রাজাকার আসলে কারা

রাজাকার অর্থ কি ? রাজাকার আসলে কারা ?

 

উৎপত্তি গত অর্থ-

রাজাকার বা রেজাকার (کار رضا) শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে আগত। এটি ফার্সি ভাষা থেকে ধার করা শব্দ হিসেবে উর্দু ভাষায় এসেছে। এর অর্থ স্বেচ্ছাসেবী। বাংলাদেশে, রাজাকার একটি অপমানজনক শব্দ, যার অর্থ বিশ্বাসঘাতক বা প্রতারক।

 

রাজাকার শব্দটির উৎস-

১৯৪০-এর দশকে ভারতের হায়দ্রাবাদের নিজাম ওসমান আলী খানের শাসনামলে কাসেম রিজভী একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, সেই বাহিনীটির নাম রাখা হয়েছিল রাজাকার ৷

 

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলা কালে হায়দ্রাবাদের “রাজাকার” নামক সেই সশস্ত্র বাহিনীকে অনুসরণ করেই রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক সরকার।

 

পটভূমি

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী বাঙালি এবং উর্দুভাষী অবাঙালি অভিবাসীদের নিয়ে একটি আধা-সামরিক বাহিনী গঠন করেছিল । বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য এবং পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থী কর্মী নিয়ে হায়দ্রাবাদের “রাজাকার” -এর অনুকরণে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। মে মাসে ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান মো. ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করা হয়৷ পরবর্তীকালে দেশের অন্যান্য অংশেও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়।

 

রাজাকার বাহিনী গঠনের পর প্রথম দিকে এটা এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন ছিল। তারপর ০১ জুন ১৯৭১ ইং তারিখে জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অধ্যাদেশ জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তর করে। এই রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তানপন্থী স্থানীয় নেতারা। পরবর্তীতে ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আকটি অধ্যাদেশে  জারি করে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদেরকে সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।

 

প্রশিক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদেরকে ১৫ দিন প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।  ১৪ জুলাই ১৯৭১ ইং তারিখে কুষ্টিয়ায় রাজাকার বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষ হয়। পূর্বাঞ্চলীয় (পূর্ব পাকিস্তানের) সামরিক অধিনায়ক জেনারেল এ. এ. কে নিয়াজী ২৭ নভেম্বর ১৯৭১ ইং তারিখে সাভারে রাজাকার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে বিদায়ী কুচকাওয়াজে সালাম বা অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের মর্যাদায় উন্নীত হয়।

 

বিলুপ্তি

বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সাথে সাথে রাজাকার বাহিনীর স্বাভাবিক বিলুপ্তি ঘটে।

 

রাজাকারের তালিকা-

রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এই তালিকায় ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটা চূড়ান্ত তালিকা নয় বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

 

কয়েকজন অভিযুক্ত রাজাকার

(১) গোলাম আযম,

(২) আব্বাস আলী খান, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর,

(৩)  মতিউর রহমান নিজামী,

(৪) আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর ঢাকা মহানগরীর প্রধান,

(৫) মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল,

(৬) দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, জামাতে ইসলামীর মজলিসের শুরার সদস্য,

(৭) আবদুল কাদির মোল্লা, জামাতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক,

(৮) ফজলুল কাদের চৌধুরী,

(৯) সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী,

(১০) মীর কাসেম আলী।

 

তথ্যসূত্র-

উইকিপেডিয়া, বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *