হেবা ও উইল কি ? কোনটি করা উচিত ?

হেবা/ দান/ Gift/ উইল / অসিয়ত / ইচ্ছাপত্র / Will

 

এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখা গেলেও এখানে মূলত দুইটি বিষয় রয়েছে। বাকি গুলো বিভিন্ন ভাষার রূপান্তর। বিষয় দুইটি হলো-

১। হেবা বা দান (Gift)

২। উইল, অসিয়ত বা ইচ্ছাপত্র (Will)

 

নিম্নে এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হলো-

১। হেবা বা দান (Gift)-

আরবি ভাষায় হেবা, বাংলায় দান এবং ইংরেজিতে বলা হয় গিফট (Gift)। হেবা আরবি শব্দ বিধায় মুসলিম আইনে হেবা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্য আইনে বলা হয় দান। তবে হেবা / দান / Gift যাহাই বলা হোক না কেন সকল আইনের বিশ্লেষণ করলে এই তিনটি শব্দের একই অর্থ পাওয়া যায়। সুতরাং হেবা / দান / Gift যে নামেই বলা হোক না কেন এগুলো একই অর্থ বহন করে।

 

হেবা বা দান সম্পত্তি হস্তান্তরের একটা মাধ্যম। কোন ধরণের বিনিময় ব্যতিত কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করা হলেই তাকে হেবা / দান / Gift বলা হবে। স্থাবর বা অস্থাবর যেকোন সম্পত্তি হেবা করা যায়। সাধারণত স্নেহ ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ বা প্রতিদানের বিনিময়ে বা পুণ্য লাভের আশায় বা অন্যান্য কারণে হেবা বা দান করা হয়ে থাকে। যেকোন সুস্থ (Sound) ও প্রাপ্তবয়স্ক (Adult) ব্যক্তি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি বা সম্পত্তির কোনো অংশ অন্য কোন ব্যক্তিকে হেবা করতে পারেন। সম্পত্তির আয় জীবনকালীন ভোগ করার অধিকারও হেবা করা যায়।

 

এই হেবা বা দান (Heba or Gift) মুসলমানদের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণের মধ্যে দান (Gift) তাদের ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে।

 

রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৭৮ক(খ) অনুযায়ী মুসলিম আইন মোতাবেক এবং ধারা ৭৮ক(খখ) অনুযায়ী হিন্দু/খ্রিস্টান/বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তিগত আইন মোতাবেক মোট ১৩ জন রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে হেবা করা হলে রেজিস্ট্রি ফি ১০০/- মাত্র।

 

১৩ জন রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়গণ-

১। স্বামী/স্ত্রী, ২। বাবা, ৩। মা্, ৪। ছেলে, ৫। মেয়ে, ৬। দাদা, ৭। দাদী, ৮। নানা, ৯। নানী, ১০। নাতি, ১১। নাতনি, ১২। আপন ভাই, ১৩। আপন বোন।

 

সুতরাং রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় সহ যেকোন ব্যক্তির বরাবরে হেবা বা দান (Gift) করা যাবে।

 

দানের ৩টি শর্ত রয়েছে-

ক। দানদাতা কর্তৃক দানের বিষয়বস্তু হস্তান্তরের প্রস্তাব,

খ। দানগ্রহীতা নিজে বা তার পক্ষে অন্য ব্যক্তি কর্তৃক ওই প্রস্তাব গ্রহণ এবং

গ। দানের বিষয়বস্তুর দখল দানগ্রহীতার বরাবরে হস্তান্তর (ধারা-১৪৯)।

 

দানের বৈশিষ্ট্য-

ক। দানের ক্ষেত্রে দান দাতার একটি সৎ মনোভাব থাকতে হয়, ওয়ারিশগণকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দান করলে তা বৈধ হয় না (ধারা-১৪০),

খ। ভূমিষ্ঠ হয়নি এমন ব্যক্তির বরাবরে দান করা যায় না (ধারা-১৪১) এবং

গ। দান যেকোনো ব্যক্তি বা দান দাতার যেকোনো ওয়ারিশের বরাবরে দান দাতার সমগ্র বা আংশিক সম্পত্তি দান করা যায় (ধারা-১৪২)।

ঘ। মুসলিম আইন অনুযায়ী মৌখিকভাবে দান করা যায়। দানের ক্ষেত্রে লিখিত দলিলের প্রয়োজন নেই (ধারা-১৪৭)।

 

২। উইল, অসিয়ত বা ইচ্ছাপত্র (Will)-

উইল একটি ইংরেজি শব্দ। ইহাকে আরবিতে বলা হয় অসিয়ত এবং বাংলায় বলা হয় ইচ্ছাপত্র। সুতরাং উইল / অসিয়ত / ইচ্ছাপত্র একই অর্থ বহন করে।

 

উইলের বিষয়ে মুসলিম আইনের ১১৫-১৩৪ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। উইল সম্পত্তি হস্তান্তরের একটা মাধ্যম। যা পরে আরোপিত সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে নাবালক (Minor) নয় এমন সুস্থ মস্তিষ্কের (Sound) প্রত্যেক মুসলমান উইলের মাধ্যমে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে (মুসলিম আইন, ধারা-১১৫)।

 

উইলের বৈশিষ্ট্য-

উইলের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

১। উইলের কোনো নির্দিষ্ট ফর্মা বা ধরন নেই। তা ছাড়া উইল মৌখিক বা লিখিতভাবে কার্যকর করা যায় (ধারা-১১৬)।

২। কোনো ওয়ারিশের বরাবরে উইল করলে উইলকারীর মৃত্যুর পর অন্যান্য ওয়ারিশদের সম্মতিক্রমে মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ কার্যকর হবে। অন্যথায় উইলটি বাতিল হবে (ধারা-১১৭)।

৩।  কোনো মুসলিম তার সব ব্যয়ভার ও ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির ১/৩ অংশ ওয়ারিশ ছাড়া অন্য যেকোনো ব্যক্তির বরাবরে উইল করতে পারে। এর বেশি করলেও উইলকারীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণের সম্মতি না থাকলে ১/৩ অংশের জন্য উইলটি কার্যকর হবে, এর বেশি কোনোভাবেই কার্যকর হবে না (ধারা-১১৮, ১১৯)।

৪। উইলকারীর মৃত্যুকালে অস্তিত্বহীন ব্যক্তি অর্থাৎ যে ব্যক্তি এখনও ভূমিষ্ট হই নাই তাকে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায় না (ধারা-১২০)। ৫। উইল গ্রহণকারী ব্যক্তি উইলদাতার আগে মারা গেলে ঐ উইল তামাদি দ্বারা বারিত বিধায় তা বাতিল হবে (ধারা-১২১)।

৬। উইল দাতার মৃত্যুর পর থেকে উইল কার্যকর হয় এবং উইলের বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব দাতার মৃত্যুর সময় বিদ্যমান থাকতে হয় (ধারা-১২২,১২৩)।

৭। উইলে কোনো শর্ত থাকলে ঐ উইল বেআইনি হবে (ধারা-১২৪, ১২৫, ১২৬) এবং

৮। কোনো মুসলিম উইল উপযুক্ত প্রমাণের পর প্রবেট গৃহীত না হলেও সাক্ষ্য আইনে যথার্থ উইল হিসেবে গৃহীত হতে পারে (ধারা-১৩১)।

৯। উইলদাতা তার উইলটি রদ বা বাতিলও করতে পারে। যেমন রদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দ্বারা (ধারা-১২৮), উইলকৃত সম্পত্তিতে স্থাপনা নির্মাণ বা উইলের বিষয়বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন দ্বারা (ধারা-১২৯) এবং উইলকৃত সম্পত্তি পরবর্তী সময়ে অন্যের বরাবরে হস্তান্তর দ্বারা (ধারা-১৩০)।

 

জন্মগ্রহণ করেনি এমন শিশুকে হেবা-

দান বা হেবার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে দানকৃত সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করতে হয়। তাই যার এখনো জন্ম হয়নি, তাকে যেহেতু তাৎক্ষণিক হস্তান্তর করা সম্ভব নয়, সেহেতু জন্ম হয়নি এমন কাউকে হেবা করা যায় না।

 

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে হেবা বা দান-

ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোন ব্যক্তিকে দান করতে আইনে কোনো বাধা নেই। তবে এরূপ দানের ক্ষেত্রে হেবা শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। এক্ষাত্রে দান শব্দটি ব্যবহার করা হয়। হেবা শব্দটি শুধুমাত্র ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক মুসলমানদের মধ্যে দানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

 

হেবা ও উইল এর মধ্যে কোনটি করা উচিত-

 

মতামত-

যেহেতু হেবা দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং হেবাকৃত সম্পত্তির দখল সাথে সাথে হস্তান্তর করতে হয়। তাই ভবিষ্যত কোন আইনি জটিলতার সম্ভাবনা থাকে না। আর উইল যেহেতু দাতার মৃত্যুর পর কার্যকর হয় সম্পত্তির পরিমানের মধ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেহেতু ভবিষ্যত আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য হেবা বা দান (Gift) করাই উত্তম।

 

প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন-

আইনবিদ লিগ্যাল সলিউশন,

সার্বিক পরিচালনা: এডভোকেট মুহাম্মদ মহীউদ্দীন

ঢাকা জজ কোর্ট, কোতয়ালী, ঢাকা।

অথবা

রোড-৫, ব্লক-এ, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা

01711068609 / 01540105088

ইমেইল: mohiuddin@ainbid.com

ওয়েবসাইট: www.ainbid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *