রিমান্ড কি–
শাব্দিক অর্থ–
“রিমান্ড” Remand একটি ইংরেজি শব্দ যা ল্যাটিন শব্দ “Remandare” থেকে উদ্ভূত। এখানে “Re-” অর্থ “পুনরায়” এবং “mandare” অর্থ “প্রেরণ করা” যার শাব্দিক অর্থ হলো “পুনরায় প্রেরণ করা” বা “ফিরিয়ে দেওয়া”।
আইনের ভাষায় রিমান্ড-
দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, রিমান্ড হলো কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি কিংবা বিচারাধীন কোন মামলা পুনরায় ফেরত পাঠানোকে বলা হয় রিমান্ড।
রিমান্ড এর প্রকার-
রিমান্ড সাধারণত তিন প্রকার। ফৌজদারি মামলায় দুই প্রকার এবং দেওয়ানী মামলায় এক প্রকার রিমান্ডের প্রয়োগ রয়েছে। যথা-
১। পুলিশ রিমান্ড -(ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৬৭ ধারা),
২। জুডিশিয়াল রিমান্ড -(ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৩৪৪ ধারা),
৩। মামলার রিমান্ড -(দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৪১ আদেশের ২৩ বিধি)।
১। পুলিশ রিমান্ড–
পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে আটক করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে (ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৬৭ ধারা) আদালতের সামনে উপস্থাপন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পুলিশ উক্ত আটক ব্যক্তিকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করে তদন্তের স্বার্থে রিমান্ড আবেদন করলে উক্ত আবেদন আদালত মঞ্জুর করে উক্ত আটক ব্যক্তিকে আবার পুলিশের নিকট ফেরত দিতে পারেন। আটক ব্যক্তিকে পুলিশের নিকট ফেরত দেওয়াকে বলা হয় পুলিশ রিমান্ড। পুলিশ রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি সরাসরি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকেন। আদালত পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশ রিমান্ড বা জুডিশিয়াল রিমান্ড এর যেকোনো একটি রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন।
২। জুডিশিয়াল রিমান্ড–
বিচারক যদি মনে করেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই, তবে তাকে জুডিশিয়াল রিমান্ডে পাঠানো হয়। এ ধরনের রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে না রেখে জেল হেফাজতে রাখা হয়। এখানে তদন্তকারী সংস্থা আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। জুডিশিয়াল রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি জেল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাকেন।
৩। মামলার রিমান্ড (Remand of case)–
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৪১ আদেশের ২৩ বিধি অনুযায়ী কোন দেওয়ানী মামলার ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা হইলে আপীল আদালত উক্ত মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য ডিক্রি প্রদানকারী নিম্ন আদালতে (মূল আদালতে) প্রেরণ করিতে পারেন। ইহাই হলো মামলার রিমান্ড।
রিমান্ডের উদ্দেশ্য–
১। তদন্তের সাহায্য করা: পুলিশ বা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক তথ্য সংগ্রহ করা, অপরাধ সম্পর্কে আরও তদন্ত করা এবং অপরাধের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করা।
২। প্রমাণ সংরক্ষণ: সম্ভাব্য প্রমাণের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যক্তিদের কাছে যাওয়া বা প্রমাণ নষ্ট করা থেকে বিরত রাখা।
৩। আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করা: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আদালতে উপস্থিত নিশ্চিত করা
রিমান্ড কোন আইনে কোন আদালত মঞ্জুর করতে পারেন-
পুলিশ রিমান্ড-
আদালত পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) এর ১৬৭ ধারা অনুযায়ী। এই ধারায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট/১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট/বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত ২য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন। ৩য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিশেষ ক্ষমতা প্রাপ্ত না হলে ২য় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন না।
জুডিশিয়াল রিমান্ড-
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) এর ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী বিচার চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি হাজতে থাকলে, সাক্ষী অনুপস্থিত বা অন্য কোন কারণে আদালত মামলার শুনানি মুলতবি করে রাখতে পারেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি হাজতে থাকে।
মামলার রিমান্ড-
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৪১ আদেশের ২৩ বিধি অনুযায়ী দেওয়ানী আপীল আদালত মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করে মূল আদালতে প্রেরণ করিতে পারেন।
তবে রিমান্ড মঞ্জুর করার সময় আদালত অবশ্যই নিশ্চিত হবেন যে ইহার অপব্যবহৃত হচ্ছে কিনা এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা।
রিমান্ড কত দিনের জন্য হয়–
পুলিশ রিমান্ড–
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) এর ১৬৭ ধারা অনুযায়ী আদালত যতবার পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করুক না কেন উহা সর্বমোট ১৫ দিনের বেশি হবে না। এই ধারায় পুলিশ রিমান্ড সর্বমোট ১৫ দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
জুডিশিয়াল রিমান্ড-
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (The Code of Criminal Procedure, 1898) এর ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী আদালত যতবার জুডিশিয়াল রিমান্ড মঞ্জুর করুক না কেন উহা একসাথে (At a time) ১৫ দিনের বেশি হবে না। এই ধারায় জুডিশিয়াল রিমান্ড সর্বমোট কত দিন হবে তা নির্ধারিত করা নাই কিন্তু এক নাগারে (At a time) ১৫ দিনের বেশি রিমান্ডে রাখা যাবে না। রিমান্ডের মোট মেয়াদ আদালতের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। তবে আদালত নিশ্চিত হবেন যে রিমান্ডের সময়কাল যুক্তিযুক্ত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়।
রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আঘাত বা নির্যাতন করা যাবে কিনা-
রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্যাতন করার কথা প্রায়শই শোনা যায়। এমনকি বিভিন্ন নাটক সিনেমায়ও আমরা রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর প্রচন্ড নির্যাতনের দৃশ্য দেখে থাকি যা সাধারণত অপরাধের শীকারোক্তি আদায়ের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। মূলত রিমান্ডের মাধ্যমে হেফাজতে নিয়া কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্যাতনের বিধান কোন আইনে নাই। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, আমানুষিক বা লাঞ্চনাকর দন্ড দেওয়া যাবে না। সুতরাং বলা যায় যে, রিমান্ডে নিয়া কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্যাতন তো করা যাবেইনা বরং এটি করলে উক্ত নির্যাতনকারী দেশের সর্বোচ্চ আইন ভঙ্গের কারণে সে দোষী সাব্যস্ত হবে।
লেখক-
এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন
01711-068609
যেকোন আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের অভিজ্ঞ আইনজীবিগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
যোগাযোগ-
মহীউদ্দীন এন্ড এসোসিয়েটস
সার্বিক পরিচালনায়- এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন (শিশির)
১৬, কৈলাশঘোষ লেন, ঢাকা জজ কোর্ট, ঢাকা। অথবা
রোদ-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
মোবাইল- 01711-068609 / 01540-105088
ইমেইল- info@ainbid.com
ওয়েবসাইট- ainbid.com