয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করলে বা অসমর্থ হলে আদালত ভবিষ্যতে কোনো তারিখে উভয় পক্ষের ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সেই তারিখ পর্যন্ত মোকদ্দমা স্থগিত রাখতে পারেন।

 

আদেশ ১১: আবিষ্কার ও পরিদর্শন।  [ধারা ৩০]

[মোট বিধি ২৩ টি]

আদেশ ১১(): ফরিয়াদী বা বিবাদী পক্ষ অপর পক্ষকে প্রদানের জন্য বিচার্য বিষয় নির্ধারণের তারিখ হতে ১০ দিনের মধ্যে লিখিতরূপে প্রশ্নমালা আদালতে জমা দিতে হবে।

আদেশ ১১(): লিখিতরূপে প্রশ্নমালা আদালতে দাখিলের ১৪ দিনের মধ্যে আদালত সিদ্ধান্ত দিবে।

আদেশ ১১(): প্রশ্নমালা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১০ দিনের মধ্যে কিংবা আদালত অনুমোদিত সময়ের মধ্যে অপর পক্ষকে শপথনামা দাখিলের দ্বারা জবাব দিতে হবে।

আদেশ ১১(২১): প্রশ্নের উত্তর দানের কিংবা দলিল উদঘাটনের আদেশ পালনে বাদী ব্যর্থ হলে মোকদ্দমা খারিজ হবে। বিবাদী ব্যর্থ হলে সে কোনো লিখিত জবাব দাখিল করে নাই বলে গণ্য হবে এবং এক তরফা নিষ্পত্তি হবে।

[এই আদেশের অধীন মোকদ্দমা খারিজ হলে বা এক তরফা নিষ্পত্তির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার বিবিধ আপীল। – Order 43(1)f ]

 

আদেশ ১২: স্বীকারোক্তি।

[মোট বিধি ৯টি]

১২ আদেশে ৩ ধরণের স্বীকারোক্তির কথা বলা হয়েছে।

ক) মামলা স্বীকারের নোটিশ [বিধি ১]

খ) দলিল স্বীকারের নোটিশ [বিধি ২]

গ) ঘটনা স্বীকারের নোটিশ [বিধি ৪]

 

আদেশ ১২(): মোকদ্দমার যেকোনো পক্ষ অপর পক্ষকে প্লিডিংসের মাধ্যমে বা লিখিত অন্য কোনো উপায়ে মোকদ্দমার সামগ্রিক বা আংশিকভাবে স্বীকার করে বলে নোটিশ প্রদান করতে পারেন।

আদেশ ১২(): নোটিশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে দলিল স্বীকার করার জন্য যেকোনো পক্ষ অপর পক্ষকে আহ্বান করতে পারে।

আদেশ ১২(): কোনো মোকদ্দমায় কোনো পক্ষ শুনানীর জন্য নির্ধারিত তারিখের কমপক্ষে ৯ দিন পূর্বে অপর পক্ষকে কোনো তথ্য স্বীকারোক্তির জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে নোটিশ দিতে পারে। এরূপ নোটিশ পাওয়ার পর অপর পক্ষ ৬ দিনের মধ্যে কিংবা আদালত কর্তৃক অনুমোদিত সময়ের মধ্যে স্বীকারোক্তি দিবেন।

আদেশ ১২(): মোকদ্দমার সামগ্রিক বা আংশিক স্বীকৃতির উপর ভিত্তি করে মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে, যেকোনো পক্ষের আবেদনক্রমে আদালত সঙ্গত মনে করলে আংশিক রায় বা আদেশ দিতে পারেন।

[স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আদালত সামগ্রিক বা আংশিক রায় ঘোষণা করলে প্রতিকার আপীল।]

 

আদেশ ১৩:  দলিল দাখিল, আটক ও ফেরত।  [মোট বিধি ১১টি]

আদেশ ১৩(): আদালত আপ্রাসঙ্গিক বা অগ্রহণযোগ্য দলিল অগ্রাহ্যের হেতু রেকর্ডপূর্বক অগ্রাহ্য করতে পারবেন।

আদেশ ১৩(): সাক্ষ্যে গৃহীত দলিলের উপর নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ/ পৃষ্ঠলেখ হবে –

(ক) মোকদ্দমার সংখ্যা ও শিরোনাম

(খ) দলিল দাখিলকারীর নাম

(গ) পেশের তারিখ

(ঘ) দলিল গ্রাহ্যের বিবৃতি ও বিচারকের স্বাক্ষর

আদেশ ১৩(): সাক্ষ্যে অগ্রাহ্য দলিলের উপর নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ/ পৃষ্ঠলেখ হবে –

(ক) মোকদ্দমার সংখ্যা ও শিরোনাম

(খ) দলিল দাখিলকারীর নাম

(গ) পেশের তারিখ

(ঘ) দলিল অগ্রাহ্যের বিবৃতি ও বিচারকের স্বাক্ষর

 

আদেশ ১৩(): দলিল গৃহীত হলে নথির অংশ হবে/ দলিল গৃহীত না হলে নথির অংশ বলে গণ্য হবে না।

 

আদেশ ১৪:  বিচার্য বিষয়।    [মোট বিধি ৮টি]

[বিচার্য বিষয়: বাদী আরজিতে যাহা দাবী করে এবং বিবাদী তাহার লিখিত জবাবে যেটি অস্বীকার করে তাহাকেই বলা হয় বিচার্য বিষয়।]

আদেশ ১৪(১):

১। একপক্ষ কর্তৃক দৃঢ়ভাবে ঘোষিত এবং অপরপক্ষ দ্বারা অস্বীকৃত প্রত্যেকটি বিষয় একটি আলাদা বিচার্য বিষয়।

২। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী (Material propositions) হলো সেই সকল ঘটনাগত বা আইনগত বিষয় যা মোকদমা করার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বাদীকে নালিশ করতে হয় বা বিবাদীকে তার আত্মপক্ষ সমর্থন করতে প্রতিবাদ করতে হয়।

৪। বিচার্য বিষয় ২ প্রকার –

(ক) ঘটনা বিষয়ক/তথ্যগত বিচার্য বিষয় (Issues of Fact)

(খ) আইন বিষয়ক/আইনগত বিচার্য বিষয় (Issues of Law)

৫। আদালত প্রথম শুনানীর সময় বা লিখিত বর্ণনা দাখিলের সময় যাহা আগে ঘটে তার থেকে ১৫ দিনের মধ্যে, বিচার্য বিষয় প্রণয়ন এবং লিখিত করবেন।

আদেশ ১৪(২): কোনো মোকদ্দমায় আইনগত এবং তথ্যগত উভয় বিচার্য বিষয় থাকলে আদালত প্রথমে আইনগত বিচার্য বিষয় নিষ্পত্তি করবেন। আইনগত বিচার্য বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তথ্যগত বিচার্য বিষয় স্থগিত থাকবে।

আদেশ ১৪(৩): আদালত ৩টি বিষয় হতে বিচার্য বিষয় প্রণয়ন করবেন –

(ক) অভিযোগসমূহ

(খ) লিখিত জবাবসমূহ

(গ) দলিলপত্রের বিষয়বস্তুসমূহ

আদেশ ১৪(৪): কোনো ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ ছাড়া বিচার্য বিষয় নির্ধারণ সম্ভব না উক্ত ব্যক্তিকে হাজির করার জন্য আদালত সর্বোচ্চ ১৫ দিনের জন্য বিচার্য বিষয় নির্ধারণ মূলতবি রাখতে পারেন।

আদেশ ১৪(৫): আদালত ডিক্রি প্রদানের পূর্বে যেকোনো সময় প্রণীত বিচার্য বিষয় সংশোধন করতে পারবেন, অতিরিক্ত বিচার্য বিষয় প্রণয়ন করতে পারবেন এবং ভ্রান্তভাবে প্রণীত বিচার্য বিষয় কর্তন করতে পারবেন।

আদেশ ১৪(৮): বিচার্য বিষয় নির্ধারণের তারিখ হতে ১২০ দিনের মধ্যে আদালত চুড়ান্ত শুনানীর তারিখ ধার্য করবেন।

* প্রণীত বিচার্য বিষয় এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার রিভিশন।

 

আদেশ : প্রথম শুনানীতে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি।

আইনগত বা তথ্যগত বিচার্য বিষয় না থাকলে আদালত প্রথম শুনানীতে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করবেন।

 

আদেশ ১৬: সাক্ষীর প্রতি সমন ও হাজিরা  (ধারা ৩১)

আদেশ ১৬(১): সাক্ষ্য দিতে বা দলিল হাজির করতে কোনো সাক্ষীকে হাজির করার সমন পাওয়ার আবেদন করতে হবে এই আদেশে।

আদেশ ১৬(১০): সমন পাওয়ার পর সাক্ষ্য হাজির না হলে আদালত

ক) হাজির হওয়ার বা দলিল হাজির করার ইশতেহার/ঘোষণা (Proclamation) দিবেন।

খ) গ্রেফতারি পরোয়ানা (Warrant) দিবেন।

গ) সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিবেন।

ঘ) ক্ষুদ্র বিষয়ক বিচারে স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিবেন না।

[ক্ষুব্ধ হলে আপীল]

আদেশ ১৬(১২): সাক্ষী হাজির না হলে অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা করতে পারেন।

আদেশ ১৬(২০): আদিষ্ট হওয়ার পরও কোনো পক্ষ সাক্ষী হাজির না করলে আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দিতে পারেন বা তার বিবেচনায় যথোপযুক্ত আদেশ দিতে পারেন।

[ক্ষুব্ধ হলে আপীল]

 

আদেশ ১৭:  মুলতবী/সময়ের প্রার্থনা (Adjournment/Time Petition)  [মোট বিধি ৩টি]

আদেশ ১৭(): 

  • যথেষ্টকারণ দর্শালে কোনো পক্ষের আবেদনে আদালত মোকদ্দমার যেকোনো স্তরে সময় মঞ্জুর করতে পারেন এবং নিজের বিবেচনামূলক ক্ষমতায় সময় সময় শুনানী মুলতবি রাখতে পারেন। সুতরাং সময়ের প্রার্থনা (Time Petition) দিতে হবে এই আদেশে।
  • দোতরফাশুনানী/চুড়ান্ত শুনানী (Peremtory Hearing) এর পুর্বে খরচ ছাড়া (Without cost) প্রত্যেক পক্ষ সর্বোচ্চ ৬ বার মোকদ্দমা মূলতবীর আবেদন করতে পারবে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ সর্বমোট ৬+৬ = ১২ বার পারবে।
  • দোতরফাশুনানী/চুড়ান্ত শুনানীর (Peremtory Hearing) পুর্বে খরচসহ প্রত্যেক পক্ষ সর্বোচ্চ ৩ বার মোকদ্দমা মূলতবীর আবেদন করতে পারবে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ সর্বমোট ৩+৩ = ৬ বার পারবে।
  • দোতরফাশুনানী/চুড়ান্ত শুনানী (Peremtory Hearing) এর পর্যায়ে খরচসহ প্রত্যেক পক্ষ সর্বোচ্চ ৩ বার মোকদ্দমা মূলতবীর আবেদন করতে পারবে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ সর্বমোট ৩+৩ = ৬ বার পারবে।
  • সুতরাং উভয় পক্ষের আবেদনে মূলতবীহতে পারে সর্বমোট ১২+৬+৬= ২৪ বার।
  • মূলতবীরআবেদনে খরচের পরিমাণ সর্বনিম্ন ২০০ টাকা সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা।
  • বাদীমূলতবীর আবেদন করলে খরচ পাবে বিবাদী। বিবাদী মূলতবীর আবেদন করলে খরচ পাবে বাদী। উভয়ে মূলতবীর আবেদন করলে খরচ পাবে রাষ্ট্রের রাজস্ব খাত।
  • বাদীখরচের টাকা না দিলে তাহার মোকদ্দমা খারিজ (Dismiss) হবে। বিবাদী খরচের টাকা না দিলে মোকদ্দমা এক তরফা নিষ্পত্তি (Exparte) হবে।
  • মুলতবির সময় শেষ হওয়ার দিন বাদীউপস্থিত না থাকলে মোকদ্দমা খারিজ (Dismiss) হবে। বিবাদী উপস্থিত না থাকলে মোকদ্দমা এক তরফা নিষ্পত্তি (Exparte) হবে।
  • মোকদ্দমাখারিজ কিংবা এক তরফা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ পক্ষ ৩০ দিনের মধ্যে অনধিক ২০০০ টাকা আদালতে জমা দিয়ে মোকদ্দমা পুনর্বহাল/পুনরুদ্ধার/পুনরুজ্জীবিত (Revive) করার জন্য আবেদন করতে পারবে এবং জমাকৃত খরচ অপর পক্ষকে দিতে হবে। (২০০৩ সালে ৪০ নং আইন দ্বারা সংশোধিত)
  • মোকদ্দমামূলতবী রাখা বা সময় বৃদ্ধি করা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা।
  • মূলতবীর খরচপ্রদানে ব্যর্থতার জন্য মোকদ্দমা খারিজ বা এক তরফা নিষ্পত্তি প্রতিকার-
  1. I) রিভিশনকরা যাবে ১১৫ ধারায়।
  2. II)মোকদ্দমাপুনর্বহালের আবেদন করা যাবে ১৭(১/৭) আদেশে।

 

আদেশ ১৮: মোকদ্দমা শুনানী ও সাক্ষীর পরীক্ষাকরণ/জবানবন্দি গ্রহণ।  [মোট বিধি ২০টি]

আদেশ ১৮(১): শুনানীর তারিখে প্রথম বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বাদীপক্ষ। অতঃপর বিবাদীপক্ষ। তবে বিবাদীপক্ষ বাদীর দাবি মেনে নিলে বিবাদীপক্ষ প্রথম বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন।

আদেশ ১৮(৪): আদালতে হাজির হওয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিচারকের উপস্থিতিতে, ব্যক্তিগত নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধানে প্রকাশ্য আদালতে মৌখিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।

আদেশ ১৮(১৭): সাক্ষী পুনরায় তলব (Re-call) সম্পর্কিত বিধান। [CrPC Section 540]

আদেশ ১৮(১৯): চুড়ান্ত শুনানীর দিন ধার্য হওয়ার ১২০ কার্য দিবসের (Working days) মধ্যে আদালত শুনানী সমাপ্ত করিবে।

আদেশ ১৮(২০): দুই পক্ষের শুনানীর মামলাসহ চুড়ান্ত শুনানীর (Peremtory Hearing) জন্য আদালত দৈনন্দিন কার্যতালিকায় ৫ টির অধিক মামলা রাখবেন না।

চুড়ান্ত শুনানী পর্যায়ে আদালত দৈনন্দিন কার্যতালিকায় ১০০ টির অধিক মামলা রাখবেন না। নিষ্পত্তির পর চুড়ান্ত পর্যায়ে মামলা সংখ্যা ৭০ টির নিচে নেমে আসলে আরো মামলা আনতে পারেন।

 

আদেশ ১৯:  হলফনামা/শপথনামা (Affidavits)     [মোট বিধি ৩টি]

আদেশ ১৯(১): আদালত যেকোনো সময় যথেষ্ট যুক্তি থাকিলে কোনো বিশেষ তথ্য বা তথ্যসমূহ এফিডেভিট দ্বারা প্রমাণ করার আদেশ দিতে পারেন। তবে কোনো সাক্ষীকে জেরা করিতে চাইলে এবং সাক্ষীকে হাজির করা সম্ভব হইলে এরূপ আদেশ দিবেন না।

 

আদেশ ২০:  রায় ও ডিক্রি (Judgement and Decree) [মোট বিধি ২০টি]   (ধারা ৩৩)

আদেশ ২০(১): শুনানী সমাপ্ত হবার পর আদালতে তৎক্ষণাৎ বা ভবিষ্যতে কোনো দিনে পক্ষগণ বা আইনজীবীগণকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষনা করবেন।

আদেশ ২০(৪): রায়ে থাকবে মোকদ্দমার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের কারণ এবং নির্ধারণযোগ্য বিষয়সমূহ।

আদেশ ২০(৫এ): রায় ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রদান করতে হবে।

আদেশ ২০(৬): ডিক্রির বিষয়বস্তু। (১) মোকদ্দমার নম্বর, পক্ষগণের নাম ও বিবরণ (২) খরচ কোন সম্পত্তি থেকে কি অনুপাতে দিতে হবে (৩) কোন অঙ্কের পারস্পারিক, দায় পরিশোধিত হবে।

আদেশ ২০(): যে তারিখে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল ডিক্রিতেও সেই তারিখ থাকবে।

আদেশ ২০(১০): অস্থাবর সম্পত্তি অর্পণের ডিক্রি।

আদেশ ২০(১২): দখল ও অন্তরবর্তীকালীন মুনাফার/ওয়াশীলাতের জন্য ডিক্রি।

আদেশ ২০(১৪): অগ্রক্রয়ের (Pre-emption) মোকদ্দমার ডিক্রি সম্পর্কিত বিধান।

আদেশ ২০(১৮): সম্পত্তির বাটোয়ারা ডিক্রি প্রদান করা হলে কালেক্টর বা কর্মকর্তা বন্টন করবেন।

আদেশ ২০(২০): পক্ষগণের আবেদনক্রমে ও পক্ষগণের খরচায় রায় ও ডিক্রির প্রত্যায়িত নকল সরবরাহ করা হবে।

 

আদেশ ২১: ডিক্রি জারি ও আদেশ জারি।   [মোট বিধি ১০৩টি]

আদেশ ২১(১): ডিক্রির টাকা নিম্নলিখিত উপায়ে পরিষোধ করা হবে-

ক) আদালতে টাকা জমা দিয়ে।

খ) আদালতের বাহিরে ডিক্রিদারকে প্রদান করে।

গ) আদালত অপর কোনো দির্দেষ দিলে সেভাবে।

 

আদেশ ২১(১০): ডিক্রি জারীর দরখাস্ত করতে হবে ডিক্রিদানকারী আদালতে, ততপক্ষে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা বা ভিন্ন আদালতে প্রেরিত হলে উক্ত ভিন্ন আদালতে।

 

আদেশ ২১(১১): টাকা পরিশোধের ডিক্রির ক্ষেত্রে আদালত ডিক্রিদারের মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ ডিক্রি জারির আদেশ দিতে পারেন।

 

আদেশ ২১(১৯): পাল্টাদাবী (Counter claim/ Cross claim)

 

অন্য সকল ক্ষেত্রে ডিক্রি জারির দরখাস্ত লিখিত, স্বাক্ষরিত এবং সত্যতা প্রতিপাদনকৃত হতে হবে।

আদেশ ২১(২২): নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ডিক্রি জারির আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী আদালত দায়িককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিবেন-

ক) ডিক্রির তারিখ হতে ২ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলে।

খ) ডিক্রির কোনো পক্ষের বৈধ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে জারির আবেদন করলে।

গ) ৪৪ক ধারা মোতাবেক অন্য কোনো দেশের ডিক্রি পেশ করলে।

আদেশ ২১(৮৫): ডিক্রি জারিতে কোনো সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় হলে বিক্রয়ের তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে নিলাম ক্রেতাকে সম্পূর্ণ মূল্য আদালতে জমা দিতে হবে।

আদেশ ২১(৮৯): নিলাম রদের জন্য নিম্নলিখিত অর্থ জমা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে-

(I) ক্রেতাকে দেওয়ার জন্য বিক্রয় মূল্যের উপর ৫% সুদ।

(II) নিলাম ইশতেহারে উল্লেখিত অর্থ।

আদেশ ২১(৯০): অনিয়মের অযুহাত দেখিয়ে নিলাম রদের আবেদন করলে ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থ জমা দিতে হবে না।

(Material irregularity or fraud in publishing or conducting auction)

 

আদেশ ২২: পক্ষগনের মৃত্যু, বিবাহ ও দেউলিয়া অবস্থা। [মোট বিধি ১২টি]

আদেশ ২২(): মোকদ্দমা করার অধিকার বিদ্যমান থাকলে কোনো পক্ষের মৃত্যুতে মোকদ্দমা বিলুপ্ত/অচল/বাতিল (Abatement) হবে না। (The death of a plaintiff or defendant shall not cause the suit to abate if the right to sue services)

[তবে ৯০ দিনের মধ্যে বৈধ প্রতিনিধিকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।]

[তামাদি আইনের ১৭৬ অনুচ্ছেদে বাদী এবং ১৭৭ অনুচ্ছেদে বিবাদী ৯০ দিনে স্থলাভিষিক্ত করবে]

৯০ দিনের মধ্যে বৈধ প্রতিনিধিকে অন্তর্ভূক্ত না করলে মোকদ্দমা অচল (Abatement) হবে।

অচল মোকদ্দমা সচল করার জন্য মৃত ব্যক্তির বৈধ প্রতিনিধিকে ৬০ দিনের মধ্যে স্থলাভিষিক্তকরণের আবেদন করতে হবে।

আদেশ ২২(৭): মহিলার বিবাহের (Marriage) কারণে মোকদ্দমা বিলুপ্ত হবে না।

আদেশ ২২(৮): কোনো পক্ষের দেওলিয়াত্বের (Insovency) কারণে মোকদ্দমা বিলুপ্ত হবে না।

আদেশ ২২(১০): স্বার্থের হস্তান্তরের (Assignment) কারণে মোকদ্দমা বিলুপ্ত হবে না।

আদেশ ২২(): অচলের আদেশ বাতিলের জন্য বৈধ প্রতিনিধি আবেদন করতে পারবে।

আদেশ ২২(৯এ): সরাসরি অচলের আদেশ বাতিলের জন্য জমা দিতে হবে অনধিক ৩০০০ টাকা।

 

আদেশ ২৩: মোকদ্দমা প্রত্যাহার ও মীমাংশা/সমঝতা/মিটমাট।  [মোট বিধি ৪টি]

আদেশ ২৩(): বাদী মোকদ্দমার যেকোনো পর্যায়ে মোকদ্দমা প্রত্যাহার করতে পারবেন। একাধিক বাদীর মধ্যে কোনো একজন বাদী মোকোদ্দমা প্রত্যাহার করতে চাইলে অন্য বাদীদের সম্মতি নিতে হবে।

আদেশ ২৩(): পক্ষগণের সম্মতির ভিত্তিতে প্রদত্ত ডিক্রিকে বলা হয় সোলেনামা ডিক্রি (Compromised Decree).

[সোলেনামা ডিক্রির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার রিভিশন (Revision). ধারা ৯৬(৩)]

 

আদেশ ২৪:  আদালতে অর্থ প্রদান/জমা প্রদান।   [মোট বিধি ৪টি]

আদেশ ২৪(): ঋণ বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মোকদ্দমায় বিবাদী যেকোনো সময় বাদীর দাবির সম্পূর্ণ অর্থ আদালতে জমা দিতে পারেন।

আদেশ ২৪(): টাকা জমা দেয়ার পর বিবাদী আদালতের মাধ্যমে বাদীর বরাবরে নোটিশ দিবেন।

আদেশ ২৪(): নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে বাদী জমাকৃত টাকার উপর কোনো সুদ পাবেন না।

আদেশ ২৪(): বাদী আংশিক দাবী মিটানো হিসাবে গ্রহণ করলে আদালত যাচাই করে ব্যাবস্থা নিবেন কিংবা সম্পূর্ণ মিটানো হিসাবে গ্রহণ করলে তদানুসারে রায় দিবেন।

 

আদেশ ২৫:  মোকদ্দমার খরচাদির জন্য জামানত (Security for cost)   [মোট বিধি ৪টি]

 

আদেশ ২৬:  কমিশন      [মোট বিধি ২৩টি] [ধারা ৭৫]

কমিশন (Commission):

মোকদ্দমা সংশ্লিষ্ট কোনো একটি বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আদালত কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলা হয় কমিশন। কমিশনের সদস্য সংখ্যা হবে ১ একজন। কমিশনের কোনো নির্ধারিত যোগ্যতা নাই। আদালত যাকে যোগ্য মনে করবেন তিনিই কমিশন হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন।

 

আদালত ৪টি ক্ষেত্রে কমিশন নিয়োগ করতে পারেন-

আদেশ ২৬(১): সাক্ষীর পরীক্ষা/জবানবন্দি গ্রহণ। সাক্ষী হাজির হতে অব্যাহতি প্রাপ্ত বা অসুস্থ হলে।

আদেশ ২৬(৯): স্থানীয় তদন্তের জন্য।

আদেশ ২৬(১১): হিসাব পরীক্ষার জন্য।

আদেশ ২৬(১৩): বাটোয়ারার জন্য।

আদেশ ২৬(৫): বাংলাদেশের বাহিরে বসবাসকারী ব্যক্তির পরীক্ষার জন্য আদালত কমিশন বা অনুরোধপত্র পাঠাতে পারেন।

আদেশ ২৬(১৯): হাইকোর্ট নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে কমিশন নিয়োগ করতে পারেন-

(ক) বিদেশী আদালতে বিচারাধীন মোকদ্দমার কোনো পক্ষের আবেদনে।

(খ) সরকারের আইন বিভাগের কোনো কর্মচারীর আবেদনে।

 

কমিশনের ক্ষমতা:

কমিশনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত নয়। কমিশন কোনো আদালত নয়। তবে আদেশ ২৬(১৭) এর উদ্দেশ্যে অর্থাৎ কমিশন কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে সমন জারি, শপথবাক্য পাঠ, জবানবন্দি গ্রহণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে কমিশন, আদালত হিসাবে গণ্য হবে।

২৬ আদেশে কোনো আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করার বিধান নাই। কমিশন নিয়োগের আবেদন মঞ্জুর/নামঞ্জুর এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার রিভিশন (Revision)

 

আদেশ ২৭: সরকার বা সরকারী কর্মকর্তা কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমা।

 

আদেশ ২৮: সেনা, নৌ বা বিমানবাহিনী কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমা।

 

আদেশ :  কর্পোরেশন কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমা।

আদেশ ২৯(১): কোনো কর্পোরেশন কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমার ক্ষেত্রে সাক্ষর/সত্যাখ্যান করবে উক্ত কোম্পানীর সচিব/পরিচালক/অন্য কোনো প্রধান কর্মকর্তা।

 

আদেশ ৩০: ফার্মের নাম বা বেনামি কর্পোরেশন কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমা

 

আদেশ ৩১: অছি, নির্বাচক এবং প্রশাসক কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমা

 

আদেশ ৩২: নাবালক বা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি কর্তৃক বা বিরুদ্ধে মোকদ্দমা

 

আদেশ ৩৩: নিঃস্ব ব্যক্তি কর্তৃক মোকদ্দমা। [১৬ টি বিধি]

আদেশ ৩৩(১): নিস্ব ব্যক্তি (Pauper): যে ব্যক্তির পরিধেয় বস্ত্রাদি, বিরোধীয় বিষয়বস্তু ছাড়া ৫০০০ টাকার মূল্যমানের কোনো সম্পত্তি নাই এবং কোর্ট ফি দিতে অপারোগ তাহাকেই বলা হয় নিস্ব ব্যক্তি।

নিঃস্ব ব্যক্তির বৈষিষ্ট:

(ক) পরিধেয় বস্ত্রাদি

(খ) মামলার বিরোধীয় বিষয়বস্তু ছাড়া

(গ) ৫০০০ টাকার মূল্যমানের কোনো সম্পত্তি নাই এবং

(ঘ) কোর্ট ফি দিতে অপারোগ।

নিস্ব হিসাবে আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে সমন জারির ফি ছাড়া নিস্বকে আর কোনো ফি দিতে হবে না।

আদেশ ৩৩(৯): একবার নিস্ব ঘোষিত ব্যক্তিকে আদালত ৭ দিনের নোটিশ দিয়া নিস্ব বিহীন ঘোষণা করতে পারবেন।

 

আদেশ ৩৪: স্থাবর সম্পত্তির বন্ধক সম্পর্কে মোকদ্দমা।

 

আদেশ ৩৫: ইন্টারপ্লিডার/ স্বার্থবিহীন মোকদ্দমা (Interpleader Suit).  [৬টি বিধি]

[ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমায় বাদী হবে কমপক্ষে ১ জন কিন্তু বিবাদী হবে কমপক্ষে ২ জন]

 

আদেশ ৩৫(৬): এই মোকদ্দমায় বাদীর দাবি থাকে শুধু খরচ।

[বাদীর অনুকূলে আদালত খরচের আদেশ দিলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার বিবিধ আপীল।]

[এই মোকদ্দমায় বাদীর সাথে বিবাদীর কোনো বিরোধ থাকে না, বিরোধ থাকে বিবাদীদের মধ্যে]

 

আদেশ ৩৬: বিশেষ মোকদ্দমা।

 

আদেশ ৩৮: রায়ের পূর্বে গ্রেফতার (Detention) ও ক্রোক (Attach).

আদেশ ৩৮(১): রায়ের পূর্বে বিবাদীকে গ্রেফতারের আদেশ দেওয়া যাবে যদি মোকদ্দমাটি অর্থ মোকদ্দমা হয়।

 

আদেশ ৩৯: অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ (Temporary injunctions and Interlocutory orders)

[ কোনো কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকার জন্য আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আজ্ঞাকেই বলা হয় নিষেধাজ্ঞা (Injunction) ]

দেওয়ানী কার্যবিধিতে ২ ধরণের নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ আছে-

(ক) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Temporary Injunction)

(খ) অন্তরবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা (Ad interim Injunction)

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় মোকদ্দমা চলাকালীন যেকোনো সময়।

অন্তরবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় মোকদ্দমার শুরুতে।

[স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় মোকদ্দমার শেষে বা রায় বা ডিক্রির মাধ্যমে ]

 

আদেশ ৩৯(১): আদালত ২ টি কারণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা সম্পত্তি স্থিতিশিল রাখার আদেশ দিতে পারেন-

(ক) অপচয়, ক্ষতি, হস্তান্তর বা বিক্রয় করার আশংকা থাকলে।

(খ) অপসারণ কিংবা হস্তান্তরের হুমকি দিলে।

[আদেশ ৪৩(১) অনুযায়ী প্রতিকার আপীল]

 

আদেশ ৩৯(২/৩): অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তির Violation Miscellaneous Suit দায়ের করতে পারেন। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীকে আদালত অনধিক ৬ (ছয়) মাস দেওয়ানী কয়েদে আটকের আদেশ দিবেন এবং সমস্ত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিবেন। ক্রোক ১ (এক) বছর পূর্ণ হলে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারী ভঙ্গ অব্যাহত রাখলে আদালত ক্রোককৃত সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় করতে পারবেন।

 

আদেশ ৩৯(৩): অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন পেলে আদালত উক্ত আবেদন সম্পর্কে অপর পক্ষকে নোটিশ দিবার আদেশ দিবেন।

নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবার আশংকা থাকলে আদালত নোটিশ ছাড়াও নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন।

আদেশ ৩৯(৩/ক): আদেশ ৩৯(৩) অনুযায়ী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার নোটিশ জারি/গর জারিতে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে ফেরত দিতে হবে। গর জারিতে ফেরত আসলে আদালত আদেশ ৫(২০) মোতাবেক পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে বিকল্প পদ্ধতিতে সমন জারি করাবেন।

[২০০৩ সালের ৪০ নং আইন দ্বারা সংশোধিত]

আদেশ ৩৯(৪): নিষেধাজ্ঞার আদেশে কোনো পক্ষ অসন্তুষ্ট হলে উক্ত পক্ষের আবেদনে আদালত অনুরুপ আদেশ অবসান, পরিবর্তন বা রহিত (Discharged, Varied or Set aside) করতে পারেন।

[আদেশ ৪৩(১) অনুযায়ী প্রতিকার আপীল]

 

আদেশ ৩৯(৬): অন্তরবর্তীকালীন নিলাম বিক্রয়ের আদেশ (Interlocutory Order) দানের ক্ষমতা। মোকদ্দমার বিষয়বস্তু অস্থাবর সম্পত্তি এবং পচনশীল হলে অন্তরবর্তীকালীন বিক্রয়ের আদেশ দেয়া যেতে পারে।

 

[অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর বা না-মঞ্জুরের বিরুদ্ধে প্রতিকার রিভিশন। ]

 

আদেশ ৪০: সিসিভার/তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ (Receiver)   [মোট বিধি ৫ টি]

সিসিভার/তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ (Receiver): মোকদ্দমা সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু সংরক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও  পরিচালনার জন্য আদালত কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলা হয় রিসিভার।

আদেশ ৪০(১): আদালত ডিক্রির পূর্বে বা পরে সিসিভার নিয়োগ করতে পারেন।

আদেশ ৪০(): সিসিভার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবেন।

আদেশ ৪০(৪): আদালত ৩ টি কারণে সিসিভারের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিতে পারেন-

(ক)আদালতে হিসাব দাখিলে ব্যর্থ হলে।

(খ) আদালতের নির্দেশে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে।

(গ) অবহেলার ফলে সম্পত্তির ক্ষতি হলে।

রিসিভার নিয়োগের আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুরের বিরুদ্ধে প্রতিকার বিবিধ আপীল।

 

আদেশ ৪১: মূল ডিক্রী হইতে আপীল  (ধারা ৯৬)  [মোট বিধি ৩৭টি]

আদেশ ৪১(১): আপীল দায়ের করতে হবে মেমোরেন্ডাম (Memoramdum) বা স্বারকলিপির মধ্যমে। মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর থাকবে আপীলকারী বা আইনজীবীর।

আদেশ ৪১(২): দেওয়ানী আপীলের মেমোতে কোনো একটি হেতু উল্লেখ না করলে শুনানী কালে আপীল আদালতের অনুমতি ছাড়া উত্থাপন করা যাবে না।

আদেশ ৪১(৩): আদালত স্বারকলিপি অগ্রাহ্য বা সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন (Rejection or amendment of memorandum).

আদেশ ৪১(১২ক):

১। কোনো পক্ষের আবেদনে আদালত ৩ বার আপীল মূলতবী করতে পারেন। অর্থাৎ উভয়পক্ষের আবেদনে সর্বমোট ৬ বার আপীল মূলতবী হতে পারে।

আদালত মূলতবী মঞ্জুর করলে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা খরচ (Cost) প্রদানের আদেশ দিবেন। আদালতে জমাকৃত খরচ অপর পক্ষ পাবে।

আপীলকারী খরচ (Cost) না দিলে আপীলটি খারিজ (Dismiss) হবে।

বিবাদী খরচ (Cost) না দিলে আপীলটি এক তরফা নিষ্পত্তি (Exparte) হবে।

২। আপীল খারিজ বা এক তরফা নিষ্পত্তি হলে ডিক্রির তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে এফিডেভিট সহযোগে পুরর্জ্জীবিত/ পুনরায় শোনার (Re-hearing) আবেদন করা যাবে। কোনো পক্ষের আবেদনে আপীল একাধিকবার পুরর্জ্জীবিত করা যাবে না।

আপীল মূলতবী রাখা বা সময় বৃদ্ধি করা আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা।

আদেশ ৪১(১৭):

(১) শুনানীর দিনে আপীলকারী অনুপস্থিত থাকলে আপীল খারিজ হতে পারে।

(২) শুনানীর দিনে উত্তরদায়ক অনুপস্থিত থাকলে আপীল একতরফা নিষ্পত্তি পারে।

আদেশ ৪১(১৯): ত্রুটির জন্য আপীল খারিজ হলে পুনরায় গ্রহণের আবেদন করা যাবে।

আদেশ ৪১(১৯ক): পীল খারিজ হলে সরাসরি পুনরায় গ্রহণের আবেদন করা যাবে পীল খারিজ হবার তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে এফিডেভিট সহকারে। একাধিকবার পুনরায় শুনা যাবে না।

আদেশ ৪১(২১): একতরফা ডিক্রী হলে পুনরায় গ্রহণের আবেদন করা যাবে।

আদেশ ৪১(২১ক): একতরফা ডিক্রী হলে সরাসরি পুনরায় গ্রহণের আবেদন করা যাবে ডিক্রীর তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে এফিডেভিট সহকারে। এক্ষেত্রে খরচ (Cost) প্রদান করতে হবে অনধিক ৩০০০ টাকা। একাধিকবার পুনরায় শুনা যাবে না।

আদেশ ৪১(২৩): আপীল আদালত কর্তৃক মোকদ্দমা পুন:বিচারের জন্য প্রেরণ/ রিমান্ড।

আদেশ ৪১(২৭): আপীল আদালত কর্তৃক অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ।

আদেশ ৪১(৩০): আপীলের রায় তৎক্ষণাৎ বা পরবর্তী তারিখে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত হবে।

আদেশ ৪১(৩১): আপীল আদালতের রায় লিখিত, স্বাক্ষরিত ও তারিখযুক্ত হবে এবং রায়ে উল্লেখিত বিষয়বস্তু সমূহ হচ্ছে – (ক) বিষয়বস্তু (খ) সিদ্ধান্ত (গ) কারণ (ঘ) পরিবর্তিত প্রতিকার

 

[আপীল নামঞ্জুর করলে ক্ষুদ্ধ ব্যক্তির প্রতিকার রিভিশন।]

 

আদেশ ৪২: আপিলের ডিক্রী হইতে আপীলের ক্ষেত্রে আদেশ ৪১ এর বিধান প্রযোজ্য হবে।

 

আদেশ ৪৩: আদশাবলী হইতে আপীল  (ধারা ১০৪)

আদেশ ৪৩(১): নিম্নে ২৫ টি পয়েন্ট উল্লেখিত আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায়।

(ক) আদেশ ৭(১০) – মোতাবেক আরজি ফেরতের আদেশ।

(খ) আদেশ ৮(৯) – মোতাবেক কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে রায়সহ আদেশ।

(গ) আদেশ ৯(৯) – মোকদ্দমা খারিজের আদেশ রদ রহিতের দরখাস্ত অগ্রাজ্য করে প্রদত্ত

আদেশ।

(ঘ) আদেশ ৯(১৩) – এক তরফা ডিক্রির আদেশ রদ রহিতের দরখাস্ত অগ্রাজ্য করে প্রদত্ত

আদেশ।

(ঙ) আদেশ ১০(৪) – কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায় সম্বলিত আদেশ।

(চ) আদেশ ১১(২১) – প্রশ্নমালা/দলিল দাখিলে ব্যর্থ হওয়ায় খারিজ বা এক তরফা আদেশ।

(ছ) আদেশ ১৬(১০) – সমন মোতাবেক হাজির হতে কিংবা দলিল দাখিল করতে ব্যর্থ হলে

গ্রেফতার ও সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ।

(জ) আদেশ ১৬(২০) – কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে রায় সম্বলিত আদেশ।

১। আদেশ ২১(৩৪) – দলিল বা পৃষ্ঠালিপির আরজির বিরুদ্ধে আপত্তি প্রসঙ্গে আদেশ।

২। আদেশ ২১(৬০) – ক্রোক হতে সম্পত্তি মুক্ত করা।

৩। আদেশ ২১(৬১) – সম্পত্তি ক্রোকের নালিশ প্রত্যাখ্যান।

(ঞ) আদেশ ২১(৭২) – বিক্রয় রদ করে আদেশ ২১(৯২) – বিক্রয় রদ অস্বীকার করে আদেশ।

(ট) আদেশ ২২(৯) – বিলুপ্তি/ মোকদ্দমা রদ অস্বীকার করে আদেশ।

(ঠ) আদেশ ২২(১০) – অনুমতি দিতে বা দিতে অস্বীকার করে আদেশ।

(ড) আদেশ ২৩(৩) – চুক্তি, আপোষনামা বা পরিতুষ্টি লিখতে বা লিখতে অস্বীকার করে আদেশ।

(ঢ) আদেশ ২৫(২) – মোকদ্দমা বাতিলের আদেশ রদের আবেদন নাকচ করলে।

(ণ) আদেশ ৩৪(২, ৪, ৭) – বন্ধকী অর্থ পরিশোধের সময় বৃদ্ধি আবেদন অগ্রাহ্য করলে।

(ত) আদেশ ৩৫(৩, ৪, ৬) – স্বার্থবিহীন (Pauper) মোকদ্দমায় কোনো আদেশ।

(থ) আদেশ ৩৮(২, ৬) – মোতাবেক কোনো আদেশ।

(দ) আদেশ ৩৯ এর ১, ২, ৪ বা ১০ বিধি মোতাবেক কোনো আদেশ।

(ধ) আদেশ ৪০ এর ১ বা ৪ বিধি মোতাবেক কোনো আদেশ।

(ন) আদেশ ৪১(১৯) পুন:গ্রহণ বা ৪১(২১) আপীলে পু:শুনানী অস্বীকার।

(প) আদেশ ৪১(২৩) আপীলে মামলার রিমান্ড।

(ফ) আদেশ ৪৫(৬) প্রত্যয়ন পত্র প্রদানে অস্বীকার হাইকোর্ট ছাড়া।

(ব) আদেশ ৪৭(৪) পুনর্বিচারের (Review) আবেদন অনুমোদন।

 

আদেশ ৪৪: নিঃস্ব ব্যক্তির আপীল। [মোট বিধি ২ টি]

আদেশ ৪৪(১): কোর্ট ফি দিতে অপারগ হলে স্মারকলিপির (Memorandum) সাথে নি:স্ব হিসাবে আপীলের একটি আবেদন দিতে হবে।

 

আদেশ ৪৫: আপীল বিভাগে আপীল।

আদেশ ৪৫(১): ডিক্রির সংজ্ঞা: ডিক্রি শব্দটির অর্থ চূড়ান্ত আদেশকে অন্তর্ভূক্ত করবে।

আদেশ ৪৫(২): আপীল বিভাগে আপীল করতে চাইলে যে আদালত ডিক্রিটি প্রদান করেছে সেই আদালতেই আবেদন করতে হবে।

 

আদেশ ৪৬: অভিমত বা রেফারেন্স (Reference) গ্রহণ।

আদেশ ৪৬(১): আইন কিংবা আইনের ন্যায় কার্যকর কোনো রীতি সম্পর্কে আদালতের যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের সৃষ্টি হলে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে অথবা কোনো পক্ষের আবেদনক্রমে মামলাটির ঘটনাবলী ও সন্দেহের বিষয়গুলো সম্বলিত একটি বিবৃতি নিজের অভিমতসহ হাইকোর্ট বিভাগে সিদ্ধান্তের জন্য প্ররণ করবেন।

 

আদেশ ৪৭: রিভিউ (Review).   [মোট বিধি ৯ টি]

আদেশ ৪৭(৪)১: আদালত রিভিউ আবেদন অগ্রাহ্য/ না-মঞ্জুর করতে পারেন।

[প্রতিকার রিভিশন]

আদেশ ৪৭(৪)২: আদালত রিভিউ আবেদন গ্রাহ্য/ মঞ্জুর করতে পারেন।

[আদেশ ৪৩(১) অনুযায়ী প্রতিকার আপিল]

[রিভিউ আবেদন না-মঞ্জুর হলে রিভিশন, মঞ্জুর হলে আপিল করতে হবে]

[ রিভিউ আবেদনের তামাদি সময়-

স্বল্প এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে – ১৫ দিন  (তামাদি আইন অনুচ্ছেদ ১৬১)

হাইকর্টে – ২০ দিন  (তামাদি আইন অনুচ্ছেদ ১৬২)

অন্যান্য আদালতে – ৯০ দিন। (তামাদি আইন অনুচ্ছেদ ১৭৩)]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *