ফৌজদারী কার্যবিধির সহজ নোট (ধারা ১-৫৭)

Group B

 

ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮

The Code of Criminal Procedure, 1898

(Act No. V of 1898)

 

ফৌজদারী কার্যবিধির পটভূমি:

সর্বপ্রথম ফৌজদারী বিচার ব্যাবস্থার গোড়াপত্তন হয় ১৭৯৩ সালে। ১ম ভারতীয় আইন কমিশন গঠিত হয় ১৮৩৪ সালে। ১ম ভারতীয় আইন কমিশনের প্রধান ছিলেন Lord Macaulay “লর্ড মেকলে”। ফৌজদারী কার্যবিধি সর্বপ্রথম প্রণীত হয় ১৮৬১ সালে। দিতীয়বার ফৌজদারী কার্যবিধি প্রণীত হয় ১৮৭২ সালে। ইহার পর ১৬টি সংশোধনী পাশ হয়। সকল সংশোধন বিবেচনা করে তৃতীয়/ সর্বশেষ/ বর্তমান ফৌজদারী কার্যবিধি প্রণীত হয় ১৮৯৮ সালে।

 

বাংলাদেশে ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করা হয় ২০০৯ সালের ৩২ নং আইন দ্বারা ধারা ১১ সংযোজন করা হয় যা কার্যকর হয় ১ নভেম্বর ২০০৭ সাল থেকে। ফৌজদারী কার্যবিধি সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০১২ সালে।

 

আইনের প্রকৃতি বা ধরণ:

আইনের প্রকৃতি বা ধরণ দুই রকম। যথাঃ (১) মূল আইন ও (২) পদ্ধতিগত আইন।

 

() মূল আইন/ মৌলিক আইন (Substantive Law):

যে আইন জনগণের পরস্পরের মধ্যে অধিকার এবং প্রতিকার ও দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করে তাহাকেই বলা হয় মূল আইন।  যেমনঃ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন (The Specific Relief Act), চুক্তি আইন (The Contract Act), দন্ডবিধি (Penal Code), সম্পত্তি হস্তান্তর আইন (The Transfer of property Act) ইত্যাদি মূল আইন।

 

() পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law/Adjective Law):

মূল আইনকে বাস্তবে প্রয়োগের জন্য যে আইনের সাহায্য নিতে হয় তাহাকেই বলা হয় পদ্ধতিগত আইন। যেমন: দেওয়ানি কার্যবিধি (The Code Civil Procedure), ফৌজদারি কার্যবিধি (The Code Criminal Procedure), সাক্ষ্য আইন (Evidence Act), তামাদি আইন (Limitation Act) ইত্যাদি পদ্ধতিগত আইন।

 

সুতরাং ফৌজদারী কার্যবিধি একটি পদ্ধতিগত আইন। তবে ইহা নিছক/কেবলমাত্র/শুধুমাত্র পদ্ধতিগত আইন নহে। বরং ইহা মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংমিশ্রন।

 

এক নজরে ফৌজদারী কার্যবিধি (Criminal Procedure Code at a Glance): 

আইনটির নাম – ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮

The Code of Criminal Procedure, 1898 (সংক্ষেপে বলা হয় CrPC)

প্রস্তাবনা – ১টি
খন্ড /ভাগ (Part) – ৯টি
অধ্যায় (Chapter) – ৪৬টি
ধারা (Section) – ৫৬৫ টি
তফসিল (Schedule) – ৫ টি
 আইন নং – ৫ নং আইন  (১৮৯৮ সালের)
প্রকাশিত হয় (Published) – ২২ মার্চ ১৮৯৮ সালে
কার্যকর হয় (Effected from) – ১ লা জুলাই ১৮৯৮ থেকে
আইনের ধরণ – ফৌজদারী কার্যবিধি একটি পদ্ধতিগত আইন। তবে ইহা নিছক/কেবলমাত্র পদ্ধতিগত আইন নহে, বরং ইহা মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইনের সংমিশ্রন।

 

ভাগ/খন্ড, অধ্যায় ও ধারা সমূহ

খন্ড /ভাগ (Part) মোট ৯টি   অধ্যায় (Chapter) মোট ৪৬ টি ধারা (Section) মোট ৫৬৫
১ম ভাগ/খন্ড- প্রাথমিক বিষয় অধ্যায় ১ -প্রারম্ভিক ধারা ১ – ৫
২য় ভাগ/খন্ড-

আদালত, অফিস ও ক্ষমতা

অধ্যায় ২ -ফৌজদারী আদালত ও অফিসের গঠন ধারা ৬ – ২৭
অধ্যায় ৩ -আদালতসমূহের ক্ষমতা ধারা ২৮ – ৪১
৩য় ভাগ/খন্ড-

সাধারণ বিধানাবলী

অধ্যায় ৪ -ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও গ্রেফতারকারী ব্যক্তিগণকে সাহায্য ও তথ্য প্রদান ধারা ৪২ – ৪৫
অধ্যায় ৫ -গ্রেফতার, পলায়ন ও পুনরায় গ্রেফতার ধারা ৪৬ – ৬৭
অধ্যায় ৬ -হাজির হতে বাধ্য করার ব্যবস্থা ধারা ৬৮ – ৯৩গ
অধ্যায় ৭ -দলিলাদি ও অপরাপর অস্থাবর সম্পত্তি উপস্থিত করতে এবং বে-আইনিভাবে আটক ব্যক্তিকে খুজে বের করতে বাধ্য করার পরোয়ানা ধারা ৯৪ – ১০৫
৪র্থ ভাগ/খন্ড-

অপরাধ প্রতিরোধ

ধারা ১০৬-১৫৩

অধ্যায় ৮ – অপরাধ দমন/ শান্তি রক্ষা ও সদাচারের মুচলেকা ধারা ১০৬ – ১২৬ক
অধ্যায় ৯ -বে-আইনি সমাবেশ ধারা ১২৭ – ১৩২
অধ্যায় ১০ -জনসাধারণের উৎপাত/ গণ-উপদ্রব ধারা ১৩২ক – ১৪৩
অধ্যায় ১১ – বিপদাশংকায় অস্থায়ী আদেশ ধারা ১৪৪
অধ্যায় ১২- স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে কলহ ধারা ১৪৫ – ১৪৮
অধ্যায় ১৩- পুলিশের প্রতিরোধমূলক কার্য ধারা ১৪৯ – ১৫৩
৫ম ভাগ/খন্ড- পুলিশের তদন্ত  অধ্যায় ১৪- আমলযোগ্য ও অ-আমলযোগ্য মামলা  ধারা ১৫৪ – ১৭৬
৬ষ্ট ভাগ/খন্ড-

ফৌজদারী মামলার কার্যক্রম

অধ্যায় ১৫-ফৌজদারী আদালতের অনুসন্ধান ও বিচারের এখতিয়ার ধারা ১৭৭ – ১৯৯খ
অধ্যায় ১৬- ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নালিশ ধারা ২০০ – ২০৩
অধ্যায় ১৭- ম্যাজিস্ট্রেটের মামলা শুরু ধারা ২০৪ – ২০৫ঘ
অধ্যায় ১৮- বাতিল ধারা ২০৬ – ২২০ (বাতিল)
অধ্যায় ১৯- চার্জ বিষয় ধারা ২২১ – ২৪০
অধ্যায় ২০- ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মামলার বিচার ধারা ২৪১ – ২৫০
অধ্যায় ২১ – বাতিল

 

ধারা ২৫১ – ২৫৯

 

অধ্যায় ২২- সংক্ষিপ্ত বিচার ধারা ২৬০ – ২৬৫
অধ্যায় ২৩- দায়রা আদালতের বিচার

 

ধারা ২৬৫ ক – ঠ

ধারা ২৬৬ – ৩৩৬ (বাতিল)

অধ্যায় ২৪- অনুসন্ধান (Inquiry) ও বিচারের (Trial) বিধান ধারা ৩৩৭ – ৩৫২
অধ্যায় ২৫- অনুসন্ধান ও বিচারে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি ধারা ৩৫৩ – ৩৬৫
অধ্যায় ২৬- রায় ধারা ৩৬৬ – ৩৭৩
অধ্যায় ২৭- দন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য পেশ ধারা ৩৭৪ – ৩৮০
অধ্যায় ২৮- শাস্তি কার্যকর করার পদ্ধতি ধারা ৩৮১ – ৪০০
অধ্যায় ২৯- শাস্তি স্থগিত, হ্রাস ও পরিবর্তন ধারা ৪০১ – ৪০২ক
অধ্যায় ৩০- পূর্ববর্তী খালাস ও দন্ডাদেশ ধারা ৪০৩
৭ম ভাগ/খন্ড-

আপীল, রেফারেন্স ও রিভিশন

অধ্যায় ৩১ -আপীল ধারা ৪০৪ – ৪৩১
অধ্যায় ৩২- রেফারেন্স ও রিভিশন

 

ধারা ৪৩২ – ৪৩৪ বাতিল

ধারা ৪৩৫ – ৪৪২

অধ্যায় ৩২ক- আপীল ও রিভিশন নিষ্পত্তির সময় ধারা ৪৪২ক
৮ম ভাগ/খন্ড-

বিশেষ কার্যক্রম

অধ্যায় ৩৩- বাতিল ধারা ৪৪৩ – ৪৬৩
অধ্যায় ৩৪- উম্মাদ ধারা ৪৬৪ – ৪৭৫
অধ্যায় ৩৫- বিচার সংক্রান্ত কতিপয় অপরাধ ধারা ৪৭৬ – ৪৮৭
অধ্যায় ৩৬- স্ত্রী ও সন্তানের ভরণ পোষণ ধারা ৪৮৮ – ৪৯০
অধ্যায় ৩৭- হেবিয়াস কর্পাস ধারা ৪৯১ – ৪৯১ক
৯ম ভাগ/খন্ড-

পরিপূরক বিধান

অধ্যায় ৩৮- পাবলিক প্রসিকিউটর ধারা ৪৯২ – ৪৯৫
অধ্যায় ৩৯- জামিন ধারা ৪৯৬ – ৫০২
অধ্যায় ৪০- সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য কমিশন ধারা ৫০৩ – ৫০৮ক
অধ্যায় ৪১- সাক্ষ্য বিষয়ে বিশেষ বিধি ধারা ৫০৯ – ৫১২
অধ্যায় ৪২- মুচলেকা (Bond) সংক্রান্ত বিধান ধারা ৫১৩ – ৪১৬
অধ্যায় ৪৩- সম্পত্তি নিষ্পত্তি বিষয় ধারা ৫১৬ক – ৫২৫
অধ্যায় ৪৪- ফৌজদারী মামলা স্থানান্তর ধারা ৫২৫ক – ৫২৮
অধ্যায় ৪৫- অনিয়মিত কার্যক্রম ধারা ৫২৯ – ৫৩৮
অধ্যায় ৪৬- বিবিধ ধারা ৫৩৯ – ৫৬৫

 

 

১ম ভাগ/খন্ড- প্রাথমিক বিষয়

অধ্যায় ১ -প্রারম্ভিক

ধারা ১ – ৫

 

ধারা :   শিরোনাম, সীমা, শুরু 

শিরোনাম : The Code of Criminal Procedure, 1898 (ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮)

সীমা : সমগ্র বাংলাদেশ।

শুরু : ১ জুলাই ১৮৯৮ ।

 

ধারা : সংজ্ঞাসমূহ

ধারা ৪(১)(ক): অ্যাডভোকেট (Advocate):

আইন অনুসারে যেকোনো আদালতে আইন ব্যবসা করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অ্যাডভোকেট বলে।

 

ধারা ৪(১)(কক):  এটর্নী জেনারেল (Attorney General):

বাংলাদেশের এটর্নী জেনারেল, অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল, ডিপুটি এটর্নী জেনারেল বা সহকারী এটর্নী জেনারেল অথবা সরকারী অ্যাডভোকেট অথবা এই ধরণের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তাকে বুঝায়।

 

ধারা ৪(১)(খ):  জামিনযোগ্য অপরাধ (Bailable Offence):

ফৌজদারী কার্যবিধির ২য় তফসিলে যেসকল অপরাধকে জামিনযোগ্য দেখানো হয়েছে সেসকল অপরাধকে জামিনযোগ্য অপরাধ বলে। এই অপরাধে আসামী অধিকার হিসাবে জামিন দাবী করতে পারে এবং আদালতও জামিন দিতে বাধ্য থাকে। যেমন: মারামারি, অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাত ইত্যাদি।

জামিনের অযোগ্য অপরাধ (Non-bailable Offence):

জামিনযোগ্য অপরাধ ব্যতীত অন্য সকল অপরাধকে জামিনের অযোগ্য অপরাধ বলে। এই অপরাধে আসামী অধিকার হিসাবে জামিন দাবী করতে পারে না এবং আদালতও জামিন দিতে বাধ্য থাকে না। যেমন: চুরি, ডাকাতি, খুন, ইত্যাদি।

 

ধারা ৪(১)(চ):  আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable Offence):

যে অপরাধের সংবাদ পেলে পুলিশ বিষয়টি আমলে নিবে, তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাবে এবং আসামীকে পেলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবে তাকে বলা হয় আমলযোগ্য অপরাধ।

 

ধারা ৪(১)(জ):  নালিশ (Complaint):

সংঘটিত কোনো অপরাধের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ দায়ের করাকে নালিশ বলে।

 

ধারা ৪(১)(ট):  অনুসন্ধান (Inquiry):

অপরাধের সত্যতা নির্ণয়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত কর্তৃক বিচার ব্যতীত সকল কার্যক্রমকে অনুসন্ধান বলে। ইহা প্রশাসনিক হতে পারে বা বিচারিকও হতে পারে।

 

ধারা ৪(১)(ঠ): তদন্ত (Investigation):

অপরাধের সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য পুলিশ অফিসার কর্তৃক কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট এর নির্দেশে অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক (ম্যাজিস্ট্রেট নহে) পরিচালিত কার্যক্রমকে তদন্ত বলে। ইহা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক কাজ।

 

ধারা ৪(১)(ড): বিচারিক কার্যক্রম (Judicial Proceedings/Trial):

আদালতে শপথবাক্য পাঠপূর্বক সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বলা হয় বিচারিক কার্যক্রম বা Trial.

 

ধারা ৪(১)(ঢ):  আমলের অযোগ্য অপরাধ (Non-Cognizable Offence):

যে অপরাধের সংবাদ পেলে পুলিশ বিষয়টি আমলে নিবে না, ম্যাজিস্ট্রেট এর নির্দেশে ছাড়া ঘটনাস্থলে যাবে না এবং আসামীকে পেলেও বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেনা তাকে বলা হয় আমলের অযোগ্য অপরাধ।

 

ধারা ৪(১)(ণ): অপরাধ (Offence):

শাস্তিযোগ্য কাজ বা নিবৃত্তিকে অপরাধ বলে। অপরাধ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা:

  • আইনগতঅপরাধ
  • নৈতিকঅপরাধ
  • ধর্মীয়অপরাধ

জামিনের দিক থেকে আইনগত অপরাধ ২ প্রকার-

  • জামিনযোগ্যঅপরাধ
  • জামিনেরঅযোগ্য অপরাধ

আমলের দিক থেকে আইনগত অপরাধ ২ প্রকার-

  • আমলযোগ্যঅপরাধ
  • আমলেরঅযোগ্য অপরাধ

মীমাংসার দিক থেকে আইনগত অপরাধ ৩ প্রকার-

  • মীমাংসাযোগ্যঅপরাধ
  • আদালতেরঅনুমতি সাপেক্ষে মীমাংসাযোগ্য অপরাধ
  • মীমাংসারঅযোগ্য অপরাধ

 

ধারা ৪(১)(ন): পাবলিক প্রসিকিউটর (Public Prosecutor):

কোনো মামলা পরিচালনার জন্য ৪৯২ ধারা মোতাবেক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তাকে বলা হয় পাবলিক প্রসিকিউটর।

 

ধারা ৫: দন্ডবিধির অধীনে অপরাধের বিচার।

দন্ডবিধিতে বর্ণীত সমস্ত অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান, বিচার এবং অপর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ এই বিধি মোতাবেক হবে।

অন্য কোনো আইনে বর্ণীত অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান, বিচার এবং অপর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সেই বিধি মোতাবেক হবে।

উক্ত আইনে পদ্ধতি উল্লেখ না থাকলে সেই ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি কার্যকর হবে।

 

অধ্যায় -২

ফৌজদারী আদালত ও অফিসের গঠন  

ধারা ৬ – ২৭

 

ধারা : ফৌজদারী আদালতের শ্রেণীবিভাগ। 

সুপ্রীম কোর্ট ব্যতীত এবং এই বিধি বহির্ভূত অন্য কোনো আইন দ্বারা গঠিত আদালত ব্যতীত ফৌজদারী আদালত প্রধানত ২ প্রকার-

(১) দায়রা আদালত

(২) ম্যাজিস্ট্রেট আদালত

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আবার ২ প্রকার-

(a) বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট

(b) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

 

বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আবার ৪ প্রকার

(I) চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (CJM) [মহানগরের বাহিরে]/ চীফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (CMM) [মহানগর এলাকায়]

(II) ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট [মহানগরের বাহিরে]/ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (MM) [মহানগর এলাকায়]

(III) ২য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট

(IV) ৩য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট

[২য় ও ৩য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট শুধুমাত্র মহানগরের বাহিরে আছে]

 

ধারা : দায়রা বিভাগ (Sessions Division).

সরকার বিচার কার্যের সুবিধার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে যতটি খুশি ততটি বিভাগে বিভক্ত করতে পারবেন। প্রতিটি বিভাগ এক বা একাধিক জেলা নিয়ে গঠিত হবে। প্রতিটি মহানগর ১টি করে দায়রা বিভাগ হিসাবে গন্য হবে। প্রতিটি বিভাগ দায়রা বিভাগ হিসাবে গন্য হবে।

[বর্তমানে প্রতিটি দায়রা বিভাগ ১টি জেলা নিয়ে গঠিত। ৬৪টি জেলায় – ৬৪টি দায়রা বিভাগ, ৬টি মহানগরে- ৬টি দায়রা বিভাগ।]

 

ধারা : দায়রা আদালত (Court of Session).

সরকার প্রতিটি দায়রা বিভাগে ১টি করে দায়রা আদালত স্থাপন করবেন। মহানগরের জন্য পৃথক দায়রা আদালত গঠিত হবে এবং পরিচিত হবে মহানগর দায়রা আদালত হিসাবে।

[ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় ১টি করে দায়রা আদালত আছে এবং ৬টি মহানগরে (Metropolitan City) ৬টি দায়রা আদালত আছে। অর্থাৎ জেলা ও দায়রা জজ আদালত – ৬৪টি ও মহানগর দায়রা জজ – ৬টি। সুতরাং বাংলাদেশে সর্বমোট ৭০টি দায়রা আদালত আছে।]

 

ধারা ১০: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (Executive Magistrate).

সরকার প্রতিটি জেলার জন্য ১ জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (District Magistrate/DM) এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (Additional District Magistrate/ADM) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (Executive Magistrate/EM) নিয়োগ করবেন।

সরকার ইহাদের সকলকে Public Service (প্রশাসন) এর সদস্যদের মধ্য হতে নিয়োগ করবেন।

DC, ADC, AC, UNO পদাধিকার বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে গণ্য হবেন।

প্রতিটি জেলায় ৩ স্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে:

  • District Magistrate (DM) – প্রতিটি জেলায় ১ জন DM থাকবেন।
  • Additional District Magistrate (ADM) – প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক ADM থাকবেন।
  • Executive Magistrate (EM) – প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক EM থাকবেন।

 

ধারা ১১: বিচারিক/ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (Judicial Magistrate).

সরকার মহানগরের বাহিরে প্রতিটি জেলার জন্য ১ জন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (Chief Judicial Magistrate/CJM), প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ACJM) এবং অন্যান্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করবেন।

[ প্রতিটি জেলায় ৫ স্তরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে:

  • Chief Judicial Magistrate (CJM)
  • Additional Chief Judicial Magistrate (ACJM)
  • Magistrate of the 1st class
  • Magistrate of the 2nd class
  • Magistrate of the 3rd class.]

 

  • CJM –প্রতিটি জেলায় ১ জন থাকবেন।
  • ACJM – প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক থাকবেন।
  • JM (JM-1, JM-2 etc) – প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক থাকবেন।

 

ধারা ১২: বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট (Special Magistrate).

সরকার বিশেষ প্রকৃতির মামলা পরিচালনার জন্য বিশেষ আইনের মাধ্যমে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করতে পারবেন। বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটদের মেয়াদ, ক্ষমতা কার্যাবলী উক্ত আইনে উল্লেখ থাকবে।

বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট ৩ প্রকার:

  • বিশেষনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
  • বিশেষম্যাজিস্ট্রেট
  • বিশেষমেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট

 

(I) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট: সরকার মহানগরের বাহিরে বিশেষ প্রকৃতির মামলা পরিচালনার জন্য যেকোনো ব্যক্তিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। তবে কোনো পুলিশের ক্ষেত্রে ASP এর নিচে কোনো পুলিশকে এই ক্ষমতা প্রাদান করা যাবে না।

(II) বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট: সরকার মহানগরের বাহিরে বিশেষ প্রকৃতির মামলা পরিচালনার জন্য যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। যাকে এই ক্ষমতা প্রাদান করা হবে তিনি বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে পরিচিত হবেন।

(III) বিশেষ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট: সরকার মহানগরের ভিতর বিশেষ প্রকৃতির মামলা পরিচালনার জন্য যেকোনো MM কে একজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। যাকে এই ক্ষমতা প্রাদান করা হবে তিনি বিশেষ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে পরিচিত হবেন।

 

ধারা ১৫: ম্যাজিস্ট্রেটসমুহের বেঞ্চ গঠন।

সরকার মহানগরের বাহিরে ২ বা ততোধিক ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে বেঞ্চ গঠন করতে পারেন। বেঞ্চকে ১ম বা ২য় বা ৩য় শ্রেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। সরকার গেজেটে বেঞ্চের ক্ষমতা উল্লেখ না করলে বা কোনো ক্ষমতা অর্পণ না করলে বেঞ্চের জৈষ্ঠ পদের অধিকারী সদস্যের ক্ষমতাই বেঞ্চের ক্ষমতা হিসাবে গণ্য হবে।

 

ধারা ১৬: বেঞ্চ এর জন্য বিধি প্রণয়ন করবেন ক্ষমতা।

CJM এই আইন বা অন্য কোনো আইনে তাকে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। ইহা ছাড়া এই আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিম্নলিখিত বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন-

(১) বিচার্য মামলার শ্রেণী।

(২) বেঞ্চ এর বৈঠকের স্থান ও সময়।

(৩) বিচারের জন্য বেঞ্চ গঠন।

(৪) দিধা বিভক্ত হলে নিষ্পত্তি।

 

ধারা ১৭: নির্বাহী, জুডিশিয়াল ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনতা।

(১) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (District Magistrate/DM) এর অধীন হবেন।

(২) বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটসহ সকল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট CJM (Chief Judicial Magistrate) এর অধীন হবেন।

(৩) বিশেষ MM সহ সকল MM, CMM এর অধীন হবেন।

(৪) CJM সহ সকল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়রা জজের অধীন হবেন।

(৫) CMM সহ সকল MM, মহানগর দায়রা জজের অধীন হবেন।

 

সংক্ষেপেঃ

DM – এর অধীন সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমূহ

CJM – এর অধীন সকল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সমূহ

CMM – এর অধীন সকল MM সমূহ

Session – এর অধীন CJM + সকল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সমূহ

Metro Session – এর অধীন CMM + সকল MM সমূহ

 

ধারা ১৮: মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (MM) নিয়োগ

সরকার প্রতিটি মহানগরের জন্য একজন CMM, এক বা একাধিক ACMM ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক MM নিয়োগ করবেন।

সরকার ইহাদের সকলকে জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের মধ্য হতে নিয়োগ করবেন।

প্রতিটি মহানগরে ৩ স্তরের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (MM) থাকবে।

(I) CMM (Chief Metropoliton Magistrate)

(II) ACMM (Additional Chief Metropoliton Magistrate)

(III) MM (Metropoliton Magistrate)

 

ধারা ২১: CMM এর ক্ষমতা

CMM, এই কার্যবিধি বা অন্যকোনো আইনে তাকে প্রদত্ত সকল ক্ষমতা ও একজন MM এর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

ইহা ছাড়াও এই কার্যবিধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিম্নলিখিত বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন-

(ক) MM এর মধ্যে কার্য বন্টন ও পরিচালনা এবং আদালতে তাদের রীতিনীতি।

(খ) বেঞ্চ গঠন করতে পারবেন।

(গ) বেঞ্চ এর বৈঠকের সময় ও স্থান নির্ধারণ করবেন।

(ঘ) বেঞ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান দ্বিধা বিভক্ত হলে নিষ্পত্তির পদ্ধতি।

 

ধারা ২২: মফস্বলের জন্য জাস্টিসেস অফ দা পিস (Justices of the peace).

সরকার সরকারী গেজেটে বাংলাদেশের কোনো বাসিন্দা যিনি বিদেশী প্রজা নন এমন কোনো ব্যক্তিকে গেজেটে উল্লেখিত এলাকার জন্য Justices of the peace নিয়োগ করতে পারবেন।

 

ধারা ২৫: পদাধিকার বলে জাস্টিসেস দা পিস

সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণ পদাধিকার বলে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য, দায়রা জজ, CJM ও MM গণ নিজেদের এখতিয়ারের মধ্যে পদাধিকার বলে Justices of the peace গণ্য হবেন।

১ম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট Justices of the peace নয়।

 

অধ্যায় -৩

ফৌজদারী আদালতসমূহের ক্ষমতা

ধারা ২৮ – ৪১

 

ধারা ২৮: দণ্ডবিধির অধীন অপরাধ

দণ্ডবিধির অধীন অপরাধের বিচার করতে পারবেন –

(ক) হাইকোর্ট বিভাগ।

(খ) দায়রা আদালত ও

(গ) এই কার্যবিধির ২য় তফসিলের ৮ম কলামে বর্ণিত আদালত।

 

ধারা ২৯: অন্যান্য আইনের অধীন অপরাধ

অন্যান্য আইনের অধীন অপরাধের বিচার উক্ত আইনে বর্ণিত আদালত করবেন। কিন্তু উক্ত আইনে কোনো আদালতের বর্ণনা উল্লেখ না থাকলে সেই ক্ষেত্রে বিচার করবেন হাইকোর্ট বিভাগ বা এই কার্যবিধির ২য় তফসিলের ৮ম কলামে বর্ণিত আদালত।

 

ধারা ২৯বি: কিশোরদের ক্ষেত্রে এখতিয়ার

মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড যোগ্য অপরাধ ব্যতীত অন্য সকল অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী আদালতে হাজির হলে কিংবা তাকে আদালতে হাজির করা হলে হাজিরের তারিখে তার বয়স ১৫ বছরের কম হলে অপরাধের বিচার করবেন CMM বা CJM বা যে ম্যাজিস্ট্রেট যুব অপরাধীদের আটক, বিচার ও দন্ড দিতে সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সেই ম্যাজিস্ট্রেট।

 

ধারা ২৯সি: যে সকল অপরাধ মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় নয়

সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শ করে –

(ক) “মৃত্যুদন্ডে দন্ডনীয় নয়” এরূপ অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা CMM, CJM ও ACJM কে প্রদান করতে পারেন।

[শুধুমাত্র ACMM কে এই ক্ষমতা প্রদান করা হয় নাই]

(খ) “১০ বছরের অধিক নয়” এরূপ অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা MM বা ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করতে পারেন।

 

ধারা ৩১: হাইকোর্ট বিভাগ  দায়রা আদালত যে দণ্ড দিতে পারে

(ক) হাইকোর্ট বিভাগ আইন দ্বারা অনুমোদিত যেকোনো যেকোনো দন্ড দিতে পারেন।

(খ) দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আইন দ্বারা অনুমোদিত যেকোনো দন্ড দিতে পারেন। তবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়।

(গ) যুগ্ম দায়রা জজ অনধিক ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দিতে পারেন।

 

ধারা ৩২: ম্যাজিস্ট্রেটগণ যে দণ্ড দিতে পারেন।

(ক) MM/ ১ম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট (CMM/ACMM/CJM/ACJM) দিতে পারেন-

নির্জন কারাবাস

যেকোনো বর্ণনার অনধিক ৫ বছর কারাদন্ড

অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা

বেত্রাঘাত

 

(খ) ২য় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট দিতে পারেন-

নির্জন কারাবাস

যেকোনো বর্ণনার অনধিক ৩ বছর কারাদন্ড

অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা

 

(গ) ৩য় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট দিতে পারেন-

যেকোনো বর্ণনার অনধিক ২ বছর কারাদন্ড

অনধিক ২ হাজার টাকা জরিমানা

 

ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি
MM/১ম শ্রেনীর নির্জন কারাবাস অনধিক ৫ বছর কারাদন্ড অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বেত্রাঘাত
২য় শ্রেনীর নির্জন কারাবাস অনধিক ৩ বছর কারাদন্ড অনধিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা
৩য় শ্রেনীর অনধিক ২ বছর কারাদন্ড অনধিক ২ হাজার টাকা জরিমানা

 

ধারা ৩৩:

জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিস্ট্রেটগণের দন্ড দানের ক্ষমতা।

জরিমানা অনাদায়ে ম্যাজিস্ট্রেটগণ যেকোনো দন্ড দিতে পারেন। তবে শর্ত হচ্ছে-

(ক) কারাদন্ডের পরিমাণ ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারের অতিরিক্ত হবে না।

(খ) ম্যাজিস্ট্রেটগণ যে অপরাধের বিচার করবেন উক্ত অপরাধের জন্য আইনে বর্ণিত সর্বোচ্চ কারাদন্ডের ১/৪ অংশ হবে জরিমানা অনাদায়ে কারাদন্ড।

 

[এই ধারার সংশ্লিষ্ট ধারা দন্ডবিধিতে ৬৫]

 

ধারা ৩৩ক:

২৯সি ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটগণ, মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৭ বছরের অধিক কারাদন্ড ব্যতীত যেকোনো দন্ড দিতে পারেন।

অর্থাৎ ২৯সি ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটগণ সর্বোচ্চ কারাদন্ড দিতে পারেন ৭ বছর।

 

ধারা ৩৫: একই মামলায় বিভিন্ন অপরাধে দন্ডিত হলে যে শাস্তি প্রদান করা যায়।

কোনো আদালত একই মামলায় একাধিক অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দন্ড দিতে পারবেন। দন্ডের মোট পরিমাণ আদালতের সাধারণ এখতিয়ারের অতিরিক্ত বলে মামলাটি উচ্চ আদালতে প্রেরণের প্রয়োজন নাই। তবে শর্ত এই যে-

(ক) যুগ্ম দায়রা জজ বিচার করলে দন্ডের পরিমাণ ১৪ বছরের বেশি হবে না।

(খ) ম্যাজিস্ট্রেট বিচার করলে দন্ডের পরিমাণ তার এখতিয়ারের দ্বিগুনের বেশি হবে না।

কোনো আদালত একই মামলায় একাধিক অপরাধের বিচার করলে এবং দন্ড দিলে আদেশে যদি দন্ড একসাথে কার্যকর করার কথা উল্লেখ থাকে তাহলে একসাথে কার্যকর হবে। অন্যথায় একটির পর একটি কার্যকর হবে।

উপরোক্ত বিধান হাইকোর্ট বিভাগ, দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

 

ধারা ৩৫ক: হাজতকালীন সময় কারাদন্ডের মেয়াদ থেকে বাদ যাবে

কোনো ব্যক্তি কোনো আদালত কর্তৃক দন্ডিত হলে দন্ডিত কারাদন্ড হতে তার হাজতকালীন সময় বাদ যাবে।

আসামীকে প্রদত্ত কারাদন্ডের চেয়ে হাজতকালীন সময় যদি বেশি হয় সেইক্ষেত্রে আসামীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং কারাদন্ডের অতিরিক্ত যদি কোনো অর্থদন্ড প্রদান করা হয় সেটিও মওকুফ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

উপরোক্ত বিধান মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।

[যাহারা কারাগারে থাকে তাদের শ্রেণী ২টি –

(ক) কয়েদি  – দন্ডপ্রাপ্ত

(খ) হাজতি  – বিচারাধীন]

 

ধারা ৩৬: ম্যাজিস্ট্রেটদের সাধারণ ক্ষমতা।

নির্বাহী বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণের সাধারণ ক্ষমতা।

নির্বাহী বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ এই কার্যবিধির ৩য় তফসিলে (3rd Schedule) বর্নিত সাধারণ ক্ষমতা গুলো প্রয়োগ করতে পারবেন। ইহাকে বলা হয় ম্যাজিস্ট্রেটগণের সাধারণ ক্ষমতা।

 

ধারা ৩৭: ম্যাজিস্ট্রেটগণের অতিরিক্ত ক্ষমতা।

সরকার/ DM/ CJM কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত হলে নির্বাহী বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ এই কার্যবিধির ৪র্থ তফসিলে (4th Schedule) বর্নিত অতিরিক্ত ক্ষমতা গুলো প্রয়োগ করতে পারবেন। ইহাকে বলা হয় ম্যাজিস্ট্রেটগণের অতিরিক্ত ক্ষমতা।

 

অধ্যায় -৪

ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও গ্রেফতারকারী ব্যক্তিগণকে সাহায্য ও তথ্য প্রদান

ধারা ৪২ – ৪৫

 

ধারা ৪২: জন সাধারণ যখন ম্যাজিস্ট্রেট  পুলিশকে সাহায্য করবেন।

নির্বাহী বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ অফিসার নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আহ্বান করলে জনসাধারণ সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে-

(ক) গ্রেফতার বা পলায়ন প্রতিরোধে

(খ) শান্তি রক্ষা বা শান্তি ভঙ্গ প্রতিরোধে বা

(গ) সরকারী সম্পত্তি ক্ষতির চেষ্টা প্রতিরোধে।

 

ধারা ৪৫: গ্রামপ্রধান, হিসাবরক্ষক, জোতদার, জমির মালিক বা দখলদার নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট বা  ওসিকে রিপোর্ট দিতে বাধ্য থাকবে-

(ক) চোরাইমাল।

(খ) ডাকাতি।

(গ) জামিন অযোগ্য অপরাধ।

(ঘ) অসাভাবিক মৃত্যু।

(চ) DM এর নির্দেশ অনুযায়ী।

 

অধ্যায় – ৫

গ্রেফতার, পলায়ন ও পুনরায় গ্রেফতার

ধারা ৪৬ – ৬৭

ক. সাধারণভাবে গ্রেফতার (ধারা ৪৬-৫৩)

 

ধারা ৪৬: গ্রেফতারের পদ্ধতি/ যেভাবে গ্রাফতার করতে হবে

কথায় বা কাজে অপরাধী আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ অফিসার আসামীকে গ্রেফতার করবেন বা আটক করবেন বা স্পর্ষ করবেন।

আসামী গ্রেফতারে বাধা দিলে বা পলায়নের চেষ্টা করলে গ্রেফতারকারী কর্মকর্তা সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডযোগ্য আসামী না হলে গ্রেফতার নিশ্চিত করার জন্য হত্যা করা যাবে না।

 

ধারা ৫০: অনাবশ্যক বাধা প্রদান করা যাবেনা

পলায়ন প্রতিরোধের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি বাধা প্রদান করা যাবে না।

 

ধারা ৫১: গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশী

কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পরপরই গ্রেফতারকারী উক্ত ব্যক্তির দেহ তল্লাশী করবেন। প্রয়োজনীয় ও পরিধেয় বস্ত্রাদি ছাড়া অন্য সকল কিছু আটক করতে পারবেন ও নিরাপদ হেফাজতে সংরক্ষণ করবেন।

 

ধারা ৫২: মহিলার দেহ তল্লাশী

কোনো মহিলার দেহ তল্লাশী করাতে হবে অন্য কোনো মহিলা বা স্ত্রীলোকের দ্বারা শালীনতার সাথে।

 

ধারা ৫৩: অপরাধজনক অস্ত্র আটক করার ক্ষমতা

কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তার নিকট কোনো আক্রমনাত্মক অস্ত্র থাকলে সেটিও আটক করতে হবে। পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তিকে যে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অর্পণ করা হবে তার নিকট আটককৃত অস্ত্রও জমা দিতে হবে।

 

ক. বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (ধারা ৫৪ – ৬৭)

 

ধারা ৫৪: যেক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে

কোনো পুকিশ অফিসার ৯ টি ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে-

[CIPSODERR]

  1. Cognizable offence (আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে)
  2. Implement of house breaking (ঘর ভাঙ্গার সরঞ্জাম পাওয়া গেলে)
  3. Proclaimed as an offender (ঘোষিত অপরাধই)
  4. Stolen property (চোরাই মাল সন্দেহে)
  5. Obstruct a police officer (পুলিশ অফিসারের কাজে বাধা দিলে)
  6. Deserter from armed forces (সশস্ত্র বাহিনী থেকে পলায়ন করলে)
  7. Extradition (বহিঃসমর্পন)
  8. Requisition (অনুরোধ থাকলে)
  9. Released convict (শর্তাধীনে মুক্তি প্রাপ্ত আসামী)

 

ধারা ৫৫: ভবঘুরে, অভ্যাসগত দস্যু ইত্যাদিকে গ্রেফতার

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিম্নলিখিত ৩ টি ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারেন।

  1. Absconder (আত্মগোপনকারী)
  2. Vagabonds (ভবঘুরে)
  3. Habitual Robbers (অভ্যাসগতদস্যু)

 

ধারা ৫৭: নাম বা বাসস্থান জানাতে অস্বীকৃতি

কোনো ব্যক্তি কোনো পুলিশ অফিসারের সামনে আমলের অযোগ্য অপরাধ করলে উক্ত পুলিশ অফিসার উক্ত অপরাধীর নাম ঠিকানা নিয়ে ছেড়ে দিবেন।

নাম ঠিকানা জানাতে অস্বীকার করলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবেন। গ্রেফতারের পর ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলে আদালতে চালান করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *