নতুন ভূমি আইন দলিল যার জমি তার

নতুন ভূমি আইন দলিল যার জমি তার

ভূমি অপরাধ সংক্রান্ত কোন সতন্ত্র আইন ইতিপূর্বে বাংলাদেশে ছিল। এই প্রথম ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে জাতীয় সংসদে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ পাশ করা হয়। অতঃপর ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে উহা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে আইনে পরিনত হয়। এখন থেকে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধের বিচার এই আইনে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

 

দলিল যার জমি তার মানে কি

“ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” পাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দলিলের চেয়ে দখলের গুরুত্ব বেশি ছিল। কারণ “সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭” এর ২৮ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি একটানা ১২ বছর বাঁধাহীনভাবে কোন জমিতে দখলে থাকলে তিনি ঐ জমির মালিক না হলেও ঐ জমিতে তার মালিকানা স্বত্ব অর্জিত হয়। সুতরাং এই আইন অনুযায়ী বলা যায় “দখল যার জমি তার” কিন্তু “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” আইনের বিধান মোতাবেক কোন দলিল না থাকলে কোন ব্যক্তি যত বছরই জমিতে দখলে থাকুক না কেন সে জমির মালিকানা অর্জন করতে পারবে না। তাই যুগান্তকারী এই “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” আইন পাশ হবার পর থেকে বলা যায় যে, দলিল যার জমি তার।

 

পূর্বে দখলের গুরুত্ব বেশি থাকার কারণ

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ প্রণয়নের পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পাকিস্তানে জমিদারি প্রথা ছিল। অর্থাৎ কতিপয় জমিদারদের হাতে সকল জমির মালিকানা ছিল। এই সিকল জমিদারদের নিকট থেকে লোকজন জমি বর্গা বা ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করতো যাদেরকে বলা হতো বর্গা চাষী বা রায়ত। এই রায়তগণ বার্ষিক খাজনা প্রদান করত জমিদারদেরকে। আবার কতিপয় লোকজন এই রায়তদের নিকট থেকে জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করতো যাদেরকে বলা হতো কোর্ফা চাষী।

 

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ প্রণয়নের পর এই জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং রায়তগণ তাদের দখলী জমির উপর মালিকানা অর্জন করে। যেহেতু তখন রায়তগণের কোন জমির মালিকানার কোন দলিল ছিল না। তাই দখলের উপর ভিত্তি করে রায়তদের মালিকানা নির্ধারণ করা হত। যেহেতু “সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭” তারও আগে প্রণয়ন করা হয় তাই দখলের গুরুত্ব এত বেশি ছিল।

 

বর্তমানে দলিলের গুরুত্ব বেশি হবার কারণ

জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমান বাংলাদেশে মালিকহীন কোন জমি নাই। অর্থাৎ শুধুমাত্র দখলী স্বত্ত্বে কোন জমি নাই। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে দখলী স্বত্বের কোন গুরুত্ব নাই। এই যুগের চাহিদার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” নামের এই যুগান্তকারী আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের বিধান মোতাবেক দলিল যার জমি তার।

 

ভূমি আইনের অপরাধ ও শাস্তিসমূহ

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এই আইনে নিম্নলিখিত অপরাধ সমূহের উল্লেখ রয়েছে-

 

ক্রমিক অপরাধ দন্ড ধারা
১। ভূমি প্রতারণার দণ্ড অনধিক ৭ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ৪(২)
২। ভূমি জালিয়াতির দণ্ড অনধিক ৭ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ৫(২)
৩। অবৈধ দখলের দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ৭(৩)
৪। ক্রেতা বরাবর বিক্রিত ভূমির দখল হস্তান্তর না করার দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ৯

 

৫। সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধনের দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ১০
৬। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোনো কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধনের দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ১১
৭। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধ ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন, ইত্যাদির দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ১২
৮। মাটির উপরি-স্তর কর্তন ও ভরাটের দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ১৩
৯। ৮ ধারার নির্বাহী আদেশ অমান্যের দণ্ড অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড ধারা ১৫
১০। অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনার দণ্ড প্রকৃত অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ দণ্ড ধারা ১৬
১১। অপরাধ পুনঃসংঘটনের দণ্ড

 

যে ধারায় ইতিপূর্বে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন উক্ত ধারায় নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ ধারা ১৭

 

 

অপরাধের বিচারের ধরণ–     ধারা ১৯(১)

এই আইনের অধীন

১। সকল অপরাধসমূহ- আমলযোগ্য (Cognizable),

২। ধারা ৪ ও ৫ এ বর্ণিত অপরাধ সমূহ- অ-জামিনযোগ্য (Non-bailable),

৩। অন্যান্য ধারায় বর্ণিত অপরাধ সমূহ- জামিনযোগ্য (Bailable) এবং আপোষযোগ্য (compoundable)।

 

আদালতের এখতিয়ার / কোন আদালতে মামলা করতে হবে–                [ধারা ১৯(২)]

এই আইনের ৮ ধারা ব্যতীত অন্যান্য ধারার অধীন মামলা করতে হবে – প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। অর্থাৎ বিচারিক আদালতে।

৮ ধারায় আবেদন করতে হবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দখল পুনরুদ্ধারের জন্য।

 

মামলা নিষ্পত্তির সময় [ধারা ১৯(৩)]

এই আইনের অধীন মামলা সমাপ্ত করতে হবে – মাওলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে।

 

অবৈধভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার– [ধারা ৮]

১। অবৈধভাবে উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করা হলে এই আইনের ৮ ধারায় আবেদন করতে হবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (Executive Magistrate/ District Magistrate) এর নিকট।

২। সত্যতা প্রমাণিত হলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবেদন প্রাপ্তির পর হতে ৩ মাসের মধ্যে দখল পুনরুদ্ধার করিবেন।

৩। এই ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ উহাতে অসহযোগিতা বা অবহেলা করিলে তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

 

অবৈধভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তি কখন দখল পুনরুদ্ধারের আবেদন করতে পারবে না–   [ধারা ৮(৭)]

কোনো দেওয়ানি আদালতে দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোনো মামলা বিচারাধীন থাকলে একই বিষয়ে এই ধারার অধীন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দখল পুনরুদ্ধারের আবেদন করা যাবে না।

 

তবে উক্ত দেওয়ানি আদালতে কোনো পক্ষ আবেদন করে আদালতের অনুমতি নিয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দখল পুনরুদ্ধারের আবেদন করা যাবে।

 

এই ধারার অধীন ব্যবস্থা গ্রহণের অন্যান্য পদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ১৪৫ এর বিধান অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

 

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দলিল যার জমি তার।

 

 

লেখক

এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

01711-068609

 

যেকোন আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের অভিজ্ঞ আইনজীবিগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

 

যোগাযোগ

মহীউদ্দীন এন্ড এসোসিয়েটস

সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)

১৬, কৈলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা। অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।

মোবাইল- 01711-068609 / 01540-105088

ইমেইল- info@ainbid.com

ওয়েবসাইট- ainbid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *