বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) ০১/০৯/১৯৭৮ ইং তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭৮ সাল (বিএনপি প্রতিষ্ঠা)-
২১/০৪/১৯৭৭ ইং তারিখে জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক হিসাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩০/০৪/১৯৭৭ ইং তারিখে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার জন্য ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেন। অতঃপর তিনি তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। তখন আব্দুস সাত্তার ছিলেন এই দলের সমন্বয়ক। পরবর্তীতে জাগদলকে বিএনপির সাথে একীভূত করা হয়। একীভূত করার পর ঐ দলের সমন্বয়ক ও প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন প্রথম মহাসচিব। ২৮/০৮/১৯৭৮ ইং তারিখে জাগদলের বর্ধিত সভায় দলটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং ঐ দলের সবাই বিএনপি তে যোগদান করেন। ০১/০৯/১৯৭৮ ইং তারিখ বিকাল ৫ ঘটিকায় রমনা রেস্তোরাঁয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭৫ সাল (জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব)-
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ইং সালে সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রায় তিন বছর পর্যন্ত অনির্বাচিত সরকার বাংলাদেশ শাসন করেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।
১৯৭৯ সাল (দ্বিতীয় নির্বাচন)-
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।
১৯৮১ সাল (জিয়াউর রহমান নিহত হন)-
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তারপর তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন।
১৯৯১ সাল (খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন)-
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ ইং তারিখে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়তে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে খালেদা জিয়া প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসন করেন।
১৯৯৬ সাল (ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন)-
খালেদা জিয়া তার সরকারের ৫ বছর মেয়াদ শেষ হলে ক্ষমতা হস্তান্তর না করেই ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ ইং তারিখে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে পুনরায় সরকার গঠন করে। এই সরকারের মেয়াদ ছিল মাত্র ৪৫ দিন। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করে তুমুল আন্দোলন করলে ১২ জুন ১৯৯৬ ইং তারিখে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০১ সাল (অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন)–
২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সহ চারদল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।
সাত দলীয় জোট গঠন–
এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য নব্বই এর দশকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করে। এই জোটকে বলা হয় ৭ দলীয় জোট।
৭ দলীয় জোটভূক্ত দলসমূহ:
(১) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
(২) জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)
(৩) প্রগ্রেসিভ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি (পিএনপি)
(৪) বাংলাদেশ মুসলিম লীগ
(৫) ডেমোক্র্যাটিক লীগ
(৬) ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি)
(৭) ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)
চার দলীয় জোট গঠন–
১৯৯৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় ঐক্য জোট গঠন করা হয়। কিছু দিন পর জাতীয় পার্টির একাংশ এরশাদের নেতৃত্বে দল থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জুর সমর্থক একটি অংশটি জোটে থেকে যায়।
চার দলীয় জোটভূক্ত দলসমূহ:
(১) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
(২) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
(৩) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি
(৪) ইসলামী ঐক্য জোট
বিশ দলীয় জোট গঠন–
১৮ই এপ্রিল ২০১২ ইং তারিখে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়। এই জোটে বিএনপির শরিক হিসাবে রয়েছে চার দলের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট সহ নতুন যোগ দেয় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) , বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও পিপলস লীগ। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল যোগ দিলে জোটটি বিশ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।
বিশ দলীয় জোটভুক্ত দলসমূহ:
(১) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
(২) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
(৩) লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)
(৪) জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)
(৫) বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি – বিজেপি
(৬) ইসলামী ঐক্যজোট
(৭) খেলাফত মজলিস
(৮) জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা
(৯) বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
(১০) বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ
(১১) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
(১২) বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল
(১৩) ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি
(১৪) ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এনডিপি
(১৫) বাংলাদেশ লেবার পার্টি
(১৬) বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি
(১৭) ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি -ন্যাপ ভাসানী
(১৮) ডেমোক্রেটিক লীগ
(১৯) পিপলস লীগ
(২০) বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল
ক্রমিক | পদ | নাম |
১। | প্রতিষ্ঠাতা | জিয়াউর রহমান |
২। | চেয়ারপারসন | খালেদা জিয়া |
৩। | ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান | তারেক রহমান |
৪। | মহাসচিব | মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর |
৫। | প্রতিষ্ঠা | ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ |
সদর দপ্তর | ২৮/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ | |
নির্বাচনী প্রতীক | ধানের শীষ | |
ওয়েবসাইট | www.bnpbd.org |
দলে ভাঙ্গন ও নেতাদের দলত্যাগ-
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর মওদুদ আহমেদ দল ত্যাগ করেন। ২০০১ সালে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপি ত্যাগ করে বিএনপির একটি অংশ নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ (BDB) গঠন করেন। ২০০৬ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কর্ণেল (অব:) ড: অলি আহমেদ, বীর বিক্রম, বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মী নিয়ে বিএনপি ত্যাগ করেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার সাথে একীভূত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (LDP) গঠন করেন।
দলের সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ–
(১) গ্রাম কাউন্সিল ও গ্রাম নির্বাহী কমিটি
(২) শহর/পৌরসভা ওয়ার্ড কাউন্সিল ও শহর/পৌরসভা ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি
(৩) ইউনিয়ন কাউন্সিল ও ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটি
(৪) থানা কাউন্সিল ও থানা নির্বাহী কমিটি
(৫) শহর/পৌরসভা কাউন্সিল ও শহর পৌরসভা নির্বাহী কমিটি
(৬) জেলা কাউন্সিল ও জেলা নির্বাহী কমিটি
(৭) নগর/ওয়ার্ড কাউন্সিল ও নগর ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি
(৮) নগর থানা কাউন্সিল ও নগর থানা নির্বাহী কমিটি
(৯) নগর কাউন্সিল ও নগর নির্বাহী কমিটি
(১০) জাতীয় কাউন্সিল
(১১) জাতীয় নির্বাহী কমিটি
(১২) জাতীয় স্থায়ী কমিটি
(১৩) পার্লামেন্টারী বোর্ড
(১৪) পার্লামেন্টারী পার্টি
(১৫) বিদেশে দলের শাখা
বিএনপির ছায়া সংগঠন সমূহ-
সহযোগী সংগঠন–
(১) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
(২) জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল
অঙ্গ সংগঠন–
(১) জাতীয়তাবাদী যুবদল
(২) জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবকদল
(৩) জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদল
(৪) জাতীয়তাবাদী কৃষক দল
(৫) জাতীয়তাবাদী মৎসজীবীদল
(৬) জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল
(৭) জাতীয়তাবাদী ওলামাদল
(৮) জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)
(৯) জাতীয়তাবাদী মহিলাদল
পেশাজীবী সংগঠন–
(১) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম
(২) ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
(৩) অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব)
(৪) এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
(৫) শিক্ষক -কর্মচারী ঐক্যজোট
(৬) শত নাগরিক কমিটি